লগইন করুন
ওযূকারীর অঙ্গ থেকে ঝরে পড়া পানি বা অনুরূপ পানিকে الماء المستعمل বা ব্যবহৃত পানি বলে। এ প্রকার পানি প্রবিত্রতা দানকারী পানি থেকে ব্যতিক্রম, না ব্যতিক্রম নয়, এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন।
বিশুদ্ধ মতামত হলো: যতোক্ষণ পর্যন্ত তা সাধারণ পানি পদবাচ্য থাকে এবং এমন নাপাকী মিশ্রিত না হয় যাতে পানির বৈশিষ্ট্য সমূহে কোন প্রভাব পড়ে (অর্থাৎ: রং, গন্ধ ও স্বাদ অবিকৃত থাকে), ততক্ষণ তা পবিত্রকারী থাকবে। এটা আলী ইবনে আবি তালিব, ইবনে উমার, আবূ উমামা ও সালফে সালেহীনের একটি দলের অভিমত। ইমাম মালিক (রাহি.) এর প্রসিদ্ধ মতামত এটাই। ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ (রাহি.) তাদের দু’টি রেওয়ায়াতের একটিতে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাযম ও ইবনুল মুনযিরও এ মতামতের প্রবক্তা। শায়খুল ইসলাম এ মতামতটি পছন্দ করেছেন।[1] নিম্নোক্ত বাণীগুলো এ মাতমতকে শক্তিশালী করে:
(১) মৌলিকভাবেই পানি পবিত্র। তাকে কোন জিনিস অপবিত্র করতে পারে না। মহনাবী (ﷺ) বলেন, الْمَاءُ طَهُورٌ لَا يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ অর্থাৎ: পানি পবিত্র। তাকে কোন জিনিস অপবিত্র করতে পারে না।[2] তবে তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হলে অথবা পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রনের ফলে তা সাধারণ পানি পদবাচ্য থেকে বহির্ভূত হলে তা নাপাক হয়ে যাবে।
(২) সাহাবাগণ মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতেন বলে প্রমাণিত:
(الف) عن أَبى جُحَيْفَةَ، قالُ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِالهَاجِرَةِ، فَأُتِيَ بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَأْخُذُونَ مِنْ فَضْلِ وَضُوئِهِ فَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ
(ক) আবূ যুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার দুপুরে নাবী (ﷺ) আমাদের সামনে বেরিয়ে এলেন। তাকে ওযূর পানি এনে দেয়া হলো। তখন তিনি ওযূ করলেন। লোকেরা তার ওযূর ব্যবহৃত পানি নিয়ে গায়ে মাখতে লাগল।[3]
হাফেয ফাতহ গ্রন্থে (১/৩৫৩) বলেন: সম্ভবতঃ সাহাবাগণ মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর অঙ্গ থেকে ঝরে পড়া পানি গ্রহণ করতেন। এর মাধ্যমেই ব্যবহৃত পানি পবিত্র হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়।
(খ) মিসওয়ার বিন মুখরামাহ এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- وَإِذَا تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ-অর্থাৎ: নাবী যখন ওযূ করতেন তখন তার ব্যবহৃত পানির উপর তারা (সাহাবায়ে কেরাম) যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।[4]
عن أَبى مُوسَى: دَعَا النَّبِيُّ ﷺ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ لَهُمَا: اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا
অর্থাৎ: আবূ মুসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেনঃ নাবী (ﷺ) একটি পাত্র আনতে বললেন, যাতে পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে উভয় হাত ও চেহারা মুবারাক ধৌত করলেন এবং তার মধ্যে কুলি করলেন। তারপর তাদের দু’জন (আবূ মুসা (রা.) ও বিলাল (রা.)) কে বললেন: তোমরা এ থেকে পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে ঢাল।[5]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ يَتَوَضَّئُونَ فِي زَمَانِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ جَمِيعًا
(৩) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুলাহ এর যামানায় পুরুষ এবং মহিলা একত্রে ওযূ করতেন।[6]
অপর বর্ণনায় রয়েছে-
كُنَّا نَتَوَضَّأُ نَحْنُ وَالنِّسَاءُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ، نُدْلِي فِيهِ أَيْدِيَنَا
অর্থাৎ: আমরা পুরুষ ও মহিলারা রাসূল (ﷺ) এর যামানায় একসাথে এক পাত্রে ওযূ করতাম এবং এ সময় কখনও কখনও একের হাত অপরের সাথে লেগে যেত।
عنابْنَ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُونَةَ
(৪) আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: রাসূল (ﷺ) তার স্ত্রী মাইমূনাহ এর গোসলের পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন।[7]
عَنِ الرُّبَيِّعِ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَسَحَ بِرَأْسِهِ مِنْ فَضْلِ مَاءٍ كَانَ فِي يَدِهِ
(৫) রুবাই বিনতে মুয়াবিবয (রা.) হতে বর্ণিত: নাবী কারীম (ﷺ) তার হাতের অতিরিক্ত পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেন।[8]
(৬) ইবনে মুনযির ‘আওসাত্ব’ গ্রন্থে (১/২৮৮) বলেন: বিদ্বানগণের ঐকমত্যে, ওযূকারী ও গোসলকারীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ও কাপড় থেকে ঝরে পড়া পানি পবিত্র। সুতরাং এ অভিমতটি ব্যবহৃত পানি পবিত্র হওয়া প্রমাণ করে। অতএব তা যেহেতু পবিত্র তাই তা দ্বারা ওযূ নাজায়েয বলা যাবে না। যারা এর বিপরীত মন্তব্য করেন, তাদের উপযুক্ত প্রমাণ থাকতে হবে।
অপর একদল আলিম বলেন: ব্যবহৃত পানি দ্বারা ওযূ বৈধ নয়। এটা ইমাম মালিক, আওয়ায়ী ও ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর দু’টি অভিমতের একটি অভিমত। ‘আসহাবে রায়’ এ অভিমতই পোষণ করেছেন।[9] কিন্তু তাদের উপযুক্ত এমন কোন প্রমাণ নেই যার উপর নিশ্চিত হওয়া যায়। সুতরাং প্রকৃত দাবীর দিকে ফিরে যাওয়াই উচিৎ।
[2] হাসান; আবূ দাউদ (২৬৬), তিরমিযী (৩৬), নাসঈ (১/১৭৪)।
[3] সহীহ; বুখারী (১৮৭)।
[4] সহীহ; বুখারী (১৮৯)।
[5] সহীহ; বুখারী (১৮৮)।
[6] সহীহ; বুখারী (১৯৩); আবূ দাউদ (৭৯), নাসাঈ (১/৫৭) ইবনে মাজাহ (৩৮১), এখানে পরের অংশটি আবু দাউদে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
[7] সহীহ; মুসলিম (৩২৩) এ হাদীসটি সহীহাইনে এসেছে "كانا يغتسلان من إناء واحد" এ শব্দে।
[8] হাসান; আবূ দাউদ (১৩০), আদ-দারাকুতবী (১/৮৭)।
[9] আল-ইসিত্মযকার (১/২৫৩), আত-তামহীদ (৪/৪৩), আলমুগনী (১/১৯), আল-আউসাত (১/২৮৫)।