ইসতিনজা করার কিছু বিধিমালা রয়েছে যা পালন করা বাঞ্ছনীয়।
(১) ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা করবে না:
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: لَا يُمْسِكَنَّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ وَهُوَ يَبُولُ، وَلَا يَتَمَسَّحْ مِنَ الْخَلَاءِ بِيَمِينِهِ، وَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন পেশাব করার সময় ডান হাত দিয়ে পুরুষাঙ্গ না ধরে, পায়খানার পর ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পানি পান করার সময় পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে।[1]
عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ: قِيلَ لَهُ لَقَدْ عَلَّمَكُمْ نَبِيُّكُمْ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى الْخِرَاءَةَ، قَالَ: أَجَلْ لَقَدْ «نَهَانَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ بِغَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ، وَأَنْ لَا نَسْتَنْجِيَ بِالْيَمِينِ، وَأَنْ لَا يَسْتَنْجِيَ أَحَدُنَا بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ،
সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা তাকে বলা হলো: তোমাদের নাবী তোমাদের প্রত্যেক জিনিস শিক্ষা দেন, এমন কি পেশাব পায়খানার বিধান শিক্ষা দেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ আমাদের নাবী (ﷺ) আমাদেরকে নিষেধ করেছেন, আমরা যেন পেশাব পায়খানার সময় কিবলাকে সামনে না করি। ডান হাত দিয়ে যেন ইসতিনজা না করি এবং যেন তিনটি পাথরের কমে ইসতিনজা না করি।[2]
(২) ডান হাত দ্বারা লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে না: এর দলীল হলো, পূর্বে উল্লেখিত আবূ ক্বাতাদাহ এর হাদীস।
(৩) ইসতিনজার পর মাটিতে হাত মাজবে অথবা সাবান বা এ জাতীয় কিছু দ্বারা হাত ধৌত করবে:
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ - ﷺ - إِذَا أَتَى الْخَلاَءَ أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فِى تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجَى ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى الأَرْضِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন নাবী কারীম (ﷺ) পায়খানায় গমন করতেন তখন আমি তার জন্য পিতল বা চামড়ার পাত্রে পানি নিয়ে যেতাম। অতঃপর তিনি ইসতিনজা করে মাটিতে হাত মলতেন।[3]
মায়মূনা বর্ণিত হাদীসও এ বিধানটিকে শক্তিশালী করে -
« ثُمَّ صَبَّ عَلَى فَرْجِهِ فَغَسَلَ فَرْجَهُ بِشِمَالِهِ ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدِهِ الأَرْضَ فَغَسَلَهَا»
অর্থাৎ: অতঃপর রাসূল (ﷺ) তার লজ্জাস্থানে পানি ঢাললেন এবং তার লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তার পর তার হাতকে মাটিতে মললেন এবং ধুয়ে ফেললেন।[4]
(৪) সন্দেহ দূর করার জন্য পেশাবের পর কাপড় ও লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিবে:
«عن بن عباس : أن النبي ﷺ توضأ مرة مرة ونضح فرجه»
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (ﷺ) একবার করে ওযূ করতেন এবং তার লজ্জাস্থান বরাবর পানি ছিটিয়ে দিতেন।[5]
বহুমূত্র বা এ জাতীয় রোগী কিভাবে ইসতিনজা করবে?
যে ব্যক্তি বহুমূত্র বা এ জাতীয় সমস্যায় ভুগবে, সে ইসতিনজা করবে ও প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করবে। এরপর অন্য সালাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত যতটুকুই তা নির্গত হোক না কেন, তাতে কোন সমস্যা নেই। এটাই বিদ্বানদের সবচেয়ে বিশুদ্ধ মতামত। ইমাম আবূ হানীফা, শাফেঈ আহমাদ, ইসহাক ও আবূ সাওরসহ অন্যান্য বিদ্বানগণ এমতামত পেশ করেছেন। বহুমূত্র রোগে ভুক্তভোগীর হুকুম মুসত্মাহাযার হুকুমের ন্যায়।
আর মহানাবী (ﷺ) মুসত্মাহাযার ব্যাপারে বলেন:
«إِنَّمَا ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَيْسَتْ بِالْحَيْضَةِ، فَإِذَا أَقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَدَعِي الصَّلَاةَ، فَإِذَا ذَهَبَ قَدْرُهَا فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ وَصَلِّي»
এ তো ধমনি নির্গত রক্ত, হায়েয নয়। তোমার যখন হায়েয আসবে তখন সালাত ছেড়ে দিও। আর যখন তা বন্ধ হয়ে যাবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলবে, তারপর সালাত আদায় করবে।[6]
বুখারীতে রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা বলেছেন:
»ثُمَّ تَوَضَّئِي لِكُلِّ صَلاَةٍ، حَتَّى يَجِيءَ ذَلِكَ الوَقْتُ»
তারপর এভাবে আরেক হায়েয না আসা পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করবে।[7]
আমি মনে করি: এটা ওযরের হুকুমের অন্তর্গত। এটা করা হয়ে থাকে জটিলতা দূর করার জন্য। আর শরীয়াতে উম্মতের উপর থেকে জটিলতা দূর করার বিধান এসেছে।
যেমন আল্লাহ্ বলেন:
﴿يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ﴾
অর্থাৎ: আল্লাহ্ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। (সূরা বাকারাহ-১৮৬)
ইমাম মালিক ও অন্যরা মনে করেন: এ ক্ষেত্রে ইসতিনজা ও ওযূ কোনটিই আবশ্যক নয়, যতক্ষণ না ওযূ নষ্টের অন্য কোন কারণ পাওয়া যায়।
আমার বক্তব্য: যারা ওযূ নষ্টের কারণ না পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ আবশ্যক নয় বলে মনে করেন, তারা সম্ভবতঃ পূর্বোলেস্নখিত হাদীসের- «تَوَضَّئِي لِكُلِّ صَلاَةٍ » ‘‘প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করবে’’ অংশটিকে যঈফ মনে করেন। তবে বিশুদ্ধ মতামত হলো: প্রত্যেক সালাতের জন্য ওযূ করতে হবে। যেমনটি হায়েজ অধ্যায়ে আলোচনা হবে।
[2] মুসলিম (২৬২) , আবূ দাউদ (৮), তিরমিযী (১৬), নাসাঈ (১/১৬)
[3] হাসান লি গায়রিহী; আবূ দাউদ হা/৪৫; ইবনে মাজাহ হা/ ৬৭৮; নাসাঈ ১/৪৫; দেখুন, মেশকাত হা/৩৬০
[4] বুখারী হা/ ২৬৬; মুসলিম হা/৩১৭
[5] দারেমী হা/৭১১; বায়হাকী ১/১৬১; আলবানী ‘তামামুল মিন্নাহ’ এর ৬৬ পৃঃ বলেন, শায়খাইনের (বুখারী ও মুসলিম) শর্ত অনুযায়ী এর সনদ সহীহ।
[6] বুখারী হা/ ২২৮; মুসলিম হা/৩৩; প্রভৃতি, নাসাঈ (১/১৮৫ পৃঃ) و توضئى শব্দ অতিরিক্ত করে "فَاغْسِلِي عَنْكِ الدَّمَ و توضئى وَصَلِّي" এ শব্দে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। এটা শায এর অমত্মর্গত। নাসাঈ ও বাইহাক্বী (১/৩২৭) এটাকে মুয়ালস্নাল বলেছেন। ইমাম মুসলিম এটাকে মুয়ালস্নাল (ত্রম্নটিযুক্ত) হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইমাম বুখারী এর তাখরীজ করেন নি। দেখুন! মুসত্মফা বিন আদাবী (আলস্নাহ তার সম্মান বৃদ্ধি করুন!) প্রণীত ‘জামিউ আহকামুন নিসা’ (১/২২৩-২২৬) ।
[7] এটা মহানবী (ছাঃ) এর মারফূ বাণী হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। অথবা আয়েশা থেকে বর্ণনাকারী রাবী উরওয়াহ বিন যুবাইরের উক্তি হতে পারে। এর দ্বারা তিনি সে মহিলাটিকে ফতওয়াহ দিয়েছেন যে মহিলাটি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিল, যেমনটি দারেমীতে বর্ণিত হয়েছে (১/১৯৯)। ফতহুল বারীতে ১/৩৩২) হাফেজ ১ম সম্ভবনার দিকে ধাবিত হয়েছেন। আর সুনানে (১/৩৪৪) ইমাম বাইহাকী (রহঃ) ২য় সম্ভবনার দিকেই মত প্রকাশ করেছেন। আমাদের শায়েখ মুসত্মফা বিন আদাবী (আলস্নাহ তার হিফাযত করুন!) ‘জামিউ আহকামুন নিসা’ (১/২২৭) তে এটাকে প্রধান্য দিয়েছেন।