طهارة এর আভিধানিক অর্থ:
পবিত্রতা বা পরিচ্ছন্নতা, বাহ্যিক তথা অনুভূতিসূচক নাপাকী বা ময়লা আবর্জনা থেকে মুক্তি লাভ করা। যেমন- পেশাব ইত্যাদির নাপাকী এবং অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন- দোষ ত্রুটি ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে পবিত্রতা অর্জন।
এর আরেকটি অর্থ হলো পরিচ্ছন্নণ করণ। আর এটা স্থান পরিচ্ছন্নণ করাকে বলা হয়।[1]
ত্বহারাতের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
যে অপবিত্রতা বা নাপাকী সালাত আদায় করতে বাধা প্রদান করে তা পানি বা অন্য কিছু দ্বারা দূর করা বা হুকুমগতভাবে মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করাকে ত্বহারাত বলে।[2]
ত্বহারাতের হুকুম:
স্মরণ থাকলে ও ক্ষমতা থাকলে নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা এবং নাপাকী দূর করা ওয়াজিব। আল্লাহ্ বলেন: ﴾ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ﴿আপনার পোশাক পবিত্র করুন! (সূরা মুদ্দাসসির-৪)
আল্লাহ্ অপর আয়াতে বলেন:
أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সাজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। (সূরা বাক্বারাহ- ১২৫)
আর সালাত বৈধ হওয়ার জন্য অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক।
রাসূল (ﷺ) বলেন::« لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ» -পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না।[3]
পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব
১। বান্দার সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন করা।
মহানাবী (ﷺ) বলেন:
عن أَبى هُرَيْرَةَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُقْبَلُ صَلَاةُ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তির বায়ু নির্গত হয় তার সালাত কবুল হবে না, যতক্ষণ না সে ওযূ করে।[4]
ত্বহারাতের মাধ্যমে সালাত আদায় করলে আল্লাহ্কে সম্মান করা হয়। হাদাস (বায়ু ত্যাগ) এবং জানাবাত (যে সব কারণে গোসল ফরয) এ দু’টি যদিও দৃশ্যমান নাপাকী নয় বরং অভ্যন্তরীণ নাপাকী তবুও এগুলো নাপাক মুক্ত করা ওয়াজিব। এর উপস্থিতিতেও আল্লাহ্র মর্যাদা হানি হয় এবং পরিচ্ছন্নতার মূলনীতি বিরোধী হয়।
২। মহান আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের প্রশংসা করেন। যেমন- তিনি বলেন:
﴿إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ্ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে। (সূরা বাক্বারাহ- ২২২)
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মাসজিদে কুবার অধিবাসীদের পবিত্রতা অর্জনের প্রশংসা করে বলেন:
﴿ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ﴾
সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন (তাওবা- ১০৮)।
৩। নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে অবহেলা করা কবরে শাস্তি হওয়ার অন্যতম কারণ।
«عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَلَى قَبْرَيْنِ، فَقَالَ: " إِنَّهُمَا يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ، أَمَّا هَذَا فَكَانَ لَا يَسْتَنْزِهُ مِنَ الْبَوْلِ»
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) একদা দু‘টি কবরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, অতঃপর বললেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে এদেরকে বড় কোন গুনাহের কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। বরং এদের একজন পেশাবের নাপাকী থেকে বেঁচে থাকত না।[5]
[2] ইবনে কুদামাহ প্রণীত মুগনী (১/১২)
[3] সহীহ; মুসলিম (২২৪)
[4] বুখারী (১৩৫), মুসলিম (২২৫)
[5] আবূ দাউদ (২০), নাসাঈ (৩১-২০৬৯), ইবনে মাজাহ (৩৪৭) সনদ সহীহ।