৩. লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ: মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর না করা

লজ্জাস্থান হিফাযত করার অংশ নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে না দেওয়া, যে মাহরাম তাকে লোলুপ ও পাপাচারীদের থেকে সংরক্ষণ করবে ও নিরাপত্তা দিবে।

বিশুদ্ধ হাদীসে নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا تسافر المرأة ثلاثة أيام إلا مع ذي محرم«   

“নারী তিন দিনের সফর মাহরাম ব্যতীত করবে না”।[1]

আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত,

»أن النبي صلى الله عليه وسلم  نهى أن تسافر المرأة مسيرة يومين أو ليلتين إلا ومعها زوجها، أو ذو محرم«    

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর দু’দিন অথবা দু’রাতের সফরকে নিষেধ করেছেন, যদি তার সাথে স্বামী অথবা মাহরাম না থাকে”।[2]

অনুরূপ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

»لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر تسافر مسيرة يوم ولبلة إلا مع ذي محرم عليها«

“কোনো নারীর জন্য বৈধ নয়, যে আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে মাহরাম ব্যতীত এক দিন ও এক রাতের দূরত্ব সফর করা”।[3]

এসব হাদীসে তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত সফর না করার যে পরিমাণ এসেছে তা মূলত সে সময় সফর করার প্রচলিত রেওয়াজের ভিত্ততে। তখন মানুষ পায়ে হেঁটে ও বাহনে চড়ে এক দিন, দু’দিন ও তিন দিন সফর করত। হাদীসে উল্লেখিত তিন দিন, দু’দিন ও এক দিন এক রাত দ্বারা হাদীসের বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে যার নাম সফর সেটাই মাহরাম ব্যতীত নারীদের জন্য নিষেধ।

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায়’: (৯/১০৩) বলেন: “মুদ্দাকথা: যার নাম সফর তার থেকে নারীকে বারণ করা হবে স্বামী অথবা মাহরাম ব্যতীত, হোক সেটা তিন দিন অথবা দু’দিন অথবা এক দিন এক রাত অথবা এক সকাল অথবা অন্য কিছু। কারণ, ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার হাদীসটি ব্যাপক, তাতে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ নেই, যা মুসলিমের অত্র অধ্যায়ের সর্বশেষ হাদিস:

»لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم«

“মাহরাম ব্যতীত নারী সফর করবে না”।[4] এ হাদীস সকল প্রকার সফরকে অন্তর্ভুক্ত করে, যার নাম সফর।” আল্লাহ ভালো জানেন।

নারীদের গ্রুপের সাথে যারা নারীকে ওয়াজিব হজের অনুমতি প্রদান করেছে তারা সুন্নত পরিপন্থী সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মাহরাম ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করেছেন, অতএব শর্ত ব্যতীত তাকে হজের সফরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা সুন্নত পরিপন্থী, যে সুন্নত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করেছেন। মাহরাম ব্যতীত নারীর সফর পাপ তাই তার ওপর হজ ওয়াজিব বলা দুরস্ত নয়। এ আদেশ মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করবে”। সমাপ্ত।

আমি (গ্রন্থকার) বলছি: যারা নারীকে গ্রপের সাথে বের হওয়ার অনুমতি দিয়েছে তারাও নারীকে মাহরাম ব্যতীত যে কোনো সফরের জন্য অনুমতি প্রদান করেন নি, তারা অনুমতি দিয়েছেন শুধু ওয়াজিব হজের জন্য।

ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. ‘আল-মাজমু’: (৮/২৪৯) গ্রন্থে বলেন: “নফল ইবাদত, ব্যবসা, যিয়ারত ও এ জাতীয় সফর মাহরাম ব্যতীত বৈধ নয়।” সমাপ্ত।

অতএব, এ যুগে যারা মাহরাম ব্যতীত নারীর প্রত্যেক সফরের ক্ষেত্রে শিথিলতা করেন তাদের কথার সাথে গ্রহণযোগ্য কোনো আলেম নেই।

তারা বলেন: এক মাহরাম প্লেনে উঠিয়ে দেন, অতঃপর অপর মাহরাম ইয়ারপোর্ট থেকে তাকে নিয়ে যান যখন প্লেন সেখানে পৌঁছে। তাদের ধারণায় বহু নারী পুরুষ একসাথে থাকার কারণে প্লেন নিরাপদ।

আমরা তাদেরকে বলি: এ জাতীয় সফর কখনো নিরাপদ নয়, প্লেন অন্যান্য যানবাহন থেকে বেশি  ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এতে যাত্রীদের সিট পাশাপাশি, হয়তো নারী কোনো পুরুষের পাশে বসবে অথবা এমন কোনো সমস্যা প্লেনে হতে পারে, যদ্দরূন তা গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য কোনো এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে, যেখানে তাকে গ্রহণকারী কেউ নেই, ফলে ফিতনার সম্মুখীন হবে। নারীর যে দেশ চেনা নেই এবং যেখানে তাকে গ্রহণকারী কোনো মাহরাম নেই, সেখানে তার অবস্থা কী হতে পারে?

[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৮; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৭; আহমদ (২/১৪৩)
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৬৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৮৯৮; আহমদ, (৩/৩৪); দারেমী, হাদীস নং ২৬৭৮
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৩৯; তিরমিযী, হাদীস নং ১১৭০; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭২৩; ইবন মাজাহ, হাদসি নং ২৮৯৯; আহমদ (২/৫০৬); মালিক, হদীস নং ১৮৩৩
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২৭; আহমদ (৩/৭১)