বৈপরীত্যের পাশাপাশি বাইবেলের মধ্যে অনেক ভুলভ্রান্তি বিদ্যমান বলে সমালোচকরা দাবি করেন। বৈপরীত্য ও ভুলভ্রান্তির মধ্যে পার্থক্য হল, বৈপরীত্য অভ্যন্তরীণ (internal)। বাইবেলের ভিতরেই তা বিদ্যমান। বাইবেলের বিভিন্ন শ্লোক, অধ্যায়, পুস্তক, পান্ডুলিপি বা সংস্করণের মধ্যে তুলনা করে তা জানা যায়। তা অস্বীকার করা যায় না, তবে ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যায়। আর ভুল বহিস্থ (external) বা বাইরে থেকে জানা যায়। ভুল ধরা পড়ে জ্ঞান, বিবেক, মানবীয় রীতি, ঐতিহাসিক তথ্য বা অন্য কোনো জ্ঞানের আলোকে বাইবেলের তথ্য বিচার করার মাধ্যমে। বাইবেল বিশেষজ্ঞরা বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির অনেক নমুনা উল্লেখ করেছেন। এখানে অল্প কয়েকটা নমুনা দেখুন:
৪.১. তৌরাত ও পুরাতন নিয়মের কিছু ভুলভ্রান্তি
৪. ১. ১. ফল ভোজনেই আদমের নিশ্চিত মৃত্যু
পুরাতন নিয়মের প্রথম পুস্তক Genesis, বাংলায় ‘আদিপুস্তক’ বা ‘পয়দায়েশ’। এ পুস্তকের ২/১৭ শ্লোক (মো.১৩): ‘‘কিন্তু নেকী-বদী-জ্ঞানের বৃক্ষর ফল ভোজন করো না, কেননা যে দিন তার ফল খাবে, সেদিন মরবেই মরবে (surely die)।’’
এ কথাটা ভুল। কারণ আদম (আ.) এ বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন এবং যে দিন এ বৃক্ষের ফল ভোজন করেছেন, সে দিন তিনি মরেননি। বরং এর পরেও ৯০০ বছরের বেশি সময় তিনি জীবিত ছিলেন। (আদিপুস্তক ৫/৫)
‘মরবে’ (die) বা ‘মরবেই মরবে’ (surely die) অর্থ ‘গোনাহগার হবে’ বা ‘জাহান্নামে যাবে’ বলা একান্তই ভিত্তিহীন দাবি। ‘মরবে’, ‘মরবেই মরবে’ অথবা ‘নিশ্চিত মরবে’ (surely die) বাক্যাংশ পুরাতন নিয়মে অনেক স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে জাগতিক মৃত্যুই বুঝানো হয়েছে। বনি-ইসরাইলদের মরুভূমিতে মৃত্যুর বিষয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘কারণ মাবুদ তাদের বিষয়ে বলেছিলেন, তারা মরুভূমিতে মরবেই মরবে (surely die); আর তাদের মধ্যে যিফূন্নির পুত্র কালুত ও নূনের পুত্র ইউসা ছাড়া এক জনও অবশিষ্ট রইলো না।’’ (শুমারী/ গণনাপুস্তক ২৬/৬৫, মো.-১৩)
এখানে ‘মরবে (die) অর্থ ‘গোনাহগার হবে’ বা ‘জাহান্নামে যাবে’ বলে দাবি করা পাগলামি বলেই গণ্য হবে। পরকাল বলে কোনো কিছুই তৌরাতে নেই। দ্বিতীয় মৃত্যু, জাহান্নাম ইত্যাদি কোনো কিছুই তাতে নেই। পুরাতন নিয়মের, বিশেষ করে তৌরাতের সকল স্থানেই আমরা দেখি যে, ‘মরবে’ বলতে দৈহিক মৃত্যু বুঝানো হয়েছে, দ্বিতীয় মৃত্যু, পাপ বা জাহান্নাম বুঝানো হয়নি।[1]
[1] দেখুন: গণনা পুস্তক ২৬/৬৫, বিচারকর্তৃগণ ১৩/২২, ১ শমূয়েল ১৪/৪৪, ১ শমূয়েল ২০/৩১, ১ শমূয়েল ২২/১৬, ২ শমূয়েল ১২/৫, ২ শমূয়েল ১২/১৪, ১ রাজাবলি ২/৩৭, ১ রাজাবলি ২/৪২, ২ রাজাবলি ১/৪, ২ রাজাবলি ১/৬, ২ রাজাবলি ১/১৬; ২ রাজাবলি ৮/১০; যিরমিয় ২৬/৮; যিহিষ্কেল ৩/১৮; যিহিষ্কেল ১৮/১৩; যিহিষ্কেল ৩৩/৮ ... ইত্যাদি।
পয়দায়েশ/ আদিপুস্তক ৬/৩: ‘‘তাতে মাবুদ বললেন, আমার রূহ মানুষের মধ্যে চিরকাল ধরে অবস্থান করবেন না, কেননা তারা মরণশীল; পক্ষান্তরে তাদের সময় এক শত বিশ বছর হবে।’’ (মো.-১৩)
‘মানুষের আয়ু ১২০ বৎসর হবে’- এ কথাটা ভুল। কারণ পূর্ববর্তী যুগের মানুষদের বয়স আরো অনেক দীর্ঘ ছিল। আদিপুস্তকের ৫ অধ্যায়ের ১-৩১ শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে আদম ৯৩০ বছর জীবিত ছিলেন। অনুরূপভাবে শীস (শেথ) ৯১২ বছর, ইনোশ ৯০৫ বছর, কৈনন ৯১০ বছর, মহললেল ৮৯৫ বছর, যেরদ ৯৬২, হানোক (ইদরীস) ৩৬৫ বছর, মথূশেলহ ৯৬৯ বছর, লেমক ৭৭৭ বছর পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। নোহ (নূহ) ৯৫০ বছর জীবিত ছিলেন। (আদিপুস্তক ৯/২৯)। এ ভাবে প্রমাণিত যে, মানুষের আয়ু ১২০ বছর বলে নির্ধারণ করা ভুল।
নোহ বা নূহ (আ.)-এর জাহাজের বিষয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘জাহাজটা তুমি এভাবে তৈরি করবে: সেটা লম্বায় হবে তিনশো হাত, চওড়ায় পঞ্চাশ হাত, আর উচ্চতা হবে ত্রিশ হাত। জাহাজটার ছাদ থেকে নিচে এক হাত পর্যন্ত চারিদিকে একটা খোলা জায়গা রাখবে আর দরজাটা হবে জাহাজের এক পাশে। জাহাজটাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থাকবে।’’ (পয়দায়েশ/ আদিপুস্তক ৬/১৫-১৬, মো.-০৬)
আমেরিকান গবেষক স্কট বিডস্ট্রাপ (Scott Bidstrup) ‘বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে লেখেছেন:
‘‘আদিপুস্তক ৬/১৫ বলছে যে, নোহ-এর জাহাজ ৩০০X৫০X৩০ হাত। আমরা জানি যে, এক হাত প্রায় ১৮ ইঞ্চি। এতে তিনটা অসম বিস্তারে জাহাজের আয়তন সর্বোচ্চ ১৫,১৮,৭৫০ ঘনফুট। পৃথিবীর তিন কোটি প্রজাতির প্রাণি এক জোড়া করে এবং সকল প্রাণির কয়েক বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এ আয়তনের জাহাজের মধ্যে রাখার নির্দেশ। এ আয়তনের জাহাজের মধ্যে তা সম্ভব নয়।
প্রচারকরা আপত্তি করে বলেন, আপনি কিভাবে জানলেন তা সম্ভব নয়? আপনি কি কখনো পরীক্ষা করে দেখেছেন।
যুক্তি ও বিবেকের দাবি যে, এ সকল প্রাণিকে কোনো রকম শয়নের বা দাঁড়ানোর স্থান না দিয়ে, এমনকি কোনো খাদ্য না দিয়ে শুধু যেনতেন ভাবে স্ত্তপ করে রাখা হয়েছিল বলে মনে করা সম্ভব নয়। সাদাসিদে কথা হল, মহাপস্নাবনের কাহিনী যিনি লেখেছেন তিনি পৃথিবীর প্রাণি জগতের বৈচিত্র্যের ব্যাপকতা বুঝেননি। আয়তনগত সমস্যা অনুধাবন করার জন্য এরূপ একটা জাহাজ বানিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। শুধু আপনি প্রত্যেক প্রাণির দেহের আয়তন, মোট প্রজাতির সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই তা জানতে পারবেন। শুধু ব্যাকটেরিয়া বাদ যাবে। তবে সকল কীট-পতঙ্গ হিসেবের মধ্যে গণিত হবে। এতে পৃথিবীতে স্থলে অবস্থানরত প্রাণি প্রজাতির সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। একে দুই দিয়ে গুণ করুন। এর সাথে সকল প্রজাতির সকল প্রাণিকে অন্তত ২০ বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের স্থান যোগ করুন। এতে খুব সহজেই আপনার কাছে সুস্পষ্ট হবে যে, এটা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর তিন কোটি প্রজাতির প্রাণি সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সময়ের বিষয়টা রয়েছে। যদি একটা প্রজাতির একটা নারী ও একটা পুরুষ প্রাণি আপনি ১০ সেকেন্ডে সংগ্রহ করতে পারেন তবে তিন কোটি প্রাণি সংগ্রহ করতে আপনার ১০ বছর লাগবে। এরপর আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনাকে যেতে হবে পেঙ্গুইন আনতে এনটার্কটিকায়, মেরু ভল্লুক আনতে উত্তর মেরুতে, বাঘ আনতে এশিয়ায়, ক্যাঙ্গারু আনতে অস্ট্রেলিয়ায়, গরিলা আনতে আফ্রিকায়, টাপির ও এগুইটি আনতে দক্ষিণ আমেরিকায় ....। এগুলোকে তাদের পর্যাপ্ত খাদ্যসহ এনে জাহাজে রাখতে হবে। সব কিছু ১০ সেকেন্ডের মধ্যে। পস্নাবন শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী দশ বছর ধরে ১০ সেকেন্ডে এক প্রজাতির এক জোড়া হিসেবে সেগুলোকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এরপর রয়েছে পরিবেশগত সমস্যা। সত্যই যদি বিশ্বব্যাপী বন্যায় পাঁচ মাইল পরিমাণ গভীর পানি জমে তবে পানির লবণাক্ততা দুই তৃতীয়াংশ কমে যাবে। আর পানির লবণাক্ততা দুই তৃতীয়াংশ কমার পরে অসংখ্য কোমল-সংবেদনশীল জলজ প্রজাতির প্রাণি কিভাবে বাঁচল? বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি পরিণত পরিবেশ ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর এরূপ পরিবেশ তৈরি হতে কয়েক শতাব্দীর প্রয়োজন। এ সকল প্রাণির কি হল? সুস্পষ্টত এ গল্পটা শুধু অসম্ভবই নয়; উপরন্তু তা হাস্যকর।’’[1]
হিজরত/ যাত্রাপুস্তক ১২/৪০-৪১: ‘‘বনি-ইসরাইলেরা চার শত ত্রিশ বছর মিসরে বাস করেছিল। সেই চার শত ত্রিশ বছরের শেষে, ঐ দিনে, মাবুদের সমস্ত বাহিনী মিসর দেশ থেকে বের হল।’’ (মো.-১৩)
বাইবেলের এ তথ্যটা সন্দেহাতীতভাবেই ভুল। বাইবেলের অন্যান্য তথ্য অনুসারে বনি-ইসরাইল বা ‘ইস্রায়েল-সন্তানগণ’ ৪৩০ বছর অবস্থান করেননি।
ইসরাইল বা ইস্রায়েল ইয়াকুব (আ.)-এর প্রসিদ্ধতম উপাধি। তাঁর ১২ পুত্র ও তাঁদের বংশধরদের ‘বনি-ইসরাইল’ বা ‘ইস্রায়েল-সন্তান’ বলা হয়। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে মিসরে গমনের পূর্বে ইসরাইল, তাঁর পিতা ইসহাক ও পিতামহ ইবরাহিম (আ.) কেনান (সিরিয়া-ফিলিস্তিন) দেশে ২১৫ বছর অবস্থান করেন। আর ইউসুফের আহবানে ইসরাইলের মিসর আগমন থেকে মূসা (আ.)-এর সাথে তাঁর বংশধরদের মিসর ত্যাগ পর্যন্ত সময়কাল ২১৫ বছর বলে দাবি করেন ইহুদি ও খ্রিষ্টান ঐতিহাসিকরা। এজন্য ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, হিব্রু বাইবেলের এ তথ্যটা ভুল। তারা বলেন: শমরীয় তৌরাতে এখানে কেনান দেশ ও মিসর উভয় দেশে মোট ৪৩০ বছর থাকার কথা বলা হয়েছে এবং এটাকেই তারা সঠিক বলে গণ্য করেন।
বাস্তবে মিসরে বনি-ইসরাইলদের অবস্থান ২১৫ বছর নয়, বরং দেড়শ বছর মত ছিল বলেই প্রতীয়মান। ইয়াকুব বা ইসরাইলের পুত্র লেবি, তার পুত্র কহাৎ, তার পুত্র অম্রম (Amram: ইমরান), তার পুত্র মোশি (মূসা আ.)। মোশির দাদা কহাৎ জন্মের পরে মিসরে আগমন করেন। আমরা মনে করতে পারি যে, কহাৎ ৩০/৪০ বছর বয়সে ইমরানের জন্ম দেন আর ইমরান ৪০/৫০ বছরে মোশিকে জন্ম দেন। মোশি ৬৫/৭০ বছর বয়সে বনি-ইসরাইলদের নিয়ে মিসর ত্যাগ করেন। এতে মনে হয় মিসরে ইস্রায়েলীয়দের অবস্থান ছিল কমবেশি দেড়শ বছর।
হালাল ও হারাম প্রাণি বিষয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘খরগোশ জাবর কাটলেও তার খুর চেরা নয়, সে জন্য তাও তোমাদের পক্ষে নাপাক।’’ (লেবীয়, ১১/৬, মো.-১৩)
খরগোশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ সকল মানুষ, এবং প্রাণি বিজ্ঞানীরা জানেন যে, বাইবেলের এ কথাটা ভুল। কারণ খরগোশ কখনোই জাবর কাটে না। আমেরিকান বাইবেল গবেষক স্কট বিডসট্রাপ (Scott Bidstrup) A Brief Survey of Biblical Errancy: ‘বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তি বিষয়ক একটা সমীক্ষা’ প্রবন্ধে লেখেছেন: “Hares don't chew a cud. Hares are lagomorphs, not ruminants (members of the cattle family). Only ruminants chew cud, lagomorphs do not.” ‘‘খরগোশ জাবর কাটে না। খরগোশ জাবরবিহীন স্তন্যপায়ী প্রাণি, খরগোশ রোমন্থক শ্রেণির প্রাণি নয় বা গোমহিষাদি পশু নয়। শুধু রোমন্থক- গোমহিষাদি প্রাণি জাবর কাটে; খরগোশ জাতীয় প্রাণি জাবর কাটে না।’’[1]
এ প্রসঙ্গে খ্রিষ্টান প্রচারকদের ব্যাখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন:
The Apologist's Explanation: For hares, they note that rabbits (but don't say anything about hares, which aren't rabbits anyway even though they superficially resemble each other) occasionally chew their fecal pellets as if it were a cud. The Rational Explanation: The author of Leviticus obviously didn't have much of an understanding of the most rudimentary of biological science. A fecal pellet is not a cud. A cud is the product of the rumen, a chamber of the stomach of ruminants. A fecal pellet is a product of the lower intestine. Besides, coprophagy (the eating of excrement) has only very rarely been observed in hares anyway. Again, if this is God's word, he is displaying a good deal of ignorance of what he allegedly created.
‘‘প্রচারকরা এ ভুলের ব্যাখ্যায় বলেন: খরগোশ জাতীয় প্রাণি র্যাবিট কখনো কখনো নিজের বিষ্ঠার দলা চিবায়, এতে মনে হয় যেন তা জাবর কাটছে। স্কট বলেন, প্রচারকরা র্যাবিটের কথা বললেন, কিন্তু বাইবেলে হেয়ার বা খরগোশের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছুই বললেন না। আর খরগোশ ও র্যাবিট এক নয়, যদিও ভাসাভাসা ভাবে উভয়কে একই মনে হয়। যৌক্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যাখ্যা হল, লেবীয় পুস্তকের লেখক বাহ্যত জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাথমিক বিষয়াদিও তেমন বুঝতেন না। বিষ্ঠা বা গোবরের দলা জাবর নয়। জাবর আসে জাবরকাটা প্রাণির পাকস্থলীর মধ্যে অবস্থিত ‘রুমেন’ নামক কুঠরি থেকে। পক্ষান্তরে গোবর দলা আসে নিম্ন অন্ত্র থেকে। এছাড়া খরগোশের ক্ষেত্রে বিষ্ঠা ভক্ষণ খুবই কম দেখা যায়। সর্বোপরি, এটা যদি ঈশ্বরের বাক্য হয় তবে এ কথার দ্বারা তিনি প্রমাণ করছেন যে, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন বলে বলা হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি ভাল রকমই অজ্ঞ!’’[2]
[2] http://www.bidstrup.com/bible2.htm
হালাল-হারাম পাখি প্রসঙ্গে লেবীয় ১১/১৩-১৯: ‘‘আর পক্ষীগণের মধ্যে এই সকল তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ হইবে; এ সকল অখাদ্য, এ সকল ঘৃণার্হ.... ও বাদুড়।’’
স্কট বিডসট্রাপ (Scott Bidstrup) লেখেছেন: “Leviticus 11:13-19 refers to bats as fowl, when in fact they are mammals. In the Good News bible, he then goes on in 11:20-21 to declare to be an abomination any fowl that "creep, going on all four..." when there is no such a bird. The 'revised' King James Version, distributed by the Gideons, on the other hand, distinguishes insects from birds, which the GNB does not. The Apologist's Explanation The ancients thought of the bats as birds. The Rational Explanation As for bats being birds, where are the feathers? The skin-covered wings, and the hair are good clues that these aren't birds. Maybe a human author of Leviticus might think so, but this is God that is supposed to be writing this. If God created the bats, he surely knew he wasn't creating a bird and wouldn't have said he was.”
‘‘লেবীয় ১১/১৩-১৯ বলছে যে, বাদুড় পাখি। কিন্তু বাস্তবে বাদুড় স্তন্যপায়ী প্রাণি। গুড নিউজ বাইবেল (এবং কিং জেমস ভার্শন) ১১/২০-২১ শ্লোকে বলছে যে, কিছু পাখি চার পায়ে চলাচল করে। অথচ এমন কোনো পাখির অস্তিত্ব নেই। গিডিয়োনস পরিবেশিত সংশোধিত কিং জেমস ভার্শনে অবশ্য পতঙ্গকে পাখী থেকে পৃথক করা হয়েছে। গুড নিউজ বাইবেলে তা করা হয়নি। প্রচারকরা ওজর পেশ করেন যে, প্রাচীন কালের মানুষেরা বাদুড়কে পাখি মনে করত। যৌক্তিক ব্যাখ্যা হল বাদুড়কে পাখি মনে করা হবে কেন? বাদুড়ের পালক কোথায়? বাদুড়ের চামড়ায় ঢাকা ডানা এবং চুল তাকে পাখি মনে না করার সুন্দর সূত্র। লেবীয় পুস্তকের মানুষ লেখক বাদুড়কে পাখি বলে মনে করে থাকতে পারেন। কিন্তু বাইবেল তো ঈশ্বর লেখেছেন বলেই দাবি করা হয়। যদি ঈশ্বর বাদুড়কে সৃষ্টি করে থাকেন তবে নিশ্চিত জানতেন যে, এটাকে তিনি পাখি হিসেবে সৃষ্টি করেননি এবং তিনি এটাকে পাখি বলতেন না।’’[1]
বাইবেল বলছে, ভাইয়ের জীবদ্দশায় ভাবীকে বিয়ে করলে তাদের সন্তান হবে না এবং চাচী বা মামীর সাথে সহবাস করলে তাদের সন্তান হবে না। লেবীয় ২০/২০-২১: কি. মো.-২০০৬: ‘‘যদি কেউ চাচী বা মামীর সংগে সহবাস করে, তবে সে তার চাচা বা মামার অসম্মান করে। এর জন্য তাদের দু’জনকেই দায়ী করা হবে। তারা সন্তানহীন অবস্থায় মরবে। ভাই জীবিত থাকা অবস্থায় যে তার স্ত্রীকে বিয়ে করে সে একটা জঘন্য কাজ করে। এতে সে তার ভাইয়ের অসম্মান করে। তাদের কোন সন্তান হবে না।’’ কি. মো.-২০১৩: আপন ভাইয়ের স্ত্রীর ইজ্জত নষ্ট করাতে তারা নিঃসন্তান থাকবে।’’
কথাগুলো বাস্তবে ভুল। এরূপ অগণিত মানুষ অনেক সন্তান-সন্ততির পিতামাতা হয়েছেন। ভাইয়ের তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ভাইয়ের জীবদ্দশায় বিবাহ করে সন্তান-সন্ততি লাভ করা মানুষের অভাব নেই। তেমনি চাচী বা মামীর সাথে ব্যভিচার করার কারণে ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণী নিঃসন্তান মারা গিয়েছে বলেও কোনো প্রমাণ নেই।
খ্রিষ্টান প্রচারক হয়ত বলবেন যে, এখানে মৃত্যুদণ্ড-র কথা বলা হয়েছে। চাচী বা মামীর সাথে ব্যভিচার করলে অথবা ভাবীকে বিবাহ করলে মৃত্যুদণ্ড হবে; কাজেই তাদের সন্তান হবে না। বাইবেলের পাঠ তাদের এ ব্যাখ্যা প্রমাণ করে না। এরূপ ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীর মৃত্যুদণ্ড হলেও তাদের সন্তানহীন অবস্থায় মৃত্যু নিশ্চিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা, বিবাহ করলে মৃত্যুদণ্ড হবে কেন?
শুমারী ১/৪৪-৪৭ (মো.-১৩): ‘‘এ সব লোককে মূসা ও হারুন ... গণনা করলেন। নিজ নিজ পিতৃকুল অনুসারে বনি-ইসরাইল, অর্থাৎ বিশ বছর ও তার চেয়েও বেশি বয়স্ক ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষ লোকদের গণনা করা হল। তাদের গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল ছয় লক্ষ তিন হাজার পাঁচ শত পঞ্চাশ। কিন্তু লেবীয়দের তাদের পিতৃবংশানুসারে তাদের মধ্যে গণনা করা হল না।’’
যাত্রাপুস্তকে ১২/৩৭: ‘‘তখন বনি-ইসরাইলেরা শিশু ছাড়া কমবেশ ছয় লক্ষ পদাতিক পুরুষ...।’’
এ থেকে জানা যায় যে, ইস্রায়েল-সন্তানরা যখন মোশি ও হারোনের সাথে মিসর ত্যাগ করে তখন তাদের ২০ বছরের অধিক বয়সের যুদ্ধে সক্ষম পুরুষদের সংখ্যা ছিল ছয় লক্ষের অধিক (৬,০৩,৫৫০)। চার প্রকারের মানুষকে এ গণনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে: ১. লেবীর বংশের সকল নারী, ২. লেবীয় বংশের সকল পুরুষ, ৩. অন্যান্য সকল বংশের সকল নারী এবং ৪. সকল বংশের ২০ বছরের কম বয়স্ক সকল যুবক ও কিশোর পুরুষ। যদি এ চার প্রকারের নারী, পুরুষ ও যুবক-কিশোরদের গণনায় ধরা হয় তাহলে মিসর ত্যাগকালে বনি-ইসরাইলের সংখ্যা কমবেশি ২৫ লক্ষ হতে হবে। ৬ লক্ষ বয়স্ক পুরুষের জন্য ন্যূনতম ৬ লক্ষ স্ত্রী। প্রতি পরিবারে ২০ বছরের কম বয়স্ক অন্তত দুটো সন্তান হিসেবে আরো বার লক্ষ এবং লেবীয় বংশের অন্তত এক লক্ষ মানুষ।
এটা একটা অবাস্তব ও অসম্ভব বিষয়। কারণ:
প্রথমত: ইস্রায়েল-সন্তানরা যখন মিসরে প্রবেশ করে তখন তাদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ জন। (আদিপুস্তক ৪৬/২৭, যাত্রাপুস্তক ১/৫, দ্বিতীয় বিবরণ ১০/২২)
দ্বিতীয়ত: ইস্রা্য়েল-সন্তানরা মিসরে অবস্থান করেছিলেন সর্বোচ্চ ২১৫ বছর।
তৃতীয়ত: মিসর ত্যাগের ৮০ বছর পূর্ব থেকে তাদের সকল পুত্র সন্তানকে হত্যা করা হত এবং কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখা হত। (যাত্রাপুস্তক ১/১৫-২২)
৭০ জন মানুষ মিসরে এসে ২০০ বছর বসবাস করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ আশি বছর যাবৎ যাদের সকল পুত্রসন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ বছর বা তার অধিক যুবক ও পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ! সর্বমোট প্রায় ২৫ লক্ষ!!
আমরা যদি পুত্র সন্তান হত্যার বিষয়টা একেবারে বাদ দিই এবং মনে করি যে, ইস্রায়েল সন্তানরা মিসরে অবস্থানকালে তাদের জনসংখ্যা এত বেশি বৃদ্ধি পেত যে, প্রতি ২৫ বছরে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেত, তাহলেও তাদের সর্বমোট জনসংখ্যা ২১৫ বছরে ৭০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার)-এর অধিক হতে পারে না।
মোশির পিতা ইমরান (Amram: অম্রম), তার পিতা কহাৎ, তার পিতা লেবি, তার পিতা যাকোব বা ইসরাইল। ইসরাইল ও মোশির মধ্যে তিন পুরুষ মাত্র। (যাত্রাপুস্তক ৬/১৬-২০, গণনাপুস্তক ৩/১৭-১৯ ও ১ বংশাবলি ৬/১৮) মাত্র চার পুরুষে ৭০ জনের বংশধর ২৫ লক্ষ হওয়া অসম্ভব বিষয়।
নিম্নের বিষয়গুলো এ ভুলকে আরো নিশ্চিত করে:
(ক) বনি-ইসরাইলরা যখন মিসর পরিত্যাগ করেন তখন তাদের সাথে ছিল গৃহপালিত পশুর বিশাল বাহিনী। সকল মানুষ ও পশু এক রাতের মধ্যে সমুদ্র পার হয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন পথ চলতেন এবং তাদের যাত্রার জন্য মোশির নিজের মুখের সরাসরি নির্দেশই যথেষ্ট ছিল। তারা সমুদ্র অতিক্রম করার পরে সিনাই পর্বতের পার্শ্বে ১২টি ঝর্ণার পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। (যাত্রাপুস্তক ১২/৩৮-৪২)
যদি তাদের সংখ্যা এ সময়ে ২০/২৫ লক্ষ হত তাহলে কখনোই এক রাতে তারা সকল মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনী সমুদ্র অতিক্রম করতে পারতেন না, মোশির মুখের কথা শুনেই সকলে যাত্রা শুরু করতে পারতেন না এবং সিনাই প্রান্তরের সীমিত স্থানে ১২টা ঝর্ণার পাশে তাদের এত মানুষ ও পশুর বিশাল বাহিনীর স্থান সংকুলান হত না।
(খ) মিসর ত্যাগের সময়ে বনি-ইসরাইলের মধ্যে মাত্র দু’জন ধাত্রী ছিল: শিফ্রা ও পূয়া। ফেরাউন এ দু’ ধাত্রীকে নিদের্শ প্রদান করেন যে, তোমরা ইব্রীয় (ইসরাইলী) মহিলাদের সন্তান প্রসব করানোর সময় তাদের পুত্র সন্তান হলে হত্যা করবে এবং কন্যা সন্তান হলে তাকে জীবিত রাখবে। (যাত্রাপুস্তক ১/১৫-২২) যদি বনি-ইসরাইলদের সংখ্যা এত বেশি হত তবে কোনো অবস্থাতেই মাত্র দু’জন ধাত্রী তাদের সকলের জন্য ধাত্রীকর্ম করতে পারত না। বরং তাদের মধ্যে শত শত ধাত্রী থাকত।
(গ) এখানে দেখছি, মিসর পরিত্যাগের সময় ইসরায়েলীয়দের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ লক্ষ। মিসর থেকে তারা বেরিয়ে আসেন আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ সালের দিকে। এর প্রায় ৫০০ বছর পরে ইসরাইলের রাজা ছিলেন আহাব (Ahab)। বাইবেল উল্লেখ করেছে যে, তার সময়ে ‘‘সমস্ত লোক অর্থাৎ সমস্ত বনি-ইসরাইলকে সংগ্রহ করলে সাত হাজার জন হল।’’ (১ বাদশাহনামা ২০/১৫, মো.-১৩)। ২০০ বছরে ৭০ জন ২৫ লক্ষ হলেন। এর পরের ৫০০ বছরে ২৫ লক্ষ থেকে কমে ৭ হাজার হলেন!
উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখছি যে, মিসর ত্যাগের সময় ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যার বিষয়ে গণনা পুস্তক ও যাত্রাপুস্তকের বর্ণনা ভুল ও অসত্য।
প্রাচীনকাল থেকে ফিলিস্তিনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ‘আমালেক’ (Amalekites) জাতি বসবাস করতেন। কেরির অনুবাদে ‘অমালেক’ এবং অন্যান্য অনুবাদে ‘আমালেক’। তৌরাতে বারবার বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর আমালেক জাতির স্মৃতি আকাশের নিচে থেকে চিরতরে মুছে দিবেন:
হিজরত/ যাত্রাপুস্তক ১৭/১৪ (মো.-১৩): ‘‘পরে মাবুদ মূসাকে বললেন... আমি আসমানের নিচে থেকে আমালেকের নাম (মূল ইংরেজি: আমালেকের স্মৃতি the remembrance of Amalek) নিঃশেষে মুছে ফেলব।’’
দ্বিতীয় বিবরণ ২৫/১৯ (মো.-১৩): ‘‘অতএব তোমার আল্লাহ মাবুদ যে দেশ সত্ত্বাধিকারের জন্য তোমাকে দিচ্ছেন, সেই দেশে তোমার আল্লাহ মাবুদ চারিদিকের সকল দুশমন থেকে তোমাকে বিশ্রাম দেবার পর তুমি আসমানের নিচ থেকে আমালেকের স্মৃতি লোপ করিবে (the remembrance of Amalek); এই কথা তোমরা ভুলে যেও না।’’
বাইবেল সমালোচকরা বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা অমানবিক ও নৃশংস নির্দেশ। এখানে একটা জনগোষ্ঠীকে সমূলে নির্মূল করার, জাতিগত নিধন (Ethnic Cleansing) এবং ঢালাও গণহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া লক্ষণীয় যে, বাইবেলে শুধু আমালেক জাতিকে নিধন করার কথাই বলা হয়নি, বরং তাদের স্মরণ বা স্মৃতি আকাশের নিচে থেকে চিরতরে মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাইবেলের মধ্যে আমালেক প্রসঙ্গ লেখার ফলে আমালেকদের স্মৃতি আকাশের নিচে চিরস্থায়ী করা হয়েছে। কাজেই আমালেকদের স্মৃতি মুছে ফেলার কথাটা ভুল।[1]
দ্বিতীয় বিবরণ ২৩/২: ‘‘জারজ ব্যক্তি মাবুদের সমাজে প্রবেশ করবে না; তার দশম পুরুষ পর্যন্তও মাবুদের সমাজে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ (কেরি ও কি. মো.-১৩) কি. মো.-০৬: ‘‘কোনো জারজ লোক মাবুদের বান্দাদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না; তার চৌদ্দ পুরুষেও কেউ তা করতে পারবে না।’’
কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ সংস্করণে অনুবাদকরা আরো চার পুরুষ বাড়িয়েছেন। কিং জেমস ও রিভাইজড স্টান্ডার্ড উভয় ভার্শনেই (tenth generation) রয়েছে। আমরা জানি না অনুবাদকরা চার পুরুষ কোথা থেকে বাড়ালেন।
সর্বাবস্থায় এ বক্তব্যটা ভুল। দাউদ (আ.)-এর দশম পূর্বপুরুষ পেরস তার দাদা যিহূদার জারজ সন্তান ছিলেন। যিহূদা তার পুত্রবধু তামরের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন এবং এ ব্যভিচারের ফলে পেরসের জন্ম হয়। (আদিপুস্তকের ৩৮/১২-৩০)
মথি ১/১-৬ এবং লূক ৩/৩১-৩৩ অনুসারে দাউদের বংশতালিকা নিম্নরূপ: (১) দাউদ বিন (২) যিশয় বিন (৩) ওবেদ বিন (৪) বোয়স বিন (৫) সল্মোন বিন (৬) নহশোন বিন (৭) অম্মীনাদব বিন (৮) রাম বিন (৯) হিষ্রোন বিন (১০) পেরস বিন (১১) যিহূদা বিন (১২) ইয়াকুব (যাকোব) বিন (১৩) ইসহাক বিন (১৪) ইবরাহিম (আ.)। মথি ১/৩-৬: ‘‘যিহূদার (এহুদার) পুত্র পেরস... পেরসের পুত্র হিয্রোন, হিয্রোণের পুত্র রাম, রামের পুত্র অম্মীনাদব, অম্মীনাদবের পুত্র সলমোন, সলমোনের পুত্র বোয়স ... বোয়সের পুত্র ওবেদ ... ওবেদের পুত্র যিশয় (ইয়াসির: Jesse), যিশয়ের (ইয়াসিরের) পুত্র দাউদ।’’ (কেরি ও কি. মো.-১৩)
এভাবে পেরস থেকে শুরু করলে দাউদ দশম পুরুষ। বাইবেলের বর্ণনায় দাউদ সদাপ্রভুর সমাজের প্রধান। বাইবেলের ভাষায় তিনি ঈশ্বরের পুত্র- ইবনুল্লাহ, ঈশ্বরের প্রথম পুত্র, ঈশ্বরের জন্মদেওয়া পুত্র, ঈশ্বরে মাসীহ বা খ্রিষ্ট ও ঈশ্বরের নবী। বাইবেলের উপরের বক্তব্য সত্য হলে দাউদের সকল মর্যাদাই বাতিল ও ভিত্তিহীন বলে গণ্য হবে।
বাইবেলের কোনো কোনো সংস্করণে লূকের বংশ তালিকায় দাউদের অষ্টম পূর্বপুরুষ ‘রাম’ ও নবম পূর্বপুরুষ ‘হিয্রোন’-এর মধ্যে অদমান ও অর্ণি দুটো নাম সংযোজন করা হয়েছে (লূক ৩/৩৩)। পাঠক মথির প্রথম অধ্যায়ের ৩ শ্লোকের সাথে লূকের তৃতীয় অধ্যায়ের ৩৩ শ্লোক মিলিয়ে পড়লেই এ বৈপরীত্য জানতে পারবেন।
সম্ভবত এ সংযোজনের উদ্দেশ্য দাউদকে বাঁচানো, যেন তিনি পেরসের দশম পুরুষ না হন। কিন্তু বিকৃতিকারীরা মথির মধ্যে সংযোজন করতে ভুলে গিয়েছেন। ফলে সকল সংস্করণেই মথির বংশ তালিকায় দাউদ পেরসের দশম পুরুষ। বিশেষ করে মথি নিশ্চিত করেছেন যে পরবর্তী প্রত্যেক ব্যক্তি পূর্বের ব্যক্তির জন্মদেওয়া বা ঔরসজাত সন্তান। এতে দাউদ যে জারজ সন্তানের দশম পুরুষ তা নিশ্চিত হয়েছে।