নোহ বা নূহ (আ.)-এর জাহাজের বিষয়ে বাইবেল বলছে: ‘‘জাহাজটা তুমি এভাবে তৈরি করবে: সেটা লম্বায় হবে তিনশো হাত, চওড়ায় পঞ্চাশ হাত, আর উচ্চতা হবে ত্রিশ হাত। জাহাজটার ছাদ থেকে নিচে এক হাত পর্যন্ত চারিদিকে একটা খোলা জায়গা রাখবে আর দরজাটা হবে জাহাজের এক পাশে। জাহাজটাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থাকবে।’’ (পয়দায়েশ/ আদিপুস্তক ৬/১৫-১৬, মো.-০৬)
আমেরিকান গবেষক স্কট বিডস্ট্রাপ (Scott Bidstrup) ‘বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে লেখেছেন:
‘‘আদিপুস্তক ৬/১৫ বলছে যে, নোহ-এর জাহাজ ৩০০X৫০X৩০ হাত। আমরা জানি যে, এক হাত প্রায় ১৮ ইঞ্চি। এতে তিনটা অসম বিস্তারে জাহাজের আয়তন সর্বোচ্চ ১৫,১৮,৭৫০ ঘনফুট। পৃথিবীর তিন কোটি প্রজাতির প্রাণি এক জোড়া করে এবং সকল প্রাণির কয়েক বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য এ আয়তনের জাহাজের মধ্যে রাখার নির্দেশ। এ আয়তনের জাহাজের মধ্যে তা সম্ভব নয়।
প্রচারকরা আপত্তি করে বলেন, আপনি কিভাবে জানলেন তা সম্ভব নয়? আপনি কি কখনো পরীক্ষা করে দেখেছেন।
যুক্তি ও বিবেকের দাবি যে, এ সকল প্রাণিকে কোনো রকম শয়নের বা দাঁড়ানোর স্থান না দিয়ে, এমনকি কোনো খাদ্য না দিয়ে শুধু যেনতেন ভাবে স্ত্তপ করে রাখা হয়েছিল বলে মনে করা সম্ভব নয়। সাদাসিদে কথা হল, মহাপস্নাবনের কাহিনী যিনি লেখেছেন তিনি পৃথিবীর প্রাণি জগতের বৈচিত্র্যের ব্যাপকতা বুঝেননি। আয়তনগত সমস্যা অনুধাবন করার জন্য এরূপ একটা জাহাজ বানিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না। শুধু আপনি প্রত্যেক প্রাণির দেহের আয়তন, মোট প্রজাতির সংখ্যা দিয়ে গুণ করলেই তা জানতে পারবেন। শুধু ব্যাকটেরিয়া বাদ যাবে। তবে সকল কীট-পতঙ্গ হিসেবের মধ্যে গণিত হবে। এতে পৃথিবীতে স্থলে অবস্থানরত প্রাণি প্রজাতির সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। একে দুই দিয়ে গুণ করুন। এর সাথে সকল প্রজাতির সকল প্রাণিকে অন্তত ২০ বছর বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের স্থান যোগ করুন। এতে খুব সহজেই আপনার কাছে সুস্পষ্ট হবে যে, এটা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর তিন কোটি প্রজাতির প্রাণি সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সময়ের বিষয়টা রয়েছে। যদি একটা প্রজাতির একটা নারী ও একটা পুরুষ প্রাণি আপনি ১০ সেকেন্ডে সংগ্রহ করতে পারেন তবে তিন কোটি প্রাণি সংগ্রহ করতে আপনার ১০ বছর লাগবে। এরপর আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনাকে যেতে হবে পেঙ্গুইন আনতে এনটার্কটিকায়, মেরু ভল্লুক আনতে উত্তর মেরুতে, বাঘ আনতে এশিয়ায়, ক্যাঙ্গারু আনতে অস্ট্রেলিয়ায়, গরিলা আনতে আফ্রিকায়, টাপির ও এগুইটি আনতে দক্ষিণ আমেরিকায় ....। এগুলোকে তাদের পর্যাপ্ত খাদ্যসহ এনে জাহাজে রাখতে হবে। সব কিছু ১০ সেকেন্ডের মধ্যে। পস্নাবন শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী দশ বছর ধরে ১০ সেকেন্ডে এক প্রজাতির এক জোড়া হিসেবে সেগুলোকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এরপর রয়েছে পরিবেশগত সমস্যা। সত্যই যদি বিশ্বব্যাপী বন্যায় পাঁচ মাইল পরিমাণ গভীর পানি জমে তবে পানির লবণাক্ততা দুই তৃতীয়াংশ কমে যাবে। আর পানির লবণাক্ততা দুই তৃতীয়াংশ কমার পরে অসংখ্য কোমল-সংবেদনশীল জলজ প্রজাতির প্রাণি কিভাবে বাঁচল? বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি পরিণত পরিবেশ ছাড়া বাঁচতে পারে না। আর এরূপ পরিবেশ তৈরি হতে কয়েক শতাব্দীর প্রয়োজন। এ সকল প্রাণির কি হল? সুস্পষ্টত এ গল্পটা শুধু অসম্ভবই নয়; উপরন্তু তা হাস্যকর।’’[1]