কাজীগণ ১৮ অধ্যায়ে এ জাতীয় আরেকটা ঘটনা আমরা দেখি। কোনোরূপ ‘কারণ’ বা ‘অজুহাত’ ছাড়াই শুধুই দখলের জন্য একটা নিরাশ্রয়, নিরাপদ, শান্তিপ্রিয় জনপদ আক্রমণ করা, আক্রমণের পর তাদেরকে সেখানে বসবাসের সুযোগ বা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করা এবং শহরটি পুড়িয়ে দেওয়ার কাহিনী। এ কাহিনী পড়ে বিশ্বাসী খ্রিষ্টানরা কষ্ট পান কিনা তা জানি না, তবে আমাদের খুবই কষ্ট লেগেছে। বাইবেল বলছে, এ সকল অসহায় শান্তিপ্রিয় অযোদ্ধা শিশু, কিশোর ও নারী-পুরুষের স্রষ্টা ঈশ্বরই নাকি তাদেরকে এভাবে হত্যা করার অনুমোদন দিলেন। আবার ঈশ্বর বা তাঁর পাক রূহ সগৌরবে উপভোগ্যভাবেই এ নির্মমতার বর্ণনা দিচ্ছেন কাজীগণ ১৮ অধ্যায়ে:
(ক) শুধুই দখলের জন্য গণহত্যায় ঐশ্বরিক অনুমোদন
‘‘সেই সময় বনি-ইসরাইলদের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিল না। ইসরাইলীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দান গোষ্ঠীর লোকেরা তখনও কোন সম্পত্তি দখল করে নিতে পারে নি। কাজেই তারা বসবাস করার উদ্দেশ্যে নিজেদের জন্য একটা জায়গার খোঁজ করছিল। সেজন্য দানীয়রা সরা ও ইষ্টায়োল থেকে তাদের পাঁচজন যোদ্ধাকে খোঁজ-খবর করার জন্য পাঠিয়ে দিল যাতে তারা দেশটাকে ভাল করে দেখে আসতে পারে। ... তাতে লোকেরা আফরাহীমের পাহাড়ী এলাকায় ঢুকল এবং রাতে মিকাহর বাড়ির কাছে রইল। সেই সময় তারা সেই লেবীয় যুবকের গলার আওয়াজ চিনতে পারল। সেজন্য তারা ভিতরে ঢুকে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাকে এখানে কে এনেছে? এখানে তুমি কি করছ? আর কেনই বা এখানে এসেছে?’ সে বলল, ‘মিকাহ আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি আমাকে বেতন দিয়ে রেখেছেন এবং আমি তাঁর ইমাম।’ তারা তাকে বলল, ‘দয়া করে তুমি আল্লাহর কাছ থেকে জেনে নাও আমাদের যাত্রা সফল হবে কি না।’ জবাবে ইমাম তাদের বলল, ‘তোমরা শান্তিতে যাও; মাবুদের ইচ্ছা অনুসারে তোমরা যাচ্ছ।’
(খ) শক্তিশালীর সাথে যুদ্ধ নয়; অসহায় শান্তিপ্রিয়কে হত্যা কর
সেই পাঁচজন লোক তখন সেখান থেকে লয়ীশে গেল। তারা দেখল সেখানকার লোকেরা সিডনীয়দের মত নির্ভয়ে, শান্তিতে এবং নিরাপদে বাস করছে। সেই জায়গায় এমন কেউ নেই যে, তাদের উপর জুলুম করতে পারে। এছাড়া তারা সিডনীয়দের থেকে অনেক দূরে বাস করছে এবং অন্য কারও সংগে তাদের কোন সম্বন্ধ নেই। সেই পাঁচজন যখন সরা ও ইষ্টায়োলে ফিরে আসল তখন তাদের লোকেরা তাদের জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমরা কি দেখলে?’ জবাবে তারা বলল, ‘আমরা যে জায়গা দেখে এসেছি তা চমৎকার। চল, আমরা তাদের হামলা করি । তোমরা কি চুপ করে বসে থাকবে? সেখানে গিয়ে জায়গাটা দখল করে নিতে দেরী করো না। তোমরা সেখানে গেলে দেখতে পাবে যে, সেখানকার লোকেরা একটা মস্ত বড় জায়গায় নিরাপদে বাস করছে। আল্লাহ তোমাদের হাতে জায়গাটা দিয়ে রেখেছেন। দুনিয়ার কোন জিনিসের অভাব সেখানে নেই।
(গ) শান্তিপ্রিয় বিধর্মীর চেয়ে মূর্তিপূজক বনি-ইসরাইল ঈশ্বরের বেশি প্রিয়
এই কথা শুনে দান গোষ্ঠীর ছ’শো লোক যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরা আর ইষ্টায়োল থেকে যাত্রা শুরু করল। ... সেখান থেকে তারা আফরাহীমের পাহাড়ী এলাকায় ঢুকে মিকাহর বাড়ীতে গেল। যে পাঁচজন লোক লয়ীশে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে এসেছিল তারা তাদের লোকদের বলল, ‘তোমরা কি জান যে, এই ঘরগুলোর একটাতে একখানা এফোদ, কতগুলো দেবমূর্তি, একটা খোদাই করা মূর্তি ও একটা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা আছে? এখন তোমাদের কি করতে হবে তা তোমরা ভেবে দেখ।’ এই কথা শুনে তারা মিকাহর বাড়ীর সেই যুবকের ঘরে গেল এবং তার ভালমন্দের খবরাখবর নিল। দান-গোষ্ঠীর সেই ছ’শো লোক যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়ীতে ঢুকবার পথে গিয়ে দাঁড়াল। সেই ইমামও সেই ছ’শো লোকের সংগে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন দেশটার খোঁজখবর নিয়ে যারা এসেছিল সেই পাঁচজন লোক ভিতরে ঢুকে খোদাই করা মূর্তিটা, এফোদটা, দেবমূর্তিগুলো এবং ছাঁচে ঢালা প্রতিমাটা নিয়ে নিল। এই লোকেরা যখন মিকাহর ঘর থেকে সেগুলো নিয়ে আসছিল তখন সেই ইমাম তাদেরকে বলল, ‘তোমরা কি করছ?’ জবাবে তারা তাকে বলল, ‘চুপ, মুখে হাত চাপা দিয়ে তুমি আমাদের সংগে এস; আমাদের ইমাম হয়ে পিতার মত হও। একজন পরিবারের ইমাম হওয়ার চেয়ে কি বনি-ইসরাইলদের একটি গোষ্ঠীর ইমাম হওয়া ভাল নয়?’ এই কথা শুনে সেই ইমাম খুব খুশী হল। সে নিজেই সেই এফোদ, দেবমূর্তিগুলো এবং খোদাই করা মূর্তিটা নিয়ে সেই লোকদের সংগে গেল। লোকেরা তাদের ছোট ছেলেমেয়ে, পশুপাল এবং তাদের অন্যান্য জিনিসপত্র দলের সামনের দিকে রেখে সেখান থেকে চলে গেল। ... মিকাহর তৈরী করা সব মূর্তি এবং তার ইমামকে নিয়ে তারা লয়ীশে গেল।
(ঘ) নিরাপদ নিরস্ত্র অসহায়দের গণহত্যার সগৌরব ঐশ্বরিক বিবরণ
‘‘সেখানকার শান্তিতে এবং নিরাপদে থাকা লোকদের তারা আক্রমণ করে হত্যা করল এবং তাদের শহরটা পুড়িয়ে দিল। লয়ীশের লোকদের রক্ষা করবার মত কেউ ছিল না, কারণ তাদের শহরটা সিডন থেকে অনেক দূরে ছিল এবং অন্য কোন লোকদের সংগে তাদের সম্বন্ধ ছিল না। ... দান-গোষ্ঠীর লোকেরা শহরটা আবার তৈরী করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল। ... দান-গোষ্ঠীর লোকেরা সেখানে নিজেদের জন্য সেই খোদাই করা প্রতিমাটা স্থাপন করল।’’ (কাজীগণ ১৮/১-৩১)