আমরা দেখেছি, বাইবেলের মূল ভিত্তি ইসরাইল বা যাকোব (ইয়াকূব আ.)। তাঁর নামে প্রচলিত একটা গল্পে বলা হয়েছে যে, তিনি প্রাণির প্রজননের প্রাকৃতিক ধারা পাল্টে ফেলেন। আমরা দেখেছি, তিনি দু’ সহোদরাকে বিবাহ করার জন্য ১৪ বছর তাঁর শ্বশুর লাবনের বাড়িতে দাস্যকর্ম করেন। এক পর্যায়ে লাবন তাকে কিছু প্রতিদান দিতে চান। লাবন বলেন: ‘‘তোমাকে আমার কি দিতে হবে?’’ ইয়াকুব বললেন, ‘‘আমাকে আপনার কিছুই দিতে হবে না। তবে আপনি যদি আমার একটা কথা রাখেন তাহলে আমি আবার আপনার পশুর পাল চরাব ও তাদের যত্ন করব। আমি আজই আপনার সমস্ত পশুপালের মধ্যে গিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট এবং বড় বড় ছাপের ভেড়া ও ছাগল আর ভেড়ার কালো বাচ্চাগুলো আলাদা করে রাখতে চাই। সেগুলোই হবে আমার বেতন।’’ (পয়দায়েশ ৩০/৩১-৩৩)
এভাবে শ্বশুরের সাথে যাকোবের চুক্তি হল যে, বেতন হিসেবে তিনি শ্বশুরের পশুপাল থেকে শুধু ডোরাকাটা ছাগল ও ভেড়া এবং কালো ভেড়াগুলো তিনি বেতন হিসেবে নিবেন। এ দাবি মেনে নিয়ে কিভাবে শ্বশুর লাবন ভাগনে ও জামাই যাকোবকে ঠকানোর চেষ্টা করলেন এবং যাকোব কিভাবে দ্রুত বড়লোক হলেন তার বিবরণ শুনুন:
‘‘লাবন কিন্তু সেই দিনই তার পশুপাল থেকে ইয়াকুবের পাওনা ডোরাকাটা ও বড় বড় ছাপের সব ছাগল এবং ছোট ছোট ও বড় বড় ছাপের সব ছাগী, অর্থাৎ যাদের গায়ে জায়গায় জায়গায় সাদা লোম ছিল সেগুলো আর ভেড়ার কালো বাচ্চাগুলো সরিয়ে রাখলেন। ... পরে ইয়াকুব লিবনি, লূস ও আর্মোণ গাছের কাঁচা ডাল নিয়ে তার উপর থেকে রেখার মত করে ছাল ছাড়িয়ে নিলেন। তাতে মধ্যে মধ্যে তার নীচের সাদা কাঠ দেখা যেতে লাগল। পশুর পাল যখন পানি খেতে আসত তখন তিনি সেই ডালগুলো নিয়ে তাদের সামনে পানির গামলাগুলোর মধ্যে রাখতেন। এখানেই তারা পানি খাবার জন্য জড়ো হত এবং মিলিত হত। এভাবে সেই ডালগুলোর সামনে মিলিত হবার পর তাদের যে সব বাচ্চা হত সেগুলো হত ডোরা কাটা না হয় বড় বড় কিংবা ছোট ছোট ছাপের। ইয়াকুব বাচ্চা ছাগল ও বাচ্চা ভেড়া আলাদা করতেন, আর বাচ্চা ছাগী ও বাচ্চা ভেড়ীগুলো নিয়ে লাবনের ডোরাকাটা এবং কালো রংয়ের ভেড়ার পালের মধ্যে রাখতেন। এভাবে তিনি তার নিজের জন্য আলাদা একটা পশুপাল গড়ে তুললেন আর সেটাকে তিনি লাবনের পশুপালের সাথে মেশাতেন না। এছাড়া বেশী শক্তিশালী পশুগুলো মিলিত হওয়ার সময় তিনি তাদের পানির গামলার মধ্যে তাদের চোখের সামনে ঐ ডালগুলো রাখতেন যাতে সেই ডালগুলোর সামনেই তারা মিলিত হয়। কিন্তু তিনি দুর্বল ভেড়া বা ছাগলগুলোর সামনে সেই ডালগুলো রাখতেন না। তাতে লাবনের পশুগুলো হত দুর্বল আর ইয়াকুবের পশুগুলো হত শক্তিশালী। ইয়াকুব এভাবে খুব ধনী হয়ে উঠলেন। তাঁর পশুপাল, উট, গাধা, এবং গোলাম ও বাঁদীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। (আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ৩০/৩৫-৪৩)
তাহলে বাইবেল নিশ্চিত করছে যে, কোনো যুগল প্রাণির মিলনের সময় তাদের সামনে যে রঙের বা প্রকারের ডালপালা বা ছবি রাখবেন সন্তান সেই রঙের বা ডিজাইনেরই হবে! কেউ হয়ত মনে করবেন বা দাবি করবেন যে, এটি একটা অলৌকিকত্ব! বিষয়টা সঠিক নয়। বাইবেলে এটাকে অলৌকিকত্ব হিসেবে পেশ করা হয়নি। যাকোব এ কর্ম ঈশ্বরের নির্দেশে বা প্রেরণায় করেননি। বরং ডোরাকাটা ছাগলভেড়া লাভের স্বাভাবিক কৌশল হিসেবে করেছেন। আর ঈশ্বর যদি অলৌকিকভাবেই যাকোবকে ধনী বানাবেন তাহলে আর শ্বশুরের ভেড়া চরিয়ে বড়লোক হওয়ার অর্থ কী? ঈশ্বর তো তাকে সোনা-রূপার খনির সন্ধান দিয়ে বা অলৌকিকভাবে মনিমুক্ত ও সোনারূপা দান করে রাতারাতিই বড়লোক করতেন। সেটা বরং অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হত। অথবা শশুরের দেওয়া প্রথম ডোরাকাটা ও কাল ভেড়াগুলোর অনেক বেশি সংখ্যায় শক্তিশালী বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমেও তা হতে পারত। এটাও গ্রহণযোগ্য হত। এরূপ অবাস্তব কর্মের প্রয়োজন ছিল না।
প্রিয় পাঠক, এমন কোনো বিশ্বাসী খ্রিষ্টানের কথা কি আপনি জানেন, যিনি বাইবেলের এ পদ্ধতিটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে নিজের বা পালিত প্রাণিদের সন্তানের কাঙ্খিত আকার আকৃতি লাভের জন্য এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন?