৮. ১. অযৌক্তিক বিধিবিধান / ৮. ১. ১. কোরবানির নামে পশু পোড়ানো ও রক্ত মাখানো

পূর্ববর্তী দু’ অধ্যায়ে আমরা বাইবেলীয় অশোভনীয়তার মধ্য থেকে ঈশ্বর ও নবীদের প্রসঙ্গ এবং যীশু ও প্রেরিতদের প্রসঙ্গ আলোচনা করেছি। এ অধ্যায়ে আমরা বাইবেলীয় অযৌক্তিকতা ও অশালীনতার (Bible Absurdities, Vulgarities & Obscenities) অন্যান্য কয়েকটা দিক আলোচনা করব। উল্লেখ্য যে, এ অধ্যায়ের অধিকাংশ উদ্ধৃতি কিতাবুল মোকাদ্দস ২০০৬ থেকে গৃহীত।

৮. ১. অযৌক্তিক বিধিবিধান

বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান অনেক বিধান অযৌক্তিক বা অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন বাইবেল সমালোচকরা। আমরা নিম্নে কয়েকটা নমুনা উল্লেখ করছি:

৮. ১. ১. কোরবানির নামে পশু পোড়ানো ও রক্ত মাখানো

বাইবেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিধান পশু, পাখি ও শস্য কোরবানি বা উৎসর্গ করা। তবে লক্ষণীয় হল কোরবানিকৃত পশু বা শস্য পুড়িয়ে ফেলার বিধান। মানুষদেরকে খাওয়ানোর জন্য পশু-প্রাণি জবাই করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মানুষের কল্যাণের কারণে তা পুণ্যকর্ম বলে বিবেচিত। তবে বাইবেলের কোরবানি মানুষের কল্যাণে নয়। জবাইকৃত প্রাণির রক্ত ছিটিয়ে এবং প্রাণিটাকে পুড়িয়ে গোনাহের কাফফারার জন্য। কয়েক প্রকার কোরবানি পুরোটাই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর কয়েক  প্রকার কোরবানির কিছু অংশ পুরোহিত বা যাজক (ইমাম) পাবেন এবং অবশিষ্ট পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আর যে কুরবানির মাংস খাওয়া যায় তাও কুরবানির দিনেই খেয়ে ফেলতে হবে: ‘‘কোরবানীর দিনেই তার মাংস খেয়ে ফেলতে হবে; পরের দিন সকাল পর্যন্ত তার কিছু রেখে দেওয়া চলবে না।’’ (লেবীয়: ২২/৩০) পাঠক যাত্রাপুস্তক ২৯/১০-২৮ এবং লেবীয় পুস্তকের ১ থেকে ৭ অধ্যায় পাঠ করলে বিভিন্ন প্রকারের কুরবানির বিস্তারিত নিয়ম জানতে পারবেন।

বাইবেলীয় কোরবানির মূল উদ্দেশ্য কোরবানির পশুর পোড়া মাংস ও চর্বির ঘ্রাণের দ্বারা ঈশ্বরকে খুশি করা। পবিত্র বাইবেলের অন্যতম নির্দেশনা: পুড়ানো পশুর সৌরভণ্ডখোশবুতে ঈশ্বর খুশি হন এবং এ কারণে মানুষের প্রায়শ্চিত্ত, কাফ্ফারা বা গোনাহ মাফ করেন। মহাপস্নাবনের পরে নোহ তাঁর জাহাজের মধ্যে বিদ্যমান সামান্য কিছু প্রাণির মধ্যে থেকে কয়েকটা পশু ও পাখি নিয়ে কোরবানি করে পুড়িয়ে ফেলেন: ‘‘মাবুদ সেই কোরবানীর খোশবুতে খুশি হলেন এবং মনে মনে বললেন, মানুষের দরুন আর কখনও আমি মাটিকে বদদোয়া দেব না... (আদিপুস্তক/ পয়দায়েশ ৮/২০-২১)।

এভাবে কয়েকটা পশু ও পাখির পোড়া চর্বি বা মাংসের খোশবুতে ঈশ্বর এত খুশি হলেন যে, আর কখনো মহাপস্নাবন দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।

বাইবেলে প্রায় অর্ধশত স্থানে বলা হয়েছে যে, পোড়ানো পশুর সুমিষ্ট স্বাদ-খোশবুতে (sweet savour/ pleasing to the Lord) ঈশ্বর খুশি হন। (আদিপুস্তক ৮/২১; যাত্রাপুস্তক ২৯/১৮; ২৯/২৫; ২৯/৪১; লেবীয় ১/৯; ১/১৩; ১/১৭; ২/২; ২/৯; ২/১২; ৩/৫; ৩/১৬; ৪/৩১; ৬/১৫; ৬/২১; ৮/২১; ৮/২৮; ১৭/৬; ২৩/১৩; ২৩/১৮; গণনাপুস্তক ১৫/৩; ১৫/৭; ১৫/১০; ১৫/১৩; ১৫/১৪; ১৫/২৪; ১৮/১৭; ২৮/২; ২৮/৬; ২৮/৮; ২৮/১৩; ২৮/২৪; ২৮/২৭; ২৯/২; ২৯/৬; ২৯/৮; ২৯/১৩; ২৯/৩৬; যিহিস্কেল ৬/১৯; ২০/৪১...।)

জবাইকৃত প্রাণির রক্ত ছিটানোর উদ্দেশ্য, রক্ত দেখে যেন ঈশ্বর আপন-পর চিনতে পারেন। ঈশ্বর বনি-ইসরাইলদের বলেন: ‘‘সেই সব ঘরের দরজার চৌকাঠের দু’পাশে এবং উপরে কিছু রক্ত নিয়ে লাগিয়ে দেবে ... তোমাদের ঘরে যে রক্ত লাগানো থাকবে সেটাই হবে তোমাদের চিহ্ন। আর আমি সেই রক্ত দেখে তোমাদের বাদ দিয়ে এড়িয়ে যাব..।’’ (যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ১২/৭, ১৩, কি.মো.-২০০৬)

তাহলে ‘কোরবানি’-র উদ্দেশ্য পোড়া মাংসের খোশবু দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করা এবং রক্ত দেখিয়ে নিরাপত্তা পাওয়া। বাইবেলীয় কোরবানিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

(১) ‘burnt sacrifice/ burnt offering’: কেরি: ‘হোমবলি’, জুবিলী: ‘আহুতি’, বাইবেল-২০০০: পোড়ানো-উৎসর্গ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘পোড়ানো কোরবানী’।

(২) ‘meat offering’: কেরি: ‘ভক্ষ্য নৈবেদ্য’, জুবিলী: ‘শস্য নৈবেদ্য’ এবং কি. মো.-২০০৬: শস্য কোরবানী, এবং বা.-২০০০ ও কি. মো.-২০১৩: ‘শস্য উৎসর্গ’।

(৩) ‘peace offering’: কেরি: ‘মঙ্গলার্থক বলি’, জুবিলী: ‘মিলন-যজ্ঞ’, বাইবেল-২০০০: যোগাযোগ উৎসর্গ, কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: যোগাযোগ কোরবানী এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: মঙ্গল কোরবানী।

(৪) ‘sin offering’: কেরি: পাপার্থক বলি, জুবিলী: পাপার্থে বলি, বাইবেল-২০০০: পাপ-উৎসর্গ, কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: গুনাহের জন্য কোরবানী ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: গুনাহ-কোরবানী।

(৫) ‘the trespass offering, কেরি: দোষার্থক বলি, জুবিলী: সংস্কার-বলি, বাইবেল-২০০০: দোষ-উৎসর্গ, কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: দোষের কোরবানী এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: দোষ-কোরবানী।

সকল কোরবানির ক্ষেত্রেই মূল উদ্দেশ্য উৎসর্গকৃত পশুকে পুড়িয়ে ঈশ্বরকে খুশি করা। এ বিষয়ক বাইবেলীয় একটা নির্দেশনা:

‘‘যদি সে গরু দিয়ে পোড়ানো কোরবানী (burnt sacrifice) দিতে চায় তবে সেটা হতে হবে একটা নিখুঁত ষাঁড়। মাবুদ যাতে তার উপর সন্তুষ্ট হন সেজন্য তাকে সেই ষাঁড়টা মিলন-তাম্বুর (জমায়েত-তাঁবুর: the tabernacle of the congregation) দরজার কাছে উপস্থিত হতে হবে। পোড়ানো-কোরবানীর জন্য আনা সেই ষাঁড়টার মাথার উপরে সে তার হাত রাখবে; আর সেটা তার জায়গায় তার গুনাহ্ ঢাকবার জন্য কবুল করা হবে (atonement: কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্তরূপে। কি. মো.-২০১৩: ‘‘আর তা কাফফারা হিসেবে তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে)। তারপর মাবুদের সামনে সে ষাঁড়টা জবাই করবে আর হারুনের যে ছেলেরা ইমাম তারা তার রক্ত দিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে রাখা কোরবানগাহ্টার চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। কোরবানীদাতা ঐ পোড়ানো-কোরবানীর ষাঁড়টার চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তার মাংস টুকরা টুকরা করে কাটবে। ইমাম হারুনের ছেলেরা সেই কোরবানগাহে্র উপরে আগুন জ্বালিয়ে তার উপর কাঠ সাজাবে। তারপর তারা কোরবানগাহে্র উপরকার জ্বলন্ত কাঠের উপরে সেই ষাঁড়ের মাথা, চর্বি ও মাংসের টুকরাগুলো সাজাবে। কোরবানীদাতা সেটার পা এবং পেটের ভিতরের সমস্ত অংশ পানিতে ধুয়ে দেবে এবং ইমাম সেগুলো সুদ্ধ গোটা ষাঁড়টাই কোরবানগাহে্র উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা পোড়ানো-কোরবানী, আগুনে দেওয়া কোরবানীর মধ্যে একটা, যার খোশবুতে মাবুদ খুশী হন  ....

মাবুদের উদ্দেশ্যে এই পোড়ানো কোরবানী যদি কোন পাখী দিয়ে দেওয়া হয় তবে কোরবানীদাতাকে একটা ঘুঘু বা কবুতর আনতে হবে। ইমাম সেটা কোরবানগাহের কাছে নিয়ে যাবে এবং তার মাথাটা মুচড়ে গলা থেকে আলাদা করে নিয়ে কোরবানগাহের উপরে পুড়িয়ে দেবে আর রক্তটা চেপে বের করে কোরবানগাহের একপাশের গায়ের উপর ফেলবে। কোরবানীদাতা পাখীটার গলার থলি ও তার মধ্যকার সব কিছু কোরবানগাহের পূর্বদিকে ছাইয়ের গাদায় ফেলে দেবে। সে ডানা ধরে পাখীটা এমনভাবে ছিঁড়বে যেন সেটা দুই টুকরা হয়ে যায়। তারপর ইমাম সেটা নিয়ে কোরবানগাহের উপরকার জ্বলন্ত কাঠের উপর পুড়িয়ে দেবে। এটা পোড়ানো কোরবানী, আগুনে দেওয়া কোরবানীর মধ্যে একটা, যার খোশবুতে মাবুদ খুশী হন।’’ (লেবীয় ১/৩-১৭)

বাইবেলে দু’শতাধিক স্থানে এভাবে ‘পোড়ানো কোরবানি’ করার নির্দেশনা রয়েছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণিকে এভাবে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। যেমন শলোমন একদিনে ১০০০ পশু এভাবে ‘পোড়ানো কুরবানি’ দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। আর এতে ঈশ্বর এত খুশি হলেন যে, তাঁকে তাঁর প্রার্থিত সব কিছু প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। ‘‘সোলায়মান মাবুদকে মহববত করতেন, সেজন্য তাঁর বাবা দাউদের হুকুম অনুসারে চলাফেরা করতেন; কিন্তু তিনি এবাদতের উঁচু স্থানগুলোতে (বেদিগুলোতে) পশু কোরবানী দিতেন এবং ধূপ জ্বালাতেন। বাদশাহ একদিন পশু-কোরবানীর জন্য গিবিয়োনে গিয়েছিলেন, কারণ কোরবানীর জন্য সেখানকার এবাদতের উঁচু স্থানটা ছিল প্রধান। সোলায়মান সেখানে এক হাজার পশু দিয়ে পোড়ানো কোরবানী (burnt-offerings) দিলেন। গিবিয়োনে মাবুদ স্বপ্নের মধ্যে সোলায়মানের কাছে উপস্থিত হলেন। আল্লাহ তাঁকে বললেন, ‘তুমি আমার কাছে যা চাইবে আমি তা-ই তোমাকে দেব।’’ (১ বাদশাহনামা ৩/৩-৫)

অন্যত্র শলোমন একবারেই ২২ হাজার ষাঁড় ও এক লক্ষ ২০ হাজার ভেড়া  কোরবানি দেন। (১ বাদশাহনামা/রাজাবলি ৮/৬৩)

উপরে পাঠক ‘পোড়ানো কোরবানি’-র পদ্ধতি দেখলেন। পবিত্র বাইবেলে বিভিন্ন প্রকারের কোরবানির পদ্ধতি প্রায় একই: জবাইকৃত প্রাণি পুড়িয়ে ফেলা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরো প্রাণিটিকেই পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু অংশ ইমাম বা যাজকরা ভক্ষণ করবেন।

বাইবেলীয় কোরবানির ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়, তা হল ৭ দিনের শাবককে কোরবানি করা। ‘‘তোমাদের গরু ও ভেড়ার বেলায়ও তা-ই করবে। সাত দিন পর্যন্ত তাদের বাচ্চাগুলো মায়ের কাছে থাকবে, তারপর আট দিনের দিন সেগুলো আমাকে দিয়ে দিতে হবে।’’ (হিজরত/যাত্রাপুস্তক ২২/২৯-৩০)

‘‘জন্মের পরে গরু, ভেড়া বা ছাগলের বাচ্চাকে তার মায়ের সংগে সাত দিন পর্যন্ত থাকতে দিতেই হবে। আট দিনের দিন থেকে সেগুলো মাবুদের উদ্দেশে আগুনে দেওয়া কোরবানী হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।’’ (লেবীয় ২২/২৭)

অবলা পশু পোড়ানোয় ঈশ্বর এত খুশি হন যে, বড় বড় বিপদও এতে কেটে যায়। পশুটা যত ছোট ও দুগ্ধপোষ্য হবে তাকে পুড়ালে ঈশ্বর তত বেশি খুশি হবেন। বাইবেলে এ জাতীয় অনেক ঘটনা বিদ্যমান। একটা ঘটনা দেখুন:

‘‘বনি-ইসরাইলরা মিস্পাতে জমায়েত হয়েছে শুনে ফিলিস্তিনীদের শাসনকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য গেলেন। সেই কথা শুনে বনি-ইসরাইলরা ফিলিস্তিনীদের দারুন ভয় পেল। তারা শামুয়েলকে বলল, ‘আমাদের মাবুদ যেন ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করেন সেজন্য মাবুদের কাছে আপনি ফরিয়াদ জানাতে থাকুন। তখন শামুয়েল এমন একটা ভেড়ার বাচ্চা  নিলেন যেটা দুধ ছাড়েনি (একটা দুধ-খাওয়া বাচ্চা a sucking lamb), আর গোটা বাচ্চাটা দিয়ে তিনি মাবুদের উদ্দেশে একটা পোড়ানো-কোরবানী দিলেন। তিনি বনি-ইসরাইলদের হয়ে মাবুদকে ডাকলেন এবং মাবুদও তাঁকে জবাব দিলেন। শামুয়েল যখন পোড়ানো-কোরবানী দিচ্ছিলেন সেই সময় বনি-ইসরাইলদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য ফিলিস্তিনীরা এগিয়ে আসল। কিন্তু সেই দিন মাবুদ ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে বাজ পড়বার মত ভীষণ শব্দে গর্জন করে উঠলেন। তাতে ভয়ে তাদের দল ভেংগে গেল এবং তারা বনি-ইসরাইলদের কাছে হেরে গেল।’’ (১ শামুয়েল ৭/৭-১০)

সুপ্রিয় পাঠক, একটা দুগ্ধপোষ্য, কচি ছাগলের বাচ্চাকে কি আপনি এভাবে মেরে পুড়িয়ে ফেলতে পারবেন? নিজের, আত্মীয়দের বা দরিদ্রদের খাদ্যের জন্য নয়, শুধু ঈশ্বরকে খুশি করতে এরূপ দুগ্ধপোষ্য বাচ্চাকে পুড়াতে হবে?

পশু-পাখি কোরবানির নামে জবাই করে বা গলা ছিড়ে পুড়িয়ে ফেলা ছাড়াও বাইবেল নরবলির বিধান দিয়েছে। মানুষ বলি দেওয়াতে কোনো সমস্যা তো নেই-ই; বরং বলি দেওয়াই ঈশ্বরের মূল বিধান। প্রত্যেক পরিবারের প্রথম পুত্র এবং প্রত্যেক প্রাণির প্রথম বাচ্চাকে ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গ বা কোরবানি করাই ঈশ্বরের মূল বিধান। জন্মের পরে সাত দিন তারা মায়েদের কাছে থাকবে। অষ্টম দিনে তাদের হত্যা করতে হবে বা ঘাড় ভেঙ্গে দিতে হবে। তবে কেউ যদি প্রথম পুত্র বা প্রথম বাছুরটাকে কোরবানি করতে ইচ্ছুক না হয় তবে বিকল্প অন্য কোনো প্রাণি দিয়ে তাকে মুক্ত করতে পারবে।

ঈশ্বর বলেন: ‘‘বনি-ইসরাইলদের সব প্রথম ছেলেই আমার। মিসর দেশের প্রথম ছেলেদের মেরে ফেলবার সময় আমি বনি-ইসরাইলদের মধ্যেকার প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ সন্তানকে আমার জন্য পবিত্র করে রেখেছি- সে মানুষের হোক বা পশুর হোক। তারা আমার।’’ (গণনাপুস্তক/ শুমারী ৩/১৩)

ঈশ্বর আরো বলেন: ‘‘তোমাদের ফসল এবং আংগুর-রস (মদ: liquors) থেকে আমাকে যা দেবার তা দিতে দেরি কোরো না। তোমাদের প্রথম ছেলে আমাকে দিতে হবে। তোমাদের গরু ও ভেড়ার বেলায়ও তা-ই করবে। সাত দিন পর্যন্ত তাদের বাচ্চাগুলো মায়ের কাছে থাকবে, তারপর আট দিনের দিন সেগুলো আমাকে দিয়ে দিতে হবে।’’ (হিজরত/যাত্রাপুস্তক ২২/২৯-৩০)

ঈশ্বর অন্যত্র বলেন: ‘‘গর্ভের প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ সন্তান আমার। এমন কি, তোমাদের সমস্ত পশুপালের প্রত্যেকটা পুরুষ বাচ্চাও আমার। তবে গাধার প্রথম পুরুষ বাচ্চার বদলে একটা ভেড়ার বাচ্চা দিয়ে গাধার বাচ্চাটাকে ছাড়িয়ে নেবে। সেই বাচ্চাটাকে যদি ছাড়িয়ে নেওয়া না যায় তবে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিতে হবে। তোমাদের প্রত্যেকটা প্রথম ছেলেকেও ছাড়িয়ে নিতে হবে।’’ (হিজরত ৩৪/১৯)

এভাবে বাইবেলের বিধান অনুসারে মানুষের ও পশুর গর্ভের প্রথম সন্তান ঈশ্বরের জন্য কোরবানি করতে হবে। তবে এ কোরবানির পরিবর্তে কাফফারা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু যদি কেউ কোনো মানুষকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে মানত বা উৎসর্গ (devote) করে তবে তাকে আর মুক্তি দেওয়া যাবে না; তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে: ‘‘আর কোন ব্যক্তি তার সর্বস্ব থেকে মানুষ বা পশু বা অধিকৃত ক্ষেত থেকে, যা কিছু মাবুদের উদ্দেশে শর্তহীনভাবে উৎসর্গ করে, তা বিক্রি করা কিংবা মুক্ত হবে না; মাবুদের কাছে শর্তহীন উৎসর্গকৃত বস্ত্ত মাবুদের উদ্দেশে অতি পবিত্র। মানুষের মধ্যে যে কেউ মাবুদের কাছে শর্তহীনভাবে উৎসর্গকৃত, তাকে মুক্ত করা যাবে না; তাকে হত্যা করতে হবে (surely be put to death)।’’ (লেবীয় ২৭/২৮-২৯, মো.-১৩)

বাইবেলের ধর্মতত্ত্ব অনুসারে ‘বলি’-র মাধ্যমে ঈশ্বর মানুষকে পবিত্র করেন। ক্যাথলিক বাইবেলের একটা পুস্তক ‘The Wisdom /The Book of The Wisdom of Solomon’: প্রজ্ঞাপুস্তক বা শলোমনের প্রজ্ঞাপুস্তক। এটা ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মের ২৭ নং পুস্তক। এ পুস্তকের একটা বক্তব্য নিম্নরূপ: “As gold in the furnace, he proved them, and as sacrificial offerings he took them to himself.” ‘‘হাপরে সোনার মতই তাদের তিনি যাচাই করলেন, যোগ্য আহুতিবলি (পোড়ানো কুরবানী) রূপেই তাদের গ্রহণ করলেন।’’ (জুবিলী বাইবেল, প্রজ্ঞাপুস্তক ৩/৬)

লক্ষণীয় যে, শুধু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই শিশু বা মানুষ বলি দিতে হবে। অন্য কোনো দেবতার উদ্দেশ্যে মানুষ বা শিশু বলি দেওয়া নিষিদ্ধ ও অমার্জনীয় অপরাধ: ‘‘তাদের পূর্বপুরুষদের মূর্তিগুলো তাদের কাছে ভাল লেগেছে। .... প্রথমে জন্মেছে এমন প্রত্যেকটি সন্তানকে তারা আগুনে পুড়িয়ে কোরবানী দিয়েছে, আর তার মধ্য দিয়েই আমি তাদের নাপাক হতে দিলাম...।’’ (ইহিস্কেল ২০/২৪-২৬)

অন্যত্র ঈশ্বর বলছেন: ‘‘কোনো ইসরাইলীয় কিংবা বনি-ইসরাইলদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি মোলক-দেবতার কাছে তার কোনো ছেলে বা মেয়ে কোরবানী করে তবে সেই লোককে হত্যা করতে হবে।’’ (লেবীয় ২০/১-২)

৮. ১. ৩. কুমারী মেয়েকে পোড়ানো কোরবানি দেওয়া

বাইবেল নিশ্চিত করেছে যে, কোনো মানুষকে কোরবানির জন্য মানত করা ও পুড়ানো কোরবানি দেওয়া প্রশংসনীয় কর্ম। যিপ্তহ (Jephthah) ইহুদিদের একজন প্রসিদ্ধ সর্দার। তিনি ঈশ্বরের আত্মায় পূর্ণ ছিলেন তিনি ঈশ্বরের জন্য বিশটা শহর ও গ্রাম ধ্বংস করেন এবং বাসিন্দাদেরকে হত্যা করেন (বিচারকর্তৃগণ/ কাজীগণ ১১/৩২)। তিনি তার নিজের একমাত্র কুমারী মেয়েকে বলি দেন: ‘‘পরে মাবুদের রূহ (the Spirit of the LORD) যিপ্তহের উপরে আসলেন... আর যিপ্তহ মাবুদের উদ্দেশে মানত করে বললেন, তুমি যদি অম্মোনীয়দেরকে নিশ্চয় আমার হাতে তুলে দাও, তবে অম্মোনীয়দের কাছ থেকে যখন আমি সহিসালামতে ফিরে আসবো, তখন যাকিছু আমার বাড়ির দরজা থেকে বের হয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবে, তা নিশ্চয়ই মাবুদেরই হবে, আর আমি তা পোড়ানো কোরবানী হিসেবে কোরবানী করবো।’’ (বিচারকর্তৃগণ ১১/২৯-৩১, মো.-১৩)

এরপর যিপ্তহ বিজয় লাভ করে ঘরে ফেরার পর প্রথমেই তার একমাত্র সন্তান কুমারী কন্যা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তিনি মানত অনুসারে তার কন্যাকে পোড়ানো কোরবানি করেন, অর্থাৎ জবাই করে পুড়িয়ে ফেলেন: ‘‘পিতা যে মানত করেছিলেন, সেই অনুসারে তার প্রতি করলেন।’’ (কাজীগণ১১/৩৯, মো.-১৩) বাহ্যত তাঁর কুমারী মেয়ের পোড়ানো মাংস ও চর্বির খোশবুতে ঈশ্বর প্রীত হয়েছিলেন।

৮. ১. ৪. নরমাংস ভক্ষণ ও নিজ সন্তানের মাংস ভক্ষণ

নরবলি দেওয়ার পাশাপাশি নরমাংস ভক্ষণও বাইবেলের একটা পরিচিত কর্ম। এমনকি নিজের সন্তান হত্যা করে রান্না করে খাওয়াও বাইবেল স্বীকৃত কর্ম:  ‘‘ইসরাইলের বাদশাহ একদিন যখন শহরের দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে তাঁকে বলল, হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন। ... এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও, কাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’ কাজেই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছি। পরের দিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও।’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।’’ (২ বাদশাহনামা ৬/২৬-২৯)

পাঠক, কল্পনা করতে পারেন! নিজের সন্তানকে হত্যা করে আবার উপাদেয় করে রান্না করে খাওয়া হচ্ছে! ঈশ্বরের প্রিয় পবিত্র সন্তানদের এই কর্ম!

বাইবেল বার বার বলছে যে, অবাধ্যদের শাস্তি হিসেবে ঈশ্বর নরমাংস ভক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যেমন: ‘‘তোমার উপর যারা জুলুম করে আমি তাদের মাংস তাদেরই খাওয়াব।’’ (যিশাইয়/ ইশাইয়া ৪৯/২৬)। ‘‘আর তোমরা নিজ নিজ পুত্রদের মাংস ভোজন করবে ও নিজ নিজ কন্যাদের মাংস ভোজন করবে’’ (লেবীয় ২৬/২৯, মো.-১৩)। ‘‘তখন আমি তাহাদিগকে তাহাদের পুত্রদের মাংস এবং তাহাদের কন্যাদের মাংস ভোজন করাইব, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধুর মাংস খাইবে’’ (যিরমিয় ১৯/৯)। ‘‘পিতারা সন্তানদেরকে ভোজন করবে, ও সন্তানেরা নিজ নিজ পিতাকে ভোজন করবে’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ৫/১০, মো.-১৩)।

‘‘কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের মাবুদ আল্লাহর কথায় কান না দাও এবং আজকের দেওয়া আমার এই সব হুকুম ও নিয়ম যত্নের সংগে পালন না কর, তবে ... সেগুলো ঘেরাও করে রাখবার সময় শত্রুরা তোমাদের এমন কষ্টে ফেলবে যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সন্তানদেরকেই খাবে, অর্থাৎ তোমাদের মাবুদ আল্লাহর দেওয়া ছেলেমেয়েদের মাংস খাবে।.... তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক কোমল স্বভাবের এবং এমন ভাল অবস্থায় মানুষ হয়েছে যে, তাকে কোন দিন মাটিতে পা ফেলতে হয় নি, তারও তার প্রিয় স্বামী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি কোন দয়ামায়া থাকবে না। সন্তান জন্মের পর সেই সন্তান এবং তার পরে শরীর থেকে বের হয়ে আসা ফুল, এর কোনটাই সে তাদের খেতে দেবে না। ... সে নিজেই সেই ফুল ও সন্তান চুপিচুপি খাবে।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮/১৫ ও ৫৩-৫৭)

গ্যারি ডেভানি লেখেছেন: “If you don't obey the Biblical God, He will make you secretly eat your child? Could you acquit your God for doing this to you and your infant? Can you visualize the monster of monsters within the pages of the Bible?” ‘‘আপনি যদি বাইবেলের ঈশ্বরের আনুগত্য না করেন তবে তিনি আপনার জন্য ব্যবস্থা করবেন যে, আপনি নিজেই গোপনে আপনার সন্তানকে ভক্ষণ করবেন। আপনার ও আপনার শিশুর প্রতি এরূপ কর্ম করার কারণে আপনি কি আপনার ঈশ্বরকে নির্দোষ বলে গণ্য করতে পারেন? আপনি কি বাইবেলের পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যে দানবকুলের মহাদানবকে দেখতে পান?’’[1]

বাইবেল অন্যত্র বলছে: ‘‘সেখানে তোমরা মাংস ও রক্ত খাবে। তোমরা শক্তিশালী লোকদের মাংস খাবে এবং দুনিয়ার শাসনকর্তাদের রক্ত খাবে; এই লোকেরা যেন বাশন দেশের মোটাসোটা পুরুষ ভেড়া, বাচ্চা-ভেড়া, ছাগল ও ষাঁড়। যে কোরবানীর ব্যবস্থা আমি তোমাদের জন্য করব তাতে তোমরা পেট না ভরা পর্যন্ত চর্বি খাবে এবং মাতাল না হওয়া পর্যন্ত রক্ত খাবে।’’ (ইহিস্কেল ৩৯/১৭-১৯)

[1] http://www.thegodmurders.com/id58.html
৮. ১. ৫. অপরাধের কারণে পুড়িয়ে হত্যা করা

মানুষকে পোড়ানো কোরবানি দেওয়া ছাড়াও মানুষ পোড়ানোর অন্যান্য বিধান বাইবেলে বিদ্যমান। পোড়ানো কোরবানিতে জবাইয়ের পরে পুড়ানো হয়। অর্থাৎ মানুষ বা পশুকে জবাই করে, চামড়া ছাড়িয়ে, মাংস কেটে, নাড়িভুড়ি বের করে পোড়াতে হয়। মানুষ পুড়ানোর দ্বিতীয় পদ্ধতি জবাই না করেই জীবন্ত পোড়ানো বা পাথর মেরে হত্যা করে লাশ পুড়ানো। বাইবেলে এ বিষয়ে অনেক নির্দেশনা বিদ্যমান।

৮. ১. ৫. ১. পুরো জনপদকে পোড়ানো কোরবানি দেওয়া

যদি কোনো জনপদে কোনো একজনও দেবদেবীর পূজা করেছে বলে প্রমাণ হয় তবে উক্ত গ্রামের মানুষদেরকে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে: ‘‘আর তা যদি সত্য বলে প্রমাণিত হয় যে, এই জঘন্য কাজ তোমাদের মধ্যে করা হয়েছে, তবে সেখানকার সব বাসিন্দাদের অবশ্যই হত্যা করতে হবে। সেই গ্রাম বা শহর এবং তার লোকজন ও পশুপাল তোমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেবে। সেখানকার সব লুট করা জিনিস তোমরা শহর-চকের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে সমস্ত জিনিস ও সেই গ্রাম বা শহর তোমরা তোমাদের মাবুদের উদ্দেশে পোড়ানো-কোরবানীর মত করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেবে।’’ (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩/১৪-১৬)

যুদ্ধের সময় শত্রুবাহিনীর মানুষ, পশু ও সম্পদ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বাইবেল; কারণ সেগুলো অভিশপ্ত (accursed) বা ধ্বংসের বদদোয়াপ্রাপ্ত। কেউ এরূপ কিছু দ্রব্য চুরি করলে তাকে ও তার আত্মীয়দেরকে পুড়িয়ে মারতে হবে। ঈশ্বরের নির্দেশনা নিম্নরূপ: ‘‘যা ধ্বংসের বদদোয়ার অধীন (অভিশপ্ত দ্রব্য: accursed thing) তা যে লোকটার কাছে আছে বলে ধরা পড়বে তাকে তার সব কিছু সুদ্ধ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সে মাবুদের ব্যবস্থা অমান্য করেছে এবং এমন একটা কাজ করেছে যা বনি-ইসরাইলদের পক্ষে একটা লজ্জার ব্যাপার। ... এহূদা গোষ্ঠীর কর্মির ছেলে আখন ধরা পড়ল। ... তখন সমস্ত বনি-ইসরাইল প্রথমে আখনকে ও পরে তার পরিবারের সবাইকে পাথর ছুড়ে হত্যা করল। তারপর সব কিছু সুদ্ধ তাদের পুড়িয়ে ফেলল।’’ (ইউসা/যিহোশূয় ৭/১৫, ১৮, ২৫)

বাইবেলে ব্যভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। যেমন যাজক বা ইমামের মেয়ের জন্য ব্যভিচার করা: ‘‘আর কোন ইমামের কন্যা যদি জেনা করে নিজেকে নাপাক করে তবে সে তার পিতাকে নাপাক করে; তাকে আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে।’’ (লেবীয় ২১/৯, মো.-১৩)

৮. ১. ৫. ৪. অবৈধ বিবাহের জন্য পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড

কেউ যদি মা ও মেয়েকে একত্রে বিবাহ করে তবে তার শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড: ‘‘যে লোক কোন মেয়েকে ও তার মাকেও বিয়ে করে সে নোংরা কাজ করে। যদি কেউ তা করে তবে সেই লোক ও সেই দু’জন স্ত্রীলোককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে হবে...।’’ (লেবীয় ২০/১৪)।

৮. ১. ৫. ৫. অবাধ্য যাজক-ইমামদের বলিদান ও পুড়ানো

‘‘পশু বলির জন্য ইয়ারাবিম যখন বেদীর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন মাবুদের কথামত আল্লাহর একজন বান্দা এহূদা থেকে বেথেলে উপস্থিত হলেন। তিনি মাবুদের কথামত বেদীর বিরুদ্ধে ঘোষণা করলেন, ‘ওহে বেদী, ওহে বেদী, মাবুদ এই কথা বলছেন, দাউদের বংশে ইউসিয়া ( যোশিয়: Josiah)[1] নামে একটি ছেলের জন্ম হবে। পূজার উঁচুস্থানগুলোর যে ইমামেরা/ পুরোহিতেরা  (priests)[2] তোমার উপর পশু বলি দিচ্ছে সেই পুরোহিতদের সে তোমার উপরেই কোরবানী দেবে এবং মানুষের হাড়ও পোড়াবে।’’ (১ বাদশাহনামা/ রাজাবলি ১৩/১-২)

বাদশাহ যোশিয় বা উইসিয়া ঈশ্বরের এ নির্দেশ আক্ষরিকভাবেই পালন করেন: ‘‘ইউসিয়া ঐ সব বেদীর উপরে সেখানকার পুরোহিতদের জবাই করলেন এবং সেগুলোর উপর মানুষের হাড় পোড়ালেন।’’ (২ বাদশাহনামা ২৩/২০)

[1] যিশু, যোশিয়, যিহোশূয়, ঈসা, ইউসিয়া, ইউসা... ইত্যাদি একই হিব্রু শব্দের বিভিন্ন উচ্চারণ মাত্র, শব্দটির অর্থ ‘রক্ষাকর্তা’ বা ‘ত্রাণকর্তা’। ইহুদিদের মধ্যে এটি একটি বহুল প্রচলিত নাম।

[2] এখানে ইংরেজিতে ‘priests’, বাংলায় পুরোহিত বা যাজক। কেরি ও জুবিলী বাইবেলে প্রিস্ট শব্দের অনুবাদে যাজক বা পুরোহিত বলা হয়েছে। কিতাবুল মোকাদ্দসে প্রিস্ট শব্দের অনুবাদে ইমাম লেখা হয়েছে। তবে এখানে পুরোহিত লেখা হয়েছে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১১৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 9 10 11 12 পরের পাতা »