নতুন নিয়মের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, যীশু পাপীর পাপ বহন করবেন। যেমন যীশু বলেছেন: ‘‘কারণ ইহা আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পতিত হয়’’ (কি. মো.: এ আমার রক্ত, যা অনেকের গুনাহের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে।’’ (মথি ২৬/২৮)
সাধু পল বলেন: ‘‘ঠিক সময়েই মসীহ আল্লাহর প্রতি ভয়হীন মানুষের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন ... কিন্তু আল্লাহ যে আমাদের মহববত করেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা গুনাহগার থাকতেই মসীহ আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাহলে মসীহের রক্তের দ্বারা যখন আমাদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হয়েছে...।’’ (রোমীয় ৫/৬-৯) পল আরো বলেন: ‘‘পাক-কিতাবের কথামত মসীহ আমাদের গুনাহের জন্য মরেছিলেন।’’ (১ করিন্থীয় ১৫/৩: কি. মো.-২০০৬)
এর বিপরীতে যীশু বিভিন্ন স্থানে বলেছেন যে, অনেক পাপই ক্ষমা হবে না। বরং তিনি নিজে অনেক পাপীকে নরকে ফেলে দিবেন। এমনকি যারা তাঁকে বিশ্বাস ও ভক্তি করত তাদেরকেও তিনি তাড়িয়ে দিবেন। নিম্নের উদ্ধৃতিগুলো দেখুন:
(ক) যীশু বলেন: ‘‘আমি আপনাদের সত্যি বলছি, মানুষের (the sons of men: ইবনে আদমদের বা ইবনুল ইনসানদের) সমস্ত গুনাহ এবং কুফরী মাফ করা হবে, কিন্তু পাক-রূহের বিরুদ্ধে কুফরী কখনও মাফ করা হবে না। সেই লোকের গুনাহ চিরকাল থাকবে।’’ (মার্ক ৩/২৮: মো.-০৬)
‘‘মানুষের সমস্ত গুনাহ ও কুফরী মাফ করা হবে, কিন্তু পাক-রূহের বিরুদ্ধে কুফরী মাফ করা হবে না। ইবনে আদমের: (Son of man যীশুর) বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে মাফ করা হবে, কিন্তু পাক-রূহের বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে মাফ করা হবে না- এই যুগেও না, আগামী যুগেও না।’’ (মথি ১২/৩১-৩২, মো.-০৬)
এখানে আমরা দেখছি যে, কোনো কোনো পাপের কোনো ক্ষমা নেই।
(খ) যীশু বলেন: ‘‘কিন্তু জ্বলন্ত আগুন ও গন্ধকের হ্রদের মধ্যে থাকাই হবে ভীতু, বেঈমান, ঘৃণার যোগ্য, খুনী, জেনাকারী, জাদুকর, মূর্তিপূজাকারী এবং সব মিথ্যাবাদীদের শেষ দশা। এটাই হল দ্বিতীয় মৃত্যু।’’ (প্রকাশিত কালাম ২১/৮, মো.-০৬)।
সাধু পলের জবানিতে ইঞ্জিল শরীফ বলছে: ‘‘যারা অন্যায় করে তারা যে আল্লাহর রাজ্যের অধিকারী হবে না, তা কি তোমরা জান না? তোমরা ভুল কোরো না। যাদের চরিত্র খারাপ, যারা মূর্তি পূজা করে, যারা জেনা করে, যারা পুরুষ- বেশ্যা, যে পুরুষেরা সমকামী, যারা চোর, লোভী, মাতাল, যারা পরের নিন্দা করে এবং যারা জোচ্চোর তারা আল্লাহর রাজ্যের অধিকারী হবে না।’’ (১ করিন্থীয় ৬/৯-১০: মো.-০৬)
এ থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, নিম্নের পাপগুলো কখনোই যীশু বহন করবেন না: (১) ভয়: fear (২) বেঈমানী: unbelieving, (৩) ঘৃণার যোগ্যতা: abominablity, (৪) খুন murder, (৫) জেনা: fornication/ whoring, (৬) যাদু: sorcery (৭) মূর্তিপূজা: idolatry, (৮) মিথ্যা বলা: lying, (৯) অন্যায় কর্ম বা খারাপ চরিত্র: unrighteousness,(১০) পুরুষ বেশ্যাবৃত্তি: effeminacy, (১১) সমকামিতা: abusing/ homosexuality, (১২) চুরি: theft, (১৩) লোভ: covetousness, (১৪) মাতলামি: drunkardness, (১৫) পরনিন্দা: reviling, (১৬) জোচ্চুরি বা চাঁদাবাজি: extortion।
স্বভাবতই এগুলো অখ্রিষ্টানদের বিষয়ে বলা হয়নি। কারণ অখ্রিষ্টান তো এমনিতেই বেঈমানী বা অবিশ্বাসের কারণে চির-নরকবাসী। কাজেই অ-খ্রিষ্টান ব্যক্তি এ সকল পাপ বাদ দিলেও তার কোনো লাভ নেই। বরং যীশুর প্রতি ঈমান আনার পরেও এ পাপগুলো বর্জন করা জরুরি। উপরের বক্তব্য নিশ্চিত করছে যে, বেঈমানী বা অবিশ্বাসের মতই এ সকল পাপ মানুষকে চিরস্থায়ী নরকের বাসিন্দা করবে।
(গ) মথির ২৫ অধ্যায়ে যীশু বলেছেন যে, যারা যীশুর ভাইদের, ক্ষুদ্রতমদের কেউ (one of the least of these my brethren) ক্ষুধিত, পিপাসিত, বস্ত্রহীন, অসুস্থ বা কারাগারস্থ হলে সেবা না করবে তাদেরকে অনন্ত শাস্তিতে (everlasting punishment) দণ্ডিত করা হবে। (মথি ২৫ অধ্যায়, বিশেষত ২৫/৪৫-৪৬)
(ঘ) যীশু বলেছেন যে, তাঁর প্রতি ঈমানদার কোনো একজন ছোটকেও যদি কেউ বাধা দেয় এবং সে উচোট খায় তবে তার গলায় বড় যাঁতা বেঁধে তাকে সাগরে ফেলে দিলেও তার জন্য (অনন্তকাল দোজখে থাকার চেয়ে) ভাল। (মার্ক ৯/৪২)
(ঙ) যীশু বলেছেন, কারো হাত, পা বা চক্ষু যদি তাকে গুনাহের পথে নিয়ে যায় তবে তা কেটে ফেলতে হবে; কারণ এগুলোর প্ররোচনায় গুনাহ করলে নরকে যেতেই হবে: ‘‘আর তোমার হাত যদি তোমাকে গুনাহের পথে নিয়ে যায়, তবে তা কেটে ফেল; দুই হাত নিয়ে দোজখে, সেই অনির্বাণ আগুনে যাওয়ার চেয়ে বরং নুলা হয়ে জীবনে প্রবেশ করা তোমার পক্ষে ভাল। (মার্ক ৯/৪৩-৪৪, মো.-১৩)। একই কথা বলেছেন যীশু পা ও চোখের বিষয়ে। (মার্ক ৯/৪৩-৪৭) এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, হাত, পা বা চোখের টানে যে গুনাহ হয় তা বিশ্বাসে ক্ষমা হয় না।
(চ) ‘‘যদি কেউ সেই পশু ও তার মূর্তির এবাদত করে,আর নিজের ললাটে বা হাতে চিহ্ন ধারণ করে তবে... আগুনে ও গন্ধকে যাতনা পাবে। .... যারা সেই পশু ও তার প্রতিমূর্তির এবাদত করে এবং যে কেউ তার নামের চিহ্ন ধারণ করে তারা দিনে বা রাতে (নরকে) কখনও বিশ্রাম পায় না।’’ (প্রকাশিত কালাম ১৪/৯-১১: কি. মো.-১৩)
তাহলে, কোনো ঈমানদার অসহায়কে সাহায্য না করা, তাকে কষ্ট দেওয়া, হাত, পা বা চোখের টানে পাপ করা, মূর্তি পূজা করা, মূর্তির ছবি লাগানো ইত্যাদি সকল পাপের একই শাস্তি: অনন্ত নরক! তাহলে যীশু কার কোন পাপ বহন করলেন?
(ছ) একজন পাপাচারিণী মহিলার বিষয়ে যীশু বলেন: ‘‘জেনা থেকে মন ফিরানোর জন্য আমি তাকে সময় দিয়েছিলাম কিন্তু সে মন ফিরাতে রাজী হয়নি। সেই জন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সংগে জেনা করে তারা যদি জেনা থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব। তার ছেলেমেয়েদেরও আমি মেরে ফেলব। তাতে সব জামাতগুলো জানতে পারবে যে, আমিই মানুষের দিল ও মন খুঁজে দেখি। আমি কাজ অনুসারে তোমাদের প্রত্যেককে ফল দেব।’’ (প্রকাশিত বাক্য/ কালাম ২/২১-২৩: কি. মো.-২০০৬) কি. মো.-১৩: ‘‘আর আমি তোমাদের প্রত্যেককে তাদের কাজ অনুসারে ফল দিব।’’
তাহলে ব্যভিচারের পাপ যীশু কখনোই বহন বা ক্ষমা করবেন না। এছাড়া এ থেকে জানা যায় যে, যীশু বিশ্বাস অনুসারে ফল দিবেন না; বরং কর্ম অনুসারে ফল দিবেন। বিশ্বাসেই মুক্তির দাবি যীশুর এ কথার সাথে সাংঘর্ষিক। যীশুর এ কথা নিশ্চিত করে যে, তিনি কারো কোনো পাপই বহন করবেন না; বরং প্রত্যেককে তার ‘কাজ’ অনুসারে ফল দিবেন। পাপ বহন করা তো দূরের কথা, পাপীকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি পাপীর সন্তানদেরকেও শাস্তি দিবেন।
(জ) ‘‘যারা আমাকে ‘প্রভু প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে বেহেশতী রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়। কিন্তু আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলিনি? তোমার নামে কি ভূত ছাড়াই নি? তোমার নামে কি অনেক অলৌকিক কাজ করিনি? তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! (পাপীর দল/ শরীয়ত অমান্যকারীর দল: ye that work iniquity/ you evildoers/you workers of lawlessness) আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’ (মথি ৭/১৫-২৩: মো.-২০০৬)।
খুবই ভয়ঙ্কর কথা! যীশুকে বিশ্বাস করে, যীশুর নামে নবী হয়ে, অলৌকিক কর্ম করে এবং যীশুকে গুরু বলে প্রচার ও বিশ্বাস করেও পাপাচারী হওয়ার কারণে কোনো মুক্তিই মিলবে না? তাহলে যীশু কোন্ পাপীদের জন্য আগমন করেছেন?