বাইবেল বিশেষজ্ঞরা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান যে সকল ভুলভ্রান্তি উল্লেখ করেছেন সেগুলোকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি:
(ক) বৈপরীত্য, অর্থাৎ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান একাধিক তথ্যের পরস্পর বিরোধিতা।
(খ) ভুলভ্রান্তি, অর্থাৎ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান তথ্য অন্যান্য প্রমাণের আলোকে ভুল বলে প্রমাণিত।
(গ) বিকৃতি, অর্থাৎ বাইবেলের বক্তব্যের মধ্যে পরিবর্তন, সংযোজন বা বিয়োজন করে মূল বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত।
(ঘ) অস্বাভাবিক বা বিবেক-বিরোধী তথ্যাদি।
প্রথমে আমরা বৈপরীত্যের কিছু নমুনা উল্লেখ করব। কারণ অন্যান্য অনেক বিষয় অস্বীকার করা গেলেও বৈপরীত্য অস্বীকার করা যায় না। এজন্য বাইবেলের অভ্রান্ত্রতার দাবি খণ্ডনের জন্য আধুনিক বাইবেল বিশেষজ্ঞরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ প্রমাণ হিসেবে বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান বৈপরীত্যগুলো প্রথমে উল্লেখ করেন।
লক্ষণীয় যে, খ্রিষ্টান গবেষক ও বাইবেল বিশেষজ্ঞরা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান শত শত বৈপরীত্যের কথা উল্লেখ করেছেন। বাইবেল, ইহুদি ধর্ম ও খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ মানুষেরা এ সকল বৈপরীত্যের গুরুত্ব ও দূরত্ব সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। এছাড়া ইংরেজি পাঠে বৈপরীত্যগুলো যত সহজে অনুধাবন করা যায় বাংলা অনুবাদে তা করা যায় না। কারণ অনুবাদের মধ্যে অনেক রকম পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈপরীত্য অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এজন্য আমরা এখানে সাধারণ বাঙালি পাঠকের জন্য অনুধাবনযোগ্য কিছু বৈপরীত্য উল্লেখ করছি। আগ্রহী পাঠক ইন্টারনেটে নিম্নের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন: http://infidels.org/library/modern/jim_meritt/bible-contradictions.html। এছাড়া http://LiberalsLikeChrist.Org/inerrancy.html, www.members.cox.net/galatians/tension.htm ইত্যাদি ওয়েবসাইটে অনেক তথ্য জানতে পারবেন। সর্বোপরি bible contradictions, Bible Absurdities, Bible Atrocities, Bible inerrancy ইত্যাদি লেখে অনুসন্ধান করলে এ বিষয়ক অনেক ওয়েবসাইট ও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
বাইবেল বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখি যে, বাইবেলের মধ্যে, বিশেষত নতুন নিয়মের ইঞ্জিলগুলোর মধ্যে বৈপরীত্য খুবই ব্যাপক। তবে কিছু বৈপরীত্য সাধারণ বা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমন্বয় করা সম্ভব। এ জাতীয় বৈপরীত্য আমরা এড়িয়ে গিয়েছি। অন্যান্য অধিকাংশ বৈপরীত্য সাধারণ বিচারে সমন্বয়ের অযোগ্য। সমন্বয়যোগ্য ও সমন্বয়-অযোগ্য বৈপরীত্যের দু’-একটা নমুনা দেখুন:
যীশুর দ্বাদশ প্রেরিতের একজন ‘Judas Iscariot’। বাংলা বাইবেলে ‘ইস্করিয়োতীয় যিহূদা’, ‘ইস্করিয়োতীয় এহুদা’ বা ‘যিহূদা/ এহুদা ইস্কারিয়োৎ’। তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করে যীশুকে ইহুদি যাজক ও প্রধানদের হাতে সমর্পণ করেন। চার ইঞ্জিলেই বিষয়টা উল্লেখ করা হয়েছে। যিহূদী নেতা ও যাজকরা যীশুকে চিনতেন না। যিহূদা তাদেরকে বলেন, আমি যাকে চুম্বন করব তিনিই যীশু। তাঁকে আপনারা ধরবেন। যিহূদা এসে তাঁর হাতে চুমু দেন সঙ্গে সঙ্গে ইহুদিরা তাঁকে গ্রেফতার করে। লূক কিছু ব্যতিক্রম লেখেছেন এবং যোহন একেবারেই ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। বাইবেল বিশেষজ্ঞরা ও খ্রিষ্টান পাঠকরা সহজেই এ ব্যতিক্রম বুঝতে পারনে। কিন্তু সাধারণ বাঙালি পাঠকের জন্য পুরো বক্তব্য উদ্ধৃত করা প্রয়োজন মনে করছি।
মথি লেখেছেন: ‘‘তিনি যখন কথা বলছেন, দেখ, এহুদা, সেই বার জনের এক জন, আসলো এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে প্রধান ইমামদের ও লোকদের প্রাচীনদের কাছ থেকে আসলো। যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সে তাদেরকে এই সঙ্কেত বলেছিল, আমি যাকে চুম্বন করবো, সে ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাকে ধরবে। সে তখনই ঈসার কাছে গিয়ে বললো, রবিব, আসসালামু আলাইকুম, আর তাঁকে আগ্রহ পূর্বক চুম্বন করলো। ঈসা তাকে বললেন, বন্ধু, যা করতে এসেছো, কর। তখন তারা কাছে এসে ঈসার উপর হস্তক্ষেপ করে তাঁকে ধরলো। আর দেখ, ঈসার সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তলোয়ার বের করলেন এবং মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন। (মথি ২৬/ ৪৭-৫১, মো.-১৩)
মার্ক লেখেছেন: ‘‘আর তিনি যখন কথা বলছেন, তৎক্ষণাৎ এহুদা, সেই বার জনের একজন আসল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তলোয়ার ও লাঠি নিয়ে প্রধান ইমামদের, আলেমদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে আসলো। যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে আগে তাদেরকে এই সঙ্কেতে বলেছিল, আমি যাকে চুম্বন করবো, সে-ই ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাকে ধরে সাবধানে নিয়ে যাবে। সে এসে তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে গিয়ে বললো, রবিব; আর তাঁকে আগ্রহ পূর্বক চুম্বন করলো। তখন তারা তাঁর উপর হস্তক্ষেপ করে তাঁকে ধরলো। কিন্তু যারা পাশে দাড়িয়ে ছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁর তলোয়ার খুলে মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললো।’’ (মার্ক ১৪/৪৩-৪৭, মো.-১৩)
পাঠক দেখছেন যে, মথি ও মার্কের মধ্যে কয়েকটা শব্দের পার্থক্য ছাড়া সকল তথ্য একই। কিন্তু লূক লেখেছেন: ‘‘তিনি কথা বলছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক এবং যার নাম এহুদা- সেই বার জনের মধ্যে এক জন- সে তাদের আগে আগে আসছে; সে ঈসাকে চুম্বন করার জন্য তাঁর কাছে আসল। কিন্তু ঈসা তাঁকে বললেন, এহুদা, চুম্বন দ্বারা কি ইবনুল ইনসানকে (the Son of man: মানব-সন্তানকে, কেরি: মনুষ্যপুত্রকে) ধরিয়ে দিচ্ছ? তখন কি কি ঘটবে, তা দেখে যাঁরা তাঁর কাছে ছিলেন, তাঁরা বললেন, প্রভু, আমরা কি তলোয়ার দ্বারা আঘাত করবো। আর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। ... পরে তারা তাকে ধরে নিয়ে গেল ...।’’ (লূক ২২/৪৭-৫৪, মো.-১৩)
মথি ও মার্কের সাথে লূকের শব্দের পার্থক্য ছাড়াও তথ্যের ভিন্নতা পাঠকের নিকট স্পষ্ট। প্রথম দুজনের বর্ণনায় যিহূদা কিছু কথা বলে যীশুকে চুম্বন করেন। আর লূকের বর্ণনায় যিহূদা কোনো কথা না বলে যীশুকে চুম্বন করতে আসেন, কিন্তু তিনি চুম্বন করেননি, বরং চুম্বনের আগেই যীশু তার সাথে কথা বলেন। এছাড়া প্রথম দুজনের বর্ণনায় গ্রেফতারের পরে খড়গ বের করা ও কান কাটার ঘটনা ঘটে। পক্ষান্তরে লূকের বর্ণনায় গ্রেফতারের আগেই তা ঘটে। এরপরও আমরা মথি ও মার্কের বর্ণনার সাথে লূকের বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করছি না। আমরা ধরে নিচ্ছি যে, তিনি চুম্বনের জন্য আগমন করার কথা বলে চুম্বন করা বুঝিয়েছেন এবং একই ঘটনা বর্ণনায় তিনি কিছু আগে পিছে করেছেন।
কিন্তু যোহনের বর্ণনাকে সাংঘর্ষিক বলা ছাড়া উপায় নেই। কারণ যোহন এ ঘটনার বর্ণনায় লেখেছেন: ‘‘আর এহুদা, যে তাঁকে দুশমনদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল, সে সেই স্থানটা চিনত, কারণ ঈসা অনেক বার তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে সেই স্থানে একত্র হতেন। অতএব এহুদা সৈন্যদলকে এবং প্রধান ইমামদের ও ফরীশীদের কাছ থেকে পদাতিকদের সঙ্গে নিয়ে মশাল, প্রদীপ ও অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে সেখানে আসল। তখন ঈসা, তাঁর প্রতি যা যা ঘটতে যাচ্ছে সমস্ত কিছু জেনে বের হয়ে আসলেন, আর তাদেরকে বললেন, কার খোঁজ করছো? তারা তাঁকে জবাবে বললো, নাসরতীয় ঈসার। তিনি তাদেরকে বললেন, আমিই তিনি। আর এহুদা, যে তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। তিনি যখন তাদেরকে বললেন, আমিই তিনি, তখন তারা পিছিয়ে গেল এবং ভূমিতে পড়ে গেল। পরে তিনি আবার তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কার খোঁজ করছো? তারা বলল, নাসরতীয় ঈসার। জবাবে ঈসা বললেন, আমি তো তাদেরকে বললাম যে, আমিই তিনি; অতএব তোমরা যদি আমার খোঁজ কর, তবে এদেরকে (শিষ্যদেরকে) যেতে দাও ... তখন শিমোন পিতরের কাছে তলোয়ার থাকাতে তিনি তা খুলে মহা-ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। ... তখন ঈসা পিতরকে বললেন, তলোয়ার খাপে রাখ; আমার পিতা আমাকে যে পানপাত্র দিয়েছেন তা থেকে কি আমি পান করবো না? তখন সৈন্যদল ও সহস্রপতি ও ইহুদীদের পদাতিকেরা ঈসাকে ধরলো ও তাঁকে বেঁধে ... নিয়ে গেল।’’ (ইউহোন্না ১৮/২-১২, মো.-১৩)
পাঠক দেখছেন যে, লূকের সাথে মথি ও মার্কের সমন্বয়ের মত যোহনের সাথে সমন্বয়ের কোনোই পথ নেই। যোহন সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে যিহূদা যীশুকে চেনাতে আসেননি, বরং স্থান চেনাতে এসেছেন। যীশুকে চুম্বন দেওয়া তো দূরের কথা তিনি যীশুর সাথে কোনো কথাও বলেননি, নিকটবর্তীও হননি। স্বয়ং যীশুই সৈন্যদের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলেছেন। এজন্য আমরা বৈপরীত্যের মধ্যে যোহনের সাথে মথি ও মার্কের বৈপরীত্য আলোচনা করেছি। লূকের বিষয়টা সমন্বয়যোগ্য ধরে এড়িয়ে গিয়েছি।
বাইবেলের বৈপরীত্য বিষয়ক লেখনির মধ্যে পাশ্চাত্য গবেষকরা ঈশ্বরের করুণা ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করেছেন। কোথাও বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর মহা করুণাময় এবং তাঁর করুণা সকলের জন্য। যেমন, ‘‘মাবুদ সকলের জন্য মঙ্গলময়, তাঁর করুণা তাঁর সৃষ্ট সমস্ত জিনিসের উপরে আছে।’’ (জবুর/ গীতসংহিতা ১৪৫/৯, মো.-১৩)। অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘‘প্রভু সেণহপূর্ণ ও দয়াময়’’। (যাকোব ৫/১১) অন্যত্র বলা হয়েছে: ‘‘ঈশ্বর প্রেম/ আল্লাহ মহববত’’।’’ (১ ইউহোন্না ৪/১৬, মো.-১৩)
এর বিপরীতে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর মমতা করেন না, করুণাও করেন না। যেমন: ‘‘আর আমি একজনকে অন্য জনের বিরুদ্ধে, আর পিতাদের ও পুত্রদের একসঙ্গে আছড়াব, মাবুদ এই কথা বলেন; আমি মমতা করবো না, কৃপা করবো না, করুণা করবো না; তাদেরকে বিনষ্ট করবো।’’ (যিরমিয়/ ইয়ারমিয়া ১৩/১৪, মো.-১৩)
যদিও শব্দ ব্যবহারে বক্তব্যগুলো সাংঘর্ষিক, একটা ব্যাখ্যা সহজে করা সম্ভব যে, ‘আমি মমতা করিব না, করুণা করিব না’ বলতে অপরাধীদের বুঝানো হয়েছে। যদিও বাক্যে তা বলা হয়নি তবে এরূপ ব্যাখ্যা করা একেবারে অবান্তর নয়। এজন্য এ পর্যায়ের বৈপরীত্য আমরা এ পুস্তকে উল্লেখ করিনি। তবে বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর একের পাপে অন্যকে শাস্তি দেন, অপরাধীর কারণে নিরপরাধকে শাস্তি দেন এবং পিতার পাপের কারণে কয়েক প্রজন্ম পরের বংশধরদের শাস্তি দেন, অথবা তিনি কোনোদিনই ক্ষমা করেন না...। এ জাতীয় বক্তব্যগুলো নিঃসন্দেহে তাঁর করুণাময়তা বা প্রেমময়তার বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। এজন্য আমরা এ পর্যায়ের বৈপরীত্য ও সমস্যা পরবর্তী আলোচনায় উল্লেখ করব।
বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরকে ভয় করতে হবে। অন্যত্র বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরকে প্রেম করতে হবে। অনেকে এ দুটো বিষয়কে সাংঘর্ষিক বলে গণ্য করেন। তবে বিষয় দুটো সমন্বয়যোগ্য; কারণ অনেক সময় ভয় ও প্রেম একত্রিতই থাকে। যেমন পিতামাতাকে সন্তানরা ভয় করে এবং ভালবাসে। প্রেমময় ভীতি বা ভীতিজড়িত প্রেম হৃদয়কে উদ্বেলিত করে। তবে যদি কেউ বলেন প্রেমের মধ্যে ভয় থাকতে পারে না বা ভয়ের মধ্যে প্রেম থাকতে পারে না তবে তার কথাটা ভুল ও সাংঘর্ষিক বলে গণ্য। আর এরূপ কথা বিবেকের আলোকেও ভুল। মানুষ তার পিতাকে বা মাতাকে ভয় পায় অর্থ তাকে সে ভালবাসে না, অথবা ভালবাসে অর্থ সে মোটেও ভয় পায় না এরূপ দাবি করা একেবারেই বিবেক বিরুদ্ধ।
বাইবেলের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহকে ভালবাসতে বলা হয়েছে: দ্বিতীয় বিবরণ ৬/৫; মথি ২২/৩৭; মার্ক ১২/৩০; লূক ১০/২৭। অন্যত্র আল্লাহকে ভয় করতে বলা হয়েছে: দ্বিতীয় বিবরণ ৬/১৩; গীতসংহিতা ৩৩/৮; ৩৪/৯; ১১০/১০; ১১৫/১৩; ১২৮/১; ১৪৭/১১; হিতোপদেশ/ মেসাল ৮/১৩; ১৬/৬; ১৯/২৩; ২২/৪; যিশাইয় ৮/১৩; লূক ১২/৫; ১ পিতর ২/১৭। এ বিষয়টাকে আমরা বৈপরীত্য বলে গণ্য করিনি। তবে যোহন লেখেছেন: ভালবাসার সাথে ভয় থাকে না: ‘‘প্রেমে ভয় নাই (There is no fear in love), বরং সিদ্ধ প্রেম ভয়কে বাহির করিয়া দেয়, কেননা ভয় দ-যুক্ত, আর যে ভয় করে, সে প্রেমে সিদ্ধ হয় নাই (কি. মো.-১৩: কেননা ভয়ের সঙ্গে শাস্তির চিন্তা যুক্ত থাকে, আর যে ভয় করে, সে মহববতে পূর্ণতা লাভ করেনি)’’ (১ যোহন ৪/১৮)। এ কথাটাকে আমরা বৈপরীত্য বলে গণ্য করতে বাধ্য।
যীশু বলেন: ‘‘তেমনি তোমাদের নূর মানুষের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হোক, যেন তারা তোমাদের সৎকর্ম দেখে তোমাদের বেহেশতী পিতার গৈারব করে।’’ (মথি ৫/১৬, মো.-১৩) অন্যত্র যীশু বলেন: ‘‘এভাবে তোমার দান যেন গোপনে হয়; তাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দেবেন।’’ (মথি ৬/৪, মো.-১৩)
বাইবেলীয় অভ্রান্ততার বিরোধী পাশ্চাত্য খ্রিষ্টান গবেষকরা উপরের বক্তব্যদ্বয়কে পরস্পর বিরোধী হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ প্রথম বাক্য সকল সৎ কর্ম প্রকাশ্যে পালনের নির্দেশ দিচ্ছে, যেন সকলেই তা দেখে পিতার গৌরব করে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় বাক্য সৎ কর্ম গোপনে করার নির্দেশ দিচ্ছে। গোপনে করলে বিশ্ব কিভাবে তা দেখে পিতার গৌরব করবে?
বাহ্যত বাক্য দু’টো পরস্পর-বিরোধী বলে প্রতীয়মান হলেও যেহেতু ‘সকল কর্ম’ কথাটা সুস্পষ্ট বলা হয়নি, সেহেতু আমরা বলতে পারি কিছু কর্ম গোপনে এবং কিছু কর্ম প্রকাশ্যে করার মাধ্যমে দুটো নির্দেশের মধ্যে সমন্বয় সম্ভব। এজন্য আমরা এ জাতীয় বৈপরীত্য পরবর্তী তালিকার মধ্যে উল্লেখ করিনি।
রাজা দাউদ তাঁর রাজ্যের লোকগণনা করেন। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এটা মহাপাপ ছিল। এ জন্য ঈশ্বর তাঁকে কঠিন শাস্তি প্রদান করেন। তবে এ কাজটা করতে দাউদকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কে সে বিষয়ে বৈপরীত্য বিদ্যমান। ২ শমূয়েল-এর ২৪ অধ্যায়ের ১ম শ্লোক থেকে জানা যায় যে, ঈশ্বর স্বয়ং দাউদকে প্ররোচিত করেন বনি-ইসরাইলের জনসংখ্যা গণনা করতে। আর ১ বংশাবলির ২১ অধ্যায়ের ১ম শ্লোক থেকে জানা যায় যে, শয়তান দাউদকে জনসংখ্যা গণনা করতে প্ররোচিত করে। এ বিষয়টাকে খ্রিষ্টান গবেষকরা বৈপরীত্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাসে ঈশ্বর অমঙ্গল বা খারাপ কাজ করেন না। কাজেই বিষয়টা তাদের জন্য বিব্রতকর। তবে আমরা এ বিষয়টাকে বৈপরীত্য হিসেবে গণ্য করিনি। কারণ, বিশ্বের যে কোনো কর্মই মহান আল্লাহর জ্ঞান ও সিদ্ধান্তের বাইরে ঘটে না। এজন্য ভাল, মন্দ, যুদ্ধ, ধ্বংস, মুক্তি, আনন্দ যে কোনো বিষয়কে চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি তাঁর নিজের কর্ম হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন। কোনো একটা কর্ম আল্লাহর কোনো সৃষ্টি করলেও বিশ্ব পরিচালনায় আল্লাহর ব্যবস্থা অনুসারে তা সম্পন্ন হওয়াতে কর্মটাকে আল্লাহর কর্ম বলা যায়।
এরূপ অনেক বৈপরীত্য পাশ্চাত্য গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমন্বয়যোগ্য। আমরা এ জাতীয় বৈপরীত্য উল্লেখ করছি না। যে বৈপরীত্যগুলো বাহ্যত সমন্বয়যোগ্য নয় আমরা সেগুলোর কিছু নমুনা নিম্নে উল্লেখ করব।
সৃষ্টির ক্রম বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের প্রথম পুস্তকের প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে দুটো পৃথক ও পরস্পর বিরোধী বিবরণ বিদ্যমান। আমরা আগেই বলেছি, বাইবেলের শব্দ ব্যবহার ও তথ্যাবলির অধ্যয়ন থেকে আধুনিক গবেষকরা নিশ্চিত যে, সম্পূর্ণ পৃথক দুটো বর্ণনা বা প্রচলন থেকে বর্তমান তৌরাত সংকলিত: (১) ইলোহিম, অর্থাৎ ইলাহ বা ঈশ্বরীয় ধারা এবং (২) যিহোভিস্ট বা সদাপ্রভু ধারা। আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে ইলোহিম ধারার বর্ণনা এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে যিহোভিস্ট ধারার বর্ণনা সংকলিত। প্রথম বর্ণনায়, অর্থাৎ আদিপুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে সৃষ্টির বর্ণনা নিম্নরূপ:
(১) প্রথম দিন (রবিবার)। ঈশ্বর প্রথম দিনে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী, এবং আলো সৃষ্টি করেন। আলোকে অন্ধকার থেকে পৃথক করে আলোকে দিন এবং অন্ধকারকে রাত নাম দেন। এবং সন্ধ্যা ও সকাল হলে প্রথম দিন হল।
(২) দ্বিতীয় দিন (সোমবার)। ঈশ্বর জলকে পৃথক করার জন্য আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করলেন। একভাগ জল আকাশমণ্ডলীর নিচে এবং আরেকভাগ জল আকাশমণ্ডলীর উপরে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলীর নাম দিলেন ‘আকাশ’ (heaven)। সন্ধ্যা ও সকাল হলে দ্বিতীয় দিন হল। (আকাশের উপরেও সাগর বিদ্যমান! তা থেকেই কি বৃষ্টি?!)
(৩) তৃতীয় দিন (মঙ্গলবার)। ঈশ্বর পৃথিবীর জল ও স্থলকে পৃথক করলেন। জলের নাম সমুদ্র ও স্থলের নাম পৃথিবী রাখলেন। এরপর ঈশ্বর ঘাস, গাছপালা ও সকল উদ্ভিদ সৃষ্টি করলেন। সকাল হল এবং সন্ধ্যা হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
(৪) চতুর্থ দিন (বুধবার)। ঈশ্বর সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি সৃষ্টি করলেন। (চাঁদ, সূর্য ও তারা সৃষ্টির আগেই আলো ছিল এবং দিন-রাত ও সকাল-সন্ধ্যা হচ্ছিল! আবার সূর্যের আলো ও তাপ ছাড়াই গাছপালা ও সকল উদ্ভিত বড় হচ্ছিল!)
(৫) পঞ্চম দিন (বৃহস্পতিবার)। ঈশ্বর জলজ প্রাণি ও পাখি সৃষ্টি করলেন।
(৬) ষষ্ঠ দিন (শুক্রবার)। ঈশ্বর স্থলের জীব-জানোয়ার, সরীসৃপ ইত্যাদি সৃষ্টি করলেন। এ দিনেই সর্বশেষ ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। (আদিপুস্তক ১ম অধ্যায় (১-৩১ শ্লোক)
(৭) সপ্তম দিন (শনিবার)। ঈশ্বর বিশ্রাম করলেন (আদিপুস্তক ২/২)।
আদিপুস্তকের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪ শ্লোক থেকে যিহোভীয় ধারার বর্ণনা বিদ্যমান। এটা উপরের বিবরণ থেকে ভিন্ন। এখানে বার বা দিবসগুলো উল্লেখ না করে সৃষ্টির ক্রম বর্ণনা করা হয়েছে। (১) প্রথমে পৃথিবী এবং প্রথম মানব আদম (আদিপুস্তক ২/৪-৭)। (২) এরপর এদনের উদ্যান ও বিভিন্ন নদী (আদিপুস্তক ৪/৮-১৪)। (৩) এরপর সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী (৪/১৮-২০)। (৪) এরপর প্রথম মানবী হাওয়া (২১-২৩)।
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম বর্ণনায় ঈশ্বর প্রথমে পৃথিবীর সকল পশু ও প্রাণি সৃষ্টি করেন এবং সর্বশেষ মানুষ সৃষ্টি করেন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ণনায় এর সম্পূর্ণ বিপরীতে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর সর্বপ্রথম মানুষ সৃষ্টি করেন এবং এরপর বৃক্ষলতা, পশুপাখি ইত্যাদি সৃষ্টি করেন।
আদিপুস্তকে পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনা শেষে লেখেছে: ‘‘পরে ঈশ্বর আপনার নিমিত্ত বস্ত্ত সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম (very good)। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।’’ (আদিপুস্তক ১/৩১)
জুবিলী বাইবেল: ‘‘পরমেশ্বর তাঁর তৈরি করা সমস্ত কিছুর দিকে তাকিয়ে দেখলেন; আর সত্যি, সেই সমস্ত কিছু খুবই মঙ্গলময়...।’’ মো-০৬: ‘‘আল্লাহ তাঁর নিজের তৈরি সব কিছু দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল।’’
এ থেকে আমরা জানছি যে, সৃষ্টিজগত স্রষ্টার দৃষ্টিতে very good: অতি উত্তম, মঙ্গলময় ও চমৎকার বলে প্রতিভাত হল। কিন্তু এর বিপরীতে আদিপুস্তকেরই পরবর্তী ৬ অধ্যায় বলছে যে, ঈশ্বরের সৃষ্টি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অতি মন্দ, অমঙ্গময় ও অ-চমৎকার বলে গণ্য হয়। ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির জন্য অনুশোচনা ও অনুতাপে দগ্ধ হন এবং অন্তরের ব্যাথায় আক্রান্ত হন: ‘‘আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীর মানুষের দুষ্টতা বড়, এবং তাহার অমত্মঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ। তাই সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন (repented), ও মনঃপীড়া পাইলেন (grieved at his heart)।’’ (আদিপুস্তক ৬/৫-৬)
জুবিলী বাইবেল: ‘‘পৃথিবীতে যে তিনি মানুষকে নির্মাণ করলেন, তার জন্য প্রভুর দুঃখ হল, তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘মাবুদ অন্তরে ব্যাথ্যা পেলেন। তিনি পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন বলে দুঃখিত হয়ে বললেন।’’
সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্ষেত্রে এ বড় অদ্ভুত বৈপরীত্য! তিনিই সৃষ্টিকে খুব ভাল বলে গণ্য করছেন এবং তিনিই কিছুদিন পরে সে সৃষ্টিকে মন্দ ও অমঙ্গলময় বলে গণ্য করছেন এবং অনুতপ্ত, দুঃখিত, ব্যথিত ও মনক্ষুণ্ণ হচ্ছেন!
আমেরিকান গবেষক স্কট বিডস্ট্রাপ (Scott Bidstrup) ‘খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা আপনাকে যা জানতে দিতে চায় না: বাইবেলীয় ভুলভ্রান্তির একটা সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা’ (What The Christian Fundamentalist Doesn't Want You To Know: A Brief Survey of Biblical Errancy) প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, খ্রিষ্টান প্রচারকরা এ বৈপরীত্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আদম ও হাওয়ার পাপে লিপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সৃষ্টিজগৎ ‘অত্যন্ত সুন্দর’ ছিল। আদম-হাওয়ার পাপের সময়ে আর সৃষ্টি ‘অত্যন্ত সুন্দর’ থাকল না। পাপ সংঘটিত হওয়ার পরে সৃষ্টি অমঙ্গলময় হয়ে গেল। এরপর এ ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে তিনি বলেন:
“If the fundamentalist's argument were true, then obviously God must not have foreseen the consequences of Eve's eating of the fruit; otherwise he would have known from the outset that there was a problem. And 6:6 has god repenting. Repentance implies mistakenness at minimum, so their argument would undermine the claim of God's perfection. The argument that the sin had not yet occurred, and thus the creation was still perfect denies that creation isn't perfect if it isn't going to remain so.”
‘‘মৌলবাদীদের যুক্তি যদি সত্য হয় তবে সুস্পষ্টতই প্রমাণ হয় যে, ঈশ্বর পূর্ব থেকে হাওয়ার ফল খাওয়ার বিষয়টা জানতে পারেননি। নাহলে তিনি জানতে পারতেন যে, এ সৃষ্টির মধ্যে সমস্যা বিদ্যমান। আর আদিপুস্তক ৬/৬-এ ঈশ্বর অনুতপ্ত হয়েছেন। আর অনুতাপের ন্যূনতম কারণ ভুল। কাজেই মৌলবাদীদের যুক্তি ঈশ্বরের পূর্ণতার সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের দাবি, পাপ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত সৃষ্টি সুন্দর ও নিখুঁত ছিল। তাঁদের দাবি সঠিক নয়; কারণ যে সৃষ্টি সুন্দর থাকতে পারে না সে সৃষ্টি তো সুন্দর বা নিখুঁত নয়।’’ (http://www.bidstrup.com/bible2.htm)
পয়দায়েশ/ আদিপুস্তক ৬/১৯-২০: ‘‘সমস্ত জীবজন্তুর স্ত্রী-পুরুষ জোড়া জোড়া নিয়ে তাদের প্রাণ রক্ষা করার জন্য তোমার সঙ্গে সেই জাহাজে প্রবেশ করাবে; সব জাতের পাখি ও সব জাতের পশু ও সব জাতের ভূচর সরীসৃপ জোড়া জোড়া প্রাণ রক্ষা করার জন্য তোমার কাছে আসবে।’’ (মো.-১৩)
পয়দায়েশ/ আদিপুস্তক ৭/৮-৯: ‘‘নূহের প্রতি আল্লাহর হুকুম অনুসারে পাক ও নাপক পশুর, এবং পাখির ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবের স্ত্রী-পুরুষ জোড়া জোড়া করে জাহাজে নূহের কাছে প্রবেশ করলো।’’ (মো.-১৩)
পয়দায়েশ ৭/২-৩: ‘‘তুমি পাক-পবিত্র পশুর স্ত্রী-পুরুষ নিয়ে প্রত্যেক জাতের সাত জোড়া করে এবং নাপাক পশুর স্ত্রী-পুরুষ নিয়ে প্রত্যেক জাতের এক জোড়া করে, এবং আসমানের পাখিদেরও স্ত্রী-পুরুষ নিয়ে প্রত্যেক জাতের সাত জোড়া করে, সারা দুনিয়াতে তাদের বংশ রক্ষা করার জন্য নিজের সঙ্গে রাখ।’’ (মো.-১৩)
একই পুস্তকের তিনটা বক্তব্য। প্রথম ও দ্বিতীয় বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ নূহকে নির্দেশ দেন, সর্বজাতীয় পশু, সর্বজাতীয় পক্ষী ও সর্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপ স্ত্রীপুরুষ জোড়া জোড়া সাথে নিতে এবং নূহ এ নির্দেশ পালন করেছিলেন।
কিন্তু তৃতীয় বক্তব্য থেকে জানা যায়, তিনি তাঁকে সকল পবিত্র পশু এবং সকল পাখি সাত জোড়া করে সাথে নিতে নির্দেশ দেন। আর অপবিত্র পশু জোড়া জোড়া করে সাথে নিতে নির্দেশ দেন। প্রথম দু বক্তব্যে ‘সাত জোড়ার’ কোনোরূপ উল্লেখ নেই; বরং পবিত্র ও অপবিত্র সকল পশু ও পাখি এক জোড়া করে নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। পক্ষান্তরে তৃতীয় বক্তব্যে শুধু অপবিত্র পশু এক জোড়া করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উভয় বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট সাংঘর্ষিকতা বিদ্যমান।