পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা তৃতীয় অধ্যায় - বৈপরীত্য ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ৯. ৪২. ঈশ্বর মিথ্যা বলেন অথবা বলেন না?

উপরের বৈপরীত্যের সাথে সংশ্লিষ্ট একটা বিষয়, ঈশ্বর কি সর্বদা সত্য বলেন? না তিনি মিথ্যাও বলেন? পল লেখেছেন: ‘‘God, that cannot lie/ God never lies: ‘‘মিথ্যা কথনে অসমর্থ ঈশ্বর’’/ ঈশ্বর, যিনি মিথ্যা কথা বলেন না।’’ (তীত ১/২)

বস্ত্তত সকল ধর্মের সকল বিশ্বাসীই বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বর মিথ্যা বলেন না। কিন্তু বাইবেলে অন্যত্র বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর মিথ্যা বলেন। বাইবেলের অভ্রান্ততা আলোচনায় এবং উপরের অনুচ্ছেদে আমরা জানলাম যে, ঈশ্বর নিজেই মিথ্যাবাদী আত্মার মাধ্যমে নিজের নবীদেরকে মিথ্যা বলেন। আমরা আরো দেখলাম যে, ঈশ্বর নিজেই নিজের নবী বা ভাববাদী এবং নিজের প্রজাদেরকে প্রতারণা করেন।

যিরমিয় ভাববাদী বলেন: ‘‘(O LORD, thou hast deceived me): হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে প্রতারণা করলে..’’। কেরির অনুবাদ: ‘‘ হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে প্ররোচনা করিলে আমি প্ররোচিত হইলাম’’। জুবিলী বাইবেল: ‘‘তুমি আমাকে ভুলিয়েছ, প্রভু; তাতে আমি ভুলেছি।’’ বাইবেল ২০০০: ‘‘ হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে ভুলিয়েছ বলে আমার এই অবস্থা হয়েছে’’। কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘ হে মাবুদ, তুমি আমাকে ভুলিয়েছ বলে আমার এই অবস্থা হয়েছে।’’ (যিরমিয়/ ইয়ারমিয়া ২০/৭)

আমরা দেখছি যে, ইংরেজি ‘deceive’ অর্থ প্রতারণা। বাইবেল অনুবাদকরা শব্দটার অশোভনতা লক্ষ্য করে প্ররোচনা, ভুলানো ইত্যাদি অর্থ করেছেন। তবে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, শব্দটা যে অশোভন তা কি ঈশ্বর বুঝলেন না? তিনি কি তাঁর পবিত্র পুস্তকে এর চেয়ে উত্তম শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন না? সর্বকালের সকল মানুষের মুক্তির জন্য যে পুস্তক তাতে কি এরূপ অশোভন শব্দ ব্যবহার করা জরুরী ছিল?

আর প্রতারণা, প্ররোচনা, ভুলানো যাই বলা হোক না কেন অর্থ তো পরিষ্কার যে, ঈশ্বর তাঁর ভাববাদীকে অসত্য তথ্য দিয়ে ভুলান, প্ররোচনা করেন বা প্রতারণা করেন।

সাধু পল লেখেছেন: ‘‘And for this cause God shall send them strong delusion, that they should believe a lie..’’:‘‘এ কারণে ঈশ্বর তাদের কাছে শক্তিশালী বিভ্রম/ প্রতারণা প্রেরণ করেন; যেন তারা মিথ্যাতে বিশ্বাস করে....’’। কেরির অনুবাদ: ‘‘আর সেই জন্য ঈশ্বর তাহাদের কাছে ভ্রান্তির কার্যসাধন পাঠান, যাহাতে তাহারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে...।’’ বাইবেল-০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘ঈশ্বর/ আল্লাহ তাদের কাছে এমন এক শক্তি পাঠাবেন যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে...।’’ জুবিলী বাইবেল: ‘‘ঈশ্বর তাদের উপর ভ্রান্তিময় কর্মশক্তি পাঠান, যেন তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে।’’ (২ থিষলনীকীয় ২/১১-১২)

আমরা দেখলাম ঈশ্বর বলেছেন: ‘‘কোন নবী যদি প্ররোচিত হয়ে কথা বলে, তবে জেনো, আমিই মাবুদ সেই নবীকে প্ররোচনা করেছি।’’ (ইহিস্কেল/ যিহিষ্কেল ১৪/৯)

বাইবেল বলছে, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিমা-পূজার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে বিষয়ে কোনো নবীকে জিজ্ঞাসা করে তবে ঈশ্বর নিজেই নিজের নবীকে প্রতারণা করে ভুল জবাব দেয়াবেন এবং প্রশ্নকারী ও নবী উভয়কেই ধ্বংস করবেন! (ইহিস্কেল ১৪/৭-১১)