বাইবেলে বলা হয়েছে: ‘‘তোমাদের পুরুষানুক্রমে তোমাদের সকল নিবাসে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি এই, তোমরা মেদ ও রক্ত কিছুই ভোজন করিবে না (It shall be a perpetual statute for your generations throughout all your dwellings, that ye eat neither fat nor blood)।’’ (লেবীয় পুস্তক ৩/১৭)
ইহুদিদের ঐতিহ্যগত প্রথা খাওয়ার আগে হাত ধোয়া। যীশুর সাহাবীরা খাওয়ার আগে হাত ধুতেন না বলে ইহুদিরা অভিযোগ করলে যীশু বলেন: ‘‘মুখের ভিতরে যা যায় তা মানুষকে নাপাক করে না; কিন্তু মুখের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে নাপাক করে। ... অন্তর থেকেই খারাপ চিন্তুা, খুন, সব রকম জেনা, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বের হয়ে আসে। এই সবই মানুষকে নাপাক করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ নাপাক হয় না।’’ (মথি ১৫/১১-২০, মো.-০৬)
এখানে তিনি খাওয়ার আগে হাত ধোওয়ার অপ্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তবে কেউ কেউ দাবি করেন যে, তিনি এখানে সকল খাদ্যের বৈধতা দিয়েছেন।
সাধু পল পানাহারের নীতিমালাকে মানব রচিত নিয়মকানুন বলে উপহাস করেছেন। তিনি বলেন: ‘‘তোমরা যখন জগতের অক্ষরমালা ছাড়িয়া খ্রিষ্টের সহিত মরিয়াছ, তখন কেন জগজ্জীবীদের ন্যায় এই সকল বিধির অধীন হইতেছ, যথা, ধরিও না, আস্বাদ লইও না, স্পর্শ করিও না? .. ঐ সকল বিধি মনুষ্যদের বিবিধ আদেশ ও ধর্মসূত্রের অনুরূপ (the commandments and doctrines of men: মানুষদের বানানো আদেশ ও ধর্মসূত্র)।’’ (কলসীয় ২/২০-২২)।
তিনি বলেন, কোনো খাদ্য বা পানীয় অপবিত্র নয়। পবিত্রদের জন্য সবই পবিত্র। পানাহারের মাধ্যমে ক্ষয় করতে ঈশ্বর এগুলো সৃষ্টি করেছেন। কাজেই কোনো কিছুকে অপবিত্র মনে করা অপবিত্র আত্মা ও বিবেকের প্রকাশ। পানাহার, স্পর্শ ইত্যাদি বিষয়ক সকল বিধান মানবীয় নির্দেশ ও শিক্ষা মাত্র। উপরন্তু তিনি পানাহারের অবৈধতা বিষয়ক কথাবার্তা শয়তানের শিক্ষা, ঈশ্বর বিরোধী, ধর্মবিদ্বেষী বা ধর্মদ্রোহী (profane) ও বুড়িদের গল্প বলেও উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন: ‘‘আমি জানি, এবং প্রভু যীশুতে নিশ্চয় বুঝিয়াছি, কোন বস্ত্তই স্বভাবত অপবিত্র নয়; কিন্তু যে যাহা অপবিত্র জ্ঞান করে, তাহারই পক্ষে তাহা অপবিত্র।’’ (রোমীয় ১৪/১৪) মো.-০৬: ‘‘হযরত ঈসার সংগে যুক্ত হয়েছি বলে আমি ভাল করেই জানি যে, আসলে কোন খাবারই হারাম নয়, কিন্তু কেউ যদি কোন খাবার হারাম মনে করে তবে তা তারই কাছে হারাম।
তিনি আরো বলেন: ‘‘শুচিগণের পক্ষে সকলই শুচি (Unto the pure all things are pure); কিন্তু কলুষিত ও অবিশ্বাসীদের পক্ষে কিছুই শুচি নয়’’। মো.-০৬: ‘‘যাদের দিল পাক-পবিত্র তাদের কাছে সব কিছুই পবিত্র, কিন্তু যাদের দিল নোংরা এবং যারা অ-ঈমানদার তাদের কাছে কিছুই পবিত্র নয়।’’ (তীত ১/১৫)
অন্যত্র তিনি বলেন: ‘‘অতএব ভোজন কি পান, কি উৎসব কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্বন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক। এ সকল ত আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রিষ্টের।’’ (কলসীয় ২/১৬)
তিনি আরো বলেন: ‘‘ভবিষ্যতে কতগুলো লোক ভ্রান্তিজনক রূহদের ও বদ-রূহদের (devils: শয়তানদের) শিক্ষামালায় মন দিয়ে ঈমান থেকে সরে পড়বে। ... এবং কোন কোন খাদ্য ভোজন করতে নিষেধ করে, অথচ সেই খাদ্য আল্লাহ এই অভিপ্রায়ে সৃষ্টি করেছেন, যেন যারা ঈমানদার ও সত্যের তত্ত্ব জানে, তারা শুকরিয়াপূর্বক তা ভোজন করে। বাস্তবিক আল্লাহর সৃষ্ট সমস্ত বস্ত্তই ভাল; শুকরিয়া সহকারে গ্রহণ করলে কিছুই বর্জনীয় নয়, কেননা আল্লাহর কালাম এবং মুনাজাত দ্বারা তা পবিত্রীকৃত হয়। এসব কথা ভাইদেরকে মনে করিয়ে দিলে তুমি ঈসার উত্তম পরিচারক হবে; এবং ঈমানের যে কালাম ও উত্তম শিক্ষার অনুসরণ করে আসছ তার দ্বারা পরিপুষ্ট হতে থাকবে। কিন্তু ভক্তিহীন যত পৌরাণিক গল্প ও বুড়িদের বানানো গল্প অগ্রাহ্য কর (But refuse profane and old wives' fables)।’’ (১ তীমথিয় ৪/১-৭, মো.-১৩)
একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বৈপরীত্য স্পষ্ট। যে বিধানকে কোথাও অলঙ্ঘনীয় চিরন্তন ঐশ্বরিক বিধান বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটাকেই অন্যত্র অপ্রয়োজনীয়, মানব রচিত, শয়তানী, পৌরাণিক গল্প ও বুড়িদের বানানো গল্প বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র বাইবেলের শেষাংশে বিদ্যমান পলের বক্তব্য অনুসারে পবিত্র বাইবেলের মধ্যেই বিদ্যমান পূর্ববর্তী নবীদের পানাহার বিষয়ক শিক্ষাগুলো ভ্রান্তিজনক রূহদের ও শয়তানেদের শিক্ষামালা, ধর্মবিদ্বেষী ও পৌরণিক গল্পমাত্র। সর্বোপরি বাইবেলের পুরাতন নিয়মে যত খাদ্য ও পানীয় হারাম করা হয়েছে সকল খাদ্য ও পানীয়কে ঈশ্বরের নামে খাওয়া হালাল বলে যত বেশি প্রচার করা যাবে তত বেশি যীশুর উত্তম শিষ্য হওয়া যাবে। এ সকল সাংঘর্ষিক বিষয় বিদ্যমান রয়েছে একই আত্মার রচিত একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে।