ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ইবরাহিম (আ.)। ইংরেজিতে তাঁর নাম (Abraham)। কেরি বাইবেল, পবিত্র বাইবেল-২০০০ ও জুবিলী বাইবেলে: অব্রাহাম; কিতাবুল মোকাদ্দসে: ইব্রাহিম। বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়মের বিভিন্ন স্থানে তাঁর দুটো পুত্রের কথা বলা হয়েছে: ইসমাইল (আ.) ও ইসহাক (আ.)।
আদিপুস্তক ১৬ অধ্যায়: ‘‘১ অব্রামের স্ত্রী সারী নিঃসন্তানা ছিলেন, এবং হাগার নামে তাঁহার এক মিসরীয়া দাসী ছিল। ... ৩ এইরূপে কনান দেশে অব্রাম দশ বৎসর বাস করিলে পর অব্রামের স্ত্রী সারী আপন দাসী মিসরীয়া হাগারকে লইয়া আপন স্বামী অব্রামের সহিত বিবাহ দিলেন। ... ১৫ পরে হাগার অব্রামের নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিল; আর অব্রাম হাগারের গর্ভজাত আপনার সেই পুত্রের নাম ইশ্মায়েল রাখিলেন। ১৬ অব্রামের ছিয়াশি বৎসর বয়সে হাগার অব্রামের নিমিত্তে ইশ্মায়েলকে প্রসব করিল।’’
এরপর আদিপুস্তকের ১৭ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘১ অব্রামের নিরানববই বৎসর বয়সে সদাপ্রভু তাঁহাকে দর্শন দিলেন .... ১৫ আর ঈশ্বর অব্রাহামকে কহিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিও না; তাহার নাম সারা [রাণী] হইল। ১৬ আর আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব, এবং তাহা হইতে এক পুত্রও তোমাকে দিব; আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিব, তাহাতে সে জাতিগণের [আদিমাতা] হইবে ... অব্রাহাম ঈশ্বরকে কহিলেন, ইশ্মায়েলই তোমার গোচরে বাঁচিয়া থাকুক (O that Ishmael might live before thee!) ১৯ তখন ঈশ্বর কহিলেন, তোমার স্ত্রী সারা অবশ্য তোমার নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিবে, এবং তুমি তাহার নাম ইস্হাক [হাস্য] রাখিবে। ... ২০ আর ইশ্মায়েলের বিষয়েও তোমার প্রার্থনা শুনিলাম; দেখ, আমি তাহাকে আশীর্বাদ করিলাম, এবং তাহাকে ফলবান করিয়া তাহার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তাহা হইতে দ্বাদশ রাজা উৎপন্ন হইবে, ও আমি তাহাকে বড় জাতি করিব। .....’’ এরপর ২১ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘... ৫ অব্রাহামের এক শত বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইস্হাকের জন্ম হয়।’’
এরপর ২৫ অধ্যায়ে বলা হয়েছে: ‘‘৮ পরে অব্রাহাম বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ূ হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন। ৯ আর তাঁহার পুত্র ইস্হাক ও ইশ্মায়েল মম্রির সম্মুখে হেতীয় সোহরের পুত্র ইফ্রোণের ক্ষেত্রস্থিত মক্পেলা গুহাতে তাঁহার কবর দিলেন।’’
তাহলে ইবরাহিমের প্রথম পুত্র ইসমাইল (আ.)। তাঁর বয়স চৌদ্দ বছর হলে দ্বিতীয় পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়। ইসমাইল ১৪ বছর পর্যন্ত অদ্বিতীয় পুত্র ছিলেন। আর ইসহাক জন্মের মুহূর্ত থেকেই দ্বিতীয় পুত্র হয়ে জন্মেন। ইসহাকের জন্মের পূর্বে ইসমাইল ইবরাহিমের প্রিয়তম পুত্র ছিলেন। আমরা দেখলাম যে, তিনি তাঁর জন্য তিনি হৃদয় দিয়ে দুআ করলেন এবং ঈশ্বর তা গ্রহণ করলেন। ইসমাইলকে দূরে পাঠালেও ইবরাহিমের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। তার বড় প্রমাণ যে, পিতার মৃত্যুর সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং ছোট ভাইয়ের সাথে একত্রে তাঁকে দাফন করেন।
নতুন নিয়মের বক্তব্য: ‘‘কারণ লেখা আছে যে, অব্রাহামের দুই পুত্র ছিল: একটা দাসীর পুত্র ও একটা স্বাধীনার পুত্র (গালাতীয় ৪/২২)
এর বিপরীতে বাইবেল আবার বলছে যে, ইসহাক ইবরাহিমের একমাত্র পুত্র ছিলেন। আদিপুস্তক ২২ অধ্যায় বলছে: ‘‘১ এই সকল ঘটনার পরে ঈশ্বর অব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন। ... ২ তখন তিনি কহিলেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, (thine only son) যাহাকে তুমি ভালবাস, সেই ইস্হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং ... তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর। ... ১২ ... তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও। ... ১৬ তুমি এই কার্য করিলে, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতে অসম্মত হইলে না, এই হেতু আমি আমারই দিব্য করিয়া কহিতেছি, ১৭ আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্বাদ করিব...।’’
এখানে বার বার ইসহাককে ইবরাহিমের অদ্বিতীয় পুত্র বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, অথচ পূর্বের বক্তব্যগুলো নিশ্চিত করে যে, ইসহাক জন্ম থেকেই দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন।
বাইবেল অন্যত্র বলছে: ‘‘বিশ্বাসে অব্রাহাম পরীক্ষিত হইয়া ইসহাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন; এমন কি, যিনি প্রতিজ্ঞা সকল সানন্দে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি আপনার সেই একজাত পুত্রকে (only begotten son) উৎসর্গ করিয়াছিলেন।’’ (ইব্রীয় ১১/১৭)
এখানে আমরা দেখছি যে, ইসহাক ইবরাহিমের ‘একজাত পুত্র’ ছিলেন, অর্থাৎ ইবরাহিমের ঔরসে জন্মলাভকারী একমাত্র পুত্র ছিলেন। ইসহাকের আগে বা পরে ইবরাহিম আর কোনো পুত্র সন্তান জন্মই দেননি!