২. ১২. ১১. সাধু মার্কের মতানুসারে ঈসা মাসীহের পবিত্র ইঞ্জিল

সাধু মার্কের মতানুসারে ঈসা মাসীহের পবিত্র ইঞ্জিল (The Holy Gospel of Jesus Christ According to St. Mark) মথির ইঞ্জিলের মতই একটা বেনামি পুস্তক। দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি থেকে একে ‘মার্ক’-এর লেখা বলে মনে করা হয়। মার্কের পুস্তক সম্পর্কে প্রাচীনতম বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন ইউসিবিয়াস। তিনি লেখেছেন, দ্বিতীয় শতাব্দীর প্যাপিয়াস নামক একজন ধর্মগুরু লেখেছেন:

“And John the Presbyter also said this, Mark being the interpreter of Peter whatsoever he recorded he wrote with great accuracy, but not however, in the oredr in which it was spoken or done by our Lord, for he neither heard nor followed our Lord, but as before said, he was in company with Peter, who gave him such instruction as was necessary, but not to give a history of our Lord’s discourses; wherefore Mark has not erred in any thing, by writing some things as he has recorded them; for he was carefully attentive to one thing, not to pass by any thing that he heard, or to state any thing falsely in these accounts.”

‘‘মুরববী যোহন আরো বলেন, মার্ক পিতরের অনুবাদক ছিলেন। এজন্য যা কিছু সংগ্রহ করেছেন তা তিনি ব্যাপক যথার্থতার সাথে লিপিবদ্ধ করেছেন। তবে যে ক্রম অনুসারে আমাদের প্রভু বলেছিলেন বা করেছিলেন সে ক্রম তিনি রক্ষা করেননি। মার্ক আমাদের প্রভুকে শুনেননি এবং তাঁর অনুসরণও করেননি। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, তিনি পিতরের সাহচর্যে ছিলেন, যিনি তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তবে আমাদের প্রভুর বক্তৃতাগুলোর ইতিহাস প্রদানের জন্য নয়। এজন্য মার্ক যেভাবে সংগ্রহ করেছিলেন সেভাবে কিছু বিষয় লেখে ভুল করেননি। কারণ তিনি সতর্কতার সাথে একটা বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেছেন: তিনি যা শুনেছেন তার কিছু বাদ না দিতে অথবা এ সকল বর্ণনায় মিথ্যাভাবে কিছু না বলতে।’’[1]

উপরের  উদ্ধৃতি থেকে আমরা দেখছি যে, মার্কের পুস্তকটা যীশুর জীবন বিষয়ক একটা বর্ণনা পুস্তক। পিতরের মুখ থেকে মার্ক যা শুনেছিলেন পরবর্তীকালে তিনি তা লিপিবদ্ধ করেছেন। এ পুস্তকে যীশুর বাণী বা ইঞ্জিল সংকলন করা হয়নি; বরং তাঁর জীবনের কিছু ঘটনা সংকলন করা হয়েছে, তবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। এটা কোনো ঐশী বা ওহী নির্ভর পুস্তক নয়। মার্ক বা তাঁর উস্তাদ পিতর কেউই এরূপ দাবি করেননি। মুরববী যোহনও এরূপ দাবি করেননি। তারা কেউই বলছেন না যে, পবিত্র আত্মার নির্দেশে বা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে তারা এগুলো লেখেছেন। বরং সুস্পষ্টই বলছেন যে, স্বাভাবিক মানবীয় সতর্কতার সাথে তিনি নির্ভুলভাবে তথ্যগুলো সংকলন করতে চেষ্টা করেছেন।

মনে করা হয় যে, মার্ক বলতে নতুন নিয়মের বিভিন্ন পত্রে উল্লেখকৃত জন মার্ককে বুঝানো হয়েছে (প্রেরিত ১৫/৩৭-৩৯, কলসীয় ৪/১০; ২ তীমথিয় ৪/১১, ফিলীমন ১৪ এবং ১ পিতর ৫/১৩)। এ প্রসঙ্গে এনকার্টা বিশ্বকোষের ভাষ্য:

“Early Christians tended to link the gospels with one of the 12 apostles. If the text was firmly attributed by early tradition to a man named Mark, Papias's presbyter probably did the best he could with this tradition by identifying this Mark with John Mark in order to link him to the apostle Peter. Hence, many scholars believe that the Gospel was written by an otherwise unknown early Christian named Mark.”

‘‘প্রাচীন খ্রিষ্টানরা ইঞ্জিলগুলোকে দ্বাদশ প্রেরিতের কারো সাথে সম্পর্কিত করতে ইচ্ছুক ছিলেন। যদি প্রাচীন কোনো বর্ণনায় এ পুস্তকটা শক্তভাবে মার্ক নামের কারো সাথে সম্পৃক্ত হত তবে প্যাপিয়াসের মুরববী সম্ভবত যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন এ বর্ণনার মার্ককে জন মার্ক বলে চিহ্নিত করতে, যেন তাকে পিতরের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারেন। এজন্য অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে, এ ইঞ্জিলটা প্রথম যুগের অন্য কোনো অপরিচিত খ্রিষ্টান কর্তৃক রচিত, যার নাম ছিল মার্ক।’’[2]

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:

Though the author of Mark is probably unknown, authority is traditionally derived from a supposed connection with the Apostle Peter, who had transmitted the traditions before his martyr death under Nero's persecution (c. 64–65). The setting is a Gentile church. There is no special interest in problems with Jews ... Full validity is given the worship of the Gentiles. .... it is in good agreement with the traditions that Mark was written after the martyrdom of Peter. Mark may thus be dated somewhere after 64 and before 70, when the Jewish war ended.

‘‘যদিও ‘মার্ক’ নামক পুস্তকটার লেখক সম্ভবত অজ্ঞাত পরিচয়, সাধারণত পিতরের সাথে এর সম্পর্ক অনুমান করে এর গ্রহণযোগ্যতা আহরণ করা হয়। নিরোর অত্যাচারে শহীদ হওয়ার পূর্বে (৬৪-৬৫খৃ.) পিতর তা সঞ্চারিত করেন। ... এ পুস্তকের পরিবেশ-বিন্যাস অ-ইহুদি খ্রিষ্টান-মণ্ডলী। ইহুদিদের সাথে সমস্যার বিষয়ে কোনো বিশেষ আকর্ষণ নেই। ... অ-ইহুদি পরজাতিদের আরাধনাকে পূর্ণ বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।... প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে সুন্দর মিল রেখে বলা যায় যে পিতরের শহীদ হওয়ার পরে এ পুস্তকটা লেখা। এজন্য মার্কের ইঞ্জিলটা সম্ভবত ৬৪ খ্রিষ্টাব্দের পরে ৭০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে লেখা, যখন ইহুদি যুদ্ধ শেষ হয়।’’[3]

মার্ক প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া লেখেছে: “According to tradition and early church fathers, the author is Mark the Evangelist, the companion of the apostle Peter. The gospel, however, appears to rely on several underlying sources, varying in form and in theology, and which tells against the tradition that the gospel was based on Peter's preaching.”

‘‘প্রচলন এবং পূর্ববর্তী ধর্মগুরুদের মত অনুসারে এ পুস্তকটার লেখক প্রেরিত শিষ্য পিতরের সাথী  ইঞ্জিলীয় মার্ক। তবে বাস্তবে দেখা যায় যে, এ পুস্তকটা অনেকগুলো অভ্যন্তরীণ সূত্রের উপর নির্ভর করে লেখা। অবয়ব ও ধর্মতত্ত্ব উভয় বিষয়েই এ গ্রন্থের সূত্র একাধিক। পিতরের প্রচারের ভিত্তিতে এ সুসমাচারটা লেখা বলে যে প্রচলিত মত এ বিষয়টা সে মতের বিপরীত কথাই বলে।’’[4]

কোনো কোনো ইহুদি ও খ্রিষ্টান গবেষক উল্লেখ করেছেন যে, ফিলিস্তিনের ভৌগলিক বর্ণনা এবং ১ম শতাব্দীর ইহুদি রীতিনীতির বর্ণনায় মার্কের ইঞ্জিলের লেখক মারাত্মক ভুল করেছেন, যা প্রমাণ করে যে, প্রেরিতগণের কার্যবিবরণের জন মার্ক এ পুস্তকের লেখক নন। কারণ তিনি জেরুজালেমের অধিবাসী একজন প্রাচীন ইহুদি ছিলেন। ফিলিস্তিনের রীতিনীতি ও শহর-বন্দর সম্পর্কে এরূপ ভুল তিনি করতে পারেন না। বাইবেলের ভুলভ্রান্তি প্রসঙ্গে পাঠক কিছু বিষয় জানতে পারবেন। যেমন তিনি সোর থেকে সিদোন দিয়ে গালীল সাগরে যাওয়ার কথা লেখেছেন। ইহুদি স্ত্রীদের জন্য স্বামীদের তালাক দেওয়ার কথা লেখেছেন। সকল ইহুদি খাওয়ার আগে হস্তদ্বয় ধৌত করত বলে উল্লেখ করেছেন। এগুলো যীশুর সময়ের ইহুদি রীতিনীতি, ইহুদি আইন ও ফিলিস্তিনের মানচিত্র অনুসারে ভুল। এগুলো প্রমাণ করে যে, ফিলিস্তিনের অধিবাসী কোনো ইহুদি এ পুস্তকটা লেখেননি। অ-ইহুদি কোনো রোমান এ পুস্তকটা লেখেছেন।[5]

[1] Eusebius, Ecclesiastical History, page 127.
[2] Martyn, J. Louis. "Gospel According to Mark." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007.
[3] biblical literature. (2009). Encyclopædia Britannica. Encyclopædia Britannica 2009 Ultimate Reference Suite. Chicago: Encyclopædia Britannica.
[4] উইকিপিডিয়া: Authorship of the Bible; Mark
[5] http://www.rejectionofpascalswager.net/markauthor.html