ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে হিব্রু বাইবেল বা খ্রিষ্টান পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলো মূসা (আ.) থেকে মালাখি পর্যন্ত নবীগণ কর্তৃক রচিত। এ সকল নবীর সময়কাল নিয়ে অনেক মতভেদ বিদ্যমান। তবে সাধারণ ভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সাল থেকে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের মধ্যে পুস্তকগুলো লিখিত বলে ধর্মগুরুরা দাবি করেন। পক্ষান্তরে আধুনিক গবেষকরা বলেন যে, বর্তমানে বিদ্যমান এ সকল পুস্তক কোনোটাই সংশিস্নষ্ট নবীর লেখা নয়। বরং তাঁদের অনেক পরে এগুলো সংকলিত ও তাঁদের নামে প্রচারিত।[1] সর্বাবস্থায় এগুলোর সংকলন চূড়ান্ত হয়েছে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের মধ্যে। কিন্তু পরবর্তী প্রায় ৭ শত বছরের কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। সংকলিত হিব্রু বাইবেলের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় ৯/১০ খ্রিষ্টীয় শতক থেকে।[2]
১৯৪৫ সালের দিকে জর্ডানের কুমরান প্রান্তরে কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়, যেগুলো ‘কুমরান পাণ্ডুলিপি’ বা ‘মৃত সাগরের পাণ্ডুলিপি’ (Dead Sea Scrolls) নামে প্রসিদ্ধ। এগুলোর মধ্যে হিব্রু বাইবেলের অনেক গ্রন্থের আংশিক বা সামান্য কিছু পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে। ইহুদি-খ্রিষ্টান গবেষকরা দাবি করেন যে, এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্ট পরবর্তী ২ শতাব্দীর মধ্যে লেখা। তবে এ সকল আংশিক, খণ্ডতে ও সামান্য কয়েক পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপিগুলোর সাথে প্রচলিত হিব্রু বাইবেলের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আমরা ইতোপূর্বে একটা নমুনা উল্লেখ করেছি।
ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দাবি অনুসারে পুরাতন নিয়মের গ্রিক সংস্করণ বা সেপ্টুআজিন্ট লেখা হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে। অথচ এর প্রাচীনতন পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় ৪র্থ খ্রিষ্টীয় শতাব্দী থেকে। অর্থাৎ ৭০০ বছর পুস্তক-সংকলনটা লক্ষ লক্ষ ইহুদি-খ্রিস্টানের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং হাজার হাজার সিনাগগ ও চার্চে পঠিত হত বলে দাবি করা হল, অথচ ৭০০ বছরের মধ্যে লেখা একটা প্রাচীন পাণ্ডুলিপিও পাওয়া যায় না। সর্বোপরি এ বাইবেলের বক্তব্য ও বইয়ের সংখ্যা হিব্রু বাইবেল থেকে অনেক ভিন্ন। ইহুদি ও প্রটেস্ট্যানটরা ‘সেপ্টুআজিন্ট’ মানেন না। আর ৪র্থ শতাব্দী থেকে পাওয়া সেপ্টুআজিন্টের পাণ্ডুলিপিগুলোর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ও বৈপরীত্য বিদ্যমান।
এভাবে আমরা দেখছি যে, মূল লেখকদের বা তাদের শিষ্যদের লেখা পাণ্ডুলিপি তো অনেক দূরের কথা, তাদের পরে প্রায় দেড় হাজার বছর পর্যন্ত লেখা কোনো প্রাচীন হিব্রু পাণ্ডুলিপি ইহুদি বা খ্রিষ্টানদের সংগ্রহে নেই। এ প্রসঙ্গে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার বক্তব্য:
The earliest printed editions of the Hebrew Bible derive from the last quarter of the 15th century and the first quarter of the 16th century. The oldest Masoretic codices stem from the end of the 9th century and the beginning of the 10th. A comparison of the two shows that no textual developments took place during the intervening 600 years. .... This situation, however, was a relatively late development; there is much evidence for the existence of a period when more than one Hebrew text-form of a given book was current. In fact, both the variety of witnesses and the degree of textual divergence between them increase in proportion to their antiquity.
‘‘খৃস্টীয় ১৫ শতকের শেষে ও ১৬ শতকের শুরুতে হিব্রু বাইবেলের প্রাচীনতম মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আর হিব্রু বাইবেলের লিখিত পাণ্ডুলিপি খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দী থেকে পাওয়া যায়। মুদ্রিত কপি ও ৯ম শতাব্দীর প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ৬০০ বছরে বইগুলোর বক্তব্যে পরিবর্তন হয়নি। ... কিন্তু এটা অনেক পরের অবস্থা। অনেক প্রমাণ বিদ্যমান যে, এক সময় বাইবেলের একই পুস্তকের একাধিক হিব্রু ভাষ্য প্রচলিত ছিল। প্রকৃত বাস্তবতা হল, সাক্ষ্যের বৈপরীত্য এবং বক্তব্যের দূরত্ব গ্রন্থগুলোর বয়সের বা প্রাচীনত্বের সাথে তাল রেখে বৃদ্ধি পেয়েছে।’’[3]
হিব্রু বাইবেলের প্রাচীনতম পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি দুটো: Aleppo Codex ও Leningrad Codex। প্রথমটা দশম শতাব্দীতে লেখা এবং দ্বিতীয়টা একাদশ শতাব্দীতে লেখা। এ পাণ্ডুলিপি দুটোর পুস্তক বিন্যাসের সাথে বর্তমান ইহুদি বাইবেল বা তানাখণ্ডএর পুস্তক বিন্যাসের পার্থক্য রয়েছে। এ দুটো পাণ্ডুলিপিতে বংশাবলি পুস্তকটা তৃতীয় অংশের শুরুতে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান মুদ্রিত তানাখণ্ডএ বংশাবলি পুস্তকটা তৃতীয় অংশের শেষ পুস্তক। আগ্রহী পাঠক ইন্টারনেটে এ দুটো পাণ্ডুলিপির নাম লেখে অনুসন্ধান করলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
[2] উইকিপিডিয়া: Aleppo Codex, Leningrad Codex and other incomplete MSS
[3] "biblical literature/Textual criticism: manuscript problems "Encyclopædia Britannica. Encyclopædia Britannica 2009 Ultimate Reference Suite. Chicago; Encyclopædia Britannica, 2009.