(ক) যিহোশূয় ফেরেশতাকে সাজদা ও ইবাদত করলেন
উপরে কয়েকটা উদ্ধৃতিতে আমরা দেখলাম যে, কিতাবুল মোকাদ্দসে worship, bow down, fell on his face শব্দগুলোর অর্থ ‘সেজদা করা’ বা ‘এবাদত করা’ লেখা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে এ শব্দগুলোর অনুবাদে অন্যান্য শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
যিহোশূয় বা ইউসা পুস্তকের ৫/১৩-১৪ শ্লোক কিতাবুল মোকাদ্দসে নিম্নরূপ: ‘‘জেরিকোর কাছাকাছি গেলে পর ইউসা খোলা তলোয়ার হাতে একজন লোককে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। ইউসা তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কার পক্ষের লোক- আমাদের, না আমাদের শত্রুদের?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি কারও পক্ষের লোক নই। আমি মাবুদের সৈন্যদলের সেনাপতি, এখন আমি এখানে এসেছি।’ এই কথা শুনে ইউসা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে সম্মান দেখালেন।’’
শেষ বাক্যটার ইংরেজি ‘fell on his face to the earth, and did worship’। অর্থাৎ: ‘‘তিনি মাটিতে মুখ রেখে সাজদা করলেন এবং ইবাদত করলেন।’’ আমরা দেখেছি যে, কেরির অনুবাদে ‘fell on his face’ অর্থ উপুড় হওয়া এবং ‘worship’ অর্থ প্রণিপাত বা সাজদা। এ মূলনীতি ঠিক রেখে এ শ্লোকে কেরির অনুবাদ: ‘‘তখন যিহোশূয় ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন।’’ কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদ এখানে অসঙ্গতিপূর্ণ। উপরে বিভিন্ন স্থানে ‘fell on his face’ অর্থ লেখা হয়েছে: ‘সেজদায় পড়লেন’। অথচ এখানে একই কথার অর্থ লেখা হয়েছে ‘উবুড় হয়ে’। এরপর ‘ওয়র্শিপ’ শব্দটার অর্থ লেখা হয়েছে ‘সম্মান দেখানো’।
(খ) দাউদ তালুতের ছেলে যোনাথনকে সাজদা করলেন!
১ শমূয়েল ২০/৪১ ‘‘David arose out of a place toward the south, and fell on his face to the ground, and bowed himself three times’’ অর্থাৎ ‘‘দাউদ দক্ষিণের দিকে একটা স্থান থেকে উঠে আসলেন, মাটির উপর তার মুখ রেখে পড়ে গেলেন: সাজদা করলেন এবং তিনবার নিজেকে উপুড় করলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদ: ‘‘দাউদ সেই পাথরটার দক্ষিণ দিক থেকে উঠে আসলেন। তিনি যোনাথনের সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তিনবার তাঁকে সালাম জানালেন।’’
এখানেও সাজদা করাকে ‘মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সালাম জানানো’ বলা হল!
(গ) ধার্মিক ওবদিয় নবী ইলিয়াসকে সাজদা করলেন
১ রাজাবলি/ বাদশাহনামা ১৮/৭: ‘‘Obadiah was in the way, behold, Elijah met him: and he knew him, and fell on his face’’: ‘‘ওবদিয় পথ দিয়ে যেতে ইলিয়াসকে দেখে চিনতে পেরে ‘তার মুখের উপর পড়ে গেলেন’: তাকে সাজদা করলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘ওবদিয় পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় ইলিয়াসের সংগে তাঁর দেখা হল। ওবদিয় তাঁকে চিনতে পেরে মাটিতে উবুড় হয়ে বললেন...।’’
এভাবে বাইবেলে অনেক স্থানে নবীরা বা ধার্মিকরা অন্যদের সামনে মাটিতে উবুড় হয়েছেন, অর্থাৎ সাজদা করেছেন। কিতাবুল মোকাদ্দসে উবুড় হওয়া, সালাম করা, সম্মান দেখানো ইত্যাদি অনুবাদের মাধ্যমে মূল তথ্যটা একেবারেই অস্পষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখব যে, যীশুর ক্ষেত্রে এ শব্দের অর্থে ‘সেজদা করা’ লেখা হয়েছে।
(ঘ) ধার্মিক মহিলা নবী আল-ইয়াসাকে সাজদা করলেন
আল-ইয়াসা একজন মহিলার মৃত সন্তানকে জীবিত করেন। তখন মহিলা তাঁকে সাজদা করেন: ২ বাদশাহনামা ৪/৩৭ ‘‘Then she went in, and fell at his feet, and bowed herself to the ground: তখন স্ত্রীলোকটি ভিতরে আসল এবং তাঁর পায়ের উপর সাজদা করল।’’ কেরি: ‘‘তখন সে স্ত্রীলোক নিকটে গিয়া তাঁর পদতলে পড়িয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘স্ত্রীলোকটি ঘরে ঢুকে তাঁর পায়ে পড়লেন এবং মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে সালাম জানালেন।’’