‘বাইবেল’ শব্দটা বাঙালিদের নিকট অতি পরিচিত। বাংলাদেশ ও ভারতের সকল বাংলাভাষী সাধারণভাবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থকে ‘বাইবেল’ নামে চেনেন। ইংরেজি ও সকল ইউরোপীয় ভাষায় ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বিজয় লাভের পর বৃটিশ খ্রিষ্টান মিশনারিরা বাংলাদেশে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারক প্রেরণ করেন। তারা তাদের ধর্মগ্রন্থকে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করেন।
বাইবেল শব্দটার অর্থ ‘পুস্তক’। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে বর্তমান বৈরুতের নিকটবর্তী প্রাচীন ফনিশিয়া (Phoenicia) রাজ্যের একটা শহরের নাম ছিল ‘বিব্লস’ (Byblos)। এ শহর থেকেই গ্রিকরা প্রাচীন ‘কাগজ’ প্যাপিরাস (papyrus) আমদানি করত। এজন্য গ্রিক ভাষায় প্যাপিরাস বা কাগজ এবং প্যাপিরাস বান্ডল (papyrus scroll) ‘বিবলস’ (Byblos/biblos) এবং কাগজে লেখা ছোট পুস্তক ‘বিবলিয়ন’ (biblion=small book) নামে পরিচিত ছিল। মাইক্রোসফট এনকার্টা বিশ্বকোষের ‘বাইবেল’ আর্টিকেলে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
The term Bible is derived through Latin from the Greek biblia, or “books,” the diminutive form of byblos, the word for “papyrus” or “paper,” which was exported from the ancient Phoenician port city of Biblos. By the time of the Middle Ages the books of the Bible were considered a unified entity.
‘‘বাইবেল শব্দটা ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমে গ্রিক ‘বিবলিয়া’ শব্দ থেকে আগত। এটা মূলত ‘বিবলস’ শব্দ থেকে গৃহীত। বিবলস অর্থ ছিল প্যাপিরাস বা কাগজ, যা প্রাচীন ফনিসিয়ান বন্দরনগরী ‘বিবলস’ থেকে আমদানি করা হত। মধ্যযুগে এসে বাইবেলের পুস্তকগুলোকে একীভূত অস্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হত।’’
উপরের তথ্য থেকে আমরা দেখছি যে, ‘বাইবেল’ শব্দটার অর্থ ‘পুস্তক’ বা ‘পুস্তকমালা’। আমরা আরো দেখছি যে, প্রাচীন যুগে ‘বাইবেল’-কে ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল না। মধ্যযুগে ল্যাটিন ভাষায় কখনো কখনো ‘বিবলিয়া’ শব্দটার সাথে ‘স্যাকরা’ (sacra) শব্দ ব্যবহার করা হত, যার অর্থ পবিত্র (sacred)। এ ব্যবহারের ভিত্তিতে ইংরেজিতে ‘the holy Bible’ বা ‘পবিত্র বাইবেল’ বলার প্রচলন ছিল। বর্তমানে ‘বাইবেল’ ও ‘পবিত্র বাইবেল’ উভয় পরিভাষাই দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা দেখছি যে, ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মের ধর্মগ্রন্থটার নাম মূলত গ্রিক ভাষা থেকে গৃহীত এবং ল্যাটিন ভাষায় পরিমার্জিত হয়ে ‘পবিত্র বাইবেল’ নামে পরিচিত। পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব যে, এ গ্রন্থটা মূলত হিব্রু ভাষায় রচিত ও প্রচারিত। অনেক শতাব্দী পরে গ্রন্থটা গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। আমরা জানি, প্রতিটা গ্রন্থেরই তার নিজস্ব ভাষায় নাম থাকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হলেও গ্রন্থটার মূল নাম (proper noun) অবিকৃত ও অভিন্নই থাকে। তাহলে ‘বাইবেল’ নামক এ বইটার হিব্রু ভাষায় নাম কী ছিল? বইটার সংকলক ও প্রচারকরা কি হিব্রু ভাষায় বইটার কোনো নাম দেননি? দিলে তা কী ছিল এবং কেনই বা তা পরিবর্তন করে গ্রিক ভাষায় নামকরণ করা হল? প্রশ্নগুলোর উত্তর সুস্পষ্ট নয়। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখব যে, বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান গ্রন্থগুলোর প্রত্যেকটার ভিন্ন ভিন্ন হিব্রু নাম রয়েছে। সংকলিত গ্রন্থমালারও হিব্রু নাম আছে। তবে গ্রিক ভাষার বাইবেল শব্দটাই নাম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
‘বাইবেল’ শব্দটা মূল আভিধানিক অর্থে যে কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ব্যবহারিকভাবে তা খ্রিষ্টধর্মের ধর্মগ্রন্থের নাম যা ব্যাকরণের পরিভাষায় ‘proper noun’ অর্থাৎ নিজস্ব নাম বা সংজ্ঞাবাচক নাম। যেমন ‘কুরআন’, ‘বেদ’, ‘গীতা’, ‘ত্রিপিটক’ ইত্যাদি প্রত্যেক শব্দের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন ব্যবহারিকভাবে তা বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের নিজস্ব নাম বা ‘proper noun’-এ পরিণত হয়েছে। এজন্য এ সকল গ্রন্থ যে ভাষাতেই অনুবাদ করা হোক না কেন, গ্রন্থের মূল নাম অপরিবর্তিত থাকে।
খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ও পণ্ডিতরা সাধারণভাবে এ নীতি অনুসরণ করলেও আমরা দেখি যে, অনেক সময় তারা ব্যক্তি, স্থান বা গ্রন্থের নিজস্ব নামও অনুবাদ করেন। বাইবেলের ক্ষেত্রেও এরূপ হয়েছে। বাইবেল শব্দটা ‘proper noun’ হওয়ার কারণে বাইবেলের বিভিন্ন ভাষার অনুবাদে তারা নামটা বহাল রেখেছেন। বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রেও তারা ‘বাইবেল’ নামটা অপরিবর্তিত রেখেছিলেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার কলরাডো (Colorado) রাষ্ট্রের কলরাডো স্প্রীংস (Colorado springs) শহরে অনুষ্ঠিত (north American conference on muslim evangelization) ‘মুসলিমদের খ্রিষ্টান বানানো বিষয়ে উত্তর আমেরিকান সম্মেলনে’ খ্রিষ্টান প্রচারকরা মুসলিমদেরকে খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্য অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল ধর্মগ্রন্থগুলোকে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ও আকর্ষণীয় পরিভাষায় অনুবাদ করা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বর্তমানে বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি বাইবেলকে ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম দিয়ে প্রকাশ করেছে।
মধ্যযুগ থেকে বাইবেলের আরবি অনুবাদের ক্ষেত্রে খ্রিষ্টানরা ‘আল-কিতাবুল মুকাদ্দাস’ শব্দ ব্যবহার করেন। ‘কিতাব’ শব্দটা ‘বাইবেল’ শব্দের আরবি অনুবাদ, অর্থাৎ ‘গ্রন্থ’। আর ‘মুকাদ্দাস’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’। এভাবে ‘কিতাবুল মোকাদ্দাস’ অর্থ ‘পবিত্র গ্রন্থ’। এখানে লক্ষণীয়, গ্রন্থটার বাংলা অনুবাদ গ্রন্থের জন্য আরবি অনুবাদ নাম ব্যবহার। এখানে প্রথমত একটা নাম (proper noun)-এর অনুবাদ করা হয়েছে, যা অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয়ত অনুবাদের ভাষায় নামটার অনুবাদ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ভাষার অবোধ্য বা দুর্বোধ্য নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বাহ্যত এর উদ্দেশ্য মুসলিমদেরকে আকৃষ্ট করা।
মূসা (আ.) বা মোশি থেকে ঈসা (আ.) বা যীশু পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বছর যে ধর্মগ্রন্থটা প্রচলিত ছিল তার নিশ্চয় একটা নাম ছিল। কী নাম ছিল তার? বাইবেল থেকে জানা যায় যে, যীশু ও তাঁর শিষ্যরা ‘বাইবেল’ বা ‘কিতাবুল মোকাদ্দস’ নাম জানতেন না। ‘বাইবেল’ নামক গ্রন্থটা বুঝাতে তাঁরা নিম্নের পরিভাষা ব্যবহার করতেন:
(১) the scripture/scriptures। এ শব্দটার মূল অর্থ: লিখিত বিষয় (what is written) বা লিখিত পুস্তক। ব্যবহারিকভাবে এর অর্থ ধর্মগ্রন্থ বা লিখিত শাস্ত্র।[1]
(২) The Law and the Prophets। অর্থাৎ ‘তৌরাত ও নবীগণ’। কেরির অনুবাদে ‘ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণ’। (দেখুন: মথি ৫/১৭; ৭/১২; ১১/১৩; ২২/৪০; লূক ১৬/১৬; ২৪/৪৪; যোহন ১/৪৫; প্রেরিত ১৩/১৫; ২৪/১৪; ২৮/২৩; রোমীয় ৩/২১)
(৩) the law of Moses, and in the prophets, and in the psalms। ‘মূসার তৌরাত এবং নবীগণ ও গীতসংহিতা অথবা দাউদের গীতসংহিতা। (দেখুন: লূক ২৪/৪৪। আরো দেখুন: লূক ২০/৪২; প্রেরিত ১/২০)
পরবর্তীতে আমরা দেখব যে, ইহুদি বাইবেল তিন অংশে বিভক্ত: (১) তৌরাত (The Law), (২) নাবিয়্যীম: নবীগণের পুস্তক (the Prophets) এবং (৩) কিতুবীম: লিখনিসমূহ (the Writings)। গীতসংহিতা পুস্তকটা তৃতীয় অংশের মধ্যে বিদ্যমান। ‘তৌরাত-এর ‘তা’, ‘নাবিয়্যীম’-এর ‘না’ ও ‘কিতুবীম’-এর ‘ক’ নিয়ে একত্রে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ইহুদি সংস্করণকে ইহুদিরা ‘তানাক’ বলেন।
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রথম খ্রিষ্টীয় শতকে বাইবেল নামক ধর্মগ্রন্থের কোনো একক নাম ছিল না। এ গ্রন্থসমষ্টিকে একত্রে ‘ধর্মগ্রন্থ’ বলা হত। অথবা এ গ্রন্থের দুটো অংশকে পৃথকভাবে নাম উল্লেখ করে বলা হত: ‘তৌরাত ও নবীগণ’। ইহুদি বাইবেল বা পুরাতন নিয়মের তৃতীয় অংশ ‘কিতুবীম’-এর মধ্য থেকে গীতসংহিতা পুস্তকটা সে সময়ে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। বাহ্যত ‘কিতুবীম’ নামক এ অংশটা তখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি এবং ‘ধর্মগ্রন্থ’-এর অংশ হিসেবে গণ্য হয়নি।
খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোকে দুভাগে ভাগ করেন: পুরাতন নিয়ম বা পুরাতন সন্ধি (Old Testament) ও নতুন নিয়ম, নতুন সন্ধি বা নবসন্ধি (New Testament)। প্রথমভাগের গ্রন্থাবলি সম্পর্কে তারা দাবি করেন যে, সেগুলো ইহুদি ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। অর্থাৎ যীশুর আগমনের পূর্বে বনি-ইসরাইল বা ইহুদিদের মধ্যে যে সকল নবী আগমন করেছিলেন তাঁদের গ্রন্থগুলোকে ইহুদিরা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে সংকলন করেন। এটা ইহুদি বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। এটাকেই খ্রিষ্টানরা তাদের বাইবেলের পুরাতন নিয়ম হিসেবে গণ্য করেন। দ্বিতীয় অংশ নতুন নিয়মের গ্রন্থগুলোর বিষয়ে তারা দাবি করেন যে, এগুলো যীশুর ‘ইঞ্জিল’ এবং তাঁর শিষ্যদের বা তাঁদের শিষ্যদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ বা পত্র।
আমরা সকলেই জানি যে, প্রত্যেক ধর্মের অনেক দল-উপদল আছে। কিন্তু একই ধর্মের দল-উপদলের জন্য ভিন্নভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থাকে বলে হয়ত আমাদের কোনো পাঠকই জানেন না। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে অনেক দল-উপদল বিদ্যমান। কিন্তু কুরআন, বেদ, ত্রিপিটক ইত্যাদির ভিন্নভিন্ন সংস্করণ বা ভিন্নভিন্ন বই আছে বলে আমরা জানি না। কিন্তু খ্রিষ্টান ধর্মের বিষয়টা ভিন্ন। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন চার্চ বা ধর্মীয় জামাতের জন্য ভিন্নভিন্ন ‘বাইবেল’ বিদ্যমান। এ সকল বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকের সংখ্যার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে সকল পুস্তক সকল বাইবেলে বিদ্যমান সেগুলোর বিষয়বস্ত্ত, অধ্যায়, অনুচ্ছেদ, শ্লোক ইত্যাদির মধ্যেও অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। বাইবেলের পার্থক্য জানার জন্য খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্বের খ্রিষ্টানরা মূলত তিনটা বৃহৎ দলে বিভক্ত: ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও অর্থোডক্স। এ তিনটা বৃহৎ সম্প্রদায়ের বিভক্তির মূল কারণ পোপের আধিপত্য।
(১) ক্যাথলিক বা সর্বজনীন: খ্রিষ্টধর্মের মূল ধারা ক্যাথলিক (Catholic) অর্থাৎ সর্বজনীন বা রোমান ক্যাথলিক (Roman Catholic) হিসেবে পরিচিত। রোমের বা ভ্যাটিকানের চার্চ ও পোপের নিয়ন্ত্রনাধীন খ্রিষ্টধর্ম এ নামে পরিচিত।
শুরু থেকেই খ্রিষ্টান প্রচারকরা বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান পুরোহিত ও ধর্মযাজককে ‘বিশপ’ (Bishop/greek: episkopos) অর্থাৎ সর্দার বা তত্ত্বাবধায়ক (overseer) অথবা প্রেসবিটার (presbyter) অর্থাৎ মুরবিব (elder) বলে আখ্যায়িত করতেন। বিশপকে সাধারণত ‘বাবা’ বা পিতা বলে ডাকা হত। এই শব্দটার গ্রিক পাপ্পাস (pappas), ল্যাটিন পাপা (papa) এবং ইংরেজি পোপ (Pope)। ক্রমান্বয়ে রোমের বিশপ, অর্থাৎ ভ্যাটিকানে অবস্থিত সেন্ট পিটার চার্চের প্রধান পুরোহিত নিজেকে পুরো খ্রিষ্টধর্মের প্রধান বা প্রধান বিশপ বলে দাবি করতে থাকেন। একমাত্র তিনিই বাবা বা পোপ হিসেবে আখ্যায়িত হতে থাকেন। মূলত একাদশ খ্রিষ্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত খ্রিষ্টধর্ম পুরোপুরিই ভ্যাটিকানের পোপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অর্থাৎ খ্রিষ্টধর্মের প্রথম হাজার বছর খ্রিষ্টধর্ম বলতে ক্যাথলিক ধর্মকেই বুঝানো হত।[1]
(২) অর্থোডক্স বা গোঁড়া: ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইন (Constantine the Great) খ্রিষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিমে ইউরোপ থেকে পূর্বে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত বিসত্মৃত ছিল। ক্রমান্বয়ে রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যায়। গ্রিকভাষী পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বিশপরা রোমের বিশপের একছত্র আধিপত্য মানতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাদের বিশ্বাসে প্রত্যেক বিশপই স্বাধীন ‘পাপা’, বাবা বা পোপ এবং সকল বিশপ সম মর্যাদার অধিকারী। ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়েও মতানৈক্য দেখা দেয়। বিশেষ করে যীশু খ্রিষ্টের প্রকৃতি নিয়ে। খ্রিষ্টধর্মের মূল কালিমা ‘নাইসীন ক্রীড’ বা নিসিয়ার আকীদার মধ্যে পশ্চিমের খ্রিষ্টানরা সংযোজন করেন যে, ‘পবিত্র আত্মা পিতা ও পুত্র উভয় থেকে আগত’। পূর্বের খ্রিষ্টানরা এ সংযোজন বিভ্রান্তি বলে গণ্য করেন। বিবাদের এক পর্যায়ে ১০৫৪ সালে পূর্বের খ্রিষ্টানরা পশ্চিমের বা ভ্যাটিকানের পোপের প্রভাবাধীন খ্রিষ্টানদের থেকে বিভক্ত হয়ে যান। তারা অর্থোডক্স (Orthodox) অর্থাৎ গোঁড়া, মৌলবাদী বা মূলধারার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাসে এ বিভক্তি বড় বিভক্তি (Great Schism) নামে পরিচিত।[2]
(৩) প্রটেস্ট্যান্ট বা প্রতিবাদী: খ্রিষ্টধর্মের মূল ধারা পোপের নিয়ন্ত্রণেই চলতে থাকে। ১৬শ খ্রিষ্টীয় শতকে পোপের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কোনো কোনো ধর্মগুরু বিদ্রোহ করেন। এদের অন্যতম ছিলেন প্রসিদ্ধ জার্মান ধর্মগুরু মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬ খ্রি.)। তিনি এবং সমসাময়িক কিছু ধর্মগুরু ধর্মের মধ্যে পোপের নেতৃত্ব ও অধিকার সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন ধর্মীয় ফিরকা বা ধারার সৃষ্টি হয় সেটা প্রটেস্ট্যান্ট (Protestant) বা প্রতিবাদী বলে পরিচিত।[3]
(৪) মূল এ তিন সম্প্রদায়ের তিন প্রকার বাইবেল ছাড়াও আরো অনেক সম্প্রদায়ের পৃথক বাইবেল বিদ্যমান। বিশেষত খ্রিষ্টধর্মের সুতিকাগার ও খ্রিষ্টীয় প্রথম দুই শতাব্দীতে যে সকল অঞ্চলে খ্রিষ্টধর্ম প্রসার লাভ করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়া, আরমেনিয়া, মিসর ও ইথিওপিয়া। এ সকল এলাকার খ্রিষ্টানরা প্রাচীন যুগ থেকে নিজস্ব ‘বাইবেল’ অনুসরণ করেন। তাদের বাইবেলের সাথে প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের অনেক পার্থক্য বিদ্যমান।
[2] Microsoft Encarta: Orthodox church, bishop, pope, papacy, schism.
[3] Microsoft Encarta, articles: protestant, protestantism, Martin Luther
উপরের কয়েক প্রকার বাইবেলের আলোচনার জন্য প্রথমে ইহুদি বাইবেলের আলোচনা প্রয়োজন। আমরা দেখেছি যে, ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ইহুদি বাইবেল (Jewish Bible) এবং হিব্রু বাইবেল (Hebrew Bible) নামে পরিচিত। ইহুদি বাইবেলই খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, তবে ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ও বিন্যাসে পার্থক্য রয়েছে।
খৃস্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি ইহুদি বাইবেলের ‘গ্রীক অনুবাদ’ বা গ্রিক সংস্করণ। ইহুদি বাইবেলের গ্রিক সংস্করণকে সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint) বা সত্তরের কর্ম বলা হয়।
ইহুদিদের ধর্মীয় ও ব্যবহারিক ভাষা হিব্রু। পুরাতন নিয়মের গ্রন্থগুলো হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার প্যালেস্টাইন দখল করেন এবং তা গ্রিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ইহুদিরা গ্রিক নাগরিকে পরিণত হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে গ্রিক ভাষার কিছু প্রচলন শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী পরে, খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৫-২৪৫ সালের দিকে ইহুদি ধর্মগ্রন্থগুলো গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়। কথিত আছে যে, মিসরের শাসক ২য় টলেমি: টলেমি ফিলাডেলফাস (Ptolemy Philadelphus)- এর রাজত্বকালে (খ্রি. পূ. ২৮৫-২৪৬) তাঁর নির্দেশে ৭০/৭২ জন পণ্ডিত তা ‘আলেকজান্ড্রীয় গ্রিক ভাষায়’ অনুবাদ করেন। এই গ্রিক অনুবাদটাই the Septuagint (LXX) বা সত্তরের অনুবাদ বলে প্রসিদ্ধ। একে গ্রিক পুরাতন নিয়মও (Greek Old Testament) বলা হয়। যীশুর সময়ে এ অনুবাদটা প্রচলিত ছিল।
বাহ্যত প্রজাদের মধ্যে প্রচলিত প্রসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্ত্ত জানার উদ্দেশ্যে শাসকরা এ অনুবাদ তৈরি করেন। যেমন মুসলিম শাসকদের অনুরোধে সর্বপ্রথম রামায়ণের বাংলা অনুবাদ করা হয়। তবে ক্রমান্বয়ে এ গ্রিক সংস্করণের ব্যবহার ইহুদিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদিরা, বিশেষত ফিলিস্তিনের বাইরে, আলেকজান্দ্রিয়া ও অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী ইহুদিরা হিব্রু ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়েন। তারা গ্রিক ভাষা ব্যবহারে অধিক অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। তারা এ গ্রিক বাইবেলের উপর নির্ভর করতে থাকেন। প্রথম প্রজন্মের খ্রিষ্টানরা এটার উপরেই নির্ভর করতেন। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত প্রায় তিনশত বছর ইহুদিরা এ গ্রিক বাইবেলের উপরেই নির্ভর করতেন। ইহুদি পণ্ডিতরা ইহুদি বাইবেলের হিব্রু সংস্করণ ও গ্রিক সংস্করণকে একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন। উইকিপিডিয়া ‘Septuagint’ প্রবন্ধের ‘Jewish use’ অনুচ্ছেদে লেখেছে: “Pre-Christian Jews, Philo and Josephus considered the Septuagint on equal standing with the Hebrew text.” অর্থাৎ ‘‘খ্রিষ্টপূর্ব ইহুদি ফিলো (মৃত্যু ৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং যোসেফাস (মৃত্যু ১০০ খ্রিষ্টাব্দ) সেপ্টুআজিন্ট বা সত্তরের অনুবাদকে হিব্রু ভাষ্যের মত একইরূপ গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করতেন।’’
পঞ্চম খ্রিষ্টীয় শতকের শেষ দিক থেকে ইহুদিরা গ্রিক পাণ্ডুলিপি পরিত্যাগ করে হিব্রু পাণ্ডুলিপির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তবে খ্রিষ্টানরা গ্রিক নির্ভরতা অব্যাহত রাখেন। প্রথম খ্রিষ্টীয় শতাব্দী থেকে পরবর্তী প্রায় দেড় হাজার বছর সকল খ্রিষ্টানই গ্রিক পুরাতন নিয়মের উপর নির্ভর করেন। প্রাচীন সকল খ্রিষ্টীয় বাইবেলের ভিত্তি এ ‘সত্তরের অনুবাদ’। উইকিপিডিয়ার ভাষায়: ‘‘The Septuagint is the basis for the Old Latin, Slavonic, Syriac, Old Armenian, Old Georgian and Coptic versions of the Christian Old Testament.’’: ‘‘সেপ্টুআজিন্ট-ই প্রাচীন ল্যাটিন, সস্নাভোনিক, সিরীয়, প্রাচীন আর্মেনিয়ান, প্রাচীন জর্জিয়ান ও কপ্টিক সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ভিত্তি’’ (উইকিপিডিয়া: Septuagint)। সপ্তদশ শতক থেকে প্রটেস্ট্যান্টরা হিব্রু ভাষ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করেন।[1]
এভাবে আমরা দেখছি যে, পুরাতন নিয়মের ক্ষেত্রে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ভিত্তি হিব্রু সংস্করণ। অবশিষ্ট সকল খ্রিষ্টান বাইবেলের ভিত্তি সেপ্টুআজিন্ট। তবে বাস্তবে আমরা দেখি যে, গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট-এর সাথে ক্যাথলিক ও অন্যান্য বাইবেলের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা নিম্নে হিব্রু ইহুদি বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর পাশাপাশি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট, ক্যাথলিক, প্রটেস্ট্যান্ট ও গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত ‘ক্যানন’ বা বিধিসম্মত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদান করছি। উল্লেখ্য যে, মিসরীয়, কপ্টিক, ইথিওপীয়, আর্মেনীয় ইত্যাদি খ্রিষ্টধর্মীয় চার্চের নিকট স্বীকৃত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তকাদির ক্ষেত্রে আরো কিছু ভিন্নতা রয়েছে। বিস্তারিত জানতে পাঠক এনকার্টার Bible/Books of the Bible এবং উইকিপিডিয়ার Books of the Bible ও Septuagint প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন:
ক্রমিক |
ইহুদি বাইবেল (২৪ পুস্তকে ৩৯) |
প্রটেস্ট্যান্ট ৩৯ পুস্তক |
ক্যাথলিক ৪৬ পুস্তক |
অর্থোডক্স ৫১ পুস্তক |
সেপ্টুআজিন্ট ৫৩ পুস্তক |
1 |
Genesis |
Genesis |
Genesis |
Genesis |
Genesis |
2 |
Exodus |
Exodus |
Exodus |
Exodus |
Exodus |
3 |
Leviticus |
Leviticus |
Leviticus |
Leviticus |
Leviticus |
4 |
Numbers |
Numbers |
Numbers |
Numbers |
Numbers |
5 |
Deuteronomy |
Deuteronomy |
Deuteronomy |
Deuteronomy |
Deuteronomy |
6 |
Joshua |
Joshua |
Joshua |
Joshua (Iesous) |
Joshua |
7 |
Judges |
Judges |
Judges |
Judges |
Judges |
8 |
1 Samuel |
Ruth |
Ruth |
Ruth |
Ruth |
9 |
2 Samuel |
1 Samuel |
1 Samuel |
1 Samuel |
I Samuel |
10 |
1 Kings |
2 Samuel |
2 Samuel |
2 Samuel |
II Samuel |
11 |
2 Kings |
1 Kings |
1 Kings |
1 Kings |
I Kings |
12 |
Isaiah |
2 Kings |
2 Kings |
2 Kings |
II Kings |
13 |
Jeremiah |
1 Chronicles |
1 Chronicles |
1 Chronicles |
I Chronicles |
14 |
Ezekiel |
2 Chronicles |
2 Chronicles |
2 Chronicles |
II Chronicles |
15 |
Hosea |
Ezra |
Ezra |
1 Esdras |
1 Esdras |
16 |
Joel |
Nehemiah |
Nehemiah |
Ezra (2 Esdras) |
Ezra |
17 |
Amos |
Esther |
Tobit |
Nehemiah |
Nehemiah (2 books as one) |
18 |
Obadiah |
Job |
Judith |
Tobit (Tobias) |
Tobit/ Tobias |
19 |
Jonah |
Psalms |
Esther |
Judith |
Judith |
20 |
Micah |
Proverbs |
1 Maccabees |
Esther |
Esther with additions |
21 |
Nahum |
Ecclesiastes |
2 Maccabees |
1 Maccabees |
1 Maccabees |
22 |
Habakkuk |
Song of Solomon |
Job |
2 Maccabees |
2 Maccabees |
23 |
Zephaniah |
Isaiah |
Psalms |
3 Maccabees |
3 Maccabees |
24 |
Haggai |
Jeremiah |
Proverbs |
4 Maccabees |
Psalms |
25 |
Zechariah |
Lamentations |
Ecclesiastes |
Job |
Psalm 151 |
26 |
Malachi |
Ezekiel |
Song of Songs |
Psalms |
Prayer of Manasseh |
27 |
Psalms |
Daniel |
Wisdom |
Prayer of Manasseh |
Job |
28 |
Proverbs |
Hosea |
Sirach |
Proverbs |
Proverbs |
29 |
Job |
Joel |
Isaiah |
Ecclesiastes |
Ecclesiastes |
30 |
Song of Songs |
Amos |
Jeremiah |
Song of Songs |
Song of Solomon |
31 |
Ruth |
Obadiah |
Lamentations |
Wisdom |
Wisdom |
32 |
Lamentations |
Jonah |
Baruch |
Sirach |
Sirach/ Ecclesiasticus |
33 |
Ecclesiastes |
Micah |
Ezekiel |
Isaiah |
Psalms of Solomon |
34 |
Esther |
Nahum |
Daniel |
Jeremiah |
Hosea |
35 |
Daniel |
Habakkuk |
Hosea |
Lamentations |
Amos |
36 |
Ezra |
Zephaniah |
Joel |
Baruch |
Micah |
37 |
Nehemiah |
Haggai |
Amos |
Letter of Jeremiah |
Joel |
38 |
1 Chronicles |
Zechariah |
Obadiah |
Ezekiel |
Obadiah |
39 |
2 Chronicles |
Malachi |
Jonah |
Daniel |
Jonah |
40 |
|
|
Micah |
Hosea |
Nahum |
41 |
|
|
Nahum |
Joel |
Habakkuk |
42 |
|
|
Habakkuk |
Amos |
Zephaniah |
43 |
|
|
Zephaniah |
Obadiah |
Haggai |
44 |
|
|
Haggai |
Jonah |
Zachariah |
45 |
|
|
Zechariah |
Micah |
Malachi |
46 |
|
|
Malachi |
Nahum |
Isaiah |
47 |
|
|
|
Habakkuk |
Jeremiah |
48 |
|
|
|
Zephaniah |
Baruch |
49 |
|
|
|
Haggai |
Lamentations |
50 |
|
|
|
Zechariah |
Letter of Jeremiah |
51 |
|
|
|
Malachi |
Ezekiel |
52 |
|
|
|
|
Daniel with additions |
53 |
|
|
|
|
4 Maccabees |
মিসরীয়-আফ্রিকান কপ্টিক অর্থোডক্স খৃস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম অংশ ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ার অর্থোডক্স টেওয়াহিদো (Orthodox Tewahedo) খৃস্টমণ্ডলী। এ সম্প্রদায় স্বীকৃত ও ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়ায় বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলকে অর্থোডক্স টেওয়াহিদো বাইবেল (the Orthodox Tewahedo Bible) বলা হয়। এ বাইবেলের মধ্যে অর্থোডক্স বাইবেলের উপরের ৫১ পুস্তক ছাড়াও নিম্নের অতিরিক্ত পুস্তকগুলো বিদ্যমান: (১) Jubilees, (২) Enoch, (৩) Ezra 2nd, (৪) Ezra Sutuel, (৫) 4 Baruch, (৬) Josippon,। এছাড়া এ বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান মাকাবীয় পুস্তকগুলো অর্থোডক্স বাইবেলের মাকাবীয় চারটা পুস্তক থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন। ইথিওপীয় বাইবেল বা আবিসিনিয়ান ক্যানন (Abyssinian canon)-এর বিভিন্ন সংস্করণ বা পাণ্ডুলিপির মধ্যে Ascension of Isaiah নামক আরো একটা পুস্তক বিদ্যমান। পাঠক বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়ায়: Orthodox Tewahedo biblical canon, Ascension of Isaiah, Book of Jubilees, Book of Enoch, 1 Esdras, 4 Baruch, Josippon প্রবন্ধগুলো পাঠ করুন।
সুপ্রিয় পাঠক, এখানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
প্রথমত: ইহুদি বাইবেল বা তানাখ/তানাক (Tanakh/Tenak)-এর পুস্তকসংখ্যা ২৪, যেগুলোর মধ্যে উপরের ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। তালিকাটা নিম্নরূপ:
(১-৭) |
১ থেকে ৭ নং পুস্তক: ৭টা পৃথক পুস্তক। |
(৮) |
৮ ও ৯ নং পুস্তক: ১ শমূয়েল ও ২ শমূয়েল একটা পুস্তক। |
(৯) |
১০ ও ১১ নং পুস্তক: ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একটা পুস্তক। |
(১০-১২) |
১২ থেকে ১৪ নং তিনটা পৃথক পুস্তক (যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল) |
(১৩) |
১৫ থেকে ২৬ নং পর্যন্ত ১২টা পুস্তক একত্রে ‘দ্বাদশ’ (The Twelve/ Trei Asar) (বারজন গৌণ নবী) নামে একটা পুস্তক। |
(১৪-২২) |
২৭ থেকে ৩৫ নং পর্যন্ত ৯টা পৃথক পুস্তক। |
(২৩) |
৩৬ ও ৩৭ নং পুস্তকদ্বয় (ইযরা ও নহিমিয়) একত্রে একটা পুস্তক। |
(২৪) |
৩৮ ও ৩৯ নং পুস্তকদ্বয় (১ বংশাবলি ও ২ বংশাবলি) |
দ্বিতীয়ত: ইহুদিদের একটা সম্প্রদায় শমরীয় (Samaritan) ইহুদিরা পুরাতন নিয়মের শুধু প্রথম ৫টা গ্রন্থ বিশুদ্ধ ও পালনীয় বলে স্বীকার করেন, যা শমরীয় তৌরাত, শমরীয় পঞ্চপুস্তক বা শমরীয় বৈধ বাইবেল (The Samaritan Pentateuch/ the Samaritan Torah/ The Samaritan canon) নামে প্রসিদ্ধ। বাইবেলের অন্য সকল পুস্তকের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা তারা অস্বীকার করেন। তারা মূল হিব্রু পাণ্ডুলিপির অনুসরণ করেন। এনকার্টায় শমরীয় তৌরাতকে তৌরাতের প্রাচীনতর ভাষ্য (an older text of the first five books of the Bible) বলা হয়েছে। আধুনিক ইহুদি তৌরাত এবং গ্রিক তৌরাতের সাথে শমরীয় তৌরাতের প্রায় ৬ হাজার পার্থক্য রয়েছে। আধুনিক যুগে আবিষ্কৃত মৃত সাগরের পাণ্ডুলিপি (Dead Sea Scrolls) আবিষ্কারের পর পাশ্চাত্য গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন যে, ইহুদি বাইবেল ও খ্রিষ্টান বাইবেলের চেয়ে শমরীয় বাইবেল প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোর সাথে অধিক মিল-সম্পন্ন।[2]
তৃতীয়ত: ইহুদি বাইবেল ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের পুস্তকগুলোর সংখ্যা একই। তবে পুস্তকগুলোর ক্রমবিন্যাসে অনেক পার্থক্য। ধর্মগ্রন্থের সূরা বা পুস্তকগুলোর মধ্যে এরূপ অমিল মুসলিম পাঠকের কাছে খুবই অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য বিষয়। ধর্মগ্রন্থের সূরা, অধ্যায় বা পুস্তকগুলোকে এভাবে ইচ্ছামত আগে পরে করা যায় বলে মুসলিমরা ভাবতেও পারেন না। এমনকি কোনো সাধারণ লেখকের সংকলিত ও সম্পাদিত একটা গ্রন্থমালার বইগুলো পরবর্তীকালে কেউ আগে পিছে করলে তা সকল গবেষক ও সমালোচকের নিকট অগ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা বিষয়টাকে হাল্কা হিসেবেই দেখেন।
চতুর্থত: আমরা দেখলাম যে, পুরাতন নিয়মের মূল ভিত্তি গ্রিক সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint)-এর মধ্যে ৫৩টা পুস্তক, অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মে ৫১টা পুস্তক, ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে ৪৬টি পুস্তক এবং প্রটেস্ট্যান্ট পুরাতন নিয়মে ৩৯টা পুস্তক বিদ্যমান। একই ধর্মের একই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে এত পার্থক্য পৃথিবীর আর কোনো প্রসিদ্ধ ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আছে বলে জানা যায় না।
‘বাইবেলের বৈধ-বিশুদ্ধ গ্রন্থাবলি: এক গোঁড়া বাইবেল বিশ্বাসী প্রেক্ষাপট:The Canon of the Bible A conservative, bible believing perspective’ নামক আর্টিকেলে (দেখুন http://www.bible.ca/canon.htm) এবং ‘খ্রিষ্টীয় বাইবেল, রোমান ক্যাথলিক বাইবেল, গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেলের তালিকা: List of books in the Christian Bible, Roman Catholic Bible, Greek Orthodox Bible’ (দেখুন http://www.bible.ca/b-canon-orthodox-catholic-christian-bible-books.htm) থেকে বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় বাইবেলের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করছি। উল্লেখ্য যে, এসব ওয়েবসাইটে খ্রিষ্টীয়ান বাইবেল বলতে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেল বুঝানো হয়েছে।
|
ইংরেজি নাম |
বাংলা নাম
|
Christian's Bible (খ্রিষ্টান বাইবেল) |
Roman Catholic Bible (রোমান ক্যাথলিক বাইবেল) |
Greek Orthodox Bible (গ্রীক অর্থোডক্স বাইবেল) |
The Septuagint (সেপ্টুআ-জিন্ট) |
|
1 Esdras |
১ ইসদরাস |
নেই |
নেই |
আছে |
আছে |
|
Tobit |
তোবিত |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Judith |
যুদিথ |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Additions to Esther (103 Vrs) |
ইস্টেরে (১০৩ শ্লোক) সংযোজন |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Wisdom of Solomon |
সলোমনের প্রজ্ঞাপুস্তক |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Ecclesiasticus |
বিন সিরাহ |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Baruch |
বারুক |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Epistle of Jeremiah |
যিরমিয়ের পত্র |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Song of the Three Children |
তিন শিশুর সঙ্গীত |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Story of Susanna |
সুসান্নার গল্প |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Bel and the Dragon |
বেল ও ড্রাগন |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
Prayer of Manasseh |
মনশির প্রার্থনা |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
1 Maccabees |
১ মাকাবীয় |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
2 Maccabees |
২ মাকাবীয় |
নেই |
আছে |
আছে |
আছে |
|
3 Maccabees |
৩ মাকাবীয় |
নেই |
নেই |
আছে |
আছে |
|
4 Maccabees |
৪ মাকাবীয় |
নেই |
নেই |
আছে |
আছে |
|
Psalm 151 |
গীতসংহিতা ১৫১ |
নেই |
নেই |
আছে |
আছে |
|
Psalms of Solomon |
সলোমনের গীতসংহিতা |
নেই |
নেই |
নেই |
আছে |
পঞ্চমত: আমরা দেখছি যে, ক্যাথলিক বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৪৬ এবং অর্থোডক্স পুরাতন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ৫১। পক্ষান্তরে তারা সকলেই যে মূল গ্রিক সংস্করণ বা সেপ্টুআজিন্টের উপর নির্ভর করেছেন তার মধ্যে পুস্তকের সংখ্যা ৫৩। এভাবে আমরা দেখছি যে, মূল গ্রিক সেপ্টুআজিন্টের মধ্যে ১৪টা পুস্তক বিদ্যমান যেগুলো ইহুদি ও প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানরা বাতিল বলে গণ্য করেছেন। এগুলোর মধ্য থেকে ৭টা পুস্তক ক্যাথলিকরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট ৭টার মধ্যে ৫টা অর্থোডক্সরা গ্রহণ করেছেন। অবশিষ্ট দু’টা পুস্তক তিন সম্প্রদায়ই বাতিল করেছেন। আমরা আগেই বলেছি যে, ইথিওপীয়, মিসরীয়, সিরীয় ইত্যাদি প্রাচীন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়গুলোর বাইবেলের মধ্যে এ সকল পুস্তক বিদ্যমান।
ষষ্ঠত: প্রটেস্ট্যানটরা ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মের ৭টা পুস্তককে সন্দেহভাজন বা ‘জাল’ বলে গণ্য করেছেন। প্রায় ১৬০০ বছর পবিত্র বাইবলের অন্তর্ভুক্ত আসমানি গ্রন্থ বা ঐশ্বরিক পুস্তক হিসেবে গণ্য হওয়ার পর প্রটেস্ট্যানটরা সপ্তদশ শতাব্দীতে এগুলোকে বাদ দিয়ে তাদের বাইবেল মুদ্রণ করেন। তবে প্রটেস্ট্যান্টদের স্বীকৃত নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর মধ্যে এ সকল জাল বা বাতিলকৃত বইয়ের উদ্ধৃতি পাওয়া যায়।[3]
[2] উইকিপিডিয়া: The Samaritan Pentateuch, ব্রিটানিকা: biblical literature/ The Samaritan canon, এনকার্টা: Samaria.
[3] বিস্তারিত দেখুন: The New Encyclopedia Britannica, 15th Edition, Vol-2, Biblical Literature, pp883, 932-935. উইকিপিডিয়া: Non-canonical books referenced in the Bible.
পুরাতন নিয়মের উপরের গ্রন্থগুলো ছাড়াও আরো অনেক পুস্তক রয়েছে, যেগুলো প্রাচীনকাল থেকে ইহুদি সমাজে এবং প্রথম শতাব্দীগুলোর খ্রিষ্টান সমাজে আসমানী গ্রন্থ বা ধর্মগ্রন্থ হিসেবে প্রচলিত থাকলেও পরবর্তী যুগের ইহুদি-খ্রিষ্টান পণ্ডিত ও ধর্মগুরুরা সেগুলোকে ‘বিশুদ্ধ’ বা ‘আইনসিদ্ধ’ (canonical) বলে গ্রহণ করেননি। এগুলোকে তারা এপক্রিপা (apocrypha) অর্থাৎ সন্দেহজনক, অনির্ভরযোগ্য, লুকানো বা জাল পুস্তক বলে গণ্য করেছেন। তবে তাদের স্বীকৃত কোনো কোনো পুস্তকে এ সকল জাল পুস্তকের উদ্ধৃতি বিদ্যমান। এছাড়া স্বীকৃত বাইবেলের অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যেও এ সকল সন্দেহজনক বা জাল পুস্তক বিদ্যমান। নিম্নে এজাতীয় কিছু পুস্তকের নাম দেখুন:[1]
সম্মানিত পাঠক, পার্থক্য বা ভিন্নতা শুধু পুস্তকগুলোর ক্ষেত্রেই নয়। যে পুস্তকগুলো সকল বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান সেগুলোর বক্তব্যের মধ্যেও অনেক ভিন্নতা রয়েছে। উইকিপিডিয়ার সেপ্টুআজিন্ট (Septuagint) প্রবন্ধ থেকে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সকলের নিকট স্বীকৃত ‘তৌরাত’ নামে প্রসিদ্ধ পঞ্চপুস্তক থেকে দু’টা নমুনা পেশ করছি। (http://en.wikipedia.org/wiki/Septuagint)
প্রথম নমুনা: আদিপুস্তক চতুর্থ অধ্যায়ের ৭ শ্লোক (Genesis 4:7)
সেপ্টুআজিন্ট বা গ্রিক পুরাতন নিয়মে (NETS) এ শ্লোকটা নিম্নরূপ: “If you offer correctly but do not divide correctly, have you not sinned? Be still; his recourse is to you, and you will rule over him.”: ‘‘যদি তুমি সঠিকভাবে নিবেদন/ উৎসর্গ কর কিন্তু সঠিকভাবে বণ্টন না কর, তবে তুমি কি পাপ করলে না? স্থির/ শান্ত হও; তার আশ্রয়/ অবলম্বন তোমার প্রতি, এবং তুমি তার উপর রাজত্ব/ শাসন করবে।’’
ইহুদি বাইবেলে (Masoretic/ MT: Judaica Press) শ্লোকটা নিম্নরূপ:
“Is it not so that if you improve, it will be forgiven you? If you do not improve, however, at the entrance, sin is lying, and to you is its longing, but you can rule over it.” ‘‘এটাই কি বিষয় নয় যে, যদি তুমি উন্নতি কর, তবে তোমাকে ক্ষমা করা হবে? যাই হোক, যদি তুমি উন্নতি না কর, প্রবেশের সময়েই/ শুরুতেই পাপ অবস্থান করবে, এবং তোমার প্রতিই তা আকাঙ্ক্ষী, কিন্তু তুমি তার উপর রাজত্ব/শাসন করতে পার।’’
ল্যাটিন ভলগেট (Latin Vulgate/ Douay-Rheims)-এ শ্লোকটার বক্তব্য নিম্নরূপ:
“If thou do well, shalt thou not receive? but if ill, shall not sin forthwith be present at the door? but the lust thereof shall be under thee, and thou shalt have dominion over it.” ‘‘তুমি যদি ভাল কর, তুমি কি পাবে না? কিন্তু যদি মন্দ হয় তবে পাপ কি তৎক্ষণাৎ দরজায় উপস্থিত হবে না? কিন্তু তার লালসা/ কামনা তোমার নিচে থাকবে এবং তার উপর তোমার কর্তৃত্ব থাকবে।’’
উল্লেখ্য যে, বাংলা বাইবেলগুলোতে উপরের বৈপরীত্য তত সুস্পষ্ট নয়। বাংলা অনুবাদগুলো হিব্রু ও ল্যাটিন পাঠের নিকটবর্তী। কেরি: ‘‘যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা রহিয়াছে, এবং তুমি তাহার উপর কর্তৃত্ব করিবে।’’
জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘সদ্ব্যবহার করলে তুমি কি মুখ উচ্চ করে রাখবে না? কিন্তু সদ্ব্যবহার না করলে পাপই তোমার দ্বারে ওত পেতে বসে রয়েছে। তোমার জন্য সেই পাপ লোলুপ বটে, কিন্তু তা দমন করা তোমার উপরই নির্ভর করবে।’’
বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক ২০০৬ সালে প্রকাশিত কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদ জুবিলী বাইবেলের কাছাকাছি, কিন্তু ২০১৩ সালে প্রকাশিত কিতাবুল মোকদ্দসের অনুবাদ কেরির অনুবাদের অনুরূপ।
দ্বিতীয় নমুনা: দ্বিতীয় বিবরণের ৩২/৪৩ মূসার গীত (the Song of Moses)
ইহুদি বাইবেলের (Masoretic) ভাষ্য: “1 Shout for joy, O nations, with his people. 2 For he will avenge the blood of his servants. 3 And will render vengeance to his adversaries. 4 And will purge his land, his people.”
‘‘১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে জাতিগণ, তার প্রজাদের সাথে। ২ কারণ তিনি তার দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৩ এবং প্রদান করবেন প্রতিশোধ তার বিরোধীদের প্রতি। ৪ এবং বিশোধিত করবেন তার দেশ ও তার প্রজাদেরকে।’’
কুমরান পাণ্ডুলিপিতে বক্তব্যটা এরকম: “1 Shout for joy, O heavens, with him. 2 And worship him, all you divine ones. 3 For he will avenge the blood of his sons. 4 And he will render vengeance to his adversaries. 5 And he will recompense the ones hating him. 6 And he purges the land of his people.”
‘‘১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে আকাশমণ্ডল, তার সাথে। ২ এবং ইবাদত কর তার, তোমরা দেবগণ সকলে। ৩ কারণ তিনি তার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৪ এবং তিনি প্রদান করবেন প্রতিশোধ তার বিরোধীদের প্রতি। ৫ এবং তিনি প্রতিফল দিবেন তাদেরকে যারা তাকে ঘৃণা করে। ৬ এবং বিশোধিত করবেন তার দেশ ও তার প্রজাদেরকে।’’
সেপ্টুআজিন্ট বা মূল গ্রিক পুরাতন নিয়মের ভাষ্য: “1 Shout for joy, O heavens, with him. 2 And let all the sons of God worship him. 3 Shout for joy, O nations, with his people. 4 And let all the angels of God be strong in him. 5 Because he avenges the blood of his sons. 6 And he will avenge and recompense justice to his enemies. 7 And he will recompense the ones hating. 8 And the Lord will cleanse the land of his people.”
‘‘১ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে আকাশমণ্ডল, তার সাথে। ২ আল্লাহর সকল পুত্র তার ইবাদত করুক। ৩ চিৎকার কর আনন্দের জন্য, হে জাতিগণ, তার প্রজাদের সাথে। ৪ এবং আল্লাহর সকল ফেরেশতা তার মধ্যে সুদৃঢ়/ স্থির হোক। ৫ কারণ তিনি তার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিবেন। ৬ এবং তিনি প্রতিশোধ নিবেন এবং ন্যায় প্রতিফল দিবেন তার শত্রুদেরকে। ৭ এবং তিনি প্রতিফল দিবেন তাদেরকে যারা ঘৃণাকারী। ৮ এবং প্রভু পরিস্কার করবেন দেশ এবং তার প্রজাদেরকে।’’
ইংরেজি কিং জেমস ভার্শন, রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন ও অন্যান্য ভার্শনে ইহুদি পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ইংলিশ স্টান্ডার্ড ভার্শন, নিউ লিভিং ট্রান্সলেশন ইত্যাদি সংস্করণে সেপ্টুআজিন্ট-এর পাঠ অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু এ সকল অনুবাদে ঈশ্বরের সকল পুত্র (all the sons of God)-এর পরিবর্তে ঈশ্বরের সকল ফেরেশতা (all the angels of God) লেখা হয়েছে। ইন্টারনেটে biblestudytools.com[1], biblegateway.com[2] ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে পাঠক বিষয়টা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, বাইবেলের বাংলা অনুবাদে এ পার্থক্য দৃশ্যমান। কেরির অনুবাদ হচ্ছে: ‘‘জাতিগণ, তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর; কেননা তিনি আপন দাসদের রক্তের প্রতিফল দিবেন, আপন বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইবেন, আপন দেশের জন্য, আপন প্রজাগণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবেন।’’
জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ এরকম: ‘‘আকাশমণ্ডল, তাঁর সঙ্গে আনন্দে চিৎকার কর! ঈশ্বরের সকল সন্তান তাঁর সম্মুখে প্রণিপাত করুক! জাতিসকল, তাঁর জনগণের সঙ্গে আনন্দে চিৎকার কর! ঈশ্বরের সকল দূত তাঁর শক্তির কথা প্রচার করুন। কেননা তিনি তাঁর আপন দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নেবেন, তাঁর আপন বিরোধীদের উপরেই প্রতিফল ফিরিয়ে দেবেন, যারা তাঁকে ঘৃণা করে, তিনি তাদের যোগ্য মজুরি দেবেন তাঁর আপন জনগণের দেশভূমি শোধন করবেন।’’
সম্মানিত পাঠক, ধর্মগ্রন্থের একই পুস্তকের বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে এরূপ ভিন্নতা অ-খ্রিষ্টান গবেষক ছাড়াও আধুনিক অনেক খ্রিষ্টান গবেষককেও প্রচণ্ডভাবে বিব্রত করে। ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা দাবি করেন যে, প্রচলিত পঞ্চপুস্তক মূসা (আ.) থেকে হুবহু বর্ণিত অভ্রান্ত ঐশ্বরিক বাণী। এরূপ ভিন্নতা এ দাবির সাথে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য যে, বাইবেলের প্রায় সকল পুস্তকের সকল শ্লোকেরই একাধিক পাঠ ও ভিন্নতা রয়েছে।
[2] https://www.biblegateway.com/passage/?search=Deuteronomy+32