আমরা দেখেছি, খ্রিষ্টান বাইবেলের দ্বিতীয় অংশকে ‘নতুন নিয়ম’ বা ‘নবসন্ধি’ বলা হয়। প্রটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক উভয় বাইবেলেই বর্তমানে এ অংশে ২৭টা পুস্তক বিদ্যমান। পুস্তকগুলোর তালিকা প্রদানের পূর্বে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
প্রথমত: খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে মিসরে খ্রিষ্টানদের মধ্যে মিসরীয় গ্রিক ইঞ্জিল (The Greek Gospel of the Egyptians) প্রচলিত ছিল। গসপেলটা পরবর্তী মিসরীয় কপ্টিক গসপেল ও প্রচলিত নতুন নিয়মের গসপেলগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। খ্রিষ্টানরা ভিন্নমত দমনের সময় ভিন্নমতের মানুষদের নির্মূল করার পাশাপাশি তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো নির্মূল করতেন। ফলে প্রাচীন এ গসপেলের পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন পণ্ডিতদের লেখায় বিভিন্ন উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। এছাড়া টমাসের ইঞ্জিল (the Gospel of Thomas) নামক ইঞ্জিলের পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি কিছু দিন আগে মিসরে পাওয়া গেছে এবং মুদ্রিত হয়েছে। গ্রন্থটা প্রচলিত নতুন নিয়মের মধ্যে নেই।[1]
দ্বিতীয়ত: খ্রিষ্টধর্মের সুতিকাগার ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়ার খ্রিষ্টানরা দ্বিতীয় শতাব্দী থেকেই ভিন্ন এক ‘নতুন নিয়ম’-এর উপর নির্ভর করতেন। আসিরীয় টিটান (Tatian the Assyrian) দ্বিতীয় খ্রিষ্টীয় শতকের প্রসিদ্ধ খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ছিলেন (জন্ম ১২০ খ্রিষ্টাব্দ, মৃত্যু ১৮০ খ্রিষ্টাব্দ)। তাঁর সংকলিত ইঞ্জিলের নাম ছিল ডায়াটেসারন (the Diatessaron), অর্থাৎ সাদৃশ্যময় (harmony)। তার কর্ম থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দ্বিতীয় খ্রিষ্টীয় শতকে ‘ইঞ্জিল’ নামে অনেক পুস্তক প্রচারিত হতে শুরু করে। তিনি তাঁর গ্রন্থের মধ্যে প্রচলিত ইঞ্জিলগুলোর বিষয় একত্রে সংকলিত করেন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের অনেক বিষয় তাঁর সংকলনে বিদ্যমান। তবে প্রচলিত চার ইঞ্জিলের তথ্যের সাথে তাঁর অনেক তথ্য সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও ভিন্ন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের মধ্যে বিদ্যমান অনেক প্রসিদ্ধ গল্প ও ঘটনা তিনি বাদ দিয়েছেন। প্রচলিত চার ইঞ্জিলের কোনোটার সাথেই তার পুরো মিল নেই। তার সংকলিত এ বাইবেলটা তৃতীয়-চতুর্থ খ্রিষ্টীয় শতাব্দীতে ফিলিস্তিন ও বৃহত্তর সিরিয়ার খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল।
চতুর্থ খ্রিষ্টীয় শতকের প্রসিদ্ধতম খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ইউসিবিয়াস (Eusebius) লেখেছেন: "These, indeed, use the Law and Prophets and Gospels, ... but ... abuse Paul the apostle and set aside his epistles, neiter do they receive the Acts of the Apostles." ‘‘তারা (সিরীয়রা) তোরাহ, নবীগণের পুস্তক ও ইঞ্জিলগুলো ব্যবহার করে।... তবে ... তারা শিষ্য পলকে গালি দেয় এবং তার পত্রগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি তারা প্রেরিতদের কার্যবিবরণীও গ্রহণ করে না।’’[2]
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সিরীয় খ্রিষ্টানদের নতুন নিয়মে বা টিটানের সংকলিত নতুন নিয়মে প্রেরিতদের কার্যবিবরণী ও পলের পত্রাবলির কিছুই ছিল না।
উল্লেখ্য যে, টিটান কঠোর একত্ববাদী খ্রিষ্টান ছিলেন। তিনি যীশুর ঈশ্বরত্বের স্বীকৃতি দেননি। এমনকি মুক্তিলাভের (redemption) জন্য যীশুর নামও তিনি উল্লেখ করেননি। খ্রিষ্টান চার্চ তাকে ধর্মদ্রোহী (heretic) বলে ঘোষণা দেয়। তৎকালীন নিয়ম অনুসারে বিরুদ্ধবাদীদের নির্মূলের সাথে সাথে তাদের ধর্মগ্রন্থও নির্মূল করা হয়। তার স্থান পূরণ করে সিরীয় পেশিট্টা।[3]
উইকিপিডিয়ার Development of the New Testament canon প্রবন্ধের Outside the Empire অংশে Syriac Canon অনুচ্ছেদের বক্তব্য: “Moreover, after the pronouncements of the 4th century on the proper content of the Bible, Tatian was declared a heretic and in the early 4th century Bishop Theodoretus of Cyrrhus and Bishop Rabbula of Edessa (both in Syria) rooted out all copies they could find of the Diatessaron and replaced them with the four canonical Gospels (M 215). As a result, no early copies of the Diatessaron survive... .” ‘‘সর্বোপরি ৪র্থ শতাব্দীতে বাইবেলের সঠিক বিষয়বস্ত্ত ঘোষণা করার পরে টিটানকে ধর্মদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ৪র্থ শতাব্দীর শুরু থেকে সিরহাসের বিশপ থিওডোরেটাস এবং এডেসার বিশপ রাববুলা (উভয়ই সিরিয়ার) ডায়াটেসারনের যত কপির খোজ পেয়েছিলেন তার সবই ধ্বংস করেন। তদস্থলে চার্চের বিধিসম্মত গসপেলগুলো প্রবর্তন করেন। ফলে ডায়াটেসারনের প্রাচীন পাণ্ডুলিপির কিছুই আর টিকে নেই।’’
তৃতীয়ত: ডায়াটেসারনের পরে খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত খ্রিষ্টধর্মের সুতিকাগার ফিলিস্তিন বা বৃহত্তর সিরিয়ায় যে ‘নতুন নিয়ম’ প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ছিল তা সিরীয় পেশিট্টা (Syriac Peshitta) বা সিরীয় সাধারণ সংস্করণ নামে প্রসিদ্ধ ছিল। সিরীয় ভাষা মূলত যীশু এবং তাঁর শিষ্যদের ব্যবহৃত আরামিক ভাষারই একটা শাখা বা উপভাষা (dialect, or group of dialects, of Eastern Aramaic)। এ বাইবেলের পুরাতন নিয়মটা হিব্রু ভাষা থেকে এবং নতুন নিয়মটা গ্রিক ভাষা থেকে অনূদিত। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু সেন্ট ক্যাথেরিনের (St. Catherine) তালিকায় পেশিট্টা নতুন নিয়মে সতেরটা গ্রন্থের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। উইকিপিডিয়া Development of the New Testament canon প্রবন্ধের Outside the Empire অংশে Syriac Canon অনুচ্ছেদে উল্লেখ করছে: ‘‘McDonald & Sanders 2002, lists the following Syrian catalogue of St. Catherine's, c.400: Gospels (4): Matt, Mark, Luke, John, Acts, Gal, Rom, Heb, Col, Eph, Phil, 1–2 Thess, 1–2 Tim, Titus, Phlm’’
‘‘ম্যাকডোনাল্ড ও সানডারস ২০০২ সেন্ট ক্যাথেরিনের (৪০০ খ্রি.) সিরিয়ান ক্যাটালগ থেকে নিম্নের তালিকা প্রদান করেছেন: চার গসপেল: (১) মথি, (২) মার্ক, (৩) লূক, (৪) যোহন, (৫) প্রেরিত, (৬) গালাতীয়, (৭) রোমীয়, (৮) ইব্রীয়, (৯) কলসীয়, (১০) ইফিসীয়, (১১) ফিলিপীয়, (১২) ১ থিযলনীকীয়, (১৩) ২ থিযলনীকীয়, (১৪) ১ তিমথীয়, (১৫) ২ তিমথীয়, (১৬) তীত, (১৭) ফিলীমন।’’
উইকিপিডিয়ার পেশিট্টা (Peshitta) প্রবন্ধের আলোচনাও এটা প্রমাণ করে। উইকিপিডিয়ার বক্তব্য উদ্ধৃত করার পূর্বে বাইবেলীয় পুস্তকগুলো সম্পর্কে দুটো খ্রিষ্টীয় পরিভাষা বুঝতে হবে: (ক) এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) এবং (খ) সাধারণীয় পত্রাবলি (General epistles/ Catholic Epistles)
(ক) নতুন নিয়মের কয়েকটা পুস্তককে এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) বা সন্দেহযুক্ত বা বিতর্কিত পুস্তক বলা হয়। চতুর্থ খ্রিষ্টীয় শতকের ইউসিবিয়াস (৩৪০ খ্রি.) তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, এ পুস্তকগুলোকে অনেকে খ্রিষ্টীয় বাইবেলের অন্তর্ভুক্ত করলেও এগুলোর বিশুদ্ধতা সন্দেহযুক্ত ও বিতর্কিত। এগুলোর মধ্যে প্রচলিত নতুন নিয়মের শেষের ৬টা পুস্তক রয়েছে। সেগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
(১) যাকোবের পত্র (the Epistle of James)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২০ নং।
(২) পিতরের দ্বিতীয় পত্র (2 Peter)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২২ নং।
(৩) যোহনের দ্বিতীয় পত্র (2 John)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২৪ নং।
(৪) যোহনের তৃতীয় পত্র (3 John)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২৫ নং।
(৫) যিহূদার পত্র (the Epistle of Jude)। প্রচলিত নতুন নিয়মে ২৬ নং।
(৬) যোহনের নিকট প্রকাশিত বাক্য (Apocalypse of / The Revelation to John)। প্রচলিত নতুন নিয়মের ২৭ নং পুস্তক।
(৭) পলের কার্যবিবরণী (Acts of Paul),
(৮) হারমাসের রাখাল (the Shepherd of Hermas),
(৯) বার্নাবাসের পত্র (the Epistle of Barnabas) (১১) ডিডাচে (the Didache) বা ১২ শিষ্যের শিক্ষা।
(১০) পিতরের নিকট প্রকাশিত পত্র (the Apocalypse of Peter),
(১১) ইব্রীয়গণের সুসমাচার (the Gospel of the Hebrews/ the gospel according to Hebrews)।
সর্বশেষ পুস্তক দুটো কোনো খ্রিষ্টান বাইবেলেই অন্তর্ভুক্ত হয়নি। প্রথম ৬টা পুস্তক প্রচলিত নতুন নিয়মের মধ্যে সংযোজিত। পরবর্তী তিনটা পুস্তকও কোনো কোনো খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বাইবেলে বা প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে পাওয়া যায়।[4]
(খ) দ্বিতীয় পরিভাষা সাধারণ পত্রাবলি। উইকিপিডিয়ার সাধারণ পত্রাবলি (General epistles/ Catholic Epistles) আর্টিকেলে এগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
(১) ইব্রীয়গণের প্রতি পত্র (Epistle to the Hebrews),
(২) যাকবের পত্র (Letter of James),
(৩) পিতরের প্রথম পত্র (First Epistle of Peter),
(৪) পিতরের দ্বিতীয় পত্র (Second Epistle of Peter),
(৫) যোহনের প্রথম পত্র (First Epistle of John),
(৬) যোহনের দ্বিতীয় পত্র (Second Epistle of John),
(৭) যোহনের তৃতীয় পত্র (Third Epistle of John),
(৮) যিহুদার পত্র (Epistle of Jude)
উইকিপিডিয়া (Wikipedia) বিশ্বকোষের পেশিট্টা (Peshitta) আর্টিকেলের সিরীয় নতুন নিয়ম (Syriac New Testament) অনুচ্ছেদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে:
“One thing is certain, that the earliest New Testament of the Syriac church lacked not only the Antilegomena... but the whole of the Catholic Epistles.”
অর্থাৎ ‘‘একটি বিষয় নিশ্চিত যে, সিরীয় চার্চের প্রাচীনতম এ ‘নতুন নিয়মে’-র মধ্যে এন্টিলেগোমেনা (Antilegomena) বা সন্দেহযুক্ত পুস্তকগুলো তো নেই-ই, উপরন্তু ‘সাধারণীয় পত্রগুলোর’ কোনোটাই এর মধ্যে নেই।’’
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রচলিত নতুন নিয়মের শেষের পুস্তিকাগুলো সিরীয় নতুন নিয়মের মধ্যে ছিল না। সিরীয় নতুন নিয়ম ছিল মূলত ৪ ইঞ্জিল, প্রেরিতগণের কার্যবিবরণী পুস্তক ও সাধু পলের পত্রাবলি। বর্তমানে নতুন নিয়মে সাধু পলের নামে ১৪টা পত্র বিদ্যমান। সেন্ট ক্যাথেরিনের বর্ণনা অনুসারে ১ ও ২ করিন্থীয় পেশিট্টার অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তবে ইব্রীয় পুস্তকটা ছিল। পক্ষান্তরে উইকিপিডিয়ার বর্ণনা অনুসারে ইব্রীয় পুস্তকসহ শেষের ৯টা পুস্তকের কোনোটাই সিরীয় নতুন নিয়মের মধ্যে ছিল না। তবে পরবর্তীকালে সিরীয় নতুন নিয়মের মধ্যে যাকোবের পত্র, পিতরের ১ম পত্র ও যোহনের ১ম পত্র সংযোজন করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ পরবর্তী গবেষকরা এ বাইবেলের পুস্তকসংখ্যা ২২ বলে উল্লেখ করেছেন।
৪র্থ-৫ম খ্রিষ্টীয় শতাব্দীর প্রসিদ্ধতম খ্রিষ্টান ধর্মগুরু জন ক্রীযোস্টম (John Chrysostom: 347-407), থিওডোরেট (Theodoret: 393-466) প্রমুখ প্রাচীন ধর্মগুরু ২২ পুস্তকের নতুন নিয়মের উপর নির্ভর করেছেন এবং এরই উদ্ধৃতি দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে মালানকারা সিরীয় অর্থোডক্স চার্চ (Malankara Syrian Orthodox Church) এবং পূর্ব সিরীয় ক্যালডিয়ান ক্যাথলিক চার্চ (East Syriac Chaldean Catholic Church) পেশিট্টার ২২ পুস্তকের উপরেই নির্ভর করেন।
চতুর্থত: প্রাচীনতম খ্রিষ্টীয় চার্চগুলোর অন্যতম মিসরীয় বা কপ্টিক (Egyptian/ Coptic) চার্চ। কপ্টিক বাইবেলের মধ্যে অতিরিক্ত দু’টা পুস্তক সংযোজিত। ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র ও ক্লিমেন্টের ২য় পত্র (the two Epistles of Clement)।
পঞ্চমত: আর্মেনিয়ান এপস্টলিক চার্চ (The Armenian Apostolic church)-এর বাইবেলে প্রচলিত ক্যাথলিক-প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের ২৭ নং পুস্তক: ‘প্রকাশিত বাক্য’ পুস্তকটাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং করিন্থীয়দের প্রতি পৌলের তৃতীয় পত্র (Third Epistle to the Corinthians) নামে একটা পুস্তক সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া শিষ্যদের প্রতি ঈশ্বরের মাতার উপদেশ (Advice of the Mother of God to the Apostles), ক্রিয়াপসের পুস্তকগুলো (the Books of Criapos) এবং বার্নাবাসের পত্র (Epistle of Barnabas) পুস্তকগুলোকে অনেকে আর্মেনিয়ান নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে তা সর্বজনস্বীকৃত হয়নি।[5]
ষষ্ঠত: ইথিওপিয়ান চার্চ (Ethiopian Orthodox Church)-এর বাইবেল, ইথিওপিক বাইবেল (Ethiopic Bible) বা ইথিওপিয়ান নতুন নিয়ম (Ethiopian New Testament)-এ প্রচলিত ২৭টা পুস্তকের সাথে অতিরিক্ত আরো কয়েকটা পুস্তক বিদ্যমান: (১) সিনডস (the Sinodos) (পুস্তকটা কিছু প্রার্থনা ও বিধিবিধানের সংকলন এবং তা রোমের ক্লিমেন্টের সংকলিত বলে মনে করা হয়), (২) ইথিওপিয়ান ক্লিমেন্ট (Ethiopic Clement): ক্লিমেন্টের পত্রের ইথিওপীয় ভাষ্য, (৩) অকটাটেউক (Octateuch) (ধারণা করা হয় যে, বইটা পিটার লেখেছিলেন রোমের ক্লিমেন্টকে) (৪) প্রতিজ্ঞাপুস্তক (নিয়মপুস্তক) ১ম খণ্ড (the Book of the Covenant 1), (৫) প্রতিজ্ঞাপুস্তক ২য় খণ্ড (the Book of the Covenant 2) (৬) ডিডাসক্যালিয়া (the Didascalia): চার্চের নিয়মকানুন বিষয়ক।
ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চ স্বীকৃত বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান অতিরিক্ত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে: (১) হারমাসের রাখাল (the Shepherd of Hermas), (২) ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র (1 Clement), (৩) পলের কার্যবিবরণী (Acts of Paul)।[6]
এভাবে আমরা দেখছি যে, প্রচলিত ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে নতুন নিয়মের পুস্তক সংখ্যা ২৭ হলেও বর্তমানে বিদ্যমান প্রাচীন ও আধুনিক অনেক বাইবেলের নতুন নিয়মের পুস্তক সংখ্যার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান পুস্তকগুলোর তালিকা উল্লেখের আগে এ বিষয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার একটা বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। বাইবেলীয় সাহিত্য (biblical literature) আর্টিকেলে ‘৪র্থ শতকের কানুন নির্ণয়’ (Determination of the canon in the 4th century) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
Athanasius, a 4th-century bishop of Alexandria and a significant theologian, delimited the canon and settled the strife between East and West. On a principle of inclusiveness, both Revelation and Hebrews (as part of the Pauline corpus) were accepted. The 27 books of the New Testament—and they only—were declared canonical. In the Greek churches there was still controversy about Revelation, but in the Latin Church, under the influence of Jerome, Athanasius' decision was accepted. It is notable, however, that, in a mid-4th-century manuscript called Codex Sinaiticus, the Letter of Barnabas and the Shepherd of Hermas are included at the end but with no indication of secondary status, and that, in the 5th-century Codex Alexandrinus, there is no demarcation between Revelation and I and II Clement. In the Syriac Church, Tatian's Diatessaron (.... It was the standard Gospel text in the Syrian Middle East until about AD 400) was used until the 5th century, and in the 3rd century the 14 Pauline Letters were added. Because Tatian had been declared a heretic, there was a clear episcopal order to have the four separated Gospels when, according to tradition, Rabbula, bishop of Edessa, introduced the Syriac version known as the Peshitta—also adding Acts, James, I Peter, and I John—making a 22-book canon. Only much later, perhaps in the 7th century, did the Syriac canon come into agreement with the Greek 27 books.
‘‘চতুর্থ শতাব্দীর আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ ও প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু এথানেসিয়াস নতুন নিয়মের আইনসিদ্ধ পুস্তকগুলো নির্ধারণ করেন এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায় (ক্যাথলিক/ রোমান ক্যাথলিক) ও পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায় (অর্থোডক্স/ গ্রিক অর্থোডক্স)-এর মধ্যে বিদ্যমান বিভক্তির সমাধান করেন। বাদ না দিয়ে ঢুকিয়ে নাও- এ নীতির ভিত্তিতে ‘প্রকাশিত বাক্য’ ও ‘ইব্রীয়গণের প্রতি পত্র’ (পলীয় রচনাবলির অংশ হিসেবে) উভয়কেই তিনি গ্রহণ করেন। নতুন নিয়মের ২৭টা পুস্তক এবং শুধু এ ২৭টাকেই আইনসিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। গ্রিক অর্থোডক্স চার্চগুলোর মধ্যে এখনো ‘প্রকাশিত বাক্য’ পুস্তকটার বিষয়ে বিতর্ক-বিরোধ বিদ্যমান। তবে ল্যাটিন (ক্যাথলিক) চার্চে (পরবর্তী ৫ম শতাব্দীর প্রসিদ্ধ ধর্মগুরু) জীরোমের (Saint Jerome) প্রভাবে এথানেসিয়াসের মতটা স্বীকৃত হয়ে যায়।
সর্বাবস্থায়, এখানে উল্লেখ্য যে, সিনাইয়ের পাণ্ডুলিপি (Codex Sinaiticus) নামে প্রসিদ্ধ খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের বাইবেলের লিখিত পাণ্ডুলিপির শেষে বার্নাবাসের পত্র এবং হারমাসের রাখাল পুস্তকদুটো বিদ্যমান। বই দুটো নতুন নিয়মের অন্যান্য বইয়ের চেয়ে ভিন্ন মানের বা দ্বিতীয় পর্যায়ের বলে পাণ্ডুলিপিটার মধ্যে কোনোরূপ ইঙ্গিত নেই। আলেকজান্দ্রীয় পাণ্ডুলিপি (Codex Alexandrinus) নামে প্রসিদ্ধ ৫ম শতাব্দীর বাইবেলীয় পাণ্ডুলিপির মধ্যে ক্লিমেন্টের প্রথম পত্র ও ক্লিমেন্টের দ্বিতীয় পত্র বিদ্যমান। এ দুটো পুস্তক যে প্রকাশিত বাক্য থেকে ভিন্ন সেরূপ কোনো ইঙ্গিত বা পৃথকীকরণ সেখানে নেই।সিরীয় চার্চে টিটানের ডায়াটেসারন ব্যবহৃত হত ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত। প্রায় ৪০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের সিরীয় চার্চে এটাই ছিল গসপেল বা ইঞ্জিলের বিশুদ্ধ ও সঠিক পাঠ। তৃতীয় শতাব্দীতে এর মধ্যে পলের ১৪টা পত্র সংযোজন করা হয়। টিটানকে ধর্মদ্রোহী ঘোষণা দেওয়ার কারণে বিশপের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয় যে, পৃথক চার গসপেলকে গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রচলিত মত থেকে জানা যায় যে, যখন (৫ম শতাব্দীতে) এডেসার বিশপ রাববুলা পেশিট্টা নামক নতুন নিয়মের সিরীয় সংস্করণ প্রকাশ করলেন তখন তিনি প্রেরিতদের কার্যবিবরণী, যাকোব, ১ পিতর ও ১ যোহন পুস্তকগুলো এর মধ্যে সংযোজন করেন। এভাবে ২২ পুস্তকের আইনসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়। অনেক পরে ৭ম শতাব্দীতে সিরিয়ান বাইবেলের মধ্যে গ্রিক ২৭ পুস্তকই সংযোজন করা হয়।’’
[2] Eusebius, Ecclesiastical History, p 166. আরো দেখুন উইকিপিডিয়া: Syriac Canon.
[3] বিস্তারিত দেখুন: উইকিপিডিয়া: Tatian, Diatessaron.
[4] উইকিপিডিয়া, Antilegomena.
[5] বিস্তারিত জানতে উইকিপিডিয়া, ব্রিটানিকা, এনকার্টা ইত্যাদি বিশ্বকোষে Apocrypha, Peshitta, Antilegomena, General epistles, Development of the New Testament canon/ Armenian canon আর্টিকেলগুলো দেখুন।
[6] দেখুন: উইকিপিডিয়া Development of the New Testament canon/East African canons; New Testament apocrypha/ Development of the New Testament canon.