১. ২. ৬. ইহুদি বাইবেল, পুরাতন নিয়ম বনাম তৌরাত

তোরাহ, তৌরাত, তাওরাত বা ‘তাওরাহ’ হিব্রু শব্দ। এর অর্থ আইন বা শিক্ষা (law or doctrine)। কখনো কখনো ইহুদি বা খ্রিষ্টান পণ্ডিতরা ইহুদি বাইবেল বা পুরাতন নিয়মকে ‘তৌরাত শরীফ’ নামে প্রচার করেন। বিষয়টা সঠিক নয়। আমরা দেখেছি যে, ইহুদি বাইবেলের ২৪টা পুস্তক তিন ভাগে বিভক্ত:

(ক) প্রথম ৫টা পুস্তক তোরাহ (Torah/The Law)

(খ) পরবর্তী ৮টা পুস্তক নাবী বা নাবিয়্যীম (Navi/Nevi'im: Prophets), অর্থাৎ নবীগণ।  তন্মধ্যে প্রথম ৪টা পুস্তক পূর্ববর্তী নবীগণ (Earlier Prophets):  যিহশূয়, বিচারকর্তৃগণ, ১ শমূয়েল ও ২ শমূয়েল একত্রে এবং ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি একত্রে। আর পরবর্তী ৪টা পুস্তক পরবর্তী নবীগণ (Latter Prophets): যিশাইয়, যিরমিয়, যিহিষ্কেল তিনটা পুস্তক এবং পরবর্তী ১২ পুস্তক: হোশেয়, যোয়েল, আমোস, ওবাদিয়, যোনা, মিখা, নাহূম, হাবাক্কুক, যেফনিয়, হগয়, সখরিয় ও মালাখি একটা পুস্তক।

(গ) সর্বশেষ ১১টা পুস্তক কিতুবীম (Ketuvim) বা লিখনিসমূহ (The Writings): গীতসংহিতা, হিতোপদেশ, ইয়োব, পরমগীত, রুত, বিলাপ, উপদেশক, ইস্টের, দানিয়েল, ইয্রা ও নেহেমিয় একত্রে এবং ১ বংশাবলি ও ২ বংশাবলি একত্রে।

তিন অংশের এ ২৪টা পুস্তকের সমষ্টিকে একত্রে তানাক (Tanak/ Tanakh) বলা হয়। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি নামটা তিন অংশের প্রথম বর্ণের সমন্বয়। তৌরাতের ‘তা’, ‘নাবিয়্যীম’-এর ‘না’ এবং ‘কিতুবীম’-এর ‘ক’ একত্রে মিলিয়ে ‘তানাক’ বা ‘তানাখ’ নামকরণ করা হয়েছে। ইহুদিরা শুধু প্রথম অংশকেই ‘তৌরাত’ বলেন। কখনোই তারা এ তিন অংশের সমন্বিত ২৪টা পুস্তকের সংকলনকে তৌরাত বলে দাবি করেন না।

পক্ষান্তরে ক্যাথলিক পুরাতন নিয়মে পুস্তকগুলো চারভাগে ভাগ করা হয়েছে:

(১) তৌরাত বা পঞ্চপুস্তক (The Pentateuch/Torah): প্রথম ৫ পুস্তক।

(২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (The Historical Books): পরবর্তী ১৬টা পুস্তক।

(৩) প্রজ্ঞাপুস্তকসমূহ (The Wisdom Books): পরবর্তী ৭টা পুস্তক।

(৪) নবীগণের পুস্তকসমূহ (The Prophetical Books): সর্বশেষ ১৮টা পুস্তক।

প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলের বিভাজন ও বিন্যাস অনেকটা ক্যাথলিক বাইবেলের মতই, তবে প্রটেস্ট্যান্ট বাইবেলে প্রজ্ঞাপুস্তকসমূহকে কাব্যিক পুস্তকসমূহ (The Poetical Books) নামকরণ করা হয়েছে। তাদের বিন্যাস নিম্নরূপ:

(১) তৌরাত বা পঞ্চপুস্তক (The Pentateuch/Torah): প্রথম ৫ পুস্তক।

(২) ঐতিহাসিক পুস্তকসমূহ (The Historical Books): ১২টা পুস্তক।

(৩) কাব্যিক পুস্তকসমূহ (The Poetical Books):  ৫টা পুস্তক।

(৪) নবীগণের পুস্তকসমূহ (The Prophetical Books): ১৭টা পুস্তক।[1]

চার অংশের সমন্বিত সংকলনকে সকল খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সকল বাইবেলেই ওল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament), অর্থাৎ ‘পুরাতন নিয়ম’, ‘পুরাতন ব্যবস্থা’ বা ‘পুরাতন সন্ধি’ বলে নামকরণ করা হয়েছে। কোনো খ্রিষ্টান সম্প্রদায় ৪৬ বা ৩৯ পুস্তকের সমষ্টিকে ‘তৌরাত’ বলে দাবি বা নামকরণ করেননি।

এভাবে আমরা দেখছি যে, ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্মীয় পরিভাষায় পুরাতন নিয়মের সকল পুস্তককে একত্রে তৌরাত বলা হয় না। আর ইসলামি পরিভাষায় মূসা (আ.)-এর উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ গ্রন্থটাই শুধু ‘তাওরাত’। কাজেই পুরাতন নিয়মকে ‘তৌরাত’ বলা ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে সঠিক নয় বলেই প্রতীয়মান।

[1] বিস্তারিত দেখুন: এনকার্টা: Books of the Bible