ইতোপূর্বে আমরা খৃস্টানদের শিরকের বিষয়েও কুরআনের বিশ্লেষণ আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, ওহীর সাথে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা সংযোগ করে ব্যাখ্যাকে বিশ্বাসে পরিণত করে তারা শিরকে নিমজ্জিত হয়। তাদের শিরকের ক্ষেত্রে কুরআন কারীমে অন্য একটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ত্রিত্ববাদ ও ঈসা (আঃ)-এর ঈশ্বরত্ব ছাড়াও তারা ঈসা (আঃ)-এর মাতা মারিয়াম (আঃ)-কে মা’বুদ হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ
‘‘আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারয়াম তনয় ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর?...’’[1]
খৃস্টান ধর্মগুরুগণ দাবি করেন যে, সাধারণ খৃস্টানগণ কখনোই মরিয়ামকে ত্রিত্ববাদের অংশ বা ঈশ্বর হিসেবে বিশ্বাস করেন না। বরং তারা তাকে মানুষ ও যীশুর মাতা হিসেবে ‘ভক্তি’ করেন, তার নামে মানত করেন, ভক্তির প্রকাশ হিসেবে তার নামে উৎসর্গ করেন বা তার মুর্তি তৈরি করে রাখেন। কিন্তু কখনোই তারা তাকে ‘ঈশ্বর’ বলে মনে করেন না, ঈশ্বরের কোনো অংশ বলেও মনে করেন না।[2]
বস্ত্তত ‘ইবাদতের’ ধারণা সম্পর্কে অজ্ঞতাই তাদের এ সকল প্রলাপের কারণ। প্রকৃতপক্ষে তারা ‘ভক্তি’, ‘শ্রদ্ধা’ ইত্যাদির নামে তারা ‘মরিয়ম’ (আঃ)-এর ইবাদত করত। আমরা ইতোপূর্বে ইবাদতের অর্থ আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, অলৌকিক বা অপার্থিব প্রার্থনাই ইবাদতের মুল ও প্রধান প্রকাশ। আর প্রার্থনা বা দু‘আর কবুলিয়্যাতের জন্য মানত, নযর, উৎসর্গ, সাজদা ইত্যাদি করা হয়। খৃস্টানগণ এভাবেই মারইয়াম (আঃ)-এর ইবাদত করে। তারা তাঁকে আল্লাহ বা স্রষ্টা বলে দাবি করে না। তবে ‘ঈশ্বরের মাতা’ বা ‘আল্লাহর বিশেষ করুণা-প্রাপ্ত মানুষ হিসেবে’ ফিলিস্তিনে তাঁর কবরে এবং সকল গীর্জায় তাঁর মুর্তি তৈরি করে মুর্তির সামনে তাদের হাজত বা প্রয়োজন মেটানোর জন্য অলৌকিক সাহায্যের আশায় তাঁরা কাছে প্রার্থনা করে। আর প্রার্থনা যেন ‘মা-মেরী’ তাড়াতাড়ি পূরণ করেন সে আশায় তার নিকট মানত, নযর ইত্যাদি পেশ করে বা সাজদা করে পড়ে থাকে।
[2] Geoffrey Parrinder, Jesus in the Quran, pp 19, 62, 94, 133-141.