এ পর্যায়ের শিরক আসগারের প্রকৃতি এই যে, জাগতিক বা বিশ্বাসগত কোনো প্রকৃত ‘কারণ’-কে মহান আল্লাহর পাশাপাশি এমনভাবে উল্লেখ করা যাতে উভয় ‘কারণ’ সমান গুরুত্বের বলে মনে হয়। যেমন বৃষ্টিপাতের ফলে ফসল ভাল হওয়া একটি জাগতিক কারণ। কেউ বলতে পারেন যে, বৃষ্টিপাত ভাল হওয়ায় ফসল ভাল হয়েছে। তবে মুমিন বিশ্বাস করেন যে, ভাল বৃষ্টিপাত আল্লাহর ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণেই হয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি বলেন ‘আল্লাহর ইচ্ছা ও ভাল বৃষ্টিপাতের ফলে এরূপ হয়েছে’, তবে তা শিরক আসগর বলে গণ্য হবে। যদি বক্তা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর ইচ্ছা এবং বৃষ্টিপাত দুটিই স্বতন্ত্র কারণ তবে তা শিরক আকবার বলে গণ্য হবে। আর যদি তিনি কথাচ্ছলে এরূপ বলেন এবং প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করেন যে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয় তবে তা শিরক আসগার বলে গণ্য হবে। কারণ তিনি বাহ্যত অন্য একটি সাধারণ কারণকে মহান আল্লাহর সমতুল্য বলে প্রকাশ করেছেন।
অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে জাগতিক কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করার কারণে উদ্ধারকৃত ব্যক্তি যদি বলে ‘আল্লাহ এবং আপনি না হলে আমার বিপদ কাটত না’ তবে তাও উপরের কথার মতই শিরক আকবার বা আসগার বলে গণ্য হবে।
জাগতিক-লৌকিক কোনো বিষয়ে কোনো মানুষ অন্য কোনো মানুষকে বলতে পারেন ‘এ বিষয়ে আপনি যা বলবেন তাই হবে,’ অথবা ‘আপনি যা চাইবেন তাই হবে’। যেমন বিবাহ শাদি, ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি। কিন্তু তিনি যদি বলেন: ‘আল্লাহ ও আপনি যা চান তাই হবে’ তবে তা উপরের কথাগুলির মত শিরক আসগার বা আকবার বলে গণ্য হবে। যদি কেউ বলে, ‘হে আমীর, হে সম্রাট, হে মন্ত্রী মহোদয়, আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান তাই হবে’ তবে তা শিরক আকবার বা আসগার। তবে তিনি যদি বলেন, ‘‘হে সম্রাট বা আমীর, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, এবং এরপর আপ&&ন যা ইচ্ছা করেন...’’ তবে তা শিরক বলে গণ্য হবে না।
এখানে কয়েকটি পর্যায় লক্ষণীয়:
প্রথমত, মানবীয় ইচ্ছার পরিসর সকলেরই পরিজ্ঞাত। মানুষ তারা ইচ্ছাধীন বা কর্তৃত্বাধীন বিষয়ে নিজের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করতে পারে। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহর ইচ্ছার প্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানুষের ইচ্ছা লৌকিক এবং মহান আল্লাহর ইচ্ছা ‘অলৌকিক’ বা ‘অপার্থিব’। সমস্ত সৃষ্টিজগত তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই ঘটে। তিনি ‘হও’ বললেই সব হয়ে যায়। এরূপ ‘ইচ্ছা’-র অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু। কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এরূপ ‘অলৌকিক’ ইচ্ছা আছে বা অন্য কাউকে মহান আল্লাহ খুশি হয়ে এরূপ ক্ষমতা প্রদান করেছেন তবে তা শিরক্ আকবার এবং মহান আল্লাহর নামে জঘন্য মিথ্যাচার। মহান আল্লাহ কাউকে এরূপ ইচ্ছা বা ক্ষমতা প্রদান করেছেন বলে কোথাও জানান নি। আমরা পরবর্তী আলোচনায় দেখব যে, আরবের কাফিরদের শিরকের মূল ভিত্তি ছিল এরূপ চিন্তা। তারা নবী-ওলীদের মুজিযা-কারামত এবং ফিরিশতাদের দায়িত্ব ও সুপারিশগ্রহণ বিষয়ক ওহীর নির্দেশনাগুলিকে বিকৃত ব্যাখ্যা করে এ সকল বিষয়কে তাদের অলৌকিক ইচ্ছা ও ক্ষমতা প্রদানের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করত। কেউ যদি এরূপ অর্থে বলে যে ‘আল্লাহ এবং আপ&&ন যা চান তাই হবে’ তবে তা শিরক আকবার এবং এর সংশোধনী হলো ‘মহান আল্লাহ একাই যা চান তাই হবে, অন্যের ইচ্ছার মূল নেই।
দ্বিতীয়ত, কেউ যদি মানবীয় ইচ্ছা ও মহান আল্লাহর ইচ্ছার পার্থক্য অনুধাবন ও বিশ্বাস করার পরেও মানুষের ইচ্চাধীন কোনো বিষয়ের আলোচনায় বলেন: ‘আল্লাহ এবং আপনি যা চান’ অথবা বলেন ‘আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান’ এবং তার উদ্দেশ্য হয় যে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পুরো এখতিয়ার আপনার রয়েছে, তবে মহান আল্লাহর ইচ্চা সর্বোপরি কার্যকর, তবে তার এ কথাটি শিরক আসগর। তার বিশ্বাস সঠিক থাকলেও তার কথায় তার বিশ্বসের প্রতিফলন ঘটেনি। এক্ষেত্রে এরূপ বাক্যের সংশোধনী হলো ‘আল্লাহ যা চান তাই হবে, অতঃপর আপনার ইচ্ছা’ বা অনুরূপ বাক্য।
কাতীলা বিনতু সাইফী (রাঃ) বলেন,
إِنَّ حِبْراً جَاء إِلَى النَّبِيِّ (ﷺ) فَقَالَ: إِنَّكُمْ تُشْرِكُوْنَ، تَقُوْلُوْنَ: مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ، وَتَقُوْلُوْنَ: وَالْكَعْبَةِ. فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ﷺ): قُوْلُوا: مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ شِئْتَ، وَقُوْلُوْا: وَرَبِّ الْكَعْبَةِ
‘‘একজন ইহূদী পন্ডিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আগমন করে বলেন, আপনারা তো শিরক করেন, কারণ আপনারা বলেন: ‘আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও’ এবং আপনারা বলেন: ‘‘কাবার কসম’। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তোমরা বলবে: ‘আল্লাহ যা চান, এরপর তুমি যা চাও’, এবং বলবে: ‘কাবার প্রতিপালকের কসম’।’’[1]
হুযাইফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
لا تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلانٌ وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلانٌ
‘‘তোমরা বলবে না: ‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন এবং অমুক যা ইচ্ছা করে’ বরং তোমরা বলবে: ‘‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, অতঃপর অমুক যা ইচ্ছা করে।’’[2]
তুফাইল ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু সাখবারাহ (রাঃ) বলেন,
إِنَّهُ رَأَى فِي الْمَنَامِ أَنَّهُ لَقِيَ رَهْطاً مِنَ النَّصَارَى فَقَالَ: إِنَّكُمُ الْقَوْمُ لَوْلاَ أَنَّكُمْ تَزْعُمُوْنَ أَنَّ الْمَسِيْحَ ابْنُ اللهِ. فَقَالُوا: وَأَنْتُمُ الْقَوْمُ لَوْلاَ أَنَّكُمْ تَقُوْلُوْنَ: مَا شَاءَ اللهُ وَمَا شَاءَ مُحَمَّدٌ. قَالَ ثُمَّ لَقِيَ نَاساً مِنَ الْيَهُوْدِ فَقَالَ: إِنَّكُمُ الْقَوْمُ لَوْلاَ أَنَّكُمْ تَزْعُمُوْنَ أَنَّ العُزَيْرَ ابْنُ اللهِ. فَقَالُوا: وَأَنْتُمُ الْقَوْمُ لَوْلاَ أَنَّكُمْ تَقُوْلُوْنَ: مَا شَاءَ اللهُ وَمَا شَاءَ مُحَمَّدٌ. فَأَتَى النَّبِيَّ (ﷺ) فَحَدَّثَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ (ﷺ): حَدَّثْتَ بِهَذا الْحَدِيْثِ أَحَداً؟ فَقَالَ: نَعَمْ. فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: إَنَّ أَخَاكُمْ قَدْ رَأَى مَا بَلَغَكُمْ (وفي رواية أحمد: وَإِنَّكُمْ كُنْتُمْ تَقُوْلُوْنَ كَلِمَةً كَانَ يَمْنَعُنِيْ الْحَيَاءُ مِنْكُمْ أَنْ أَنْهَاكُمْ عَنْهَا، وفي رواية عن حذيفة: قَدْ كُنْتُ أَكْرَهُهَا مِنْكُمْ) فَلاَ تَقُوْلُوْا: مَا شَاءَ اللهُ وَمَا شَاءَ مُحَمَّدٌ وَلَكِنْ قُوْلُوا: مَا شَاءَ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ
‘‘তিনি স্বপ্নে কতিপয় খৃস্টানকে দেখে তাদেরকে বলেন, তোমরাই সত্যিকার ভাল জাতি বলে গণ্য হতে, যদি না তোমরা বলতে ‘মাসীহ আল্লাহর পুত্র’। তখন তারা বলে, ‘তোমরাও সত্যিকার ভাল জাতি বলে গণ্য হতে যদি না তোমরা বলতে: ‘আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) যা চান।’ এরপর তাঁর সাক্ষাত হয় একদল ইহূদীর সাথে। তিনি বলেন, তোমরাই সত্যিকার ভাল জাতি বলে গণ্য হতে, যদি না তোমরা বলতে ‘উযাইর আল্লাহর পুত্র’। তখন তারা বলে, ‘তোমরাও সত্যিকার ভাল জাতি বলে গণ্য হতে যদি না তোমরা বলতে: ‘আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) যা চান।’ তিনি বলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আগমন তাকে এ স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি কি এ বিষয়ে অন্যদেরকে জানিয়েছ? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি তখন আল্লাহর প্রশংসা করলেন তাঁর গুণবর্ণনা করলেন এবং বললেন: তোমাদের ভাই (তুফাইল) যে স্বপ্ন দেখেছে তা তোমরা জেনেছ। তোমরা এরূপ কথা বলতে যা আমি অপছন্দ করতাম, শুধু লজ্জার কারণে তোমাদের নিষেধ করি নি। তোমরা বলবে না: ‘আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) যা চান’’, বরং তোমরা বলবে: ‘‘আল্লাহ একাই যা চান, তার কোনো শরীক নেই।’’[3]
অন্য হাদীসে আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
لاَ تَقُوْلُوْا: مَا شَاءَ اللهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ. قُوْلُوْا: مَا شَاءَ اللهُ وَحْدَهُ.
‘‘তোমরা বলবে না: ‘‘যা আল্লাহ চান এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) চান’ বরং বলবে: ‘যা আল্লাহ একাই চান’।[4]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
إنَّ رَجُلا قَالَ لِلنَّبِيِّ (ﷺ): مَا شَاءَ اللَّهُ وَشِئْتَ. فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ (ﷺ): أَجَعَلْتَنِي وَاللَّهَ عَدْلا!؟ (أَجَعَلْتَنِي لِله نِدًّا) بَلْ مَا شَاءَ اللَّهُ وَحْدَهُ.
‘‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলেন: ‘‘আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন এবং আপনি যা ইচ্ছা করেন।’’ তখন তিনি তাকে বলেন: ‘‘তুমি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে দিলে?! বরং আল্লাহর একার ইচ্ছাই চূড়ান্ত।’’[5]
এখানে লক্ষণীয় যে, অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে ‘আল্লাহ যা চান অতঃপর আপনি যা চান’ বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ হাদীসে ‘একমাত্র আল্লাহ যা চান’ বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা জানি যে, সাহাবীগণ ‘আল্লাহ যা চান এবং মুহাম্ম্দ (ﷺ) যা চান’, অথবা ‘আল্লাহ যা চান, অতঃপর মুহাম্মাদ (ﷺ) যা চান’ বলতেন তাঁর জীবদ্দশায়, যখন জাগতিকভাবে তাঁর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন পড়ত এবং তাঁরা তাঁর সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হতেন। বিশ্ব পরিচালনা বা অলৌকিক ‘ইচ্ছা’ একামাত্র মহান আল্লাহরই। আমরা ইতোপূর্বে অগণিত আয়াত ও হাদীসের মাধ্যমে জেনেছি যে, কারো মঙ্গল, অমঙ্গল, বিপদ দান, বিপদ থেকে উদ্ধার, হেদায়াত করা, ঈমান আনানো, ধ্বংস করা ইত্যাদি বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে কোনো ক্ষমতা, দায়িত্ব বা ঝামেলা আল্লাহ প্রদান করেন নি। এক্ষেত্রে একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারো ইচ্ছা বা ক্ষমতা নেই। এজন্য আমরা দেখি যে, তাঁর ওফাতের পরে সাহাবীগণ তাঁর রাওযায় যেয়ে কখনোই বলেন নি যে, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ যা চান এবং এরপর আপনি যা চান, কাজেই আপনি্ আমাদের এ বিপদ বা অসুবিধা থেকে উদ্ধারের বিষয়ে ইচ্ছা গ্রহণ করুন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা। মূলত সকল কাজে তার ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। এছাড়া মহান আল্লাহর নিকট তাঁর মহান রাসূলের (ﷺ) মর্যাদা অতুলনীয়। তিনি কিছু ইচ্ছা করলে মহান আল্লাহ তা রক্ষা করতেন। যেমন তিনি কাবাঘরকে কিবলা হিসেবে পেতে আগ্রহ বোধ করছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ আগ্রহ পূরণ করেন এবং কাবাকে কিবলা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আয়াত নাযিল করেন।[6] কাজেই সাধারণভাবে অন্যান্য মানুষের ইচ্ছা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে- টাকা প্রদান, চাকুরী প্রদান, জমি দান, শাস্তি মওকুফ ইত্যাদি বিষয়ে যেমন বলা যায় ‘হে আমীর বা হে নেতা, আল্লাহ যা চান এরপর আপনি যা চান’, তেমনিভাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ইচ্ছা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অনুরূপ বলায় কোনো আপত্তি থাকতে পারে না। কোনো কোনো বর্ণনায় এরূপ বলার অনুমতি তিনি সাহাবীগণকে দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ হাদীসেই ‘একমাত্র আল্লাহ যা চান’ বলতে শিখিয়েছেন তিনি।
এর কারণ, সম্ভবত, জাগতিক রাজা, বাদশাহ, আমীর, সওদাগর নেতা বা অনুরূপ ব্যক্তি এভাবে আল্লাহর ইচ্ছার পরে তার নামটি উল্লেখ করলে তাতে আনন্দিত হন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন মহান আল্লাহর ইচ্ছার নিকট চিরসমর্পিত। আল্লাহর ইচ্ছা তিনি ওহীর মাধ্যমে অবগত হতেন এবং সে অনুসারেই সিদ্ধান্ত নিতেন। আর এরূপ প্রশংসা তিনি অপছন্দ করতেন।
শিরক আসগার জাতীয় এরূপ কথাবার্তার মধ্যে রয়েছে: আমি আল্লাহর ও আপনার উপর নির্ভর করে আছি, উপরে আল্লাহ এবং নিচে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই আমার, আমার জন্য আল্লাহ এবং আপনি ছাড়া কেউ নেই। আল্লাহ এবং আপনি না হলে কাজটি হতো না, ইত্যাদি।
এ সকল ক্ষেত্রে যদি বক্তা প্রকৃতই বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর ইচ্ছার পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তির ইচ্ছারও একইরূপ প্রভাব রয়েছে তবে তা শিরক আকবার বলে গণ্য হবে। আর যদি কথার মধ্যে অনিচ্ছাকৃত এসে যায় এবং বক্তা বিশ্বাস করেন যে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর তবে তা শিরক্ আসগর বলে গণ্য হবে।
এভাবে আমরা দেখেছি যে, এ সকল ক্ষেত্রে অব্যয় ব্যবহারে এবং বাক্য গঠনে সতর্ক হতে শিক্ষা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)। যেমন আল্লাহর ইচ্ছাতেই হলো আর এরপর ছিল আপনার চেষ্টা ... আল্লাহর জন্যই বেঁচে গেলাম, আর এরপর ছিল আপনার অবদান ...।
[2] আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৯৫; বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/২১৬; আলবানী, সিলসিলাতুস সাহীহাহ ১/২৬৩-২৬৫। হাদীসটি সহীহ।
[3] হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/৫২৩; আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৭২, ৩৯৩; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা ৬/২৪৪; আলবানী, সিলসিলাতুস সাহীহাহ ১/২৬৪-২৬৬। হাদীসটি সহীহ।
[4] আবূ ইয়ালা, আল-মুসনাদ ৮/১১৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/২০৮-২০৯। সনদের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য।
[5] আহমদ, আল-মুসনাদ ১/২১৪, ২৮৩, ৩৪৭।
[6] সূরা (২) বাকারা: ১৪২-১৫০ আয়াত।