যাকে মানুষ অলৌকিকভাবে পবিত্র ও অলৌকিক জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করে তার নামে কখনো মিথ্যা বলতে সে সম্মত হয় না। কারণ সে জানে যে, এদের নাম নিয়ে মিথ্যা বললে এদের অলৌকিক আক্রোশ বা অভিশাপ তার উপর পতিত হবে। এজন্য প্রাচীন যুগ থেকে সকল ধর্মের মানুষদের মধ্যে প্রচলন রয়েছে শপথের সত্যতা প্রমাণ করতে এরূপ অলৌকিক পবিত্র ও ভক্তিপূত নামের শপথ করা। কারো নামে শপথ করার সুনিশ্চিত অর্থ যে শপথকারী উক্ত নামের অধিকারী সত্তাকে উলূহিয়্যাতের অধিকারী বলে বিশ্বাস করে। ‘গাইরুল্লাহ’ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা মূলত শিরক আকবার। উপরের হাদীসে আমরা দেখেছি যে, ‘কাবা ঘরের কসম’ বা কাবাঘরের নামে শপথ করাকে শিরক বলা হয়েছে এবং কাবা ঘরের প্রতিপালকের কসম করতে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে অনেক হাদীসে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
তবে যদি কোনো মুমিন নও মুসলিম হওয়ার কারণে অভ্যাস অনুসারে গাইরুল্লাহর নামে শপথ করে ফেলে তবে তা ‘শিরক আসগার’ বলে গণ্য হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো আলিম।
এ বিষয়ে আল্লামা শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবী বলেন, ‘‘কিছু মানুষের বিষয়ে মুশরিকগণ বিশ্বাস করত যে, এদের নামগুলি পবিত্র ও সম্মানিত। একারণে তারা বিশ্বাস করত যে, এদের নাম নিয়ে শপথ করলে সম্পদ ও সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য তারা এদের নাম নিয়ে মিথ্যা শপথ করত না। আর একারণেই তারা মামলা বিবাদে প্রতিপক্ষকে এ সকল কাল্পনিক শরীক ‘উপাস্যে’-র নামে শপথ করাতো। ফলে তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কারো নামে শপথ করল, সে কুফরী করল বা শির্ক করল।’’[1]
কোনো কোনো মুহাদ্দিস মতপ্রকাশ করেছেন যে, এর অর্থ প্রকৃত শিরক নয়, বরং এরূপ করা কঠিন অন্যায় (শিরক আসগার) বুঝাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরূপ বলেছেন। আমি এরূপ ব্যাখ্যা করছি না। আমার মতে এর অর্থ এই যে, যদি কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামের মধ্যে ‘পবিত্রতার’ বা ‘অলৌকিকতার’ ও মঙ্গল-অমঙ্গলের ‘আকীদা’ পোষণ করে ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য বা মিথ্যা কসম করে তবে তা শির্ক বলে গণ্য হবে।’’[2]
[2] শাহ ওয়ালি উল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/১৮৭-১৮৮।