একজন মুসলিম সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) পরিপূর্ণ বিশ্বস্ততার সাথে আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বজনীন নবী ও রাসূল হিসাবে তার নুবুওয়াতের ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহর সকল বাণী, শিক্ষা ও নির্দেশ তিনি পরিপূর্ণভাবে তাঁর উম্মতকে শিখিয়ে দিয়েছেন, কোনো কিছুই তিনি গোপন করেন নি। আমরা দেখেছি আল্লাহ তাকে প্রচারের দায়িত্ব দান করে বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ
‘‘হে রাসূল, তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর। যদি তা না কর তবে তুমি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলে না।’’[1]
নিঃসন্দেহে তিনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করেছেন এবং তাঁর প্রচারের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। আল্লাহ বলেছেন:
فَإِنْ أَعْرَضُوا فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا إِنْ عَلَيْكَ إِلا الْبَلاغُ
‘‘আর (কাফিরেরা) যদি আপনার আহবানে সাড়া না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনাকে আমি তাদের রক্ষাকর্তারূপে প্রেরণ করি নি। আপনার উপরে তো শুধু প্রচারের দায়িত্ব।’’[2]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজ্জের সময় তার সাহাবীদের সামনে প্রশ্ন করেন: আমি কি আল্লাহ বাণী সকল প্রচার করেছি? সাহাবীগণ একবাক্যে বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন:
وَأَنْتُمْ تُسْأَلُونَ عَنِّي فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُونَ قَالُوا نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ
‘‘তোমাদেরকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা কি বলবে? তার বলেন: ‘‘আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি প্রচার করেছেন, রিসালাতের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন এবং উম্মতের কল্যাণ কামলায় তাদের মঙ্গলের সকল উপদেশ তাদেরকে জানিয়েছেন।’’[3]
এরপর আল্লাহ ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা দিয়ে নিম্নের আয়াত নাযিল করেন:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلامَ دِينًا
‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন (ধর্ম) পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’’[4]
ইরবাদ ইবনু সারিয়া (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا لا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلا هَالِكٌ
‘‘আমি তোমাদেরকে আলোকোজ্জ্বল পরিস্কার চকচকে ধবধবে রাস্তার উপর রেখে গেলাম, যেখানে রাতও দিনের মত আলোকিত উজ্জ্বল। শুধুমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্তরাই আমার পরে এই রাস্তা থেকে সরে অন্য পথে যাবে।’’[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন;
إِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ قَبْلِي إِلا كَانَ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ وَيُنْذِرَهُمْ شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ
‘‘আমার পূর্বের প্রত্যেক নবীরই দায়িত্ব ছিল যে, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য যত ভালো বিষয় জানেন সে বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দান করবেন, এবং তিনি তাদের জন্য যত খারাপ বিষয়ের কথা জানেন সেগুলি থেকে তাদেরকে সাবধান করবেন।’’[6]
আবূ যার গিফারী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَا بَقِيَ شَيْءٌ يُقَرِّبُ إلى الجَنَّةِ وَيُبَاعِدُ مِنَ النَّارِ إلا وَقَدْ بُيِّنَ لَكُمْ
‘‘জান্নাতের নিকটে নেওয়ার ও জাহান্নাম থেকে দূরে নেওয়ার সকল বিষয়ই তোমাদেরকে বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে।’’[7]
এভাবে আমরা দেখতে পাই যে, পবিত্র কুরআনে এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসে বিশেষভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন। উম্মাতের মুক্তি ও কল্যাণের সকল তথ্য সুস্পষ্টরূপে জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরেও যদি কেউ বিশ্বাস করেন যে, তিনি কোনো শিক্ষা গোপন রেখে গিয়েছেন, গোপনে কাউকে জানিয়ে গিয়েছেন অথবা ইসলামের যে শিক্ষা তিনি সবাইকে দান করেছেন তাতে অপূর্ণতা আছে, অথবা তার পরে কেউ ইসলামের পূর্ণতা দান করতে পারে, তাহলে তিনি (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) এই কথা বিশ্বাস করেন নি। বরং তিনি দাবি করেছেন যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন নি (নাউযুবিল্লাহ!)।
[2] সূরা (৪২) শূরা: ৪৮ আয়াত। আরো দেখুন: সূরা আল ইমরান: ২০; মাইদা: ৯২, ৯৯; রা’দ: ৪০; ইব্রাহীম: ৫২; নাহল: ৩৫, ৮২; নূর: ৫৪; আনকাবুত: ১৮; তাগাবূন: ১২।
[3] মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮৯০।
[4] সূরা (৫) মায়িদা: ৩ আয়াত।
[5] ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৪; ইবনু আবী আসিম, আস-সুন্নাহ ১/২৬।
[6] মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৪৭২।
[7] তাবারানী, আল-মু’জাম আল-কাবীর ২/১৫৫-১৫৬; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২৬৩; হাদীসটির সনদ সহীহ।