মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে রাসূল বলে বিশ্বাস করার অর্থ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, যা কিছু বলেছেন সবকিছুকে সন্দেহাতীত বলে সত্য বিশ্বাস করা। কুরআন কারীম ও হাদীস শরীফে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এ বিশ্বাসের যে সকল দিক শিক্ষা দিয়েছেন তা আমরা নিম্নের কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি:
(১) তাঁর নুবুওয়াতের বিশ্বাস। অর্থাৎ তিনি নুবুওয়াত পেয়েছেন, তাঁর নুবুওয়াত সর্বজনীন, তাঁর মাধ্যমে নুবুওয়াতের সমাপ্তি ঘটেছে, তিনি নুবুওয়াতের দায়িত্ব পরিপুর্ণ ভাবে আদায় করেছেন, তিনি নুবুওয়াতের দায়িত্ব হিসেবে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন সবই সন্দেহাতীতভাবে নির্ভুল।
(২) তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণে বিশ্বাস। অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য অপরিহার্য, তাঁর অনুসরণ মুক্তির পর্থ এবং তাঁর রীতির ব্যতিক্রম ঈমান বিধ্বংসী।
(৩) তাঁর মর্যাদা ও ভালবাসায় বিশ্বাস। অর্থাৎ তাঁর পরিপূর্ণ মর্যাদায় বিশ্বাস, মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁর শিক্ষার পূর্ণতায় বিশ্বাস, তাঁকে ভালবাসার অপরিহার্যতা এবং তাঁর কারণে তাঁর বংশধর, সাহাবীগণ এবং তাঁর আনুগত্যে-অনুসরণে অগ্রগামীদের ভালবাসা।
নিম্নে রিসালাতের বিশ্বাসের এ বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করব। মহান আল্লাহর তাওফীক প্রার্থনা করছি।
৩. ২. ১. তাঁর নুবুওয়াত ও রিসালাত
একজন মুসলিম সন্দেহাতীতরূপে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত নবী ও রাসূল। মানবজাতির মুক্তির পথের নির্দেশনা দিতে, তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল কল্যাণ শিক্ষা দিতে এবং অকল্যাণ থেকে সতর্ক করতে আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছেন। মানবজাতির মুক্তির পথ, কল্যাণ ও অকল্যাণের সকল বিষয় আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন এবং তা মানুষদেরকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তাঁকে দান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا
‘‘হে নবী, আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি, সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’[1]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ
‘‘হে রাসূল, তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা প্রচার কর। যদি তা না কর তবে তুমি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষদের থেকে রক্ষা করবেন।[2]
৩. ২. ২. তাঁর নুবওয়াতের সর্বজনীনতা
‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে একজন মুসলিমকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) বিশ্বের সকল দেশের সকল জাতির সব মানুষের জন্য আল্লাহর মনোনীত রাসূল। তাঁর আগমনের দ্বারা পূর্ববর্তী সকল ধর্ম রহিত হয়ে গিয়েছে। তাঁর রিসালাতে বিশ্বাস করা ছাড়া কোনো মানুষ মুক্তির দিশা পাবে না। আল্লাহ বলেছেন:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘‘আমি তো আপনাক সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদ প্রদানকারী ও ভয়প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রেরণ করেছি।’’[3]
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لا إِلَهَ إِلا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
‘‘বল: হে মানবজাতি, নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান; সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক রাসূল উম্মী নবীর প্রতি, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনেন এবং তোমরা তার অনুসরণ কর যাতে তোমরা পথ পাও।’’[4]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا
‘‘তিনিই মহিমাময় যিনি তাঁর বান্দার উপরে ফুরকান নাযিল করেছেন, যেন তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী হন।’’[5]
অন্যত্র ঘোষণা করা হয়েছে:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
‘‘নিশ্চয় আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য করুণা বা রহমত-স্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’[6]
আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ
‘‘ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে আমাকে নবীগণের (সকল নবীর) উপরে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে: (১) আমাকে ব্যাপক অর্থবোধক উচাঙ্গের ভাব ও ভাষাময় বাক্য প্রদান করা হয়েছে, (২) আমাকে ভীতি দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে, (৩) আমার জন্য যুদ্ধলব্ধ গনীমত বৈধ করা হয়েছে, (৪) পৃথিবীকে আমার জন্য পবিত্রার উপাদান ও মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, (৫) আমাকে সকল সৃষ্টির প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে এবং (৬) আমার দ্বারা নবীগণ সমাপ্ত হয়েছেন।[7]
অন্য হাদীসে জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنْ الأَنْبِيَاءِ قَبْلِي نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ وَجُعِلَتْ لِي الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا وَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاةُ فَلْيُصَلِّ وَأُحِلَّتْ لِي الْغَنَائِمُ وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ كَافَّةً وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ
‘‘আমাকে পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয় নি: (১) এক মাসের পথের দূরত্ব থেকে ভীতি দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, (২) আমার জন্য পৃথিবীকে মাসজিদ ও পবিত্রতার উপাদান করে দেওয়া হয়েছে, আমার উম্মাতের যে কোনো মানুষ যেখানেই তার সালাতের সময় উপস্থিত হবে সেখানেই সে সালাত আদায় করবে, (৩) আমার জন্য যুদ্ধলব্ধ গনীমতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে, (৪) পূর্ববর্তী নবীদেরকে পাঠানো হতো বিশেষভাবে তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের জন্য আর আমাকে পাঠানো হয়েছে সকল মানুষের জন্য এবং (৫) আমাকে শাফা‘আত প্রদান করা হয়েছে।[8]
কাজেই যদি কেউ বিশ্বাস করে যে মুহাম্মাদ (ﷺ) কোনো নির্দিষ্ট যুগের বা বিশেষ জাতির জন্য প্রেরিত নবী তবে তিনি ইসলামের গন্ডিতে প্রবেশ করতে পারবেন না, যদিও তিনি তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী বলে বিশ্বাস করেন। কারণ মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে রাসূল বলে বিশ্বাস করার অর্থ তার সকল কথা ও শিক্ষাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। তাঁর কিছু কথাকে অবিশ্বাস করার অর্থ তাঁকে অবিশ্বাস করা।
৩. ২. ৩. খাতমুন নুবুওয়াত বা নুবুওয়াতের সমাপ্তি
একজন মুসলিম আরো বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর মনোনীত সর্বশেষ নবী ও রাসূল, তাঁর পরে আর কোনো ওহী নাযিল হবে না এবং কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না। বস্ত্তত, কুরআন ও হাদীসের এ বিষয়ক কোনো ঘোষণা না থাকলেও কয়েকটি কারণে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে শেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করতে আমরা বাধ্য হতাম।
প্রথমত, সকল নবীই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তাঁর পরে অন্য নবী, রাসূল বা বার্তাবাহক আগমন করবেন, যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণী গ্রহণ করে মানুষদেরকে জানাবেন। পক্ষান্তরে মহান আল্লাহ কুরআন কারীমে বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাদীস শরীফে কখনো কোনোভাবে জানান নি যে, তাঁর পরে মানব জাতির মধ্যে কোনো নবী, রাসূল বা বার্তাবাহক আসবেন। এ বিষয়টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, তাঁর পরে কোনো নবী আসবে না।
দ্বিতীয়ত, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের দাওয়াত ছিল সাময়িক এবং নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য। এজন্য তাঁদের প্রতি প্রেরিত ওহী চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিত হতো না। কাজেই তাঁদের পরে নতুন নবীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দীনের সর্বজনীনতা ও পরিপূর্ণতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কুরআন ও হাদীসে বারংবার এবং তাঁর দীনকে পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কাজেই এরপর আর কোনো নতুন নবীর আগমন নিষ্প্রয়োজন।
কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ হয় নি। উপরন্তু কুরআন কারীমে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) শেষ নবী। অসংখ্য হাদীসে এ বিষয়ে বারংবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন:
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’’[9]
মুতাওয়াতির পর্যায়ে বর্ণিত অর্ধশতাধিক সহীহ হাদীসে খাতমুন নুবুওয়াত বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমে নুবুওয়াতের পরিসমাপ্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত হাদীসে আমরা দেখেছি যে, আবূ হুরাইরা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: ‘‘ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে আমাকে নবীগণের (সকল নবীর) উপরে মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে: ... (৬) আমার দ্বারা নবীগণ সমাপ্ত হয়েছেন।’’
অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمْ الأَنْبِيَاءُ كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبِيٌّ وَإِنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ فَيَكْثُرُونَ قَالُوا فَمَا تَأْمُرُنَا قَالَ: فُوا بِبَيْعَةِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ.
‘‘ইস্রায়েল সন্তানগণকে (বনী ইসরাঈলকে) শাসন করতেন নবীগণ। যখনই কোনো নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন অন্য একজন নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোনো নবী নেই, কিন্তু খলীফাগণ থাকবেন এবং তারা সংখ্যায় অনেক হবেন। উপস্থিত সাহাবীগণ বলেন: আপনি আমাদেরকে তাদের বিষয়ে কি নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন: ধারাবাহিকভাবে প্রথম ব্যক্তির পরে পরবর্তী ব্যক্তি এভাবে তাদের বাইয়াত বা আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবে এবং তাদেরকে তাদের প্রাপ্য (আনুগত্য) প্রদান করবে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের অধীনস্থ জনগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’’[10]
সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আলীকে (রা) বলেন:
أَنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي
‘‘মূসার সাথে হারূনের মর্যাদা যেরূপ ছিল আমার সাথে তোমার মর্যাদা সেরূপ, ব্যতিক্রম এই যে, আমার পরে কোনো নবী নেই।’’[11]
আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَثَلِي وَمَثَلُ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بُنْيَانًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ مِنْ زَوَايَاهُ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلا وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ
‘‘আমার ও আমার পূর্ববর্তী নবীদের উদাহরণ এক ব্যক্তির মত যিনি একটি খুবই সুন্দর ও মনোরম ইমারত তৈরী করেছে, কিন্তু ইমারতের এক দিকে একটি ইটের জায়গা খালি রেখেছেন। মানুষেরা আশ্চর্য হয়ে এই মনোরম ইমরতটির চারিদিকে ঘুরতে থাকে এবং বলতে থাকে: এ ইটটি যদি স্থাপন করা হতো! তিনি বলেন: আমিই এই সর্বশেষ ইট, আমিই সর্বশেষ নবী।’’[12]
অন্য হাদীসে জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
مَثَلِي وَمَثَلُ الأَنْبِيَاءِ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا فَأَتَمَّهَا وَأَكْمَلَهَا إِلا مَوْضِعَ لَبِنَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَدْخُلُونَهَا وَيَتَعَجَّبُونَ مِنْهَا وَيَقُولُونَ لَوْلا مَوْضِعُ اللَّبِنَةِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) فَأَنَا مَوْضِعُ اللَّبِنَةِ جِئْتُ فَخَتَمْتُ الأَنْبِيَاءَ
‘‘আমার ও অন্যান্য সকল নবীর উদাহরণ একজন ব্যক্তির ন্যায়, যিনি একটি বাড়ি তৈরি করেছেন এবং তাকে পূর্ণতা দান করেছেন, কিন্তু একটি ইটের স্থান অপূর্ণ রেখেছেন। মানুষেরা এ বাড়িতে প্রবেশ করতে লাগল এবং অবাক হতে লাগল। তারা বলতে লাগল, এই ইটের স্থানটি যদি অপূর্ণ না থাকত! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমিই সেই ইটের স্থান, আমি এসে নবীগণের সমাপ্তি টেনেছি।’’[13]
অন্য হাদীসে জুবাইর ইবনু মুতয়িম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ لِي أَسْمَاءً أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يَمْحُو اللَّهُ بِيَ الْكُفْرَ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِي يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى قَدَمَيَّ وَأَنَا الْعَاقِبُ الَّذِي لَيْسَ بَعْدَهُ أَحَدٌ (نَبِيٌّ)
‘‘আমার অনেক নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ, এবং আমি আহমদ, এবং আমি ‘মাহী’ (উচ্ছেদকারী), আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফ্র উচ্ছেদ করবেন, এবং আমি ‘হাশির’ (একত্রিতকারী), আমার পদদ্বয়ের নিকটেই মানুষেরা কিয়ামতের দিন একত্রিত হবে, এবং আমি ‘আকিব’ (সর্বশেষ), যার পরে আর কোনো নবী নেই।’’[14]
অন্য হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ الرِّسَالَةَ وَالنُّبُوَّةَ قَدْ انْقَطَعَتْ فَلا رَسُولَ بَعْدِي وَلا نَبِيَّ
‘‘রিসালাত বা রাসূলের পদ এবং নুবুওয়াত বা নবীর পদ শেষ হয়ে গিয়েছে, কাজেই আমার পরে কোনো রাসূল নেই এবং কোনো নবীও নেই।’’[15]
এভাবে বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অত্যন্ত পরিস্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল, তাঁর আগমনের সাথে সাথে নুবুওয়াত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না। তিনি একথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তাঁর পরে যদি কেউ নুবুওয়াতের দাবী করে তবে সে অবশ্যই একজন ঘোর মিথ্যাবাদী ভন্ড। বিভিন্ন হাদীসে তিনি তাঁর উম্মতকে ভন্ড নবীদের আবির্ভাবের সংবাদ দান করে তাদের থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদীসে জাবির ইবনু সামুরাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
إِنَّ بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ كَذَّابِينَ فَاحْذَرُوهُمْ
‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বেই অনেক ঘোর মিথ্যাবাদীর (ভন্ড নবীর) আবির্ভাব ঘঠবে। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে।’’[16]
গবেষকগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মাধ্যমে নুবুওয়াতের সমাপ্তির বিষয়ে ৩৭ জন সাহাবী থেকে সহীহ সনদে ৬৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।[17] এভাবে আমরা দেখছি যে, কুরআন কারীমের সুস্পষ্ট নির্দেশনার পাশাপাশি মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে বিষয়টি সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। বরং প্রকৃত বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নবুয়ত ও খাতমুন-নুবুওয়াত একইভাবে বর্ণিত ও প্রমাণিত। যারা তাঁর নুবুওয়াতের বিষয় বর্ণনা করেছেন তাঁরাই তাঁর খাতমুন নুবুওয়াতের বিষয়ও বর্ণনা করেছেন। সাহাবীগণ সর্বসম্মতভাবে নবুওয়তের দাবিদার এবং তাদের অনুসারীদেরকে ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য করেছেন।
যদি রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরে কেউ নিজেকে নবী বলে দাবি করে বা কেউ এরূপ দাবিদারের কথা সত্য বলে মনে করে তবে সে নিঃসন্দেহে ভন্ড ও মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বা এরূপ ভন্ডের অনুসারী। যদি কোনো মুসলিম নামধারী এরূপ দাবি করে বা এরূপ দাবিদারের কথা বিশ্বাস করে তবে সে ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য হবে।
উপরন্তু যদি কেউ বিশ্বাস করে যে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পরে কোনো নবী বা রাসূল এসেছেন, আসতে পারেন, আসার সম্ভাবনা আছে বা আসা অসম্ভব নয় তবে সে ব্যক্তিও অমুসলিম কাফির ও ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য হবে, যদিও সে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে একজন নবী ও রাসূল বলে মানে, অথবা তাঁকে শ্রেষ্ঠ নবী বলে মানে, অথবা তাঁর শরীয়তের বিধান মেনে চলে। এই ব্যক্তি মূলত ‘‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’-য় বিশ্বাস করে নি। কারণ কুরআনের মাধ্যমে এবং অগণিত মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত তাঁর দ্ব্যর্থহীন শিক্ষাকে অস্বীকার ও অমান্য করলে আর তাঁর নুবুওয়াতের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ থাকে না।
এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামের সোনালী দিনগুলিতে নুবুওয়াতের দাবি করে কেউ ইসলামের ক্ষতিসাধন করতে পারে নি। কারণ এ বিষয়ে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের সচেতনতা ছিল সুস্পষ্ট। কিন্তু গত কয়েক শতাব্দী যাবত অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষত ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে মুসলিমদের অজ্ঞতা এবং সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসকগণের কূটকৌশলের কারণে এ সকল ভন্ড মুসলিম সমাজের বিশেষ ক্ষতি সাধন করতে এবং অসংখ্য মুসলিমকে ধর্মচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছে। এ সকল ভন্ডের অন্যতম পাঞ্জাবের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ খৃ)।
এখানে উল্লেখ্য যে, গোলাম আহমদ ও তার মত ভন্ড নবীরা সরাসরি নুবুওয়াত দাবি করে নি; কারণ তাহলে কোনো মুসলিমই তার দাবি গ্রহণ করবে না। বরং তারা প্রথমে বেলায়াত, কাশফ, ইলহাম, ইলকা ইত্যাদি দাবি করে। এরপর তারা নিজেদেরকে মুজাদ্দিদ বলে দাবি করে। এগুলি সবই ইসলামী পরিভাষা ও ইসলাম স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু এগুলির অর্থ ও মর্ম না জানার কারণে অনেকেই এ সকল কথা দ্বারা বিভ্রান্ত হয়। এভাবে তারা যখন কিছু মানুষকে তাদের একান্ত ভক্ত হিসেবে পেয়ে যায়, তখন বিভিন্ন কৌশলে নুবুওয়াত দাবি করে। আর তার অনুসারী ভক্তরা বিভিন্ন অজুহাত ও ব্যাখ্যা দিয়ে তার দাবি মেনে নেয়।
এ সকল বিষয় বিস্তারিত আলোচনা আমাদের গ্রন্থের পরিসরে সম্ভব নয়। তবে সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, খাতমুন নুবুওয়াতের একটি দিক এই যে, ইসলামকে জানতে, বুঝতে, ব্যাখ্যা করতে বা বিধান দিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরে আর কোনো ‘ব্যক্তির’ কোনো ‘ইসমাত’ (অভ্রান্ততা), কাদাসাত (পবিত্রতা) বা বিশেষ পদমর্যাদা নেই।
ইসলামকে জানার জন্য কুরআন হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর আলিমগণ ইজতিহাদ করবেন, কিন্তু কোনো মুজতাহিদ দাবি করতে পারবেন না যে, তাঁর মতটি কোনোভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং সেটিই ইসলামের একমাত্র অভ্রান্ত ব্যাখ্যা, অথবা মহান আল্লাহ তাকে বিশেষ কোনো পদমর্যাদা প্রদান করেছেন। উম্মাতের মধ্যে আলিম-মুজতাহিদগণ থাকবেন। তাঁদের যোগ্যতা তাঁদের ইলম ও ইখলাসে, আল্লাহর বা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বাণী বা নির্দেশনা গ্রহণের মাধ্যমে নয়। কাজেই কোনো আলিম বা বুজুর্গ বলে পরিচিত ব্যক্তি যদি এরূপ কোনো ‘পদমর্যাদা’, ‘ইসমাত’ বা ‘অভ্রান্ততা’ দাবি করেন, বা নিজের মতটি সরাসরি আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের (ﷺ) নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং অন্যান্য আলিমদের মতামত এদিক থেকে অধিকতর মর্যাদাময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে দাবি করেন তবে তিনি ভন্ড প্রতারক মিথ্যাবাদী অথবা শয়তান কর্তৃক প্রতারিত।
ইসলামে কাশফ, ইলহাম, ইলকা ও সত্য স্বপ্ন রয়েছে। তবে এগুলি একান্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যক্তিগত সম্মান, কারামত ও নিয়ামত মাত্র। এগুলি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা অন্য কোনো মানুষের জন্য দীন বুঝার বা দীনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রমাণ বা ভিত্তি নয়। যদি কেউ নিজেকে এরূপ কাশফ, ইলকা বা ইলহাম-ধারী বলে দাবি করেন বা এই দাবির ভিত্তিতে নিজের মতটির নির্ভুলতা, অভ্রান্ততা (ইসমাত) বা বিশেষত্ব দাবি করেন তবে তিনিও ভন্ড, প্রতারক মিথ্যাবাদী অথবা শয়তান কর্তৃক প্রতারিত।
যুগে যুগে মুসলিম সমাজে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক আসবেন বলে আবূ দাউদ সংকলিত একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কেউ কখনোই নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করেন নি। আলিমদের কর্ম বিবেচনা করে সাধারণত তাঁদের মৃত্যুর অনেক পরে পরবর্তী যুগের আলিমগণ কাউকে কাউকে মুজাদ্দিদ বলে মনে করেছেন। এ-ই ‘মনে করা’ বা ধারণা করাও একান্তই ব্যক্তিগত ইজতিহাদ। কোন যুগে কে বা কারা মুজাদ্দিদ ছিলেন সে বিষয়ে আলিমদের অনেক মতভেদ রয়েছে।
গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পূর্বে কেউ কখনো নিজেকে মুজাদ্দিদ বলে দাবি করেন নি। যদি কেউ নিজেকে মুজাদ্দিদ বলে দাবি করে, অথবা তার অনুসারীগণ তার জীবদ্দশাতেই তাকে মুজাদ্দিদ বলে দাবি ও প্রচার করে আর তিনি তা সমর্থন করেন এবং তার এই ‘পদমর্যাদা’-র কারণে তার মতের বিশেষত্ব, অভ্রান্ততা বা পবিত্রতা দাবি করেন তবে তিনিও অনুরূপভাবে মিথ্যাবাদী ভন্ড প্রতারক বা শয়তান কর্তৃক প্রতারিত।
এগুলি সবই নুবুওয়াত দাবি করার বিভিন্ন পর্যায় ও পদক্ষেপ। এগুলির পরে কেউ যদি সরাসরি নুবুওয়াত দাবি করে তবে সে নিঃসন্দেহে প্রতারক ভন্ড ও ধর্মত্যাগী মুরতাদ কাফির।
[2] সূরা (৫) মায়িদা: ৬৭ আয়াত।
[3] সূরা (৩৪) সাবা: ২৮ আয়াত।
[4] সূরা (৭) আ’রাফ: ১৫৮ আয়াত।
[5] সূরা (২৫) ণফুরকান: ১ আয়াত।
[6] সূরা (২১) আনবিয়া: ১০৭ আয়াত।
[7] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩৭১।
[8] বুখারী, আস-সহীহ ১/১৬৮।
[9] সূরা (৩৩) আহযাব: ৪০ আয়াত।
[10] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৭৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৪৭১; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৯৫, ৮/১১০, ১০/৫৭৭।
[11] বুখারী, আস-সহীহ ২/৯৬০, ৩/১৩৫৭, ৪/১৫৫১; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৮৭০।
[12] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১৩০০; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৯০-১৭৯১; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৫৫৮।
[13] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১৩০০; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৯১।
[14] বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৯৯, ৪/১৫৯২, ১৮৫৮; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৮২৮।
[15] তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৫৩৩; আহমদ, আল-মুসনাদ ৩/২৬৭; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/৪৩৩। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।
[16] মুসলিম, আস-সহীহ ৩/১৪৫৪, ৪/২২৩৯।
[17] মুতয়িব ইবনু মুকবিল আশ-শাস্সান, খাতমুন নুবুওয়াত, পৃ. ২২-২৩।