নিঃসন্দেহে বিদআত সর্বাধিক ভয়ঙ্কর গুনাহ্। মানুষ যখন সদা-সর্বদা বিভিন্ন ধরণের গুনাহর কাজ করতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে এ গুনাহ্ তাকে ধ্বংস করে দেয়। ঐ সকল ধ্বংসকারী গুনাহর মধ্যে বিদআত হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, সমস্ত গুনাহর মধ্যে ইবলীসের নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় গুনাহ্ হচ্ছে বিদআত। কেননা বান্দা গুনাহ করলে তাওবা করে, কিন্তু বিদআতপন্থী বিদআতী আমল সাওয়াবের কাজ ভেবে সম্পাদন করে, ফলে তা থেকে তাওবা করে না।[1]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, বিদআতের গুনাহ থেকে তাওবা করা হয় না। এর অর্থ হচ্ছে- বিদআত সৃষ্টিকারী এমন কিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি প্রবর্তন করে যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে প্রবর্তিত নয়। শয়তান সে সব বিদআতী আমলগুলো আরো চাকচিক্যময় করে তার সামনে উপস্থাপন করে। তখন সে এগুলোকে সৎকাজ বিবেচনা করে। ফলে এ থেকে সে তাওবা করার প্রয়োজন মনে করে না। কেননা তাওবার প্রথম পর্যায় হলো, সে কৃত কাজগুলো মন্দ হিসেবে জানবে, যাতে সে তাওবা করতে পারে।
কিন্তু তার দৃষ্টিতে এ বিদআত কাজটি যেহেতু সৎকাজ হিসাবে পরিগণিত। তাই সে মনে করে, যদি সে এ কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে একটা সৎকাজ ছেড়ে দিল। এ ভাবে সে ঐ বিদআত কাজ ছাড়তেও পারে না এবং তা থেকে তাওবা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না।[2]
এরপর ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ হ্যাঁ, তাওবা তখন সম্ভব যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেন এবং তাওবা করার তাওফিক দান করেন। যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা অনেক কাফের, মুশরিক, মুনাফিক ও বিদআতের অনুসারীদের হেদায়াত দান করেছেন।[3]
তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি বলে, আল্লাহ্ তা‘আলা বিদআতপন্থীদের তাওবা কবুল করবেন না সে মারাত্মক ভুল করল।[4]
ইবনে তাইমিয়া রহ. বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না সংক্রান্ত হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। হাদীসটি হচ্ছেঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِنَّ اللهَ حَجَبَ التَّوْبَةَ عَنْ صَاحِبِ كُلَّ بِدْعَةٍ . (الطبراني)
অর্থঃ আল্লাহ কোন বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা গ্রহণ করবেন না।[5]
ইবনে তাইমিয়া রহ. কর্তৃক এ হাদীসের ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাকে লক্ষ্য করে বলেন, বান্দা যখন গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে, কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয় যে, সে অনুরূপ গুনাহে আর লিপ্ত হবে না এবং প্রাপকদের হক যথাযথ ভাবে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহর ওয়াদা হচ্ছে, তাওবার পর আল্লাহ্ তাকেও ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে মুশরিক, হত্যাকারী বা ব্যাভিচারী হয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
إِلاَّ مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللهً سَيئِاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا. (الفرقان: 70)
অর্থঃ কিন্তু যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে আল্লাহ তাদের যাবতীয় পাপ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ্ হলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।[6]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَإِنِّة لَغَفَّارٌ لِمَن تَابَ وَءَِامَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَى. (طه: 82)
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং এর উপর অবিচল থাকে।[7]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ يَاعِباِدِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَى أنفُسِهِمْ لاَ تَقْنًطُواْ مِن رَّحْمِةِ الله إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّـهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ. (الزمر: 53)
অর্থঃ বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর যুলুম বা অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল অসীম করুণাময়।[8]
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ
وَمَن يَعَمَلْ سُوءًا أَوْ يظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِراللهّ يَجِدِ اللهَ غَفٌورًا رَّحِيمًا. (النساء: 110)
অর্থঃ আর যে ব্যক্তি কোন মন্দ আমল করে অথবা নিজের উপর অবিচার করে। অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাহলে সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও করুণাময় হিসেবেই পাবে।[9]
এ তাওবা ব্যাপক, যা সকল নাস্তিক, কাফির, মুশরিক, বিদআত সৃষ্টিকারী এবং সকল গুনাহ্গারদের জন্য। যদি সে তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করে।
[2] মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯
[3] মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯
[4] মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া (র) : ১০/৯
[5] আল-মুজামুল আওসাত-তিবরানী (র) : ৪৭১৩
[6] ফুরকান : ৭০
[7] ত্বাহা : ৮২
[8] যুমার : ৫৩
[9] নিসা : ১১০