এ ধরণের বিদআত সমাজে অনেক। তন্মধ্যে-

(১) জোরে নিয়ত বলাঃ কোন মুসলিম বলল, নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া, নাওয়াইতু আন আসুমা, নাওয়াইতু আন আতা ওয়াদ্দিআ, নাওযায়তু আন আগতাসিলা ইত্যাদি মুখে বলে নিয়ত করা বিদআত। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  হতে এ ধরণের কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ

قُلْ أَتُعَلِّمُونَ اللهَ بِدِيْنِكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمَاوَات وَمَا فِى الأَرْضِ وَاللهُ بِكُلِّ شَيٍْء عَلِيمٌ .(الحجرات- 16)

অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ্কে অবহিত করতে চাও? অথচ আল্লাহ্ আসমান ও যমীনের যাবতীয় কিছু জানেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত।[1]

নিয়তের স্থান হল অন্তর। নিয়ত অন্তরের কাজ, মুখের কাজ নয়। হাফেয ইবনে রজব রহ. বলেন, নিয়ত হল অন্তরের ইচ্ছা। কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত মুখে বলা ওয়াজিব নয়।[2]

(২) ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত দুআ

জামাতে সালাত আদায়ের পর প্রত্যেকের জন্যই ব্যক্তিগতভাবে শরীয়ত সম্মত দুআ ও তাসবীহ পাঠ করা বৈধ। যেমন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের পর দুআ ও তাসবীহ পাঠ করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও এরূপ আমল করতেন। কেননা তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতকে যথাযথভাবে আমলে পরিণত করতেন। তাই জামাতে সালাত আদায়ের পর সম্মিলিতভাবে দুআ রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত পরিপন্থী।

(৩) মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফেরাত, মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করার পর কিংবা বিবাহের খোৎবার সময় সূরা ফাতিহা পাঠের জন্য লোকদের বলা।

এ সবই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই এবং সাহাবায়ে কেরামও এ ধরণের আমল করেননি। অথচ তারাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মাণ হল যে, এ ধরণের আমল নব আবিষ্কৃত ও বিদআত।

(৪) মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা

মৃত ব্যক্তির শোকে মাতম করা, চল্লিশা ইত্যাদি খাওয়ানো, হাফেজ সাহেবদের এনে কুলখানী করানো এ ধারণায় যে, তা মৃত ব্যক্তির শান্তনা যোগাবে এবং মৃত ব্যক্তির উপকারে আসবে।

(৫) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত তাসবীহ-তাহলীলের বাইরে বিভিন্ন সুফি বা পীরদের নানা ধরণের যিকির, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতের পরিপন্থী। সুন্নাতের সাথে এ বৈপরীত্য শব্দগত হোক, গঠনগত কিংবা সময় সাপেক্ষ হোক, সুন্নাতের পরিপন্থী কোন যিকিরই গ্রহণযোগ্য নয়।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  এর বাণী,

مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ. (مسلم)

অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন নেক আমল করল (সাওয়াবের নিয়তে) যা আমাদের পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।[3]

(৬) কবরের উপর মাজারের নামে ঘর তৈরী করা, কবরের পাশে মসজিদ তৈরী করে সেখানে সালাত আদায় করা, তাতে মৃতদের দাফন করা, প্রত্যহ সে কবর যিয়ারত করা, বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে সালাত আদায় করা, কবরে শায়ীত মৃত ব্যক্তির উসিলা দিয়ে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দুআ করা অথবা কবরের পাশে গিয়ে দুআ করা, কবরে লাইটিং বা আলোকসজ্জা করা এর প্রত্যেকটিই বিদআত এবং ঘৃণিত  ও অপছন্দনীয় কাজ।[4]

[1] হুজরাত: ১৬
[2] জামে‘উল উলুম ওয়াল হিকাম:১/৯২
[3] মুসলিম: ১৭১৮
[4] কিতাবুত তাওহীম- ডঃ সালেহ আলফাওজান: ৯৪