আলহামদুলিল্লাহ।
মৃত্যুর মুসিবত থেকে কেউ রক্ষা পাবে না। মৃত্যু আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। যেন আমরা নেক আমল করি, আমাদের আমলগুলোকে সুন্দর করি। যাতে করে আমরা উত্তম প্রতিদান পাই, আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে দুঃখে ভারাক্রান্ত হওয়া, কান্নাকাটি করা- জায়েয বিষয়; যদি এটি প্রকৃতিগত হয়ে থাকে; এর সাথে চিৎকার, চেচামেচি অথবা আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ না পায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাঁর ছেলে ইব্রাহিমের মৃত্যুতে কেঁদেছেন। তিনি বলেছেন: “চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে, মন ভারাক্রান্ত। তবে আমরা শুধু সেটাই উচ্চারণ করব যা আমাদের প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে। ইব্রাহিম! তোমার মৃত্যুতে আমরা দুঃখে ভারাক্রান্ত।”[সহিহ বুখারি (১২২০) ও সহিহ মুসলিম (৪২৭৯)]
তবে... এ কান্না ও দুঃখটা একটা সীমাবদ্ধ পর্যায়ে থাকা উচিৎ। যাতে করে ব্যক্তির দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ বিনষ্ট না হয়। কান্নাকাটি করতে করতে তার নিজের কাজকর্ম, দায়-দায়িত্ব ও আল্লাহর আনুগত্য পালনে ব্যাঘাত না ঘটে। বরঞ্চ তার কর্তব্য হবে ধৈর্য ধারণ করা ও কষ্ট হজম করা; যাতে করে সে ধৈর্যশীল হিসেবে সওয়াবের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তার গুনাহ মার্জনা হয় এবং মর্যাদা সমুন্নত হয়।
আপনার বান্ধবীর জন্য উপদেশ হচ্ছে- এ মুসিবত ভুলে থাকার জন্য সে যেন পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে, কুরআন তেলাওয়াত করে, জায়েয পর্যায়ের ক্রীড়া কৌতুক করে। আল্লাহর কাছে দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। একাকী ও নিভৃতে না থাকে। কারণ একাকী থাকলে শয়তান তার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হবে।
তার জানা উচিৎ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীকে মৃতব্যক্তির জন্য তিনদিনের অধিক সময় শোক প্রকাশ করতে বারণ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মৃত্যব্যক্তির জন্য তিনদিনের বেশি শোক করা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমানদার নারীর জন্য নাজায়েয। তবে নারী তার স্বামীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করবে।” [সহিহ বুখারি (১২৮০) ও সহিহ মুসলিম (১৪৮৬)]
অতএব, কারো মৃত্যুর কারণে কোন নারীর জন্য তিনদিনের বেশি সাজসজ্জা ত্যাগ করে বিষণ্ণ হয়ে কাটানো জায়েয নয়। তবে স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রী গোটা ইদ্দতকালীন সময় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে।
আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, তাকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দেন এবং তাকে তাঁর আনুগত্যের পথে কাজে লাগান।
আল্লাহই ভাল জানেন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
সম্মানিত বোন, আপনার জন্য আমাদের উপদেশ হচ্ছে- পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত মানুষের জন্য আল্লাহর দেয়া উপদেশ। যে উপদেশের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বস্তুতঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে – ‘তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় কর।’[সূরা নিসা, আয়াত: ১৩১]
আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে দুনিয়ায় কি ভাল কিছু পাওয়া যাবে! আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ ছাড়া কি সুখের কোন পথ আছে! কোন মুমিন কি আখেরাতকে ধ্বংস করে দুনিয়া পেতে চাইবে!আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারেরা, আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তি চিন্তা করে দেখুক আগামী দিনের জন্য সে কী (পূণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই পাপাচারী।” [সূরা হাশর, আয়াত: ১৮-২০]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছেলেকে যেমন দ্বীনদার মেয়ে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক তেমনি মেয়েকে ও মেয়ের পরিবারকে দ্বীনদার ছেলে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।” [সুনানে তিরমিজি (১০৮৪) আলবানী সহিহ সিলসিলা (১০২২) গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে হিযাব পরিধানে বাধা দেয় সে দ্বীনদার ও চরিত্রবানদের কাতারে পড়ে না; যা দেখে বিয়ে দিতে বলা হয়েছে। বরং প্রবল ধারনা হচ্ছে- যে লোক তার স্ত্রীকে হিযাব পরতে বাধা দেয় সে অন্য আরো অনেক কবিরা গুনাহ, হারাম ভক্ষণ, আল্লাহর বিধানাবলীর মর্যাদা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিথিলতা করবে।
এ ধরনের লোক তার স্ত্রী ও পরিবারকে কিভাবে হেফাযত করবে, কিংবা কিভাবে তার সন্তানসন্ততিকে আল্লাহর আনুগত্যের উপর লালন-পালন করবে অথচ সে নিজেই গুনাহ করে ও গুনার কাজের নির্দেশ দেয়।
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা (ফিকহী বিশ্বকোষ) গ্রন্থে (২৪/৬২) এসেছে-অভিভাবকের কর্তব্য হচ্ছে- তার অধীনস্থকে তাকওয়াবান ও দ্বীনদার পুরুষের কাছে বিয়ে দেয়া।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ‘আল-মুনতাকা’ গ্রন্থে (৪, প্রশ্ন নং ১৯৮) বলেন: বিয়ের ক্ষেত্রে সৎ ও দ্বীনদার পাত্র নির্বাচন করা কর্তব্য। যে পাত্র বিয়ের পবিত্রতা রক্ষা করবে ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন যাপন করবে। এ ক্ষেত্রে কোনরূপ ছাড় দেয়া জায়েয নয়। বর্তমানে এই স্পর্শকাতর বিষয়ে ব্যাপক অবহেলা দেখা যাচ্ছে। এখন লোকেরা এমন ছেলেদের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় অথবা তাদের আত্মীয়দের বিয়ে দেয় যে ছেলেরা আল্লাহকে ভয় করে না, পরকালকে পরোয়া করে না। নারীদের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্বামীর ব্যাপারে ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। নারীরা এ ধরনের স্বামীদের নিয়ে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বিয়ের আগে তারা যদি সৎ পাত্র তালাশ করত আল্লাহ তাদের জন্য এমন পাত্র পাওয়া সহজ করে দিতেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবহেলার কারণে, অথবা সৎ পাত্রের ব্যাপারে গুরুত্ব না দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটি ঘটছে। খারাপ লোক কোনদিন ভাল হয় না। তাই পাত্র নির্বাচনে অবহেলা করা জায়েয নয়। কারণ খারাপ লোক তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করবে। এমনকি স্ত্রীকে দ্বীনবিমুখ করে ফেলতে পারে। সন্তান-সন্ততির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সমাপ্ত।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) নুরুন আলাদ দারব ফতোয়া সংকলনে (বিবাহ/পাত্র নির্বাচন/প্রশ্ন নং-১৬) বলেন: মেয়ের অভিভাবকের উপর ফরজ হচ্ছে- প্রস্তাব দেয়া ছেলের দ্বীনদারি ও চারিত্রিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া। যদি ভাল তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দিবে। আর যদি বিরূপ তথ্য পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকবে। যদি আল্লাহ দেখেন যে, এই অভিভাবক শুধু দ্বীনদারি ও চারিত্রিক কারণে এই ছেলের কাছে বিয়ে দেয়নি তাহলে তিনি অচিরেই তার মেয়ের জন্য দ্বীনদার ও চরিত্রবান ছেলের ব্যবস্থা করে দিবেন। সমাপ্ত।
আমরা আপনার জন্য ভাল মনে করি যে, আপনি এই ছেলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করুন। আল্লাহ আপনার জন্য এর চেয়ে ভাল কোন পাত্রের ব্যবস্থা করে দিবেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আলহামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।
এক:
নিজের স্ত্রীকে ইসলামি শরিয়ত নির্ধারিত বৈশিষ্ট্যসম্বলিত একটি বাসস্থান প্রদান করা স্বামীর অপরিহার্য কর্তব্য। যে বাসস্থানের মধ্যে স্ত্রীর জীবন ধারণের জন্য অতি জরুরী সুবিধাগুলো থাকবে। এই আবাসস্থলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে- স্ত্রীর সাথে একই ঘরে স্বামীর পরিবারের কোন সদস্যকে না রাখা। এই বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন 7653 নং প্রশ্নের জবাবে।
দুই:
কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীর ওপর শর্তারোপ করে থাকে যে, স্ত্রীর সাথে স্বামীর পরিবারের কোন সদস্যকে থাকতে দিতে হবে এবং স্ত্রী যদি এই শর্তে রাজী হয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে আলাদা বাসা পাওয়ার অধিকার হতে বঞ্চিত হবে। আরোপকৃত শর্তটি মেনে যাওয়া স্ত্রীর ওপর শিরোধার্য হয়ে যাবে, স্ত্রীকে শর্তটি পূর্ণ করতে হবে।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: শর্ত বিষয়ক অধ্যায়ের মূলনীতি হলো- যে কোন শর্ত আরোপ করা জায়েয এবং শুদ্ধ। সেটা বিয়ের ক্ষেত্রে হোক, বেচাকেনার ক্ষেত্রে হোক, ভাড়ার ক্ষেত্রে হোক, বন্ধকের ক্ষেত্রে হোক, অথবা ওয়াকফের ক্ষেত্রে হোক। যে কোন প্রকার চুক্তির শর্তের বিধান হলো- শর্ত শুদ্ধ হলে সেটি পূর্ণ করা ওয়াজিব (অপরিহার্য)। সেটি বিয়ের চুক্তি হোক অথবা অন্য কোন চুক্তি হোক। যেহেতু চুক্তি সংক্রান্ত আল্লাহর বাণীটির বিধান সাধারণ- "হে ঈমানদারগণ, তোমরা তোমাদের চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর।"[সূরা মায়েদা, আয়াত- ১]। আর চুক্তি পূর্ণ করা মানে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত শর্ত ও বৈশিষ্ট্যসহ তা পূর্ণ করা। যেহেতু চুক্তির শর্তও চুক্তি হিসেবে গণ্য। [আল-শারহুল মুমতি' আলা যাদিল মুসতানকি', পৃষ্ঠা- ১২/১৬৪]
পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়- আপনার জন্য স্বামীর আরোপকৃত শর্ত পূরণ করা এবং আপনার স্বামীর মায়ের খালার মেয়েকে আপনার সাথে থাকতে দিয়ে সন্তুষ্ট থাকা অনিবার্য। যেহেতু আপনি বিয়ের পূর্বেই এ শর্ত সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছেন।
তিন:
নিম্নোক্ত কিছু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরোপকৃত এ শর্তটি বাতিল হতে পারে:
১. যদি শর্ত আরোপকারী অর্থাৎ আপনার স্বামী শর্তটি বাতিল করে দেন। তিনি যদি শর্তটি বাতিল করেন তাহলে যেন তিনি শর্তটি আরোপই করেননি। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: ইসলামী শরিয়ত যে শর্তগুলো আরোপ করেছে সে শর্তগুলো রহিত করার অধিকার কেউই রাখেন না। আর কোন ব্যক্তি নিজে যে শর্তগুলো আরোপ করেন তিনি সে শর্তগুলো রহিত করার অধিকার রাখেন।[আল-শারহুল মুমতি' আলা যাদিল মুসতানকি', পৃষ্ঠা- ৫/২৫]
২. আপনি যাকে আপনার সাথে একত্রে বসবাস করতে দিতে সম্মত হয়েছেন আপনি তার দ্বারা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সাব্যস্ত হয়। যেমন- অপ্রাপ্ত বয়স্ক আত্মীয় প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেল অথবা দুশ্চরিত্রবান কোন ব্যক্তি যে আপনার গোপন বিষয় খুঁজে বেড়ায় অথবা এমন কোন ব্যক্তি যে গালিগালাজ করে, হেয় প্রতিপন্ন করে, শারীরিকভাবে অথবা মানসিকভাবে আপনাকে কষ্ট দেয়।
যেহেতু আপনার স্বামী তার শর্তটি রহিত করেনি সুতরাং আপনার সামনে শুধু দ্বিতীয় পথটিই খোলা আছে। তবে আপনার অভিযোগটি সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সাব্যস্ত করতে হবে। যদি সাব্যস্ত করা যায় তাহলে আপনি এই মহিলাকে আপনাদের ঘর থেকে বের করে দিতে পারবেন অথবা আপনি অন্য কোন ঘরে আলাদাভাবে থাকতে পারবেন।
কুয়েত থেকে প্রকাশিত "আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়া (ফিকহী বিশ্বকোষ)" তে এসেছে- স্ত্রীর সাথে একই ঘরে পিতামাতা (বা অন্য কোন আত্মীয়) কে বসবাস করতে দেয়া জায়েয নয়। তাই স্বামীর কোন আত্মীয়ের সাথে একত্রে বসবাস করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। আলাদা বাসাতে থাকলে স্ত্রী তার ইজ্জত, সম্পদ ও অন্যান্য অধিকার উপভোগ করার পূর্ণ নিশ্চয়তা পেতে পারে। সুতরাং এ অধিকার পরিত্যাগে তাকে বাধ্য করার সাধ্য কারো নেই। এটি হানাফি, শাফেয়ি, হাম্বলি মাযহাবসহ জমহুর ফিকাহবিদগণের অভিমত।
আর স্বামী যদি স্ত্রীর ওপর এ শর্তারোপ করে থাকে যে, স্ত্রীকে স্বামীর পিতামাতার সাথে বসবাস করতে হবে এবং স্ত্রী এ শর্ত গ্রহণ করে তাদের সাথে বসবাস করা শুরু করে; কিন্তু পরবর্তীতে আলাদা বাসা দাবী করে তাহলে মালেকি মাযহাব মতে স্ত্রী আলাদা বাসা পাবে না। তবে এক অবস্থায় স্ত্রী আলাদা বাসা পেতে পারেন যদি তিনি সাব্যস্ত করতে পারেন যে, তাদের সাথে একত্রে বসবাস করে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এতক্ষণ যা আলোচিত হয়েছে তা মূল মাসয়ালার বর্ণনা ও আপনার মত পরিস্থিতির-শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে কি করণীয় তার উল্লেখমাত্র। কিন্তু আপনারদের মাঝে যে সমস্যা সেটা শুধু তাত্ত্বিক বক্তব্য দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। বরঞ্চ এ সমস্যার নিরসনকল্পে দুই পক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন। আপনার স্বামী যদি আপনার ও তার আত্মীয়ার মাঝে সৃষ্ট সংকট নিরসনে অপারগ হন এবং স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে না-পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ও তার আত্মীয়ার জন্য আলাদা আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা তার ওপর ওয়াজিব। তিনি যদি তা না-করেন তাহলে আপনাদের মাঝে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনের জন্য কোন মধ্যস্থতাকারীর শরণাপন্ন হন। যে মধ্যস্থতাকারী আপনার স্বামীকে নিজের ঘর সংরক্ষণের ব্যাপারে তার চেতনা ফিরাতে পারবে এবং এ কথা বুঝাতে পারবে যে, আপনার স্বামী আপনার জন্য অথবা তার আত্মীয়ার জন্য কাছাকাছি স্থানে আলাদা একটি বাসা ভাড়া নিতে পারেন। যাতে আপনার স্বামী তার বৃদ্ধ আত্মীয়ার দেখাশুনা করতে পারেন এবং তার ঘর ও পরিবারের হকও আদায় করতে পারেন। যদি আপনার স্বামী এতে সম্মতি না হন, তাহলে আপনি আদালতের বিচার প্রার্থী হতে পারেন। এটাই সমস্যা নিরসনের শেষ সমাধান।
আমরা দোয়া করছি আল্লাহ আপনাদের উভয় পক্ষের মাঝে সমঝোতা করে দিন এবং আপনাদের উভয় পক্ষকে সুমতি দিন। আল্লাহই ভাল জানেন।
আল্হামদু লিল্লাহ।
উদ্যমহীনতা সৃষ্টির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রতিকার জানার আগে নিরুদ্যম হয়ে পড়ার কারণগুলো জেনে নেয়া জরুরী। কারণগুলো জানা গেলে প্রতিরোধ করার উপায়ও জানা যাবে।
উদ্যমহীনতার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা, আনুগত্য ও ইবাদত পালনে অলসতা, দুর্বল আকাঙ্ক্ষার ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগ নিয়ে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে।
কোন মুসলিম উদ্যমহীনতার রোগে দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে-
১. স্বীয় প্রতিপালকের সাথে সম্পর্ক মজবুত করা। এটি অর্জিত হবে কুরআনে কারীম বুঝে বুঝে, চিন্তাভাবনার সাথে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে। আল্লাহর কিতাবের মাহাত্ম্য দিয়ে আল্লাহর মাহাত্ম্য অনুধাবন করার মাধ্যমে, আল্লাহ তাআলার মহান নাম ও গুণাবলী নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে।
২. পরিমাণে কম হলেও নিয়মিত ও বিরতিহীনভাবে নফল আমল আদায় করা। কোন মুসলিম উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- খুব আবেগপ্রবণ হয়ে প্রথম ধাপে অতি বেশি নেক আমল করা। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নয় এবং উম্মতের প্রতি তাঁর ওসিয়ত নয়। আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলকে বিশেষিত করতে গিয়ে বলেন: “তাঁর আমল ছিল নিয়মিত”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল- নিয়মিত আমল; যদিও সেটা পরিমাণে কম হোক না কেন”। অতএব, কোন মুসলিম যদি উদ্যমহীনতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায় তাহলে সে যেন নিয়মিতভাবে অল্প অল্প আমল করার চেষ্টা করে। অনিয়মিত বেশি আমলের চেয়ে নিয়মিত কম আমল ভাল।
৩. নেককার ও উদ্যমীদের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করা। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি আপনার মাঝেও উদ্যম সৃষ্টি করবে। অলস ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির সাহচর্যে থাকতে রাজি হয় না। অতএব, আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করুন। যাদের মধ্যে মুখস্থ করা, ইলম অর্জন করা, দাওয়াতি কাজ করা ইত্যাদি করার মত উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। এ ধরনের লোক আপনাকে ইবাদতের প্রতি, ভাল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
৪. জীবনে যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের জীবনীগ্রন্থ অধ্যয়ন করা। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে। এ ধরনের বইয়ের মধ্যে রয়েছে- উলুউল হিম্মাহ; লেখক: শাইখ মুহাম্মদ বিন ঈসমাইল আল-মুকাদ্দাম এবং সালাহুল উম্মাহ ফি উলুইল হিম্মাহ; লেখক: শাইখ সৈয়দ আফানি।
৫. আমরা আপনাকে দোয়া করার পরামর্শ দিচ্ছি; বিশেষতঃ শেষ রাতে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করতে পারার জন্য তাঁর রবের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে বিফল হয় না।
আমরা দোয়া করছি- আল্লাহ আপনাকে তাঁর সন্তোষজনক আমল করতে পারার তাওফিক দিন। আপনাকে উত্তম কথা, কাজ ও আচরণের তাওফিক দিন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
আলহামদুলিল্লাহ্ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।
এ কথা সত্য যে, সকল গুনাহ থেকে মুক্ত এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক মানুষের গুনাহ রয়েছে। যে গুণার বিষয়টা শুধু সে ব্যক্তি জানে এবং তার রবব জানে। এটাই বনী আদমের প্রকৃত অবস্থা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যে সত্ত্বার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ যদি তোমরা গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে এমন এক কওমকে নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করত, আবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। [সহীহ মুসলিম, ২৭৪৯]
কিন্তু এটাও সত্য যে, আল্লাহর বান্দাদের অবস্থা নারীদেরকে দ্বীন শিক্ষদানে নিয়োজিত এই তালেবে ইলমের মত নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে বলেনঃ ‘‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও, তিনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে তাদের উপর শয়তানের আগমন হওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই তাদেরকে শয়তান ক্রমাগত ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না’’। [সূরা আরাফ, ২০০-২০২] শাইখ ইবনে সাদী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কোন বান্দা গাফলতির দশা থেকে মুক্ত নয়। আর শয়তান বান্দার গাফলতির সুযোগ নেয়ার জন্য সীমান্ত প্রহরীর মত ওৎ পেতে বসে আছে। যখনই সে সুযোগ পায় আল্লাহর বান্দার উপর চড়াও হয়। তাই এখানে আল্লাহ তাআলা পথচ্যুত মুত্তাকীদের আলামত উলেখ করেছেন। যখন কোন মুত্তাকী বান্দার গুনাহর প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, তিনি শয়তানের প্ররোচনায় কোন হারাম কাজ করে ফেলে অথবা কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে ফেলেন সাথে সাথে তিনি পর্যালোচনা করে বের করেন কোন পথ দিয়ে শয়তান তাকে প্ররোচিত করেছে, তাঁর উপর আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা তিনি স্মরণ করেন এবং ঈমানের অপরিহার্য দাবী কি তা তিনি মনে করেন। তখনই তাঁর বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে এবং তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তওবায়ে নাসুহ এর মাধ্যমে গুনার ক্ষতি পুষিয়ে নেন। এবং অধিক পরিমাণে নেকের কাজ করেন। এভাবে চরমভাবে নিরাশ করে শয়তানকে প্রতিহত করেন। শয়তান যতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে তিনি এর চেয়ে বেশী পুষিয়ে নেন। পক্ষান্তরে শয়তানের ভাইয়েরা, শয়তানের বন্ধুরা যখন কোন গুনাতে লিপ্ত হয় তখন তারা একের পর এক গুনাতে লিপ্ত হতে থাকে, গুনাহ থেকে তারা নিরস্ত হয় না। শয়তান যখন দেখতে পায় তারা গুনার প্রতি আসক্ত, মন্দ কাজে তাদের উৎসাহের কমতি নেই তখন শয়তান তাদের পিছু ছাড়ে না। [তাফসীরে সাদী, পৃঃ ৩১৩]
এই তালেবে ইলেম কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত!! মুত্তাকীদের দ্বারা কোন গুনাহ ঘটলে তারা যা করে সেকি তা করেছে!! তার উচিৎ ছিল নিজেকে শুধরে নেয়া, তার বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হওয়া, নিজের অপরাধের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। সে তো মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষাদানে নিয়োজিত। মানুষ নিরাপদ ভেবে তাদের মেয়েদেরকে তার কাছে জ্ঞান শিখতে দিয়েছে এবং নারীরাও তার নিকট থেকে জ্ঞান শিখাকে নিরাপদ মনে করেছে। এরপর সে এ ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। রাখালের দায়িত্ব নেকড়ের হাত থেকে পশুপালকে রক্ষা করা। কিন্তু রাখাল নিজেই যদি নেকড়ের চরিত্রে আবির্ভূত হয় তাহলে কি ঘটবে!! তার উচিৎ ছিল নিজের দুর্বলতার রাস্তা চিহ্নিত করে ফিতনার গলিপথ চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। শয়তানের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া। তার উচিৎ ছিল পুরুষদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করা। পুরুষদেরকে দ্বীন শিক্ষাদানে রত হওয়া এবং নারীদেরকে শিক্ষাদানের দায়িত্ব অন্যদের জন্য ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সে তা না করে ফিতনার পথে এগিয়ে গেছে। অবৈধ সম্পর্ক ও অবৈধ যোগাযোগ অটুট রেখেছে- এগুলো সব গুনার কাজ। তার উচিৎ ছিল এগুলো পরিহার করা এবং এর মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া। অর্থাৎ নারীদেরকে শিক্ষাদান ও নারীদের সাথে যোগাযোগের রাস্তাটাই বন্ধ করে দেয়া- যেহেতু সে নারীর প্রতি দুর্বল। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘‘আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য নারীর ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা আমি রেখে যায়নি’’।[সহীহ বোখারী (৪৮০৮) ও সহীহ মুসলিম (৬৮৮১)]
এই তালেবে ইলমের উচিৎ ছিল ফিতনার ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। কোন রাস্তা দিয়ে সে ফিতনাগ্রস্ত হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু এই পথে চলতে থাকাটা তাকে আত্মপ্রবঞ্চিত করেছে। তার দ্বীনদারিকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন: যখন মুহাজিরগণ মদিনাতে আগমন করলেন তখন অবিবাহিত সাহাবীগণের জন্য আলাদা গৃহের ব্যবস্থা ছিল। বিবাহিত সাহাবীগণের বাসায় তারা থাকতেন না। এটি এজন্য অবিবাহিত সাহাবীগণ বিবাহিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে বসবাস করলে এতে ফিতনার আশংকা রয়েছে। আগুন ও কাঠকে একত্রে রাখা যেমন পুরুষ ও নারীর একত্রিত হওয়াও তেমন।[ইস্তিকামা, পৃঃ ১/৩৬১]
তার এ অবৈধ সম্পর্ক সম্পূর্ণ গোপনে বলে আপনি উলেখ করেছেন। অবৈধ সম্পর্ক তো গোপনে রাখা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। নাকি আপনি চান যে, সে তার প্রেমিকাকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাফিরা করবে। আপনি এই হাদিসটি শুনুন, আমাদের আশংকা হচ্ছে- না জানি সে এ হাদীসের হুমকির অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি জানি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে একদল তিহামা পাহাড়ের মত শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেসব নেক আমলকে লাপাত্তা করে দিবেন। সাওবান বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি আমাদেরকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন; যেন অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেনঃ তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই বংশধর। তারা তোমাদের মত তাহাজ্জুদগুজার। কিন্তু তারা নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়।[ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]
আমরা সন্দেহাতীতভাবে বলতে চাই- আপনার জন্য উপদেশ হলো যেহেতু আপনি এই অঘটনের কথা জেনেছেন সুতরাং তার শিক্ষাগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। আপনি তার ক্লাসের বদলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের নিকট থেকে ইলম অর্জন করতে পারেন। এমনকি সেটা ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও হতে পারে, ক্যাসেটের মাধ্যমেও হতে পারে, বইয়ের মাধ্যমেও হতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ; ইলম অর্জনের মাধ্যম প্রচুর। বরঞ্চ আপনার উচিৎ হবে আপনার বান্ধবীকে নসীহত করা সে যেন এই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে। পরবর্তীতে সে শিক্ষক যদি তাকে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে চায় তাহলে প্রকাশ্যে সে যেন প্রস্তাব দেয়। যেভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা প্রস্তাব দিয়ে থাকে। সে যেন বেদ্বীন লোকদের মত ডুবে ডুবে পানি না খায়। যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় নারীদেরকে শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সে শিক্ষককে কোন বার্তা পৌঁছানো যেমন এমন কোন ইঙ্গিত প্রদানের মাধ্যমে যে, তার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে যাতে সে এমন কাজ থেকে বিরত হয় এবং তার পাপের ভয়াবহতার ব্যাপারে সাবধান হয় তাহলে সেটা করাটা ভাল। কিন্তু এতে যেন খবরের ছড়াছড়ি না ঘটে এবং মানুষের কানাঘুষার ব্যাপার না ঘটে। কেননা কোন মুমিনের দোষ গোপন রাখা শরয়ী দায়িত্ব। বিশেষতঃ এ ধরনের খবর প্রচারের কুফল অনেক বেশী এবং দ্বীনদার লোকদের দুর্নামের কারণ।
সূরা নিসা ১৫৫-৬১ আয়াতে ইহুদীদের ইপর আল্লাহর গযব নাযিলের ও তাদের অভিশপ্ত হওয়ার যে কারণ সমূহ বর্ণিত হয়েছে, তা সংক্ষেপে নিম্নরূপ :
(১) তাদের ব্যাপক পাপাচার (২) আল্লাহর পথে বাধা দান (৩) সূদী লেনদেন (৪) অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ (৫) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা (৬) নবীগণকে হত্যা করা (৭) আল্লাহর পথে আগ্রহী না হওয়া এবং অজুহাত দেওয়া যে, আমাদের হৃদয় আচ্ছন্ন (৮) কুফরী করা (৯) মারিয়ামের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া (১০) ঈসাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যার মিথ্যা দাবী করা।
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।
কোন নারীর জন্য বেগানা পুরুষের সাথে সম্পর্ক গড়া নাজায়েয। কারণ এ সম্পর্ক গড়ার মধ্যে অনেক হারাম বিষয় সম্পৃক্ত। যেমন- দেখা সাক্ষাত, কথা শুনে ও কোমল কণ্ঠ শুনে মজা পাওয়া, তার কাছে মন পড়ে থাকা। আর এর বাইরে আরও যা কিছু ঘটতে পারে সেগুলো তো আরও জঘন্য ও মারাত্মক। এ ধরনের সম্পর্ক ইসলামে নিষিদ্ধ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে তৈরী হয়। যে মেলামেশা থেকে নেককার ব্যক্তিগণ উপর্যুপরি নিষেধ করে আসছেন এবং এর ভয়াবহতা বর্ণনা করে যাচ্ছেন।
আরও জানতে 84089 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।
আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি আপনাকে তওবা করার তাওফিক দিয়েছেন এবং এ পাপ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে এনেছেন।
আর যে ছবিগুলো আপনার কাছে আছে- যদি আপনার প্রবল ধারণ হয় যে, সে ছেলে আপনার সাথে কোন বাহানা করবে না; কালক্ষেপণ করবে না; যাতে আরেকটু সময় সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে আপনি তার কাছে ছবিগুলো চাইতে পারেন এবং তার ছবিগুলো তাকে দিয়ে দিতে পারেন।
আর যদি আপনি আশংকা করেন যে, আপনার এ চাওয়াটাকে সে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে আপনাকে হুকমি দিবে, আপনার সাথে টালবাহানা করবে কিংবা আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, সে ছবিগুলো দিবে না তাহলে তার কাছে ছবিগুলো চাওয়ার দরকার নেই। তার যে সব ছবি আপনার কাছে আছে সেগুলো আপনি নষ্ট করে ফেলুন। কারণ যা অবশিষ্ট রাখলে হারামের কথা স্মরণ হবে কিংবা যা আপনাকে হারামের দিকে ডাকবে তা রাখা নাজায়েয।
শয়তানের চক্রান্ত ও নানা রকম উপসর্গ সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। যাতে করে এই ছবিগুলো নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে তার সাথে কথা বলার আগ্রহ সৃষ্টি না হয়। যদি সে রকম কিছু হয় তাহলে ছবির বিষয়টি আপনি বেমালুম ভুলে যান। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন। তিনিই মুমিন বান্দাকে হেফাযতকারী।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে হেফাযত করেন; আপনাকে তাঁর আনুগত্যের উপর অবিচল রাখেন এবং চক্রান্তকারীর চক্রান্ত থেকে আপনাকে নিরাপদে করেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
প্রশ্নঃ যিনি বিদ্বেষন, বশীকরণ বা অন্য কোন যাদুটোনা দ্বারা আক্রান্ত তার চিকিৎসার উপায় কি? মুমিন ব্যক্তি যাদুটোনা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন অথবা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে যাদুটোনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কিত কোন দুআ-দরুদ বা যিকির-আযকার আছে কি?
আলহামদুলিল্লাহ।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
এক: যাদুকর কিভাবে যাদু করেছে সেটা আগে জানতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, যাদুকর কিছু চুল নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা চিরুনির মধ্যে অথবা অন্য কোন স্থানে রেখে দিয়েছে। যদি স্থানটি জানা যায় তাহলে সে জিনিসটি পুড়িয়ে ফেলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে যাদুর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যায়।
দুই: যদি যাদুকরকে শনাক্ত করা যায় তাহলে তাকে বাধ্য করতে হবে যেন সে যে যাদু করেছে সেটা নষ্ট করে ফেলে। তাকে বলা হবে: তুমি যে তদবির করেছ সেটা নষ্ট কর নতুবা তোমার গর্দান যাবে। সে যাদুর তদবিরটি ধ্বংস করে ফেলার পর মুসলিম শাসক তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন। কারণ বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, যাদুকরকে তওবার আহ্বান জানানো ছাড়া হত্যা করা হবে। যেমনটি করেছেন- উমর (রাঃ)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারির আঘাতে তার গর্দান ফেলে দেয়া।” যখন হাফসা (রাঃ) জানতে পারলেন যে, তাঁর এক বাঁদি যাদু করে তখন তাকে হত্যা করা হয়।
তিন: যাদু নষ্ট করার ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে: এর পদ্ধতি হচ্ছে- যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা কোন একটি পাত্রে আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আরাফ, সূরা ইউনুস, সূরা ত্বহা এর যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়বে। এগুলোর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে এবং রোগীর জন্য দোয়া করবে। বিশেষতঃ যে দুআটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে:
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”
(অর্থ- হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)
জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন সেটাও পড়া যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”
(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)
এই দোয়াটি তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়ে ফুঁ দিবেন। আমরা যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিতে হবে। এরপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। আলেমগণ এ আমলগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। শাইখ আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) ‘ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ’ গ্রন্থের ‘নাশরা অধ্যায়ে’ এ বিষয়গুলো ও আরো কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। চার: সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে পাতাগুলো গুড়া করবে। এরপর গুড়াগুলো পানিতে মিশিয়ে সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। তারপর সে পানি পানি করবে; আর কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে। যদি কোন পুরুষকে স্ত্রী-সহবাস থেকে অক্ষম করে রাখা হয় সেক্ষেত্রেও এ আমলটি উপকারী। সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। তারপর সে পানিতে উল্লেখিত আয়াত ও দোয়াগুলো পড়ে ফুঁ দিবে। এরপর সে পানি পান করবে ও কিছু পানি দিয়ে গোসল করবে।
যাদুগ্রস্ত রোগী ও স্ত্রী সহবাসে অক্ষম করে দেয়া ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য বরই পাতার পানিতে যে আয়াত ও দোয়াগুলো পড়তে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
১- সূরা ফাতিহা পড়া।
২- আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত পড়া।
اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَاۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
(আয়াতটির অর্থ হচ্ছে-“আল্লাহ্; তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা কিছু রয়েছে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে সে সবকিছু তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। তিনি সুউচ্চ সুমহান।)
৩- সূরা আরাফের যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সে আয়াতগুলো হচ্ছে-
قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)
(অর্থ- সে বলল, তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা পেশ কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিজের লাঠিখানা নিক্ষেপ করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা বান নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেল, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা যাদুর বলে বানিয়েছিল। এভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।)[সূরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২]
৪- সূরা ইউনুসের যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
(অর্থ- আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বললেন:নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বললেন, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়।)[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২]
৫- সূরা ত্বহা এর আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)
(অর্থ-তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললামঃ ভয় করোনা, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা তারা করেছে যা কিছু সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তাতো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবেনা।) [সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯]
৬- সূরা কাফিরুন পড়া।
৭- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩ বার করে পড়া।
৮- কিছু দোয়া দরুদ পড়া। যেমন-
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।” [৩ বার]
এর সাথে যদি এ দোয়াটিও পড়াও ভাল “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”[৩ বার] পূর্বোক্ত আয়াত ও দোয়াগুলো যদি সরাসরি যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে পড়ে তার মাথা ও বুকে ফুঁক দেয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাময় হবে।
প্রশ্নঃ এক লোক আমার বাসায় কাজ করে। আমার পিতা তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সে বদনজরে আক্রান্ত। তিনি তার জন্য একটি পাথর নিয়ে এসে বললেন: পাথরটি তোমার পকেটে রাখ; যাতে করে এটি তোমাকে বদনজর থেকে রক্ষা করে। কিছুদিন পর তার জন্য একটি কাগজ নিয়ে আসলেন সে কাগজে লেখা ছিল: ا, ب, ع, د (আরবী বর্ণ)। কাগজটির নীচে লেখা ছিল: الله الحامي (আল্লাহ্ই রক্ষাকারী)। আরও কিছু অবোধগম্য লেখা, নকশা ও আঁকিবুকি ছিল। আমরা এ কাগজটি থেকে মুক্ত হতে চাই। যেহেতু এটি শরিয়ত অনুমোদিত নয়। কিন্তু আমরা জানি না এর ক্ষতির শিকার না হয়ে কিভাবে এর থেকে মুক্ত হতে পারি। আমরা আপনাদের কাছ থেকে কিছু উপদেশ বাণী ও কল্যাণকর কথা আশা করি।
আলহামদু লিল্লাহ।
এক:
বদনজর লাগা সত্য; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়েছেন। এর থেকে বাঁচতে হবে শরিয়ত অনুমোদিত রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) এবং প্রাত্যহিক দোয়াদুরুদের মাধ্যমে; কবিরাজ ও যাদুকরেরা যে কবচ দেয় ও তাবিজ লেখে সেগুলো দিয়ে নয়। বদনজরের স্বরূপ ও বাঁচার উপায় জানতে দেখুন: 20954 নং ও 11359 নং প্রশ্নোত্তর।
দুই:
বদনযর কিংবা যাদু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাথর বা তাবিজ সাথে রাখা নিষিদ্ধ তাবিজ লটকানোর মধ্যে পড়বে। উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বাইআত করান। একজনকে বাইআত করাননি। তারা (সাহাবীরা) বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনি নয়জনকে বাইআত করিয়েছেন; একে করাননি কেন? তিনি বললেন: তার সাথে কবচ রয়েছে। তখন লোকটি হাত ঢুকিয়ে কবচটি ছিঁড়ে ফেলল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বাইআত করালেন। আর বললেন: যে ব্যক্তি কবচ লটকালো সে শির্ক করল।"[মুসনাদে আহমেদ (১৬৯৬৯), শাইখ আলবানী 'আস-সিলসিলাতুস সাহিহা' গ্রন্থে (৪৯২) হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন]
উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: "যে ব্যক্তি কবচ ঝুলাবে আল্লাহ্যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন। যে ব্যক্তি ودعة(পাথর) লটকাবে আল্লাহ্যেন তাকে স্বস্তিতে না রাখেন।"[ইমাম আহমাদ (১৭৪৪০); আরনাউত হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন]
ودعة: শব্দটি ودع শব্দের একবচনের রূপ। অর্থ- সমুদ্র থেকে সংগৃহীত পাথর যা বদনযরকে প্রতিহত করার জন্য তারা ঝুলাত।
খাত্তাবী (রহঃ) বলেন: "تَمِيْمَة (কবচ) সম্পর্কে বলা হয় এটি এক ধরণের পুঁতি যা তারা বিপদাপদকে প্রতিহত করার জন্য লটকাতো"।
বাগাভী বলেন: تَمَائِم শব্দটি تَمِيْمَة শব্দের বহুবচন। অর্থ- এক ধরণের পুঁতি যা বেদুইনরা তাদের সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিত; বদনযর থেকে বাঁচানোর বিশ্বাস থেকে; শরিয়ত সেটাকে বাতিল ঘোষণা করেছে"।[আত-তারিফাত আল-ইতিকাদিয়্যা (পৃষ্ঠা-১২১)]
আলেমগণের দুটো অভিমতের মধ্যে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে তাবিজ-কবচ লটকানো হারাম; এমনকি সেটা যদি কুরআন দিয়ে হয় তবুও। দেখুন: 10543 নং প্রশ্নোত্তর। আর পক্ষান্তরে, যে তাবিজে এমন বর্ণ ও অপরিচিত শব্দাবলী রয়েছে সে সব তাবিজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই। সেগুলো যাদু হওয়া বা জ্বিনকে ব্যবহার করা থেকে নিরাপদ নয়।
তিন:
কোন তাবীয-কবচ ও যাদুকর্ম পাওয়া গেলে সেটা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হল যদি এতে গিঁট থাকে তাহলে সেগুলো খুলে ফেলা। এর অংশগুলোর একটি থেকে অপরটিকে বিচ্ছিন্ন করা। এরপর পুড়িয়ে বা অন্য কোনভাবে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা। যেহেতু যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) এর হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, "এক ইহুদী লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসত এবং তিনি তাকে নিরাপদ মনে করতেন। সেই লোক তাঁকে যাদু করার জন্য সুতাতে গিঁট দিয়ে সেটা জনৈক আনসারী সাহাবীর কূপে রেখে দেয়। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুদিন অসুস্থ থাকেন। আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস অনুযায়ী: ছয়মাস। এরপর দুইজন ফেরেশতা তাঁকে দেখতে এল। তাদের একজন তাঁর মাথার কাছে বসল। অপরজন তাঁর পায়ের কাছে বসল। তাদের দুইজনের একজন বলল: তুমি কি জান তাঁর অসুখটা কী? সে বলল: অমুক লোকটি যে তাঁর কাছে আসত সেই লোক তাঁর জন্য সুতায় গিঁট মেরে (যাদু করে) অমুক আনসারীর কূপে ফেলে দিয়েছে। তিনি যদি সেই গিঁটের সুতাটি উঠানোর জন্য লোক পাঠান সে দেখতে পাবে যে, কূপের পানি হলুদ হয়ে গেছে। এরপর তাঁর কাছে জিব্রাইল (আঃ) আসলেন এবং সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল করলেন। তিনি বললেন: জনৈক ইহুদী লোক আপনাকে যাদু করেছে। ঐ যাদুকর্মটি অমুক লোকের কূপে আছে। বর্ণনাকারী বলেন: তখন তিনি আলী (রাঃ) কে পাঠালেন। তিনি গিয়ে দেখলেন কূপের পানি হলুদ হয়ে গেছে। তিনি সুতাটি উঠালেন এবং সেটি নিয়ে হাযির হলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে একটি করে আয়াত পড়ে গিঁটগুলো খোলার আদেশ দেন। তিনি আয়াত পড়ে পড়ে গিঁট খুলতে লাগলেন। যখনই কোন একটি গিঁট খোলা হত তখনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুটা হালকা বোধ করতেন। এভাবে তিনি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠেন।"[আলবানী 'সিলসিলাতুস সাহিহা' গ্রন্থে (৬/৬১৫) হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিকে হাকেম (৪/৪৬০), নাসাঈ (২/১৭২), আহমাদ (৪/৩৬৭) ও তাবারানীর হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেন।]
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: "যাদুকর (কবিরাজ) যে তদবির করেছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। উদাহরণতঃ যদি জানা যায় যে, সে কিছু চুল কোন এক স্থানে রেখেছে কিংবা চিরুনীতে রেখেছে কিংবা অন্য কোথাও রেখেছে; যদি জানা যায় যে, সে অমুক স্থানে রেখেছে তাহলে ঐ জিনিসটি সে স্থান থেকে সরিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে ও ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এর ফলে যাদুর ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে এবং যাদুকর যা করতে চেয়েছে সেটা ভণ্ডুল হয়ে যাবে।"মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতিস্ শাইখ বিন বায (৮/১৪৪)]
আপনার বাবার কাছে যে কাগজটি আছে সেটা মুক্ত হতে হবে ঐ কাগজটি ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে। এর সাথে আপনার বাবাকে তাবিজ ঝুলানো ও তাবিজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার গুনাহ থেকে তওবা করার উপদেশ দিতে হবে।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
প্রশ্ন: ঘরে সূরা বাক্বারা পাঠ করা এবং এ সূরার পঠন শয়তানকে তাড়ানো: সূরাটি উচ্চস্বরে পড়া কি আবশ্যকীয়? ক্যাসেট-প্লেয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে কি এ উদ্দেশ্য হাছিল হতে পারে? সূরাটি ভাগ ভাগ করে পড়লে কি যথেষ্ট হবে?
আলহামদু লিল্লাহ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সূরা বাক্বারার মহান ফযিলতের কথা জানিয়েছেন এবং এই সূরার মহান কিছু আয়াত যেমন- আয়াতুল কুরসি ও শেষ দুই আয়াত-এর ফযিলতের কথাও জানিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সূরার ফযিলত সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে যে ঘরে এ সূরাটি পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায় এবং যাদু থেকে সুরক্ষা ও যাদুর চিকিৎসায় এটি উপকারী।
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا تجعلوا بيوتكم مقابر إن الشيطان ينفِر من البيت الذي تقرأ فيه سورة البقرة
رواه مسلم 780
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।"[সহিহ মুসলিম (৭৮০)]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন:
জমহুর আলেম শব্দটিকে ينفِر এভাবে পড়েছেন। আর সহিহ মুসলিমের কোন কোন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন: يفرُّ। উভয়টি সহিহ।[শারহু মুসলিম (৬/৬৯)]
আবু উমামা আল-বাহেলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: "তোমরা সূরা বাক্বারা পড়। কেননা এর পাঠে বরকত রয়েছে এবং তা বর্জন করা আফসোসের কারন। আর বাতিলপন্থীরা এতে সক্ষম হয় না।“[সহিহ মুসলিম (৮০৪)]
বাতিলপন্থীরা হচ্ছে: যাদুকরগণ।
এটি উচ্চস্বরে পড়া শর্ত নয়। বরং ঘরে পড়া বা তেলাওয়াত করাই যথেষ্ট; এমনকি সেটা নিম্নস্বরে হলেও। অনুরূপভাবে একবারে পড়া শর্ত নয়। বরং ধাপে ধাপে পড়া যেতে পারে। অনুরূপভাবে তেলাওয়াতকারী একজন হওয়া শর্ত নয়। বরং ঘরবাসী নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়া জায়েয। যদিও এক ব্যক্তির একবারে পড়াটা উত্তম।
রেডিও বা ক্যাসেট থেকে বেরিয়ে আসা ধ্বনিকে পড়া হিসেবে গণ্য করা জায়েয নয়। বরং অবশ্যই ঘরবাসীদের নিজেদেরকে পড়তে হবে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত একটি হাদিস আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি সূরা "বাক্বারা" পড়ে তার ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না। কিন্তু সূরাটি যদি ক্যাসেটে রেকর্ড করে রাখা হয় তাহলে কি একই বিষয় হাছিল হবে?
জবাবে তিনি বলেন:
না, না। ক্যাসেটের শব্দ কিছুই না। এটি কোন উপকার দিবে না। কেননা ক্যাসেট বাজিয়ে এ কথা বলা যায় না যে, "সে কুরআন পড়েছে"। বলা যায়: "সে পূর্বে তেলাওয়াতকৃত ক্বারীর কণ্ঠস্বর শুনেছে"। তাই আমরা যদি কোন এক মুয়াজ্জিনের আযান রেকর্ড করে রাখি এবং যখন ওয়াক্ত হয় তখন সেটাকে মাইক্রোফোনে চালু করে এটাকে আযান হিসেবে গ্রহণ করি— এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে আমরা যদি একটি হৃদয়াগ্রহী খোতবা রেকর্ড করে রাখি। এরপর যখন জুমার দিন আসবে তখন আমরা মাইক্রোফোনের সামনে ক্যাসেট-প্লেয়ারে এ রেকর্ডটি চালু করি। ক্যাসেট প্লেয়ার বলল: "আস্সালামু আলাইকুম"। এরপর মুয়াজ্জিন আযান দিল। তারপর ক্যাসেট-প্লেয়ার খোতবা দিল। এটা কি জায়েয হবে? জায়েয হবে না। কেন? কেননা এটি পূর্ববর্তী একটি কণ্ঠস্বরের রেকর্ড। যেমনিভাবে আপনি যদি কোন একটি কাগজে লিখেন কিংবা ঘরে একটি মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) রাখেন পড়ার বদলে সেটা কি যথেষ্ট হবে? না; যথেষ্ট হবে না।[আসয়িলাতুল বাব আল-মাফতুহ (প্রশ্ন নং-৯৮৬)]
কিন্তু ঘরের লোকদের মধ্যে সূরা বাক্বারা পড়তে পারার মত কেউ যদি না থাকে এবং ঐ ঘরে এসে পড়ে দিবে এমন কেউ যদি না থাকে; সেক্ষেত্রে তারা যদি ক্যাসেট-প্লেয়ার ব্যবহার করে ইনশাআল্লাহ্ অগ্রগণ্য মত হচ্ছে— এতে করে তারা এ ফযিলত তথা 'ঘর থেকে শয়তানের পলায়ন করা'র ফযিলত হাছিল করবে। বিশেষতঃ ঘরবাসীর মধ্যে কেউ যদি ক্যাসেট-প্লেয়ারের এ পড়াটা শুনে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে এ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যা ইমাম মুসলিম তাঁর সহিহ গ্রন্থে সংকলন করেছেন: "তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাক্বারা পড়া হয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে"। আমার প্রশ্ন হচ্ছে: যদি কেউ একটা ক্যাসেট-প্লেয়ারে সূরা বাক্বারার রেকর্ডকৃত ক্যাসেট বাজায় এবং সম্পূর্ণ সূরাটি পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ক্যাসেট চালু রাখে? নাকি অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে পড়তে হবে কিংবা তার পক্ষ থেকে অন্য কাউকে সূরাটি পড়তে হবে?
জবাবে তিনি বলেন:
যে অভিমতটি অগ্রগণ্য (আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ) গোটা সূরাটি রেডিওতে কিংবা ঘরের মালিকের নিজে পড়ার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'শয়তান পালিয়ে যাওয়া'র যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সেটা হাছিল হবে। কিন্তু শয়তান পালিয়ে গেলেও পড়া শেষ হলে আবার না-ফেরা অনিবার্য নয়। যেমনটি শয়তান আযান ও ইকামত শুনে পালিয়ে যায়; এরপর সে ফিরে এসে ব্যক্তি ও তার অন্তরের মাঝে আড়াল তৈরী করে এবং বলে: এটা এটা স্মরণ কর। যেমনটি এ মর্মে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাই মুমিন ব্যক্তির জন্য শরিয়তের বিধান হল তিনি সর্বদা আল্লাহ্র কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইবেন, শয়তানের ষড়যন্ত্র, কুমন্ত্রণা ও যে পাপের দিকে শয়তান ডাকে— এসব ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।
আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।[সমাপ্ত]
[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (২৪/৪১৩)]
দেখুন: 132431 নং প্রশ্নোত্তর।