সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
‘যুহুদ’ মানে এই নয় যে- তালি দেয়া কাপড় পরা, মানুষকে এড়িয়ে চলা, সমাজ থেকে দূরে থাকা, প্রতিদিন রোজা রাখা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন- যুহুদ অবলম্বনকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। কিন্তু তিনি নতুন কাপড় পরতেন। কোন প্রতিনিধি দল আসলে সেজন্য পরিপাটি হতেন। জুমার দিন ও ঈদের দিনে নিজেকে পরিপাটি করতেন। মানুষের সাথে মিশতেন। মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করতেন, দ্বীনি বিষয়াদি শিক্ষা দিতেন। তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে প্রতিদিন রোজা রাখা থেকে বারণ করতেন। বরঞ্চ ‘যুহুদ’ মানে হচ্ছে- হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করেন সেটা থেকেও বেঁচে থাকা। বিলাসিতা প্রকাশ ও অতিমাত্রায় দুনিয়া উপভোগ থেকে দূরে থাকা। পরকালের জন্য উত্তম সম্বল গ্রহণ করা। যুহুদের সবচেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীতে।
আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমাদের নবী মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি
সদস্য- শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায
সদস্য- শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি
সদস্য- আব্দুল্লাহ গাদয়ান
সদস্য- শাইখ আব্দুল্লাহ বিন কুয়ুদ
ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুছ ওয়াল ইফতা (ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র) ২৪/৩৬৯।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক:
এই নারীকে চুম্বন ও স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনি নিকৃষ্টতম গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়েছেন। আপনার অনুতপ্ত হয়ে এ গুনাহ থেকে তওবা করা এবং এর থেকে ফিরে আসার অটল সিদ্ধান্ত নেয়া অনিবার্য। এছাড়া এই ধরনের ফিতনাতে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয় উপায় উপকরণ হতে দূরে থাকাও আপনার কর্তব্য। যেমন, বেগানা নারীর সাথে মেলামেশা, নির্জনবাস, হারাম দৃষ্টি ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আপনাকে ব্যভিচারের কবিরা গুনাহ হতে বাঁচিয়েছেন; যে গুনাহকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছেন। যদি এই গুনাহকারী বিবাহিত হয় তাহলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন, যিনাকারীদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হয় এবং তিনি আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন সে শাস্তি কতই না মর্মন্তুদ। দেখুন প্রশ্নোত্তর নং (8829)।
আল্লাহর সীমারেখাগুলো লঙ্ঘনে এ মহিলার কত বড় স্পর্ধা!! নিজেই হারামের প্রতি আহ্বান জানায়, অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় এবং কোন ভয়ভীতি ছাড়া পাপকাজে মেতে উঠে। অপরদিকে আপনার উপর আল্লাহ তাআলার কত বড় অনুগ্রহ এই চরম মুহূর্তে এসে আপনি নিজেকে সংবরণ করতে পেরেছেন এবং ঈমানের শেষ জ্যোতিটুকু আপনার অন্তরে জ্বলে উঠেছে এবং আপনি এই মহা অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছেন।
দুই:
যে ব্যভিচারের শাস্তির কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি সে ব্যভিচার হচ্ছে একটি যৌনাঙ্গ অপর একটি যৌনাঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সংঘটিত ব্যভিচার। এই কর্মের পূর্বে যা কিছু ঘটে থাকে যেমন, স্পর্শকরণ, চুম্বনকরণ, যৌনাঙ্গে অঙ্গুলি প্রবেশ করানো ইত্যাদি অতি গর্হিত ও মারাত্মক গুনাহ। কিন্তু এগুলোর জন্য ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া হবে না; বরং শিক্ষামূলক শাস্তি দেয়া হবে। তবে ইসলামি শরিয়তে এ ধরনের গুনাহগুলোকে ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমনটি এসেছে সহিহ বুখারি (৬২৪৩) ও সহিহ মুসলিম (২৬৫৭) এর হাদিসে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ বনি আদমের উপর যতটুকু যিনা লিখে রেখেছেন সে তা করবেই; এর থেকে কোন নিস্তার নেই। চোখের যিনা হচ্ছে- দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”
ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: “দৃষ্টি ও কথাকে যিনা বলা হয়েছে যেহেতু এগুলো প্রকৃত যিনার আহ্বায়ক। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” ফাতহুল বারি হতে সংকলিত।
সুতরাং আপনি অনতিবিলম্বে তওবা করুন। এই মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। এই মহিলা আপনাকে ঈমান হারা করতে পারে, আপনার পুতঃপবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপন করতে পারে এবং আপনাকে ফাসেক ও পাপাচারীদের কাতারে নিয়ে শামিল করতে পারে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। শয়তানের সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আপনি সাবধান হোন। বেগানা নারীর দিকে চোখ তুলে তাকানোর মাধ্যমে গুনাহর সূচনা হয় এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে শেষ হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে পবিত্র রাখুন।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
সে ব্যক্তি গুনাহগার হবে। তার উপর শিক্ষামূলক শাস্তি কার্যকর করা হবে এবং তাকে তওবা করতে হবে।
আল্লাহই ভাল জানেন।
ইমাম নববীর ফতোয়া সংকলন, পৃষ্ঠা- ২২৪
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই”। আল্লাহ তাদের ব্যাপারে আরো বলেছেন: “তারা কাফেরদের ব্যাপারে বজ্রকঠোর, পরস্পরের মাঝে অতিশয় দয়ালু”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এক মুমিন আরেক মুমিনের নিকট মাথা যেমন দেহের নিকট। ঈমানদারের দুঃখ কষ্টে মুমিন দুঃখ কষ্ট অনুভব করে যেভাবে মাথায় ব্যথার কারণে গোটা দেহ ব্যথাতুর হয়ে পড়ে।” [মুসনাদে আহমাদ] এক মুমিনের প্রতি অপর মুমিনের সমবেদনার প্রকারগুলো ইবনুল কাইয়্যেম খুব সুন্দরভাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন: মুমিনের প্রতি সমবেদনা জানানো কয়েকভাবে হতে পারে। সম্পদ দিয়ে সমবেদনা। প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে সমবেদনা। শারীরিক ও কায়িক শ্রম দিয়ে সমবেদনা। উপদেশ ও সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সমবেদনা। তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করার মাধ্যমে সমবেদনা। তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার মাধ্যমে সমবেদনা। ব্যক্তির ঈমানের সবলতা ও দুর্বলতার ভিত্তিতে এ সমবেদনার তারতম্য ঘটে। ব্যক্তির ঈমান সবল হলে সমবেদনা তীব্র হয়। ঈমান দুর্বল হলে সমবেদনাও দুর্বল হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদের প্রতি উল্লেখিত সকল প্রকার সমবেদনার মাধ্যমে সবচেয়ে উত্তম সমব্যথী ছিলেন।[আল-ফাওয়ায়েদ, ১/১৭১]
খলিল ইবনে আহমাদ একবার তাঁর এক বন্ধুর সাথে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে তার বন্ধুর জুতাটি ছিড়ে গেল। তখন তাঁর বন্ধু ছেঁড়া জুতাটি হাতে নিয়ে খালি পায়ে হাঁটতে লাগলেন। তা দেখে খলিলও তাঁর জুতাজোড়া খুলে হাতে নিলেন এবং খালি পায়ে হেঁটে চললেন। তখন তাঁর বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি জুতা খুললে কেন? খলিল বললেন: তুমি খালি পায়ে হাঁটছ তাই তোমার প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
ইসলামী আদব হচ্ছে কোন মুসলিম তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পূর্বে নিম্নোক্ত বাক্যটি পড়বে, “বিসমিল্লাহ্। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা” (আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান) [সহিহ বুখারী, ফাতহুল বারি হাদিস নং ১৩৮]
এই দোয়াটি পড়ার উপকার হচ্ছে- যদি এই সহবাসের মাধ্যমে আল্লাহ কোন সন্তান দান করেন তাহলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
আর বাসর রাতে বর কনেকে কি বলবে সেটা ইতিপূর্বে (854) নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
যে ব্যক্তি জীবনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে তার তওবা শুদ্ধ হবে। তার এ নিরাশার কারণ কোন রোগ হোক যেমন- ক্যান্সার। অথবা হত্যার শাস্তি তথা শিরোচ্ছেদের মুখোমুখি হওয়া এবং জল্লাদ তলোয়ার নিয়ে তার মাথার উপরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হোক। অথবা বিবাহিত ব্যক্তির ব্যভিচারের শাস্তি তথা ‘পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড’ কার্যকর করার জন্য পাথর স্তূপ করার কারণে হোক। এদের সবার তওবা শুদ্ধ হবে। কেননা মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।”[সূরা নিসা, আয়াত ১৭]। “অনতিবিলম্বে তওবা করে” এ কথার অর্থ হলো- মৃত্যুর আগে তওবা করে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর এমন লোকদের জন্য তওবা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছি।” [সূরা নিসা, আয়াত ১৮]
কিন্তু তওবার পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এ শর্তগুলো পূর্ণ করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে- ইখলাস (অকপটতা), কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, অনতিবিলম্বে পাপ ছেড়ে দেওয়া, ভবিষ্যতে পুনরায় গুনাহ না-করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা। অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।
শাইখ উছাইমীনের “লিকাউল বাব আল-মাফতুহ” ৫৩/৭৩
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রকৃত ইসলাম মানে ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- নামায। যেহেতু নামায হচ্ছে- ইসলাম ধর্মের ভিত্তিমূল। কেয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নামায হচ্ছে- ঈমানদার ও কাফেরের মাঝে পার্থক্যকারী অঙ্গীকার। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে সে কাফের। তাই আপনার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে- যথাসময়ে নামায আদায় করা এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা না-করা।
এরপর শরিয়তের অন্যসব বিধিবিধান পালন করাও আপনার কর্তব্য। যেমন- হিজাব। যেসব উপায় উপকরণ গ্রহণ করলে ইসলামি বিধিবিধান পালন করা সহজ হয় তার মধ্যে রয়েছে- কুরআন তেলাওয়াত করা, নবীর সিরাত পড়া, নেককারদের জীবনী ও তাদের বিভিন্ন ঘটনা পড়া এবং আমরা আপনাকে কিছু মুসলিম সৎ বান্ধবী নির্বাচন করার উপদেশ দিচ্ছি। সৎসর্গের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি ইসলামের উপর অবিচল থাকতে পারবেন।
প্রিয় বোন, আপনার উচিৎ হবে- আত্মসমালোচনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।”[সূরা হাশর, ৫৯:১৮] এই আয়াতে দুই দুই বার আল্লাহকে ভয় করার (তাকওয়ার) নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এ দুই নির্দেশের মাঝে আত্মসমালোচনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভেবে দেখুন, আগামীকালের জন্য আপনি কি কি ভালকাজ করেছেন এবং কি কি মন্দকাজ পরিহার করেছেন। এই আত্মসমালোচনা নিজেকে পরিবর্তন করার সবচেয় বড় উপায়। কেয়ামতের দিন বড় কঠিন, অতি দীর্ঘ, চরম ভীতিপ্রদ, সেই দিন চেহারাগুলো ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। সুতরাং ভেবে দেখুন আপনি সেই দিনের জন্য কী কী নেক আমল প্রস্তুত করতে পেরেছেন। বেশী বেশী নেক আমল করুন। নিয়্যতকে একনিষ্ঠ করুন। সব ধরনের পাপাকার্য ছেড়ে দিন। পাপ কামাই হচ্ছে- সেদিনের সবচেয়ে মন্দ প্রস্তুতি। আপনি আপনার সবচেয়ে ভাল আমল নিয়ে আখেরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার চেষ্টা করুন। আল্লাহর নিকট দোয়া করতে ভুলে যাবেন না। যেন আল্লাহ আপনাকে সরল পথের হেদায়েত দেন এবং এর উপর আপনাকে অবিচল রাখেন।
আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য ও আপনার জন্য তাওফিক প্রার্থনা করছি, হেদায়েত ও ভাল মৃত্যুর দোয়া করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদআলহামদুলিল্লাহ
এক:
আপনাকে ঐ নারীর সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। আপনি যে গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়েছেন এর কারণ হচ্ছে- নারীদের সাথে সম্পর্ক করা ও তাদের সাথে একাকী অবস্থান করার ব্যাপারে আপনি শিথিলতা করেছেন। এ ধরনের পাপ আল্লাহর আযাব ও শাস্তিকে অবধারিত করে দেয়। আরও জানতে 1114 ও 9465 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।
দুই:
সে নারীর সাথে এবং অন্য কোন নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলে স্থায়ীভাবে সে সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা এ ধরনের অধিকাংশ সম্পর্কের শেষ পরিণতি হলো যিনা-ব্যভিচার অথবা অবৈধ ভোগ-উপভোগ। নাউজুবিল্লাহ। আপনার কথামতো যদিও শুরুতে সম্পর্কটা ছিল নিষ্কলুষ। তবে শয়তান মানুষের মাঝে রক্তের মতোই বিচরণ করে। আর জেনে রাখুন, বেগানা নারীর সাথে সম্পর্ককে কখনো নিষ্পাপ বলা যায় না।
এখন আপনার উচিৎ হলো- অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা; উত্তম তওবা। তওবা করার পদ্ধতি হল- যা ঘটে গেছে সে ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া। এই সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে ছিন্ন করা। অন্যকোনো হারাম সম্পর্ক কায়েম না করার ব্যাপারে অকপট প্রত্যয় গ্রহণ করা। এই খারাপ মহিলাটি আপনাকে ধাঁধায় ফেলে কনভিন্স করতে চাচ্ছে আপনি তার সাথে খারাপ কাজ করেছেন; যাতে করে ভবিষ্যতে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য সে এটাকে ছুতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যদি এ মহিলার দাবি অনুযায়ী তার সাথে খারাপ কাজ করেও থাকেন তাহলেও যেন শয়তান এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং আল্লাহর রহমত থেকে আপনাকে নিরাশ না করে দেয়। অন্যথায় শয়তান আপনাকে কুপথে টেনে নিয়ে যাবে এবং খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে তুচ্ছ জ্ঞান করাবে। বারবার এ-কাজে লিপ্ত করাবে এবং একপর্যায়ে সে তওবা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে প্রবোধ দিবে। শয়তান এ ধরনের অনুভূতি আপনার মধ্যে বদ্ধপরিকর করতে চায়। তবে আল্লাহর রহমত সুপরিসর। তাই আপনি দ্রুত তওবা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আয-যুমার:৫৩] যে ব্যক্তি সত্য ও খালেস তওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে জীবনকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসব করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করে নেয়, ঈমান গ্রহণ করে এবং সৎকর্ম করে সে ছাড়া। আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আল-ফুরকান: ৮৬-৭০]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি একজন বেগানা নারীকে চুম্বন করে ফেলেছিল। এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি তাঁর কাছে বর্ণনা করল। সে প্রেক্ষিতে কুরআনের এ আয়াতগুলো নাযিল হল: “আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে, নিশ্চয় ভালোকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।”[সূরা হুদ:১১৪] লোকটি বলন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে কেউ এ অনুযায়ী আমল করবে তাদের সবার জন্য। (অন্য এক বর্ণনায়) তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বেগানা নারীর সাথে ফাহেশা ছাড়া অর্থাৎ যৌনাঙ্গে যিনা করা ছাড়া আর সব কিছু করল।”[সহিহ মুসলিম, আত-তাওবা (৪৯৬৪)]
আপনি বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। ভালো ও দ্বীনদার বন্ধুবান্ধবের সাথে উঠাবসা করুন; যাতে করে এ অবৈধ সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে। আর জেনে রাখুন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত এবং মৃত্যুর গড়গড়া শুরুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা কবুল করেন।
অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে- বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।
আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন তার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াত করা সবচেয়ে উত্তম ও ভাল আমল। রমজান হচ্ছে- কুরআনের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন: “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
রমজান মাসে জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে পরস্পর কুরআন পাঠ করতেন।[সহিহ বুখারি (৫) ও সহিহ মুসলিম (৪২৬৮)]
ইমাম বুখারি (৪৬১৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রতিবছর একবার কুরআন পেশ করতেন। যে বছর তিনি মারা যান সে বছর দুইবার কুরআন পেশ করেন।”
এ হাদিস থেকে গ্রহণ করা যায় যে, রমজান মাসে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করা ও কুরআন অধ্যয়ন করা মুস্তাহাব।
আরও জানতে দেখুন (50781) নং প্রশ্নোত্তর।
এ হাদিস থেকে আরও গ্রহণ করা যায় যে, কুরআন খতম করা মুস্তাহাব। যেহেতু জিব্রাইল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাছে গোটা কুরআন পেশ করতেন।
দেখুন ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (১১/৩৩১)
কুরআন মুখস্থ করা ও মুখস্থকৃত অংশ পুনঃ পুনঃ আওড়ানো পাঠ করার পর্যায়ভুক্ত; বরং পাঠ করার চেয়ে বেশি। কারণ মুখস্থ করতে গেলে বা পুনঃ পুনঃ আওড়াতে গেলে তাকেও একটি আয়াত একাধিকবার পড়তে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি হরফ পড়ার জন্য সে ব্যক্তি দশ নেকি করে পাবেন।
এ কারণে মুখস্থ করা ও পুনঃ পুনঃ আওড়ানো উত্তম।
হাদিস থেকে নিম্নোক্ত বিষয়ে দলিল পাওয়া যায়:
১. কুরআন মুখস্থ করার।
২. পারস্পারিক কুরআন পাঠ করার।
৩. কুরআন তেলাওয়াত করার।
পূর্বের হাদিস থেকে এ বিষয়গুলো পাওয়া যায়।
তাই গোটা মাসে অন্তত একবার হলেও কুরআন খতম করা উচিত। এরপর তার জন্য যেটা উপযুক্ত সে সেটা করতে পারে। হয়তো বেশি বেশি তেলাওয়াতে মনোনিবেশ করে কুরআন খতম করবে অথবা পুনঃ পুনঃ পাঠ করবে অথবা নতুন অংশ মুখস্থ করবে। তার মনের জন্য যেটা অধিক উপযুক্ত সেটা সে করবে। হতে পারে তার মনের জন্য মুখস্থ করা উপযুক্ত হবে অথবা তেলাওয়াত করা অথবা পুনঃ পুনঃ পাঠ করা। উদ্দেশ্য হচ্ছে- কুরআন তেলাওয়াত করা, অনুধাবন করা, এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এবং কুরআন অনুযায়ী আমল করা।
একজন মুমিনের উচিত তার মনের অবস্থা বুঝে যেটা তার জন্য উপযুক্ত সেটা গ্রহণ করা।
আল্লাহই ভাল জানেন।