প্রশ্ন: আমি আল্লাহর নামে শপথ করেছি যে, আমি আর ফিল্ম দেখব না। কিন্তু আমি নির্দিষ্ট করি নাই যে, কী ধরনের ফিল্ম আমি দেখব না। এক বছর পরে আমি একটি ফিল্ম দেখেছি, যেটি তেমন কিছু নয় বা অশ্লীল নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- আমি কিভাবে এই গুনাহ হতে নাজাত পাব। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
আলেমগণ ফিল্ম দেখা ছেড়ে দেয়ার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করেছেন, যেমন-
১. এই ফিল্ম দেখার শরয়ি হুকুম জানা। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে অনেক উত্তর দেয়া হয়েছে।
২. সার্বক্ষণিক আল্লাহকে স্মরণ করা। কারণ আল্লাহ মানুষের প্রকাশ্য-গোপন সবকিছু জানেন। জনৈক সলফে সালেহীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- হারাম কিছুর দর্শন থেকে চক্ষুকে সংযত রাখার উপায় কী? উত্তরে তিনি বলেন: এই জ্ঞান উজ্জীবিত করার মাধ্যমে যে, তুমি যত বেগে ঐ বস্তুর দিকে তাকাচ্ছ এর চেয়ে বহুগুণ বেশী বেগে আল্লাহ তোমার দিকে তাকাচ্ছেন।
৩. নেককারদের সাহচর্যে থাকা। যারা আপনি ভুলে গেলে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। আপনার মধ্যে কোন গাফলতি দেখলে তারা সাবধান করে দিবে। এরাই্ হচ্ছে- আল্লাহর জন্য বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ খলিল। যাদের পরস্পরে মাঝে সম্পর্কের বন্ধন হচ্ছে- আল্লাহর আনুগত্য। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।”[সূরা যুখরুফ, ৬৭] এরাই হচ্ছে- সৎসঙ্গি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার উদাহরণ দিয়েছেন ‘মিসক-আম্বর’ বহনকারীর সাথে। আবু মুসা আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সৎসঙ্গি ও অসৎসঙ্গির উদাহরণ হচ্ছে- মিসক বিক্রেতা ও কামারের হাফরের মত। মিসক বিক্রেতা থেকে তুমি কোন না কোন উপকার পাবেই পাবে। হয়তো তুমি তার থেকে মিসক কিনবে অথবা অন্তত সুগন্ধি পাবে। আর কামারের হাফর হয়তো তোমার শরীর পুড়িয়ে দিবে অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে অথবা তুমি এর দুর্গন্ধ পাবে।” [সহীহ বুখারী (১৯৯৬) ও সহীহ মুসলিম (২৬২৮)]
৪. দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য উপকারী কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। প্রতিদিন কুরআন শরীফের নির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ মুখস্ত করা বা পড়া। আলেমগণের লিখিত বিভিন্ন বই-পুস্তক পড়তে পারেন বা আলোচনা শুনতে পারেন। আপনি কোন মঙ্গলজনক পেশায় ব্যস্ত থাকতে পারেন অথবা সমাজ ও মানুষের কোন খেদমত করতে পারেন।
৫. বিয়ে করা। চক্ষু অবনত রাখা ও লজ্জাস্থান হেফাযতে রাখার জন্য এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নসিহত। হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যে সামর্থবান সে যেন বিবাহ করে। কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা সত্যিই যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।[সহীহ বুখারী (৪৭৭৯) ও সহীহ মুসলিম (১৪০০)]
৬. সার্বক্ষণিক আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেন আল্লাহ তাআলা আপনাকে সহায়তা করেন, তাওফিক দেন, আপনার কর্ণ ও চক্ষুকে পবিত্র রাখেন। আত্মার অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য বান্দা প্রয়োজনীয় সব ধরনের উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার পর যে উত্তম কাজটি করতে পারে সেটি হলো আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। যাতে আল্লাহ তাকে এক্ষেত্রে সাহায্য করেন, তার জন্য সহজ করে দেন এবং তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পবিত্র রাখেন।
আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি আল্লাহ যেন আপনাকে তাঁর পছন্দনীয় পথে, তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলা সহজ করে দেন।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।