ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইসলামী রাজনীতি শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১ টি
যে শাসক আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করে না তাকে কি নির্বাচিত করা যাবে?

প্রশ্ন: মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য এমন কোন শাসককে নির্বাচিত করা কি জায়েয হবে যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন করে না? উল্লেখ্য, তাকে যদি নির্বাচিত করা না হয় তাহলে সে নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখবে; এমন কি গ্রেফতারও করতে পারে।সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ঈমানদারেরা সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম কোন আইন নেই। আল্লাহর আইন বিরোধী সকল বিধান জাহেলী বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?”[সূরা মায়েদা, ০৫:৫০] আল্লাহর উপর ঈমান ও রাসূলদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনার পর আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন গ্রহণ করার প্রবণতাকে আল্লাহ তাআলা ‘বিস্ময়কর’ ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে।”[সূরা নিসা ০৪:৬০]

শানকিতি (রহঃ) বলেন: “আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন যে, যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইনে শাসন করে আল্লাহ তাদের ঈমানের দাবীর প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ তাগুতের কাছে বিচার ফয়সালা চাওয়ার পরেও ঈমানের দাবী- মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এমন মিথ্যা সত্যিই বিস্ময়কর।” সমাপ্ত

আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তার শপথ করে বলছেন: কোন ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলকে ফয়সালাকারী হিসেবে না মানা পর্যন্ত ঈমানদার হবে না। রাসূল যে ফয়সালা দিয়েছেন সেটাই হক্ব; প্রকাশ্যে ও গোপনে সেটাকে মেনে নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।”। [সূরা নিসা, ০৪:৬৫]

আল্লাহ তাআলা বিবদমান বিষয়ে ফয়সালার দায়িত্ব রাসূলের উপর ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য করে দিয়েছেন এবং এটাকে ঈমানের শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের শাসন গ্রহণ করা ঈমানের পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা বলেন: “অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ কর- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি কল্যাণকর এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।”[সূরা নিসা, ০৪:৫৯]।

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: আয়াতে কারিমা “যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ” নির্দেশ করছে যে, যে ব্যক্তি বিবদমান বিষয়ের ফয়সালা কুরআন ও সুন্নাহ হতে গ্রহণ করে না এবং এ দুটির কাছে ফিরে আসে না সে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি ঈমানদার নয়।

পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে না তাকে নির্বাচিত করা হারাম। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে এই হারামের প্রতি সন্তুষ্টি ও এই হারাম কাজে সহযোগিতা করা হলো।

কোন মুসলমানকে যদি ভোট দিতে যেতে বাধ্য করা হয় তাহলে সে যেতে পারেন গিয়ে এই প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন অথবা সম্ভব হলে তার ভোট নষ্ট করে দিতে পারেন। যদি এর কোনটাই তার পক্ষে করা সম্ভবপর না হয় এবং এই প্রার্থীর পক্ষে ভোট না দিলে সে নির্যাতিত হওয়ার আশংকা করে তাহলে আমরা আশা করছি এমতাবস্থায় তার কোন গুনাহ হবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত” [সূরা নাহল ১৬:১০৬] এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমার উম্মতকে ভুল, বিস্মৃতি ও জবরদস্তির গুনাহ হতে নিষ্কৃতি দেয়া হয়েছে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (২০৪৫), আলবানী সহীহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]

আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

http://islamqa.info/bn/103040