ইসলাম কিউ এ ফতোয়া সমগ্র ইসলামী আইন ও এর মূলনীতি শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ ১ টি
রমজান মাসে ফজরের আযানের আগ থেকে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করছিলাম। আযান চলাকালীন সময়েও আমি সহবাসরত ছিলাম। তবে আযান শেষ হওয়ার আগেই আমরা বিরত হয়েছি। আমার ধারণা ছিল যে, মুয়াজ্জিনের আযান শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত সহবাস করা জায়েয। এখন আমার করণীয় কি?

এক:
যদি ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে মুয়াজ্জিন আযান দেন, তাহলে ওয়াজিব হল ফজরের ওয়াক্ত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ (মুফাত্তিরাত) থেকে বিরত থাকা। তাই মুয়াজ্জিন ‘আল্লাহু আক্‌বার’ (আল্লাহ মহান) বলার সাথে সাথে খাদ্য, পানীয়, সহবাস ও সকল রোযা ভঙ্গকারী বিষয় (মুফাত্তিরাত) থেকে বিরত থাকা আবশ্যক হয়ে যায়।

ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন :

যদি ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার সময় কারও মুখে খাবার থাকে, তবে সে যেন তা ফেলে দেয় (খাবার) ফেলে দিলে - তার রোযা শুদ্ধ হবে, আর গিলে ফেললে - তার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার সময় সে সহবাসরত অবস্থায় থাকে, তবে সে অবস্থা থেকে তাৎক্ষণিক সরে গেলে - তার রোযা শুদ্ধ হবে। আর যদি ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার সময় সে সহবাসরত অবস্থায় থাকে এবং ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে জেনেও সহবাসে লিপ্ত থাকে, তবে তার রোযা ভঙ্গ হবে- এ ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। আর সে অনুসারে তার উপর কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে। সমাপ্ত। [আল-মাজ্‌মু‘ (৬ /৩২৯) ]

তিনি আরও বলেন : আমরা উল্লেখ করেছি যে, ফজর উদিত হওয়ার সময় যদি কারো মুখে খাবার থাকে, তবে সে তা ফেলে দিবে ও তার রোযা সম্পন্ন করবে। আর যদি ফজর হয়েছে জেনেও সে তা গিলে ফেলে, তবে তার রোযা বাতিল হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই আল-মাজ্‌মু‘ (৬/৩৩৩) এর দলীল হচ্ছে ইবনে উমর ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এর হাদিস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

( إن بلالا يؤذن بليل , فكلوا واشربوا حتى يؤذن ابن أم مكتوم ) رواه البخاري ومسلم , وفي الصحيح أحاديث بمعناه

“বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) রাত থাকতে আযান দেন। তাই আপনারা খেতে থাকুন ও পান করতে থাকুন যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আযান দেন।” [হাদিসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম সংকলন করেছেন এবং সহীহ গ্রন্থে এই অর্থের আরও হাদিস রয়েছে] সমাপ্ত

এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, যদি আপনার এলাকার মুয়াজ্জিন ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দেয়, তাহলে আযানের প্রথম তাকবীর শোনার সাথে সাথে আপনাকে সহবাস থেকে বিরত হয়ে যেতে হবে। আর যদি আপনি জেনে থাকেন যে, মুয়াজ্জিন ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই আযান দেয় অথবা এ ব্যাপারে আপনি সন্দিহান থাকেন যে, তিনি কি সুবহে সাদিক হওয়ার আগে আযান দেন, নাকি পরে আযান দেন- সেক্ষেত্রে আপনার উপর করণীয় কিছু নেই। কারণ আল্লাহ তা’আলা ফজর পরিস্ফুট হওয়া পর্যন্ত খাওয়া, পান করা ও সহবাস করা বৈধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(فَالْآَنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ)

অতএব এখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা (সন্তান) লিখে রেখেছেন তা কামনা করতে পার। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ কালো সুতা (রাতের কালো রেখা) হতে ঊষার সাদা সুতা (সাদা রেখা) স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয় [সূরা বাকারাহ, ২ : ১৮৭]

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ‘আলেমগণকে প্রশ্ন করা হয়েছিল:কোন ব্যক্তি আগেই সেহেরী খেয়েছে। কিন্তু ফজরের আযান চলাকালীন সময়ে অথবা আযান দেওয়ার ১৫ মিনিট পর পানি পান করেছে- এর হুকুম কী?

তাঁরা উত্তরে বলেন: “প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যক্তি যদি জেনে থাকেন যে, সেই আযান সুবহে সাদিক পরিষ্কার হওয়ার আগে দেওয়া হয়েছিল তবে তার উপর কোন কাযা নেই। আর যদি তিনি জেনে থাকেন যে, সে আযান সুবহে সাদিক পরিষ্কার হওয়ার পরে দেওয়া হয়েছে তবে তার উপর উক্ত রোযা কাযা করা আবশ্যক। আর তিনি যদি না জানেন যে, তার পানাহার ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে ঘটেছে, না পরে ঘটেছে সেক্ষেত্রে তাকে কোন রোযা কাযা করতে হবে না। কারণ এ ক্ষেত্রে মূল অবস্থা হচ্ছে- রাত বাকি থাকা। তবে একজন মু’মিনের উচিৎ তার সিয়ামের ব্যাপারে সাবধান থাকা এবং আযান শোনার সাথে সাথে রোযা ভঙ্গকারী সমস্ত বিষয় থেকে বিরত থাকা। তবে তিনি যদি জেনে থাকেন যে, এই আযান ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে দেওয়া হয়েছে তাহলে ভিন্ন কথা।” সমাপ্ত

[ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ : (২/২৪০) ]

দুই:
যদি আপনি এই হুকুমের ব্যাপারে না জেনে থাকেন এবং মনে করে থাকেন যে, আযানের শেষ পর্যায়ে রোযা ভঙ্গকারী বিষয়াদি (মুফাত্তিরাত) থেকে বিরত হওয়া অনিবার্য হয়, তবে আপনার উপর কোন কাফ্‌ফারা বর্তাবে না। তবে সাবধানতাবশতঃ আপনাকে সে রোযাটির কাযা আদায় করতে হবে। সেই সাথে দ্বীনের যেসব বিষয় জানা আপনার জন্য ওয়াজিব ছিল, সে ব্যাপারে অবহেলার জন্য তওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে ।

আরও দেখুন (93866) ও (37879) নং প্রশ্নের উত্তর।

আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন ।

http://islamqa.info/bn/124290