(১) যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসে সে অবশ্যই নিজের নফসের প্রবৃত্তি, চাহিদা, প্রিয় বস্ত্ত, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং জন্মভূমির ভালোবাসার উপর আল্লাহ তা‘আলার পছন্দনীয় আমলকে প্রাধান্য দিবে।
(২) যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসে সে অবশ্যই তার রসূলের সুন্নাতের অনুসরণ করবে। রসূল যা আদেশ করেন, সে তা বাস্তবায়ন করবে এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, সেটা বর্জন করবে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ﴾
‘‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। বলো, তোমরা আল্লাহ ও রসূলের অনুগত হও। কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালোবাসেন না’’। (সূরা আলে-ইমরান: ৩১-৩২)
কতিপয় সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে, একদল লোক দাবি করলো যে, তারা আল্লাহকে ভালোবাসে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ﴾
‘‘বলো, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’’। (সূরা আলে-ইমরান: ৩১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসার দলীল-প্রমাণ, ফলাফল এবং উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসার দলীল-প্রমাণ ও আলামত হলো রসূলের অনুসরণ করা এবং তার ফলাফল ও উপকারিতা হলো আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা ও তার ক্ষমা পাওয়া।
(৩) আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বান্দার ভালোবাসা সত্য হওয়ার আলামত সম্পর্কে তিনি বলেন,
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ﴾
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি তার দীন থেকে ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ আরো এমন বহু লোক সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি সেটা দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময় এবং সর্ব বিষয়ে অবগত’’। (সূরা আল মায়িদা: ৫৪)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ভালোবাসার চারটি আলামত উল্লেখ করেছেন।
প্রথম আলামত: যারা আল্লাহকে ভালোবাসে তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও দয়ালু হবে। তারা তাদের মুমিন ভাইদের প্রতি কোমল হবে, তাদের উপর দয়া করবে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতি প্রদর্শন করবে। আতা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, পিতা যেমন পুত্রের প্রতি স্নেহশীল হয়, তারা মুমিনদের প্রতিও অনুরূপ হবে।
দ্বিতীয় আলামত: তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে। অর্থাৎ তারা কাফেরদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করবে এবং তারা নিজেদেরকে কাফেরদের উর্ধ্বে মনে করবে। তারা কোনোভাবেই কাফেরদের প্রতি নতি স্বীকার করবে না এবং তাদের কাছে দুর্বলতাও দেখাবে না।
তৃতীয় আলামত: তারা জান-মাল, হাতের শক্তি ও জবান দিয়ে আল্লাহর পথে ও আল্লাহর দীনকে শক্তিশালী করা এবং শত্রুদের মূলোৎপাটন করার জন্য যে কোনো উপায়ে জিহাদ করবে।
চতুর্থ আলামত: তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে এবং সত্যের বিজয় আনতে গিয়ে জান-মাল খরচ করার পথে কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। সত্যের সাহায্যার্থে তারা নিজেদের জান-মাল খরচ করার সময় মানুষের তিরস্কার ও দোষারোপ তাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। কেননা তারা যে দীনের উপর রয়েছে, তা সত্য হওয়ার ব্যাপারে তাদের পরিপূর্ণ প্রত্যয় রয়েছে এবং তাদের ঈমান ও ইয়াকীন খুবই শক্তিশালী। নিন্দুকের নিন্দার কারণে যদি ভালোবাসা পোষণকারীর ভালোবাসায় ভাটা পড়ে অতঃপর সে যদি তার হাবীবের সাহায্য করতে দুর্বলতা দেখায়, তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা পোষণকারী নয়।