আল ইরশাদ-সহীহ আকীদার দিশারী কয়েক প্রকার বড় শিরকের বর্ণনা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান ১ টি
আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা পাওয়ার উপায়

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার দশটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

(১) গভীর মনোযোগ সহকারে কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা এবং কুরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝার চেষ্টা করা।

(২) ফরয সালাত শেষে নফল সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করার চেষ্টা করা।

(৩) জবান, অন্তর ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে সবসময় ও সকল অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা।

(৪) বান্দা যা ভালোবাসে এবং আল্লাহ যা ভালোবাসেন, -এ দু’টি ভালোবাসা সাংঘর্ষিক হলে আল্লাহর ভালোবাসাকেই প্রাধান্য দেয়া।

(৫) আল্লাহর অতি সুন্দর নামসমূহ, তার সুউচ্চ গুনাবলীসমূহ এবং সেটার কামালিয়াত, বড়ত্ব, মর্যাদা ও প্রশংসনীয় ফলাফল নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা।

(৬) আল্লাহ তা‘আলার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নিয়ামতগুলো নিয়ে চিন্তা-গবষেণা করা এবং বান্দাদের উপর তার দয়া, অনুগ্রহ ও নিয়ামতগুলো গভীর দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করা।

(৭) মন-প্রাণ উজাড় করে আল্লাহর সামনে কাকুতি-মিনতি করা এবং নিজের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে তুলে ধরা।

(৮) রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে যখন দুনিয়ার আসমানে নুযুলে এলাহীর সময় হয় তখন নির্জনে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কান্না-কাটি করা, দু‘আ করা এবং কুরআন তেলওয়াত করা। ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবার মাধ্যমে শেষ রাতের আমলের সমাপ্তি করা।

(৯) আল্লাহর প্রিয় বান্দা-সৎলোকদের সাথে উঠা-বসা করা এবং তাদের উপদেশ-নছীহত ও কথা-বার্তা থেকে উপকৃত হওয়া।

(১০) আল্লাহর মাঝে ও বান্দার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী প্রত্যেক জিনিস থেকে দূরে থাকা।

আল্লাহর ভালোবাসার অন্যতম দাবি হলো তার রসূলকে ভালোবাসা। ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি এমনকি দুনিয়ার সকল মানুষ হতেও অধিক প্রিয় হই’’।[1]

অর্থাৎ যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের নাফ্স এবং তার সর্বাধিক ঘনিষ্ট লোক থেকে বেশি ভালো না বাসবে ততক্ষণ কেউ প্রকৃত ও পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না।

রসূলের ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসার অনুগামী এবং আল্লাহ তা‘আলাকে ভালোবাসার দাবিই হলো তার রসূলকে ভালোবাসা। আর যে ব্যক্তি রসূলকে ভালোবাসবে, সে অবশ্যই রসূলের অনুসরণ করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসার দাবি করবে, অথচ সে রসূলের আনীত দীন ও সুন্নাতের বিরোধীতা করবে এবং তাকে বাদ দিয়ে ভ্রান্ত, বিদআতী ও কুসংস্কারচ্ছন্ন লোকদের অনুসরণ করবে, সুন্নাত পরিহার করে বিদআতকে পুনরুজ্জীবিত করবে, সে তার দাবিতে মিথ্যুক। যদিও সে দাবি করে যে, সে রসূলকে ভালোবাসে। কেননা যে মানুষ কাউকে ভালোবাসে সে অবশ্যই তার মাহবুবের আনুগত্য করে।

যারা রসূলের সুন্নাত বিরোধী নতুন নতুন বিদআত তৈরী করে এবং তার জন্মদিবস উপলক্ষে মীলাদ মাহফিল উদ্যাপন করাসহ অন্যান্য বিদআত পুনরুজ্জীবিত করে অথবা নবীজির প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করে এবং আল্লাহ ব্যতীত তার নিকট দু‘আ করে, তার কাছে মদদ চায় এবং তার কাছে ফরিয়াদ করার পরও রসূলকে ভালোবাসার দাবি করে, তারা সবচেয়ে বড় মিথ্যুক। তারা আসলে ঐসব লোকের মতোই যাদের ব্যাপারে-

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَمَا أُولَٰئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ﴾

‘‘তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ ধরনের লোকেরা কখনোই মুমিন নয়’’। (সূরা আন নূর: ৪৭)

কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত কাজগুলো থেকে নিষেধ করেছেন। তারা তার নিষেধের বিরোধীতা করেছে এবং তার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে। অথচ তারা দাবি করে যে, তারা রসূলকে ভালোবাসে। সুতরাং তারা মিথ্যা বলেছে। আমরা আল্লাহর কাছে এগুলো থেকে নিরাপত্তা কামনা করছি।


[1]. সহীহ বুখারী, হা/১৫।