উত্তর : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রসূল হিসাবে প্রেরণের মাধ্যমে সাধারণ জাহিলিয়্যাত বিদূরিত হয়েছে। সুতরাং ইসলামী সমাজকে ব্যাপকভাবে জাহিল সমাজ বলা বৈধ নয়।[1]
তবে ব্যক্তি বিশেষ, দল বিশেষ (বাকি আছে) বলা যেতে পারে, তা বৈধ।
قال النبي - صلى الله عليه وسلم - لبعض أصحابه : ( إنك امرؤٌ فيك جاهلية)، وقال - صلى الله عليه وسلم - : ( أربع في أمتي من أمر الجاهلية لا يتركونهن : الفخر في الأحساب، والطعن في الأنساب، والاستسقاء بالنجوم، والنياحة ) .
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিশেষ ছাহাবীকে বলেছেন ‘‘তুমি এমন ব্যক্তি যার মাঝে জাহিলিয়্যাত বিদ্যমান।[2] তিনি আরো বলেন, আমার উম্মতের মাঝে চারটি জাহিলিয়্যাতের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকবে। তারা সেগুলো পরিত্যাগ করবে না। তারা বংশ মর্যাদা নিয়ে অহংকার করবে। বংশ মর্যাদা নিয়ে তিরস্কার করবে। তারকার দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা করবে। মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করে কাঁদবে।[3]
[1]. মুসলিম সমাজকে ব্যাপকভাবে জাহিলী সমাজ বলা ইসলামী সমাজকে তাকফির করা বা কাফির সমাজ বলারই নামান্তর। অথচ সাইয়্যিদ কুতুব এ কাজটি বারবার করেছেন। এখানে উদাহরণ হিসাবে তার মন্তব্য পেশ করা হলো: তিনি ‘‘মা‘আলিম ফিত্ব ত্বরীক’’ নামক গ্রন্থের ১০১ নং পৃষ্ঠায় বলেন‘‘ ইসলামী সমাজ দাবিদার যে সমাজগুলো হাকিমিয়্যাহ বা বিচার ফায়ছালার ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বকে মানে না তারাও জাহিলী সমাজ বলে গণ্য হবে। উলুহিয়্যাত ‘উবুদিয়্যাত এর ক্ষেত্রে এক আল্লাহকে মানলেও শুধু হাকিমিয়্যহ (বিচার ফায়ছালার) ক্ষেত্রে গায়রুল্লাহর ধর্ম গ্রহণ করায় তারা জহিলিয়্যাহ সমাজের আওতায় পতিত হয়।
এটা প্রমাণিত হলো যে ইসলাম এসকল সমাজকে একই সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেছে। এই সমাজগুলো এবং এগুলোর নিয়ম-কানুনকে ইসলামী বলাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি তার ‘‘আল ‘আদালাহ আল ইজতিমাঈয়্যাহ ’’ নামক গ্রন্থে ‘‘দীন ইসলাম অনুধাবনের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এই বর্ণনার আলোকে যখন আমরা পুরো পৃথিবীকে পর্যালোচনা করি তখন এই দীনের কোন অস্তিত্ব দেখতে পাই না। মানব জীবনে إفراد الله سبحانه بالحاكمية বা বিচারের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদপন্থীদের নিঃশেষের মাধ্যমে দীনও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। আমাদের উচিত এই বেদনাদায়ক বাস্তবতাকে স্বীকার করা এবং তা (জনগণের মাঝে) প্রকাশ করা; যাতে আমরা মুসলিম হতে ইচ্ছুক অধিকাংশ মানুষের ন্যায় নিরাশ না হই-বরং তারা কীভাবে মুসলিম হবেন তা (সেই পদ্ধতি) নিশ্চিত ভাবে জানা তাদের অধিকার।
সাইয়্যিদ কুতুব তার ’’যিলালিল কুরআনের’’ ২য় খণ্ড-র ১০৫৭ নং পৃষ্ঠায় বলেন, ইসলামের আগমন কালে মানবতার যে (বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল বর্তমানে সে আবস্থার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে এবং রসূল সলস্নস্নাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন নাযিলের সময় মানবতার যে অবস্থা ছিল আজ মানবতা সে অবস্থায় ফিরে গেছে। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাওয়াত সহ দীন যে সময়ে আগমন করেছিল আজ মানবতা সে অবস্থায় অধঃপতিত হয়েছে। মানবতা সৃষ্টির দাসত্বে এবং বিভিন্ন ধর্মের জুলুম নির্যাতনে ফিরে গেছে। তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা তাওহীদ হতে পশ্চাদগমন করেছে।
বর্তমানে যদিও পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পুনরাবৃত্তি করে কিন্তু তারা এর তাৎপর্য অনুধাবন করে না। এরা মারাত্মক পাপী। কিয়ামাতের দিন এরা কঠোর আযাবের সম্মুখীন হবে। কেননা এদের সামনে হিদায়াত সুস্পষ্ট হওয়ার এবং ইসলামে প্রবেশ করার পরে তারা সৃষ্টির দাসত্বে ফিরে গেছে।’’
‘‘মুহাম্মাদ সুরুর আলেমদেরকে এমন কথার দ্বারা কটাক্ষ করার ও অপবাদ দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে যে, সে বলেছে তারা দাসের দাসের দাসের দাস’’।
সাইয়্যিদ কুতুব যে ব্যাপকভাবে ইসলামী সমাজকে কাফির সমাজ বলেছেন তা ইউসুফ আল ক্বারযাবীও স্বীকার করেছেন। ইউসুফ ক্বারযাবী তার ‘‘আওয়্যালিয়্যাতুল হারাকাত আল ইসলামিয়্যাহ গ্রন্থের ১১০ নং পৃষ্ঠায় বলেন ‘‘সাইয়্যেদ কুতুব তার গবেষণার শেষ পর্যায়ে এমন কিছু বই পুস্তক প্রকাশ করেছে যেগুলো ইসলামী সমাজকে তাকফির করা, ইসলামী ব্যবস্থাপনার প্রতি আহবানে বিলম্ব করা এবং সকল মানুষের উপর আক্রমণাত্মক জিহাদের ঘোষণা করার পানি সিঞ্চন করেছে। শাহীদের (সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের) যিলালিল করআন, মা‘আলিম ফিত ত্বরীক এবং আল-ইসলাম ওয়া মুশকিলাতুল হাদ্বারাহ নামক গ্রন্থে এর জ্বাজল্যময় প্রমাণাদি বিদ্যামান।
এমনিভাবে ইখওয়ানুল মুসলিমীদের নেতা ফরীদ আব্দুল খালেক তার ‘‘আল-ইখওয়ানুল মুসলিমুন ফিমিযানিল হাক নামক গ্রন্থের ১১৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন ‘‘পঞ্চাশের দশকের শেষে ও ষাটের দশকের শুরুতে ক্বানাত্বিরের কারাগারে অন্তরীণ থাকাবস্থায় ইখওয়ানুল মসলিমীনের কিছু যুবকের মাঝে তাকফিরী চিন্তার উদ্ভব হয়। তারা সাইয়্যিদ ক্বুত্বুবের চিন্তা চেতনা ও তার লিখনি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তারা তার পুস্তকাদি থেকে এ মতবাদ গ্রহণ করেছে যে, বর্তমান সমাজ জাহিলিয়্যাতের অবস্থায় রয়েছে। যারা আল্লাহ প্রদত্ত্ব বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান দ্বারা বিচার ফায়ছালা করে তাদেরকে এবং সন্তষ্টচিত্তে সে বিচার গ্রহীতাকে কাফির সাব্যস্ত করেছেন।
[2]. ইমাম বুখারী ও অন্যান্য ইমামগণ এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ওয়াছিবল ইবনে আল আহদ্বাব মা‘রুফ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি আবু যার এর সাথে রাবযা নামক স্থানে সাক্ষাৎ করলাম তিনি এবং তার দাস হুল্লাহ (সুন্দর পোশাক বিশেষ) পরিধিত ছিলেন। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, আমি এক ব্যক্তিকে গালি দেয়ার সময় তার মাকে নিয়ে তিরস্কার করেছিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবু যার, তুমি এমন ব্যক্তি যার মাঝে জাহিলী যুগের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তোমাদের ভাইয়েরা তোমাদের জন্য বিশেষ নিয়ামত (সহীহ বুখারী ৩০)।
[3]. সহীহ মুসলিম হা/৩৪৪।