একজন মু’মিন আল্লাহর ব্যাপারে তার অন্তর দিয়ে গোপনে এ-ভয় পোষণ করবে যে, আল্লাহর কাছে প্রকাশ্য আর অপ্রকাশ্য বলতে কিছুই নেই। মানুষ প্রকাশ্যে বা গোপনে যা-ই করে না কেন, তিনি তা সবিশেষ অবহিত আছেন। আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য অথবা আমাদের অন্যায় ও অপরাধজনিত কারণে তিনি ইচ্ছা করলে হঠাৎ করে যে কোনো সময় আমাদের যে কোনো অনিষ্ট হতে দিতে পারেন। আমাদের অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি তিনি আমাদেরকে এ দুনিয়াতে না দিলেও আখেরাতে দিতে পারেন। সে জন্য তিনি আমাদেরকে সর্বদা তাঁর শাস্তির ভয় ও রহমতের আশায়[1] থেকেই তাঁকে আহ্বান করতে নির্দেশ করে বলেছেন :
﴿وَٱدۡعُوهُ خَوۡفٗا وَطَمَعًاۚ﴾ [الاعراف: ٥٦]
‘‘আর তোমরা তাঁকে (আল্লাহ তা‘আলাকে) ভয় ও আশার মধ্যে থেকেই আহ্বান করো।’’[2]
ভয় ও আশার মধ্যে থেকে আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান করার প্রতি আমাদেরকে আদেশ করার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অন্তরে এ ধরনের ভয় ও আশা নিয়ে তাঁকে আহ্বান করা হচ্ছে অন্তরের একটি বিশেষ ধরনের ইবাদাত বা উপাসনা। কোনো মানুষের ব্যাপারে কারো অন্তরে এ ধরনের ভয় ও আশার সৃষ্টি হতে পারে না, কেননা; আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোনো মানুষ ও জিন নেই, যারা আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত স্রেফ তাদের নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী কারো কোনো অনিষ্ট সাধন করতে পারে। কারো দ্বারা কারো ইষ্ট বা অনিষ্ট হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে বিধায়, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কেবল তাঁকেই ভয় করতে আদেশ করে বলেছেন:
﴿فَلَا تَخۡشَوُاْ ٱلنَّاسَ وَٱخۡشَوۡنِ﴾ [المائدة: ٤٤]
‘‘সুতরাং তোমরা মানুষের কোনো অনিষ্টের ভয় করো না, ভয় কেবল আমাকেই কর।’’[3] কাফিররা তাদের দেবতাদের ব্যাপারে অনুরূপ গোপন ভয় পোষণ করতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেবতাদের সমালোচনা করেন বলে তাঁকেও তারা তাদের দেবতাদের দ্বারা হঠাৎকরে যে কোনো অনিষ্টের শিকার হওয়ার ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন করতো। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِٱلَّذِينَ مِن دُونِهِۦۚ﴾ [الزمر: ٣٦]
‘‘আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নয়? অথচ তারা (মুশরিকরা) তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্য উপাস্যদের ভয় প্রদর্শন করে।’’[4]যেহেতু মহান আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত কেউ কারো কোনো ক্ষতি বা অনিষ্ট করতে পারে না, সেহেতু কোনো জিন-পরী, বা জীবিত বা মৃত কোনো অলি বা দরবেশ, অথবা মাযারস্থ কোনো বৃক্ষ বা অন্য কিছুর দ্বারা কোনো কারণবশত কারো কোনো অনিষ্ট হতে পারে- এমন ধারণা ও ভয় করাও আল্লাহর গোপন ভয়ের উপাসনায় শির্ক করার শামিল।
>«أي: خوفا مما عنده من وبيل العقاب وطمعا فيما عنده من جزيل الثواب»
[2]. আল-কুরআন, সূরা আ‘রাফ : ৫৬।
[3]. আল-কুরআন, সূরা মায়েদাহ : ৪৮।
[4]. আল-কুরআন, সুরা যুমার : ৩৬।