শির্ক কী ও কেন? প্রথম পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী ১ টি

ভয় মূলত চার প্রকার :

প্রথম প্রকার : গোপন ভয়। যা নিয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এমন ভয় আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অপর কারো জন্যে করা শির্ক।

দ্বিতীয় প্রকার: কোনো মানুষ বা ফিৎনার ভয়ে কোনো সৎকর্মের আদেশ এবং অসৎকর্ম হতে বারণ করা থেকে বিরত থাকা। এ ধরনের ভয় শির্ক না হলেও তা হারাম। কারণ, কুরআনুল কারীমে এ ধরনের ভয় করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। মু’মিনদের পরিচয় দান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :

﴿يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ﴾ [المائ‍دة: ٥٤]

‘‘তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না।’’[1]

হাদীস শরীফে এ ধরনের ভয়কারীদের ব্যাপারে আখেরাতে ভৎর্সনা ও জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে :

«إِنَّ اللهً تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُوْلُ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ :مَا مَنَعَكَ إِذَا رَأَيْتَ الْمُنْكَرَ أَنْ لاَ تُغَيِّرَهُ ؟ فَيَقُوْلُ يَا رَبِّ ! خَشِيْتُ النَّاسَ. فَيَقُوْلُ : إِيَّايَ كُنْتُ أَحَقَّ أَنْ تَخْشَى»

‘‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বান্দাকে বলবেন: অন্যায় কর্ম দেখার পর কোন বস্তু তোমাকে তা পরিবর্তন করতে বাধা দিল? তখন বান্দা বলবে : হে প্রভু! পাছে লোকে কী বলে, এ ভয়ে আমি তা নিষেধ করতে পারি নি। আল্লাহ বলবেন: মানুষের চেয়ে আমিইতো ভয়ের অধিকতর হকদার ছিলাম।’’[2]

তৃতীয় প্রকার : আল্লাহর শাস্তির ভয়, যে শাস্তির ব্যাপারে তিনি তাঁর অবাধ্য ও অপরাধী বান্দাদের ভয় প্রদর্শন করেছেন। এ জাতীয় ভয় মু’মিনদের অন্তরে থাকা প্রশংসনীয়। যারা এ গুণে গুণান্বিত হবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর নিকট আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন :

﴿ذَٰلِكَ لِمَنۡ خَافَ مَقَامِي وَخَافَ وَعِيدِ ﴾ [ابراهيم: ١٤]

‘‘এ-পুরস্কার তাদের জন্যেই যারা হিসেবের জন্য আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে।’’[3]

চতুর্থ প্রকার : প্রকৃতিগত ভয়, যেমন- ওৎ পেতে থাকা শত্রু বা হিংস্র জীব-জন্তু, বিষধর সাপ, পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মরে যাওয়া ইত্যাদির ভয়। এ জাতীয় ভয় কোনো নিন্দনীয় বা দূষণীয় নয় কারণ; এ জাতীয় ভয় সম্মান মিশ্রিত হয় না। মূসা আলাইহিস সালাম-এর অন্তরে ফের‘আউন ও তার সৈন্যদের ব্যাপারে এ জাতীয় ভয় ছিল। এ কারণেই তিনি মিসর ছেড়ে পালিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন :

﴿ فَخَرَجَ مِنۡهَا خَآئِفٗا يَتَرَقَّبُۖ ﴾ [القصص: ٢١]

‘‘অতঃপর তিনি (মূসা) শত্রু আগমনের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়েন।’’[4]

>
[1]. আল-কুরআন, সূরা মায়েদাহ : ৪৫।

[2]. ইবন মাজাহ, প্রাগুক্ত; কিতাবুল ফিতন, বাব নং (২০); ২/১৩২৮। (তবে হাদীসটির সনদ দুর্বল [সম্পাদক])

[3]. আল-কুরআন, সূরা ইব্রাহীম : ১৫।

[4]. আল-কুরআন, সূরা ক্বাসাস : ২১।