যৌবন এমন একটা কাল, যে কালে মানুষের মাঝে প্রায় সর্ববিষয়ে এক প্রকার জোশ থাকে; যে জোশে অনেকে হুঁশও হারিয়ে বসে। অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রায় সকল ব্যাপারে অতিরঞ্জন করে থাকে। দ্বীনী-চেতনায় চৈতন্যপ্রাপ্ত যুবকের মাঝেও অনুরূপ অতিরঞ্জন আসা অস্বাভাবিক নয়। তাই দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ যুবকও কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কিছুকে প্রয়োজনের অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমন বাড়াবাড়ি করে থাকে, যা সত্যই ক্ষতিকর দ্বীনের জন্য এবং তার নিজের জন্যও।
মহান আল্লাহ তার দ্বীনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন পছন্দ করেন না। তাই পূর্ববর্তী ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল, “হে কিতাবধারিগণ! তোমরা স্বীয় ধর্মের ব্যাপারে। বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহ সম্বন্ধে সত্যই বল---।” (সূরা নিসা ১৭১ আয়াত) “হে আহলে-কিতাবগণ! তোমরা ধর্ম সম্বন্ধে সীমা অতিক্রম করো না এবং সেই সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে বিপথগামী হয়েছিল, ফলে তারা অনেককেই পথভ্রষ্ট করেছিল। আর তারা নিজেরাও ছিল সরল পথ হতে বিভ্রান্ত। (সূরা মাইদাহ ৭৭ আয়াত)
মহানবী (সা.) বলেন, “সাবধান! তোমরা ধর্ম-বিষয়ে অতিরঞ্জন করো না। কারণ, এই অতিরঞ্জনের ফলে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংস হয়েছে।” (আহমাদ ১/২১৫, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৩০২৯৭)
সুতরাং কোন বিষয় বা ব্যক্তিত্বের প্রশংসা অথবা নিন্দায় অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। যার যথা মান তাকে তথাস্থানে রাখাই হল মধ্যম-পন্থা। চরমপন্থা ইসলামে আদৌ স্বীকৃত নয়।
মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈলকে বলেছিলেন, “তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি, তা হতে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং এ বিষয়ে সীমালংঘন করো না, করলে তোমাদের উপর আমার গযব (ক্রোধ) নেমে আসবে। আর যার উপরে আমার গযব নেমে আসে, সে তো ধ্বংস হয়ে যায়।” (সূরা ত্বাহা ৮১ আয়াত)
তিনি মহানবী (সা.) তার অনুসারীদেরকে সম্বোধন করে বলেন, “সুতরাং তুমি ও তোমার সাথে যারা তওবা করেছে তারা সবাই সরল পথে স্থির থাক -যেমন তোমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর সীমালংঘন করো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় তিনি তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা হূদ ১১২ আয়াত)
কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে শরীয়ত আমাদের সর্ববিষয়কে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। সে সীমা অতিক্রম করাই হল শরীয়তের উপর বাড়াবাড়ি করা। মহান আল্লাহ বলেন, “ওদের জন্য এ কি যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার (নবীর) উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছি; যা ওদের নিকট পাঠ করা হয়? এতে অবশ্যই বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য অনুগ্রহ ও উপদেশ আছে।” (সূরা আনকাবুত ৫১ আয়াত)।
শরীয়তের নির্ধারিত সীমারেখার ভিতরেই রয়েছে মানুষের সার্বিক মঙ্গল। অবশ্য যারা এর উপদেশ গ্রহণ করে না অথবা তাতে বাড়াবাড়ি করে, তারা সে মঙ্গল ও আল্লাহর অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত থেকে যায়।
আমাদের দয়ার নবীও কোন বিষয়ে বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না। তিনি নিজের ব্যাপারে বলতেন, “তোমরা আমাকে নিয়ে (আমার তা'যীমে) বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা বিন মারয়্যামকে নিয়ে করেছে। আমি তো আল্লার দাস মাত্র। অতএব তোমরা আমাকে আল্লাহর দাস ও তাঁর রসূলই বলো।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৪৮৯৭ নং)
একদা তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে লোকেরা বলল, 'আবু ইসরাঈল, সে এই নযর মেনেছে যে, দাঁড়িয়ে থাকবে এবং বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কথা বলবে না এবং রোযা পালন করবে!’ এ কথা শুনে নবী ও বললেন, “ওকে আদেশ কর, যেন ও কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে যায় এবং রোযা পূরণ করে।” (বুখারী, মিশকাত ৩৪৩০ নং)
একদা তিনি দেখলেন, এক বৃদ্ধ তার দুই ছেলের কাধে ভর করে (মক্কার দিকে) হেঁটে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলেন, “ওর ব্যাপার কি?” বলল, পায়ে হেঁটে কাবাঘর যাওয়ার নিয়ত করেছে।' তিনি বললেন, “আল্লাহ তাআলার এমন প্রাণকে কষ্ট দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ওহে বৃদ্ধ! তুমি সওয়ার হয়েই মক্কা যাও। কারণ, আল্লাহ তুমি ও তোমার নযরের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৩৪৩১-৩৪৩২ নং)
মক্কা বিজয়ের দিনে এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আল্লাহর কাছে এই নযর মেনেছি যে, তিনি যদি আপনার হাতে মক্কার বিজয় দান করেন, তাহলে আমি বাইতুল মাকদিস (জেরুজালেমের মসজিদে) ২ রাকআত নামায আদায় করব।' এ কথা শুনে নবী (সা.) তাকে ২ বার বললেন, “তুমি এখানেই (কা’বার মসজিদেই) নামায পড়ে নাও।” (আবু দাউদ, দারেমী, মিশকাত ৩৪৪০ নং)
একদা তিন ব্যক্তি মহানবী (সা.) এর ইবাদত সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর বিবিদের নিকট উপস্থিত হল। যখন তার ইবাদতের কথা তাদেরকে বলা হল, তখন তারা তা কম মনে করল এবং বলল, নবী (সা.) এর সাথে আমাদের তুলনা কোথায়? তাঁর তো পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতঃপর একজন বলল, 'আমি সর্বদা সারা রাত্রি নামায পড়তে থাকব, দ্বিতীয়জন বলল, আমি সর্বদা রোযা রাখতে থাকব; কখনও রোযা ত্যাগ করব না, তৃতীয়জন বলল, আমি সর্বদা স্ত্রী থেকে দূরে থাকব; কখনো বিবাহ করব না।
মহানবী (সা.) এর নিকট এ খবর পৌছলে তিনি তাদেরকে বললেন, “তোমরা কি সেই সকল লোক, যারা এই এই কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের থেকে অধিকরূপে ভয় করে থাকি এবং তার জন্য অধিক সংযম অবলম্বন করে থাকি। এতদসত্ত্বেও আমি কোন দিন রোযা রাখি এবং কোন দিন রোযা ছেড়েও দিই। (রাত্রে) নামাযও পড়ি, আবার ঘুমিয়েও থাকি এবং স্ত্রী-মিলনও করি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার তরীকা থেকে বিমুখতা প্রকাশ করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪৫নং)
মহানবী (সা.) এর সাহাবাগণও দ্বীনের ব্যাপারে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না। একদা হজ্জে গিয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) আহমাস গোত্রের যয়নাব নামক এক মহিলাকে লক্ষ্য করলেন, সে মোটেই কথা বলে না। তিনি লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার, ও কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল, 'ও নীরব থেকে হজ্জ পালন করার নিয়ত করেছে। তিনি সেই মহিলাকে সরাসরি বললেন, 'তুমি কথা বল। এমন কর্ম বৈধ নয়। এমন কর্ম জাহেলিয়াত যুগের!' এ কথা শুনে মহিলা কথা বলতে শুরু করল। (বুখারী -৩৪ নং)
চরমপন্থা কোন বিষয়েই ভালো নয়, যেমন ভালো নয় একেবারে নরম, ঢিলে ও এলো পন্থা। প্রত্যেক ব্যাপারে মধ্যমপন্থাই হল একজন পূর্ণ আদর্শবান মুসলিমের অনুসরণীয় পথ। পক্ষান্তরে চরম ও নরমপন্থীরাই হল ক্ষতিগ্রস্ত। আলী (রাঃ) বলেন, 'আমার ব্যাপারে দুই ব্যক্তি ধ্বংস হবে। প্রথম হল, আমার ভক্তিতে সীমা অতিক্রমকারী ভক্ত এবং দ্বিতীয় হল, আমার বিদ্বেষে সীমা অতিক্রমকারী বিদ্বেষী।' (শাইবানীর কিতাবুস সুন্নাহ ৯৭৪নং) মহানবী (সা.) বলেন, “আমার উম্মতের দুই শ্রেণীর লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না; বিবেকহীন অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক সত্যত্যাগী অতিরঞ্জনকারী।” (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে' ৩৭৯৮ নং)। তিনি আরো বলেন, “অতিরঞ্জনকারীরা ধ্বংস হয়েছে।” (আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, সহীহুল জামে ৭০৩৯ নং)
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করার নাম হল গোড়ামি। যার জন্য গোড়া’ কথার অর্থই হল, কঠোর অন্ধভক্ত, অযৌক্তিক অন্ধবিশ্বাসী, অত্যধিক পক্ষপাতী, অতিভক্তি বা অন্ধভক্তির আবেগে আপ্লুত ব্যক্তি। আর এ জন্যই অতিরিক্ত টকজাতীয় এক প্রকার লেবুকে ‘গোড়া লেবু’ বলা হয়। এই অর্থেই অনেকে বলেছেন যে, ধর্ম নিয়ে যারা গোড়ামি করে, ধর্মের মর্ম তারা বোঝে না। নামাযে দাঁড়িয়ে সাজু তার পাশের নামাযী মাজুর পায়ে পা লাগিয়ে দিল। মাজু চট করে তার পা সরিয়ে নিল। পুনরায় সাজু তার পা বাড়িয়ে মাজুর পায়ে লাগিয়ে দিল। মাজু আবারও পা সরিয়ে নিল। এবারে সাজু, মাজুর পা ধরে টেনে এনে তার পায়ের সঙ্গে লাগিয়ে দিল! কিন্তু মাজু আবারও তার পা সরিয়ে নিয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়াল।
তুমি নিশ্চয়ই বলতে বাধ্য হবে যে, এখানে সাজু ও মাজু উভয়েই গোড়া। কারণ, মহব্বতের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে কাতার বেঁধে দাঁড়ানো সুন্নত। মহানবী (সা.) এর পশ্চাতে সাহাবাগণ অনুরূপই দাঁড়াতেন। কিন্তু কেউ বেআদবী মনে করে অথবা ঘৃণা বা অহংকারবশে সেই সুন্নতকে পছন্দ না করলে জোরপূর্বক তার পায়ে বারবার পা লাগিয়ে নামাযের ভিতরে পা-লড়াই অবশ্যই সুন্নত নয়; বরং অতিরঞ্জন অবশ্য সাজুর প্রথমবার পা লাগানোটা সুন্নত ছিল। বাকী মাজুর সবটাই ছিল গোড়ামি।
অনুরূপভাবে অনেক মানুষ আছে যাদের বিবির মাথায় কাপড় না থাকলেও নিজেদের মাথায় টুপি রাখার জন্য বাড়াবাড়ি করে থাকে। মুস্তাহাবকে ফরজের দর্জা দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ফরয ছেড়ে সুন্নত নিয়ে টানাটানি করে থাকে। এরা একদিকে যেমন নরমপন্থী, তেমনি অপরদিকে চরমপন্থীও।
প্রত্যেক বিষয়েই তিন অবস্থা হতে পারে; অবজ্ঞা, স্বাভাবিকতা ও অতিরঞ্জন। অথবা নরমপন্থা, মধ্যমপন্থা ও চরমপন্থা। এখন অবজ্ঞা ও অতিরঞ্জন তথা নরম ও চরমপন্থা কি - তা জানতে ও নির্ণয় করতে হলে পুর্বে অবশ্যই উভয়ের মাঝামাঝি পথ স্বাভাবিকতা ও মধ্যমপন্থাকে চিনতে হবে। নচেৎ এমনও হতে পারে যে, যে আসলে চরমপন্থী ও গোড়া নয় তাকে চরমপন্থী ও গোড়া’ বলে গালি দেওয়া হবে। সাধারণ এই চায়ের মজলিসে চা খাওয়ার কথাই ধর। একই কেটলির চা খেতে খেতে কেউ বলে, মিষ্টি হাল্কা হয়েছে। কেউ বলে, 'কড়া মিষ্টি আবার কেউ বলে, 'আরে না-না, ঠিকই তো হয়েছে!’ এখন চায়ের এই মিষ্টি-বিচারে এমনও হতে পারে যে, যার মিষ্টি হাল্কা খাওয়া অভ্যাস, সে ঐ চা-কে কড়া মিষ্টি’ বলে আখ্যায়িত করছে। আর যার কড়া মিষ্টি খাওয়া অভ্যাস, সে বলছে ‘হাল্কা মিষ্টি। সুতরাং এমন এক সালিস লোকের বিচার মানতে হবে, যে খায় স্বাভাবিক মিষ্টি। কিন্তু ধর্মীয় ব্যাপারে ঐ স্বাভাবিকতা বা মধ্যমপন্থা বিচারের মাপকাঠি কি? ধর্মীয় কোন ব্যাপারে স্বাভাবিকতা অথবা বাড়াবাড়ি, নাকি ঢিলেমি -এ কথা কে বলতে পারে? যারা ধর্মের ধার ধারে না এবং ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান রাখে না তারা, নাকি এর বিপরীত? নিঃসন্দেহে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, যে যে বিষয়ে জ্ঞান রাখে না, তার সে বিষয়ে ঐ শ্রেণীর কোন মন্তব্য বা উক্তি করা মুর্খামি। যেমন হাল্কা মিষ্টি খায় বা ডায়োবেটিস আছে এমন রোগীর স্বাভাবিক মিষ্টির চা-কে কড়া মিষ্টি বলা বোকামি।
উদাহরণ স্বরূপ, পরিবেশের স্বাভাবিকতা হল পর্দাহীনতা। কিন্তু যারা কুরআনী আইন মানেন তারা নিজেদের মহিলাদেরকে বোরকা পরান এবং পর্দার সাথে বাসে-ট্রেনে চড়ে শিক্ষা। বা চাকুরীস্থলে যেতে দেন। কিন্তু আরো কিছু ধার্মিক লোক আছেন, যারা মহিলাদের বাসেট্রেনে চড়া হারাম মনে করেন। পর্দার সাথে তারা যে বাইরে যেতে পারে –এ কথা মানতে চান না। এখন ধর্মের মর্ম যারা বোঝেন, তারা যদি ধর্মের স্বাভাবিকতা ও নির্দেশ অনুযায়ী বিচার করেন, তাহলে নিশ্চয় তারা পর্দাহীনতাকে ঢিলে ও নরমপন্থা বলবেন। যারা বোরকা ব্যবহার করে পর্দার আদেশ পালন করেন, তাদেরকে মধ্যমপন্থী বলবেন এবং গোড়া’ বলতে পারবেন না। অবশ্য যারা অবরোধ’-প্রথায় বিশ্বাসী তাদেরকে গোড়া’ বলতে দ্বিধা থাকবে না।
কারণ, যা হারাম নয়, তা হারাম করা হল, অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি। অতএব নিঃসন্দেহে তা গোড়ামি। পক্ষান্তরে শরীয়তের স্বাভাবিক নির্দেশ পালন করাকে গোড়ামি বলাও বোকামি। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, যারা এ বিচারের যোগ্য নয়, তারাই এ বিচারভার গ্রহণ করে আগা জিভে যাকে তাকে গোড়া’ বলে গালি পেড়ে মুখের পরিচয় দিয়ে থাকে। যাদের সংরক্ষণে রয়েছে সমস্ত প্রচারমাধ্যম, তারা গোড়া ও মৌলবাদী এবং উদার ও সংস্কারপন্থী আখ্যায়ন করে মুসলিম সমাজকে দু'ভাগে ভাগ করে রেখেছে। প্রশংসা করেছে। তথাকথিত উদারপন্থীদের এবং উপহাস ও কটাক্ষ করেছে মৌলবাদী নিয়ে। উদারপন্থী হল
তারা, যারা মোটেই বা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলা জরুরী মনে করে না। যে স্বামী তার স্ত্রীকে বন্ধুদের সাথে অবাধ মিলামিশা করতে দেয়, সে স্বামী উদারপন্থী। যে দেয় না সে গোড়া মৌলবাদী। আর যে নৈতিকতা মানে না এবং ফ্রি-সেক্স’-এ বিশ্বাসী সে হল উদারপন্থী। আর যে তা মানে সে হল গোড়া রক্ষণশীল। যে পশুর মত জীবন-যাপন করে সে উদারপন্থী এবং যে আল্লার দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা অনুযায়ী সুন্দর জীবন-যাপন করে সে ওদের নজরে রক্ষণশীল!
পক্ষান্তরে ওরাও এক শ্রেণীর একগুয়ে রক্ষণশীল গোড়া। ওরাও বাতিল পথে থেকে একগুয়েমির সাথে কুফরী-জিন্দেগীকে প্রাধান্য দেয়। ধর্মহীন জীবন গড়তে ওরাও বেশ বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন প্রদর্শন করে থাকে। মাতালকে তার অমাতাল বন্ধু বারবার মদ খাওয়া ছাড়তে বললে মাতাল তাকে গোড়া বলে ব্যঙ্গ করে। অথচ মাতাল নিজেও মাতলামিতে সেই একই পর্যায়ের গোড়ামি ও রক্ষণশীলতা প্রদর্শন করে, তা হয়তো সে বুঝেও বুঝে না। তাহলে আসল গোড়া ও রক্ষণশীলটা কে? বাহুবলে বলিয়ান নও-জোয়ান বন্ধু আমার! ইসলামের জন্য তোমার প্রাণ উৎসর্গ হোক, এটা তোমার মন অবশ্যই চাইবে। কিন্তু জেনে রেখো, ত্রাস ও ভীতি সৃষ্টি করে ধর্মপ্রচার ইসলামে নেই। নেই ভীতিমুলক রাজদ্রোহবাদ বা সন্ত্রাসবাদ। ইসলাম পছন্দ করে উদারতা, সরলতা, নম্রতা ও কোমলতাকে এবং পছন্দ করে না গরম ও চরম কিছুকে। দ্বীনের নবী দয়ার সাগর (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি সহজ-সরল ও কোমল হবে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ দোযখ হারাম করে দেবেন।” (সহীহুল জামে’ ৬৪৮৪নং)
“যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে ব্যক্তি সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।” (আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ সহীহুল জামে’ ৬৬০৬ নং)
“অবশ্যই আল্লাহ কৃপাময়। তিনি কোমলতা পছন্দ করেন। আর কোমলতার উপর যা প্রদান করেন, তা কঠোরতার উপর, বরং এ ব্যতীত অন্য কিছুর উপর প্রদান করেন না।” (মুসলিম ২৫৯৩ নং)
“নম্রতা যে বিষয়ে থাকে সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যমন্ডিত করে তোলে। আর যে বিষয়কে নম্রতা থেকে খালি করা হয়, সে বিষয় সৌন্দর্যহীন হয়ে যায়।” (আহমাদ, মুসলিম, সহীহুল জামে' ৫৬৫৪ নং)
একদা মা আয়েশা এক ব্যক্তিকে কঠোরতার সাথে কিছু বললে তিনি বললেন, “থামো হে আয়েশা! কোমলতা অবলম্বন কর এবং কঠোরতা ও অশ্লীলতা হতে দূরে থাক---।” (বুখারী, সহীহুল জামে ৬৬২৭ নং)
“হে মানব সকল! আমি যে কর্মের আদেশ করি, তার প্রত্যেকটাই পালন করতে তোমরা কক্ষণই সক্ষম হবে না। তবে তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং সুসংবাদ নাও।” (আহমাদ, আবু দাউদ, সহীহুল জামে ৭৮৭১ নং)
“(দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে) তোমরা সরলতা ব্যবহার কর, কঠোরতা ব্যবহার করো না, মানুষের মনকে খোশ কর এবং তাদের মনে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।” (আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, সহীহুল জামে’ ৮০৮৬ নং) “ঈমান হল সহিষ্ণতা ও উদারতার নামান্তর।” (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে’ ২ ৭৯৫ নং)
দ্বীন-দরদী জোয়ান বন্ধু আমার! দ্বীনের ব্যাপারে তোমার মন কষ্ট পাবে, তা পাওয়া ভালো। দ্বীনের দুশমনদের প্রতি তোমার মন বিষময় হবে, তা হওয়া ভালো। কিন্তু তোমার মনে সহিংসতা স্থান পাবে, এমন ভালো নয়। দাওয়াতের যে পদ্ধতি আমাদের মহানবী (সা.) অবলম্বন করে গেছেন, কেবল সেই সেই পদ্ধতিই তোমার দ্বীন মানা ও প্রচার করার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ, তাতেই আছে সার্বিক কল্যাণ। নচেৎ আবেগবশে খেয়াল-খুশীর অনুসারী হয়ে যথেচ্ছাচারিতা প্রয়োগ করাতে কোন প্রকার কল্যাণ নেই। বরং অকল্যাণ আছে।
তাছাড়া সে প্রয়োগে তোমার অধিকারও নেই। ঐ দেখ না, নবীর প্রতি মহান আল্লাহর কি নির্দেশ। তিনি তাঁকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে। তবে ওরা নয়, যাদের প্রতি তোমার প্রতিপালক দয়া করেন এবং তিনি ওদেরকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আমি জ্বিন ও মানুষ উভয় দ্বারা দোযখ পূর্ণ করবই, তোমার প্রতিপালকের এই কথা পূর্ণ হবেই।” (সূরা হুদ ১১৮ আয়াত) “তোমার প্রতিপালক ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে, তারা সমবেতভাবে সকলেই ঈমান আনত; তবে কি ঈমান আনার জন্য তুমি মানুষের উপর জবরদস্তী করবে?” (সূরা ইউনুস ৯৯ আয়াত)
“তোমরা আহলে কিতাবদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে, কিন্তু সৌজন্যের সাথে। তবে তাদের সাথে নয়, যারা ওদের মধ্যে সীমালংঘনকারী।” (সূরা আনকাবুত ৪৬ আয়াত)।
“তুমি মানুষকে জ্ঞান ও সদুপদেশ দ্বারা তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর এবং ওদের সাথে সদ্ভাবে বিতর্ক কর। তোমার প্রতিপালক জ্ঞাত আছেন -কে তার পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং এও জ্ঞাত আছেন -কে সুপথগামী। যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণই করো, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দেবে, যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে।
তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য তাই তো উত্তম। ধৈর্য ধারণ কর, তোমার ধৈর্য তো আল্লাহরই সাহায্যে হবে, ওদের আচরণে দুঃখ করো না এবং ওদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুন্ন হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সংযমীদের সাথে আছেন এবং তাদের সাথে যারা সৎকর্মপরায়ণ।” (সূরা নাহল ১২৫-১২৮ আয়াত) “ভালো এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা, এর ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে।” (সূরা ফুসসিলাত ৩৪ আয়াত)
আশা করি এ কয়টি আয়াত অনুধাবন করে তোমার মনের উগ্রভাব সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে যাবে এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমার মন খুব সান্ত্বনা পাবে। তবে আরো একটি মহাবাণী শোন, তিনি মহানবী (সা.) কে বলেন, “আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি কোমল-চিত্ত হয়েছিলে, অন্যথা যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর-হৃদয় হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ হতে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। আর তুমি কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর নির্ভর করো; আল্লাহ তার উপর নির্ভরকারী বান্দাগণকে ভালোবাসেন।” (সূরা আলি ইমরান ১৫৯ আয়াত) দুঃসাহসী বন্ধু আমার! সন্ত্রাসী তৎপরতার মাঝে নিরপরাধ মানুষদেরকে খুন করার অধিকার তোমার নেই। এমন কি জিহাদেও নারী-বৃদ্ধ-শিশু প্রভৃতি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার অনুমতি ইসলামে নেই।
একজন পাপ বা অপরাধ করলে, তার শাস্তি অপরে কেন ভোগ করবে? মহান আল্লাহ তো বলেন, “যে ব্যক্তি কোন পাপ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। (তার জন্য সেই দায়ী) এবং কেউ অপরের পাপভার বহন করবে না।” (সূরা আনআম ১৬৪ আয়াত) অতএব ওয়াজেদ মিঞার বোনকে যদি সাজেদ মিঞা (নিজের স্ত্রীকে মারধর করে, তবে ওয়াজেদ মিঞার উচিত নয়, নিজের স্ত্রী) সাজেদ মিঞার বোনকে মারধর করা। বিবেকও বলে না, অপরাধীদের পরিবর্তে নিরপরাধ মানুষদেরকে খুন করতে। কোন জাতির কিছু লোক অথবা গ্রামের কিছু লোক তোমার রক্ত-পিপাসু শত্রু হলেও তুমি ঐ জাতির বা ঐ গ্রামের সকল লোককে তোমার রক্ত-পিপাসু ধারণা করে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করতে পার না। আর শোন মহান আল্লাহ কি বলেন, “এ কারণেই বানী ইসরাঈলকে এ বিধান দিয়েছিলাম যে, যে কেউ প্রাণের বদলে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজের বদলা নেওয়া ছাড়া কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করে এবং যে কারো প্রাণ রক্ষা করে সে যেন (পৃথিবীর) সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করে।” (সূরা মায়েদাহ ৩২ আয়াত)
“আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, সেখানেই সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সূরা নিসা ৯৩ আয়াত)।
অস্ত্র নিয়ে মানুষের মনে-প্রাণে ত্রাস সৃষ্টি করা মুসলিমের কাজ নয়। এমন কি অস্ত্র উঁচিয়ে কাউকে ভয় দেখানোও বৈধ নয় ইসলামে। কথায় কথায় খুন করে দেব, কেটে দেব, শুট করে দেব, মেরে ফেলব’ ইত্যাদি উগ্র হুমকিও কোন মুসলিম দিতে পারে না।
আবুল কাসেম (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভায়ের প্রতি কোন লৌহদন্ড (লোহার অস্ত্র) দ্বারা ইঙ্গিত করে সে ব্যক্তিকে ফিরিস্তাবর্গ অভিশাপ করেন; যদিও সে তার নিজের সহোদর ভাই হোক না কেন।” (অর্থাৎ, তাকে মারার ইচ্ছা না থাকলেও ইঙ্গিত করে ভয় দেখানো গোনাহর কাজ।) (মুসলিম ২৬১৬নং) কথিত আছে যে, “একদা লুকমান হাকীম তার পুত্রকে বললেন, বৎস! যারা বলে, মন্দকে মন্দ দ্বারা দুর করা উত্তম পন্থা’ তারা মিথ্যা ও ভুল বলে। আর যদি তারা এ কথায় সত্যবাদী হয়, তাহলে পাশাপাশি দু’টি আগুন জ্বালিয়ে দেখুক না; একটি আগুন অপর আগুনকে নিভাতে পারে কি না?”
অতএব সত্য ও বাস্তব এই যে, মন্দকে ভালো দ্বারা দূর করা যায়; যেমন আগুনকে নিভানো যায় পানি দ্বারা। পেশাব দ্বারা পায়খানা পরিষ্কার হলেও নাপাকী যায় না, প্রয়োজন হয় পবিত্র পানির। বলা বাহুল্য হিংসাকে হিংসা দ্বারা দূর করা যায় না, প্রয়োজন আছে। প্রেমের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় লাভ হয় বিপক্ষের বেশী। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঞ্ছিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল হয় না তাতে। বরং ফল হয় বিপরীত। অনেক ক্ষেত্রে সাপ মারতে গিয়ে ছিপ ভেঙ্গে বসে থাকে। কখনো বা জলের ছিটা দিয়ে লগির গুঁতো’ খেতে হয়। কখনো হাত বোমা ছুঁড়ে মিইলের আঘাত খেতে হয়।
যৌবন-উন্মত্ত বন্ধু আমার দেহের শক্তিমত্তা নিয়ে অহংকার প্রদর্শন করো না। কারণ মহান প্রতিপালক আল্লাহ অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আর অহংকার হল সত্য প্রত্যাখ্যান ও মানুষকে ঘৃণা করার নাম। অপরকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছজ্ঞান করার মাধ্যমে মানুষকে অহমিকা প্রদর্শন করো না। বংশ-গৌরব, জনশক্তি, ধনগর্ব, শিক্ষা ও জ্ঞানের আত্মম্ভরিতা, রূপ ও রঙের অহংকার, পদ ও গদির অহংকার প্রভৃতির প্রকাশ কোন সময়ই কোনভাবেই বৈধ নয়। অতএব ধর্মের নামে এ সবে অহমিকা প্রদর্শন যে তোমার জন্য আদৌ বৈধ নয়, তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং তুমি যদি তোমার ঐ উন্মত্ততা ও অহংকারের মাধ্যমে মানুষকে সর্বাঙ্গসুন্দর দ্বীনের ব্যাপারে বীতশ্রদ্ধ করে তোল, তাহলে জেনে রেখো যে, মানষকে আল্লাহর পথে আসতে বাধাদানকারীর মত বড় জালেম আর অন্য কেউ নেই।
ধর্মপ্রাণ যুবক বন্ধু! ধর্মীয় অনুভূতি অধিক জাগ্রত হলে জোশে নয়, বরং হুশ দ্বারা কাজ নিতে হবে। সুতরাং নিশ্চয়ই মশা মারতে কামান দাগা’ চলবে না। ধরে আনতে বললে, মেরে আনা’ অবশ্যই বৈধ হবে না। হজ্জ করতে গিয়ে কুরবানীর দিন তথা তার পরের আরো ৩ দিন পাথর মারার স্থানে পাথর মারতে হয়। কিন্তু আবেগবশে অনেকে যেন শয়তানকে সামনে পেয়ে জোশে ও রোষে নির্দিষ্ট। সংখ্যার অধিক অথবা নির্দিষ্ট সাইজের অধিক বড় পাথর মারে। কেউ কেউ পায়ের জুতা এবং মাথার ছাতাও ছুঁড়ে মারে। আর সেই সাথে অন্যান্য হাজীদের প্রতিও ‘যুদ্ধং দেহি’ ভাব দেখিয়ে কঠোরতা ও বলবত্তা প্রদর্শন করে থাকে।
অথচ কুরবানীর দিন পাথর মারার সময় মহানবী (সা.) পাথর কুড়াতে আদেশ দিলে সাহাবাগণ তাঁকে সাতটি পাথর কুড়িয়ে দিলেন। তিনি বড় বড় পাথর না মারার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, “তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে দূরে থাক। কারণ ঐ বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে।” (আহমাদ ১/২১৫, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৩০২৯ নং)
মামুলী ধরনের ছোটখাট ইজতেহাদী মসলা-মাসায়েল নিয়েও দ্বন্দ্বের সাথে উগ্র মনোভাব। দেখা যায় বহু যুবকের। অন্ধ পক্ষপাতিত্ববশে প্রতিপক্ষের আলেম বা লোকেদেরকে পিটিয়ে দাও, মার ছাড়া ওষুধ নেই’ ইত্যাদি বলে অনেক সময় তা কাজেও পরিণত করা হয়। প্রতিপক্ষ হকপন্থী হলেও তা মানতে চায় না মারমুর্তি গর্বিত কিছু যুবক দল।
১৪১৮ হিজরী সনে বোম্বাই মাহিমের বেলালী মসজিদে একবার ইমামতি করতে গিয়ে মাগরিবের নামাযে প্রথম রাকআতে সূরা মাউন এবং পরের রাকআতে ভুলক্রমে সূরা ফীল পড়ে ফেলে নামায শেষ করেছি। সালাম ফিরতেই সকলে এক বাক্যে বলে উঠল, 'নামায নেহী হুই। দুহরাকে পঢ়ী জায়ে!' আমি বললাম, মুসহাফের তরতীব অনুযায়ী কিরাআত জরুরী নয়। অতএব নামায শুদ্ধ। ইমাম সাহেব মেম্বরের উপরে রাখা বেহেস্তী যেওর’ নিয়ে খুলে এক জায়গায় পড়ে বললেন, 'আপকো সিজদায়ে সহু কর লেনা চাহিয়ে থা। ওয়াজিব ছুটনে সে সিজদায়ে সহু জরুরী হোতা হ্যায়। আমি বললাম, মুসহাফের তরতীব অনুযায়ী সূরাগুলো নামাযে পাঠ করা যে ওয়াজিব, তা আগে প্রমাণ করুন, তবেই তো। যাই হোক, ইমাম সাহেব পরিশেষে মেনে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, 'কোয়ী বাত নেহী, নামায হো গয়ী হ্যায়।
মসলাটির ব্যাপারে আমার ভিতরে এবং বাহ্যিক কথাবার্তায় এমন জোর ছিল যে, আমি । হেরে যাব বা আমি ভুল করেছি, তা আমি ভাবি ও প্রকাশ করিনি। কিন্তু কি যেন এক ভয়ে আমার জানটা টিপটিপ করছিল কতক উদীয়মান যুবকের ভাবমুর্তি ও ফিসফিসানি দেখে। অবশেষে সকলে প্রস্থান করলেও এক রাগমূর্তি যুবক ব্যাপারটা এত সহজে মানতে না পেরে আমাদের রুমে এল। আমার এক বন্ধু তাকে বুঝিয়ে বলতে গেলে চোখ রাঙা করে হিরোর মত ঘুসি’ দেখিয়ে বলে উঠল, ‘তু কিয়া সমঝতা হ্যায় বে! তু চুপ, অরনা মার দুঙ্গা!' অতঃপর কোন রকম তাকে সামলানো হয়েছিল। সশব্দে আমীন’-বিরোধী কোন মসজিদে জোরে আমীন’ বললেও প্রায় ঐ একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বহু জায়গায়। এতে নাকি তাদের মসজিদ নাপাক হয়ে যায়। তাই জোরপূর্বক ধোয়াও করায় অনেক জায়গায়। আর এই রূপই ছোটখাট বহু মসলা-মাসায়েল নিয়ে দাঙ্গা বাধাতে চায় বহু সন্ত্রাসমনা উগ্র যুবকদল। কাদা ছুড়াছুড়ি করে সেই নিয়ে গৃহদ্বন্দ্ব বাধায় এক শ্রেণীর বাতিল পন্থীও।
ইসলামের ভিতরেও নানা মত, নানা দ্বন্দ্ব। কিন্তু যুবক ও সত্যানুসন্ধানীরূপে তোমার কর্তব্য হল, ঠান্ডা মাথায় সত্য অনুসন্ধান করে তার অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাগণকে, যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে অতঃপর যা উত্তম তা গ্রহণ করে। ওরাই হল তারা, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত করেছেন এবং ওরাই হল জ্ঞানী লোক।” (সূরা যুমার ১৭-১৮ আয়াত)
আর প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “মুফতীরা তোমাকে ফতোয়া দিলেও তুমি তোমার হৃদয়ের কাছেও ফতোয়া নাও।” (মিশকাত ২৭ ৭৪ নং) অর্থাৎ, বিতর্কিত বিষয়ে তোমার বিবেককেও জিজ্ঞাসা কর যে, কোন্ বা কার ফতোয়াটি সঠিক হতে পারে?
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর ছাড়া সমস্ত রকমের অন্ধ-ভক্তি ও অন্ধ-পক্ষপাতিত্ব বর্জন করে প্রয়োজনে বিপক্ষের সাথে সৌজন্যমূলক তর্কে লিপ্ত হতে পার। কিন্তু তাতে গরম হয়ে মারামারি’ কেন সৃষ্টি হবে? দলীল ও যুক্তির কাজ কি হাত বা লাঠি করতে পারবে? সৎকাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান কালেও হিকমত নিয়ে চলা জরুরী। কারণ, “নিজেকে লাঞ্ছিত করা কোন মুমিনের উচিত নয়। ক্ষমতার অধিক কষ্ট বরণ করা তার জন্য অনুচিত।” (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে ৭৭৯৭ নং)
অতএব কোন কুকাজ বন্ধ করার সময়ে যে পর্যায়ক্রম আছে তা পালনীয়। হাত ও ক্ষমতা দ্বারা না পারলে মুখ দ্বারা, হিকমতের সাথে উপদেশ দ্বারা কুকাজ বন্ধ কর। তাতে সমর্থ না। হলে, সেখানে তোমার অপমান হওয়া বা জীবন যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে অথবা ঐ পাপের চাইতে বড় পাপ সংঘটিত হওয়ার ভয় থাকলে, সে ক্ষেত্রে জোরপূর্বক বল বা বক্তৃতা প্রয়োগ করতে ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না। যেমন গান-বাজনা বন্ধ করতে গিয়ে যদি খুনাখুনির আশঙ্কা থাকে, তাহলে অবশ্যই গান-বাজনা থেকে বড় পাপ হল খুন-দাঙ্গা। অতএব তাতে বাধা দিতে যাওয়া তোমার আদৌ উচিত নয়। নচেৎ, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও হবে আরো গুরুতর।
পক্ষান্তরে যেখানে প্রাণ হত্যার অনুমোদন বা আদেশ আছে, সেখানেও যে কেউ সেই দন্ডবিধি প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ, শাসন কর্তৃপক্ষ (সরকার) ছাড়া সে ‘দন্ড’ কার্যকর করাতে রয়েছে বিপরীত ফল।
তাছাড়া কোন মুসলিম যদি অসৎ কাজ করে, তবে তা দেখেই তাকে কাফের বলে আখ্যায়ন করা বৈধ নয়। বৈধ নয় তার সাথে কাফের’ মনে করে ব্যবহার। কারণ, কোন মুসলিমকে কাফের বলার ব্যাপার ততটা সহজ নয়, যতটা সহজে মানুষ তার বিষ-জিভ প্রয়োগ করে থাকে। কেন না, সে প্রকৃতপক্ষে কাফের না হলে, বক্তা নিজে কাফেরে পরিণত হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, কাফের জ্ঞান করেই কোন মুসলিম ইমাম বা রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা আদৌ বৈধ নয়।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, তথাকথিত বহু ইসলামী চিন্তাবিদই ইসলামে মানসিক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। যার ফলে আজ ইসলামের আসল রূপ চাপা পড়ে বহু মানুষ এ দ্বীনকে সন্ত্রাসের দ্বীন বলে মনে করে। এই মানসিক সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে ইসলামের ইতিহাসের প্রারম্ভেই সাহাবাবর্গের প্রতি। ইসলামের নামে ইসলামের দুশমন ও মুনাফিকরা উক্ত সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে ঘটিয়েছে কত অশুভ ও অবাঞ্ছিত সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ। শহীদ হয়েছেন ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার (রাঃ), তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রাঃ) এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী শও।
হযরত আলী sকে এক অতিরঞ্জনকারী দল ভক্তির আতিশয্যে নিজেদের ইলাহ’ (উপাস্য) মেনে নিয়েছিল। অপর দিকে আর একটি দল নিজেদের অতিরঞ্জিত দ্বীনদারীর ফলশ্রুতিতে তাকে কাফের’ মনে করে বসেছিল! উক্ত দলটির ব্যাপারে মহানবী (সা.) অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন যে, “অচিরেই শেষ যামানায় একটি নির্বোধ যুবদল হবে, যারা লোক সমাজে সবার চাইতে উত্তম কথা বলবে। কিন্তু ঈমান তাদের গলদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা এদেরকে যেখানেই পাবে, সেখানেই হত্যা করে ফেলবে। যারা তাদেরকে হত্যা করবে, তারা কিয়ামতে পুরস্কৃত হবে।” (বুখারী ৩৬৫৪, মুসলিম, মিশকাত ৩৫৩৫ নং)।
এই দল হযরত আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তাদের যে তিনটি সন্দেহ ও অভিযোগ ছিল হযরত ইবনে আব্বাস তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিলে তাদের মধ্যে চার হাজার লোক হক পথে ফিরে আসে। অবশিষ্ট লোকেরা যুদ্ধ বরণ করে নেয় এবং আমীরুল মু'মিনীনের বিরদ্ধে যুদ্ধ করে অনেকে প্রাণ হারায়।
মহানবী বলেন, “যে ব্যক্তি শাসকের আনুগত্য থেকে বের হয়ে এবং জামাআত থেকে পৃথক হয়ে মারা যাবে সে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের মরণ মরবে। যে ব্যক্তি অন্ধ ফিতনার পতাকাতলে (হক-নাহক না জেনেই) যুদ্ধ করবে, অন্ধ পক্ষপাতিত্ব বা গোড়ামির ফলে ক্রুদ্ধ হবে অথবা অন্ধ পক্ষপাতিত্বের প্রতি আহ্বান করবে অথবা অন্ধ পক্ষপাতিত্বকে সাহায্য করবে, অতঃপর সে খুন হলে তার খুন জাহেলিয়াতের খুন।
আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিরুদ্ধে তরবারি বের করে ভালো-মন্দ সকল মানুষকে হত্যা করবে এবং তার মুমিনকেও হত্যা করতে ছাড়বে না, চুক্তিবদ্ধ মানুষের চুক্তি ও পূরণ করবে না, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তার দলভুক্ত নই।” (মুসলিম ১৮৪৮ নং)।
বর্তমান বিশ্বেও বহু চিন্তাবিদ রয়েছেন যাদের কলমের খোচায় অথবা বক্তৃতার ফিকিতে এমন মানসিক সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়ে আছে, যার ফলে মৃত সাহাবাদের কবর উড়িয়ে দিতে এবং বহু ইসলামী রাষ্ট্রকে উৎখাত করতে সন্ত্রাসীরা আনন্দবোধ করবে; বরং এতে আল্লাহর নিকট বৃহৎ প্রতিদানের আশাও করবে।
এই তো সেদিনকার কথা। এক উগ্র যুবক একজন দ্বীনের হকপন্থী আলেমকে তার বাসাতে প্রবেশ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর ‘শহীদ’ (?) হওয়ার আশায় পুলিসের হাতে আত্মসমর্পণ করে তাকেও হত্যা করে দিতে বলে। কারণ, কোন সন্ত্রাসী জামাআতের এই শিক্ষা ছিল যে, একজন ওয়াহাবীকে খুন করতে পারলে বা তার হাতে খুন হতে পারলে জান্নাতী ও শহীদ হওয়া যায়।
সন্ত্রাসকে এমনভাবে সুশোভিত করা হয় যে, যুবক তা বুঝে উঠতে না পেরে শামিল হয়ে যায় সেই দলে ইসলামের খাতিরে। অথচ সে পথ যে, ইসলামকে রক্ষা করার পথ নয়; বরং তা আরো ধ্বংস করার পথ তা বিভিন্ন আড়ম্বরের ফলে বুঝে উঠতে পারে না। বলা বাহুল্য ইসলাম সন্ত্রাস থেকে বহু দূরে। সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং যদি কোন মুসলিম ধর্মের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে থাকে, তাহলে এ কথা মানতেই হবে যে, সে সরল ও সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত এবং সালাফী চিন্তাধারা ও দাওয়াতপদ্ধতি হতে বহু দূরে অবস্থিত।
ইসলামে জিহাদ আছে। তবে জিহাদ ও সন্ত্রাস এক নয়। যেখানে সেখানে ২/১টি ঢিল মেরে দিয়ে কয়েকটা মশা-মাছি মারার নাম জিহাদ নয়। এখানে-ওখানে ২/১ টি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কিছু সংখ্যক নিরপরাধ মানুষকে খুন করার নামও জিহাদ নয়। যেমন ব্যক্তিগত, গ্রামগত, পাটিগত, মাঠগত বা খেলাগত কোন বিবাদকে সাম্প্রদায়িকতার রূপ দিয়ে দাঙ্গা করার নামও জিহাদ নয়। জিহাদ হল তা-ই, যা একমাত্র ইসলামের কলেমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে করা হয়। ধন ও নেতৃত্ব লোভ ও লাভের উদ্দেশ্যে যা করা হয়, তা জিহাদ নয়। জিহাদের জন্য মুসলিম ইমাম (নেতা, ফাসেক হলেও) জরুরী। ইমাম ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন লড়াই লড়া ঐ জিহাদ নয়। মহানবী ১৪ বলেন, “ইমাম তো ঢাল স্বরূপ; তারই আড়ালে থেকে লড়াই লড়া হয়।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, সহীহুল জামে’ ২৩২১, ২৩২২ নং)
জিহাদ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাকল্পে ফরয করা হয়েছে ইসলামে। জিহাদ জিহাদের ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বেসামরিক লোকদেরকে হত্যা করা যাবে না জিহাদে। কোন দূত হত্যা করা যাবে না তাতে। বৃদ্ধ, নারী ও শিশু হত্যা করা যাবে না। শত্রু পক্ষের ফসল নষ্ট করা যাবে না। অপ্রয়োজনে বাড়ি-ঘর জ্বালানো যাবে না এবং উপাসনালয় নষ্ট করা যাবে না। সুতরাং যে মার-দাঙ্গাতে ইসলামী উদার-নীতির লংঘন হয়, তা জিহাদ নয়। পক্ষান্তরে আত্মরক্ষার নাম সন্ত্রাস নয়। ইসলামী রাষ্ট্রকে যালেমদের যুলুম থেকে রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক তৎপরতার নাম সন্ত্রাস নয়। শির্ক, অরাজকতা, স্বৈরাচার, অনাচার এবং অনধিকার বিদ্রোহ দমন করার নাম সন্ত্রাস নয়। সন্ত্রাসবাদ, আগ্রাসনবাদ, আল্লাহ-দ্রোহিতা দমন ও নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে এবং মুসলিম জাতির সম্মান ও সম্পদ
রক্ষার্থে কৃত সংগ্রামের নাম সন্ত্রাস নয়। স্বাধীনতার স্বাধিকার আদায় করার পথে কৃত সংগ্রামের নাম সন্ত্রাস নয়। এ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস-ঝড় সৃষ্টি করে মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিলে তার জন্য দায়ী মুসলিমরা নয়। বিপ্লবী যুবক বন্ধু আমার! তবে আবারো জেনে রাখ যে, এই শ্রেণীর জিহাদ মুসলিম নেতৃত্ব ছাড়া হয় না। ব্যক্তিগতভাবে পাৰ্টিৰ্গত দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা করার নাম জিহাদ নয় এবং রাজনৈতিক গদি-দখলের লড়াই-এ হত ব্যক্তি আল্লাহর নিকট শহীদ’ নয়।
হয়তো বলবে, ইসলামে কি রাজনীতি নেই? হ্যা, ইসলামে রাজনীতি অবশ্যই আছে। তবে ইসলামে আছে ইসলামী রাজনীতি; কোন অনৈসলামী রাজনীতি নয়।
ইসলামে নবী-রসুলগণও রাজ্য-শাসন করে গেছেন। রাজ-কার্য পরিচালনা করে গেছেন বেহেস্তের সুসংবাদ-প্রাপ্ত খলীফা ও সাহাবাগণ। আর সে রাজনীতির নীতি-রচয়িতা ও আইনপ্রণেতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। এর নীতি-শাস্ত্র হল কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। কারণ, আল্লাহর পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম ও বিধান চলতে পারে না। তার আইন ছাড়া আর কারো আইন -কোন মানব-রচিত আইন- নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। “সকল কর্তৃত্ব আল্লাহরই।” (সূরা আনআম ৫৭ আয়াত) “সতর্ক হও! সুবিচার তারই এবং তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।” (ঐ ৬৩ আয়াত) “বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই।” (সূরা ইউসুফ ৪০ আয়াত)
ইয়াকূব (আঃ) তাঁর পুত্রদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে পারি না। বিধান আল্লাহরই। আমি তারই উপর। নির্ভর করি এবং যারা নির্ভর করতে চায় তাদেরও উচিত, তাঁরই উপর নির্ভর করা।”
মহান আল্লাহ বলেন, “তবে কি ওরা অজ্ঞ (জাহেলী) যুগের বিচার-ব্যবস্থা কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী (মু'মিন) সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর উত্তম মীমাংসাদাতা আছে?” (সূরা মাইদাহ ৫০ আয়াত)
মহানবী (সা.) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহই হলেন মীমাংসাদাতা (বিধানকর্তা) এবং যাবতীয় নির্দেশ ও বিধান তারই।” (আবু দাউদ ৪৯৫৫, নাসাঈ ৫৪০২, হাকেম, সহীহুল জামে ১৮৪৫ নং)
ইসলামে মুনাফেকীর রাজনীতির অস্তিত্ব নেই৷ সাম, দান, ভেদ ও দন্ড -এই চার প্রকার নীতি নিয়ে অন্যায়ভাবে অসঙ্গত সমতা সাধন, অন্যায় ও অসৎভাবে অর্থ দান বা ব্যয়করণ, অন্যায় ও অবৈধভাবে একটি সংহতিপূর্ণ গোষ্ঠীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করে ভেদ আনয়ন এবং অন্যায় ও স্বৈরাচারিতার সাথে কোন সম্প্রদায়কে দন্ড প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে গদি টিকাবার রাজনীতি ইসলামে নেই।
আমেরিকান, ইউরোপীয় বা কোন মানব-রচিত নীতির রাজনীতি ইসলামে নেই। ইসলামে কোন দলাদলি নেই, নেই কোন জাতীয়তাবাদ। এক দল অপর দল বা বিরোধী দলের উপর খামাখা দোষ চাপিয়ে নিজের ফায়দা লুটার রাজনীতি, কাদা হুঁড়াছুঁড়ির রাজনীতি, আত্মহত্যা, খুন ও ভাঙচুরের রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শনে ধ্বংসলীলা ও ধর্মঘট বা হরতালে জন-জীবন ব্যাহত ও অচল করার রাজনীতি ইসলামে নেই, কোন সভ্য সমাজে নেই। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পার্টাপাটি করে অন্তর্দ্বন্দ্বে ও আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতি নিজেকে ছিন্নভিন্ন করতে পারে না। ভোটাভোটির সাথে লাঠালাঠি করে দেশ ও দশের তথা স্বজাতির ক্ষতি করতে কোন মুসলিম পারে না। এমনিতে রাজনীতির ধারাই এমন যে, কেউ দেশের স্বার্থে পাটি করে মাটি হয়। আর কেউ নিজের স্বার্থে পার্টি করে প্রপাটি বানিয়ে হয়ে যায় খাঁটি সোনা! কেউ নেচে মরে, আর কেউ ঝুলি ভরে। রাজনীতির এই ব্যাপক প্রভাবে আজকের যুবকরা খুব বেশী প্রভাবান্বিত।
হকপন্থী তারা, যাদের নিকট হক আছে; যদিও তারা সংখ্যালঘু। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার পূজারী নয়। কারণ, এ পূজা কুরআনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথা মত চল, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে। তারা কেবল কল্পনারই অনুসরণ করে এবং কেবলমাত্র অনুমানই করে থাকে।” (সূরা আনআম ১১৬ আয়াত)
“তুমি বল, মন্দ ও ভালো এক বস্তু নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। সুতরাং হে জ্ঞানবান সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা মাইদাহ ১০০ আয়াত)
একটি চিরবাস্তব এই যে, এ সংসারে ভালোর সংখ্যা কম, মন্দের সংখ্যা বেশী। এ বাস্তব পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, “তুমি যতই চাও না কেন, অধিকাংশ লোকই ঈমান আনবে না।” (সূরা ইউসুফ ১০৩ আয়াত) এ মর্মে আরো দেখ, (২/১০০, ১১/১৭, ১২/১০৬, ১৩/১, ১৬/৮৩, ১৭/৮৯, ২৫/৫০, ৩৬/৭, ৪০/৫৯)
“অধিকাংশ লোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৪৩ আয়াত) এ মর্মে আরো দেখ, {/১৭, ১০/৬০, ১২/৩৮, ২৪/৭৩, ৪০/৬১) “আমার বান্দাগণের মধ্যে কম সংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ।” (সূরা সাবা ১৩ আয়াত) এ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই হকের ব্যাপারে অবুঝ ও অজ্ঞ। এ প্রসঙ্গ কুরআন মাজীদে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ দেখ, (৫/১০৩, ৬/৩৭, ৬/১১১, ৭/১৩১, ৭/ ১৮৭, ৮/৩৪, ১০/৫৫, ১২/২১, ১২/৪০, ১২/৬৮, ১৬/ ১৮, ১৬/৭৫, ১৬/১০১, ২১/২৪, ২৫/৪৪ ২৭/৬১, ২৮/ ১৩, ২৮/৫৪, ২৯/৬৩, ৩০/৬, ৩০/৩০, ৩১২৫, ৩৪/২৮, ৩৪/৩৬, ৩৯/২৯, ৩৯/৪৯, ৪০/৫৭, ৪৪৩৯, ৪৫/২৬, ৫২/৪৭)। (আগামী হযরত ঈসার যুগ ছাড়া) প্রত্যেক যুগে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সত্যত্যাগী ফাসেক। এ মর্মে দেখ, (৫/৫৯, ৪/৭৮, ৩/১১০, ৭/১০২, ৯৮, ২৩/৭০)। সুতরাং বুঝতেই তো পারছ বন্ধু! অধিকাংশ মানুষকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, কৃতজ্ঞ না করা পর্যন্ত, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝদার ও জ্ঞানী না হওয়া পর্যন্ত এবং বেশীরভাগ মানুষ সত্যানুসারী না হওয়া পর্যন্ত বর্তমানের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা সহজ নয়।
মহানবী (সা.) বলেন, “মুষ্টিমেয় লোক নিয়ে পৃথিবীতে ইসলামের সূচনা হয়েছিল। তার সমাপ্তিও হবে অনুরূপ। সুতরাং সুসংবাদ সেই মুষ্টিমেয় লোকদের জন্য।” (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে' ১৫৮০ নং)
যুবক বন্ধু আমার! দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের মন রক্ষা করে চলার রাজনীতি ইসলামে নেই। ইসলামের যাবতীয় নীতি হল কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যম। অতএব অধিকাংশ
মানুষ বাতিলপন্থী হলে তাদের মন যোগিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার মত দুঃসাহসিকতাপূর্ণ রাজনীতি মুসলিম করতে পারে না। মহানবী মুক্তি বলেন, “যে ব্যক্তি লোকেদেরকে অসন্তুষ্ট করেও আল্লাহর সন্তুষ্ট অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির জন্য লোকেদের কষ্টদানে আল্লাহই যথেষ্ট হন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকেদের সন্তুষ্টি খোজে, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ লোকেদের প্রতিই সোপর্দ করে দেন।” (তিরমিযী, সিলসিলাহ সহীহাহ ২৩১ ১নং)
যুবক ভাই আমার! যুবকের জীবন হওয়া উচিত তিনটি নৈতিকতার সমষ্টি। অর্থাৎ, তার জীবনে থাকবে রাব্বানী, সালাফী ও হারাকী কৰ্মসুচীর ভারসাম্যপূর্ণ তৎপরতা। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দ্বীনী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো, যথাসাধ্য দ্বীনের খিদমত করা এবং সলফে সালেহীনদের তরীকা অনুযায়ী দ্বীন প্রতিষ্ঠাকল্পে আমরণ সংগ্রাম করার স্পৃহা ও আন্দোলন থাকবে তার হৃদয়-মনে। পক্ষান্তরে কেবল রাব্বানিয়াত ও রূহানিয়াত থাকলে সে নিছক সুফীবাদী হয়ে পড়বে। কেবল হারাকী হলে নিছক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে উঠবে। অন্যথা সালাফিয়াত ছাড়া উভয়ের কোন মুল্যই নেই। আবার রাব্বানিয়াত ও সালাফিয়াত ছাড়া কোন রাজনীতি, কোন আন্দোলন সঠিক ইসলামী আন্দোলন নয়। বরং তা হয়তো ব্যক্তিপূজা ও গদিপূজার আন্দোলন।
বলা বাহুল্য উক্ত তিন উপাদান-সমষ্টির ব্যক্তিত্ব হল ‘কামেল’ ব্যক্তিত্ব। এমন ব্যক্তিত্বই ছিল সলফে সালেহীনদের।
তবে বন্ধু একটি কথা এখানে অবশ্যই মনে রেখো যে, রাজনীতি ত্যাগ করাও এক রাজনীতি। বরং রাজনীতি দিয়ে ইসলামী দাওয়াতের কাজ শুরু করা হিকমতের কাজ নয়; আম্বিয়াগণের তরীকাও তা নয়। মহানবী # মক্কাতে রাজা হননি। কুরাইশরা তাঁকে রাজা করতে চাইলেও তিনি জানতেন যে, তা আল্লাহর দ্বীন প্রচারে সহায়ক নয়। রাজ্য হাতে পেয়ে প্রজার উপরে জোরপূর্বক ইসলাম চাপিয়ে দিবেন -তাও সম্ভব ছিল না। আশঙ্কা ছিল বিদ্রোহ সৃষ্টির। অতএব তখন প্রয়োজন ছিল তরবিয়ত ও মানুষ তৈরীর। নও মুসলিম ডক্টর জন পার্কস তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসলাম সম্বন্ধে কাউকে বোঝাতে চাইলে ধৈর্য ধরুন, ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইনফরমেশন দিন। রাজনীতিকে দূরে ঠেলে রাখবেন এ সময়ে। তাহলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে রক্ষা পাবেন। (মাসিক দারুস সালাম, ফেব্রুয়ারী ২০০০, ২৪পৃঃ)।
যুবক বন্ধু আমার! সীরাতের আলোকে মুসলিমদের বিভিন্ন সমাজ আছে। মক্কী, হাবশী, মাদানী প্রভৃতি। মক্কী সমাজে বসবাস করে মাদানী সমাজের কার্যকলাপ চালাবে -তা তো হিকমতের কাজ নয় বন্ধু ইসলামের জন্য মাথা দেওয়ার মত তোমার স্পৃহা আছে, তুমি ইসলামের জন্য মাথা দাও। কিন্তু তার আগে খতিয়ে অবশ্যই দেখে নাও যে, আসলে তোমার মাথা দেওয়াতে সত্যপক্ষে ইসলামের কোন লাভ আছে, নাকি ক্ষতি।
হ্যাঁ, আর কাফেরদের অপপ্রচারে তুমি নিরাশ হয়ো না ভাই! তাদের বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের বদনাম করার জন্য যে সব শব্দ ব্যবহার করে থাকে, তাতে তোমার বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। দুশমন তো। তারা নখে পারলে কোদাল চায় না। তোমার মঙ্গল কোন দিন চাইবে কি তারা? ‘মৌলবাদ’ ‘মোল্লাতন্ত্র প্রভৃতি শব্দ তাদের তুণের এক একটি দিব্যাস্ত্র। মানুষের মাঝে আল্লাহর বিধান সম্পর্কে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মুসলিম বুদ্ধিজীবীরাও এই ধরনের শব্দ বেছে নিয়ে প্রচার করে থাকে।
আল্লাহর বিধানকে এরা চিরাচরিত প্রথা মনে করে। মনে করে, এ হল অশিক্ষিত মানুষের আনা কুসংস্কার। ভাবে, এ হল সামাজিক রক্ষণশীলতা!! অহীর আলোহীন তাদের ঐ পাশ্চাত্য দেমাগে মনে করে তাদের পথটাই সঠিক। মহান আল্লাহ ঐ ধরনের এক শ্রেণীর লোকের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “তুমি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যাদেরকে গ্রন্থের এক অংশ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও শয়তানকে মান্য করে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, মুমিনদের তুলনায় তারাই অধিকতর সুপথগামী। এদেরই প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। আর আল্লাহ যাকে অভিসম্পাত করেন, তুমি তার জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।” (সূরা নিসা ৫১-৫২ আয়াত)
আর মৌলবাদ’-এর দু'টো দিক। প্রথম হল সব কিছুতে অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি এবং তার সঙ্গে উগ্রতা ও সহিংসতাও। এমন মৌলবাদের সাথে ইসলামের নিকট অথবা দূরের কোন সম্পর্ক নেই। অবশ্য দ্বিতীয় দিকটা হল, মৌলনীতির অনুসরণ (ঈমানসহ আমল) করা। আর এ অর্থে প্রত্যেক মুসলিমকে মৌলবাদী’ হওয়া জরুরী। নচেৎ সে মুসলিমই থাকবে না।
যুবক বন্ধু আমার! মৌলবাদী খেতাব নিয়ে তুমি গর্বিত হও। তোমার মুল আছে বলেই তুমি মৌলবাদী। আর যার মূল নেই, কেবল কান্ড ও ডাল-পাতা আছে, তার বাহ্যিক রূপ ক’দিনের? মূলহীন কান্ড ও ডাল-পাতা হল প্রাণহীন। আর প্রাণহীন হল শুষ্ক ইন্ধন। এরা দোযখের ইন্ধন। পক্ষান্তরে যার মূল আছে, তার সজীব কান্ডও আছে, তরোতাজা ডালপাতা, ফুল-ফলও আছে।
“তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে কালেমা ত্বাইয়েবা (পবিত্র বাক্যে)র উপমা দেন, যেমন উৎকৃষ্ট (পবিত্র) বৃক্ষ; যার মূল সুদৃঢ়, যার শাখা-প্রশাখা গগনস্পর্শী। তার প্রতিপালকের ইঙ্গিতে সে অহরহ ফলদান করে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
পক্ষান্তরে অপবিত্র বাক্যের উপমা অপবিত্র বৃক্ষ; যার মূল মাটি থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে, যার কোন স্থিতি নেই। আল্লাহ মুমিনদেরকে সুদৃঢ় বাক্য দ্বারা সুদৃঢ় করেন, ইহকালে এবং পরকালে। আর আল্লাহ যালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।” (সূরা ইবরাহীম ২৪-২৭ আয়াত)
অতএব তুমি কার প্রশংসা পছন্দ কর? বেদ্বীন কাফেরদের, নাকি তোমার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর?