নজরবাজির বাজিতে হেরে গেলে যুবকের মনের নিভৃত কোণে গোপন প্রেম সৃষ্টি হয়ে যায়। জেগে ওঠে কত কল্পনা, কত বাসনা। পুনরায় সাক্ষাতের আশা মনকে অতিষ্ঠ ও অধীর করে। তোলে। রাতের অন্ধকারে যেন কাটার বিছানায় শয়ন করে অনিদ্রায় কল্পনার জগতে বিচরণ করে। দেখা ছবি মানসপটে ভেসে উঠলে তাতালো পাত্রে পানি পড়ার মত মনটা ছ্যাক’ করে। ওঠে। প্রেম-সমুদ্রের তরঙ্গমালা রিক্ত বক্ষকে প্রবল বেগে আঘাতের পর আঘাত দিতে থাকে। প্রণয়ের কচি-কিশলয় যেন মনের মাটি ছেড়ে কামনার মুক্ত আকাশে দোলা দেয়। শয়নেস্বপনে-নিশি জাগরণে ভালোবাসার আবেগভরা কত কবিতা স্মৃতির মানসপটে জেগে ওঠে। গোপন প্রিয়ার উদ্দেশ্যে মন গেয়ে ওঠেঃ
‘বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুম দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাদবে তুমি, আমার চাতকী!
--- বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের সাথী নও,
দুরে যত রও এহিয়ার তত নিকট হও!
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে।
যত গোপন তত মধুর - নাইবা কথা কও?
শয়ন-সাথে রও না তুমি, নয়ন পাতে রও।
ওগো আমার আড়াল-থাকা, ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ, আমি আছি এই তো খুশী মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণী,
কাজ কি খোজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর।
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাতে যখন একলা শোব চাইবে তোমায় বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ।
দুখের সূরায় মস্ত হয়ে।
থাকবে এ প্রাণ তোমায় লয়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ!
এইভাবে যত দিন যায়, গোপন প্রিয়ার প্রতি দর্শন-তৃষ্ণা তত বেড়ে ওঠে। সাক্ষাতের বাসনা তীব্র হয়। কিন্তু বাধা পড়ে সামাজিক ও ধর্মীয় নৈতিকতার সজাগ দৃষ্টি। ফলে বেড়ে ওঠে বেদনা। আর রাত্রি যত গভীর হয়, প্রভাত তত এগিয়ে আসে। বেদনা যত নিবিড় হয়ে আসে, প্রেম তত কাছে আসে। প্রেমে যত বাধা পড়ে, প্রেম তত বেড়ে চলে। মনের বাসনা, কল্পনা ও সেই সাথে বাধার ফলে মনের চাঞ্চল্য আরো বৃদ্ধি পায়। মন চায় প্রেমের কথা প্রেমিকার কাছে ফুটে বলতে। সরাসরি সে সুযোগ না থাকলে কলম দ্বারা সে নিবেদন ও আবেগ পৌঁছে দেওয়া হয়।
একলা রাতে শুয়ে থাকি
স্বপনে তোমারে দেখি।
বালিশ ভিজে চোখের জলে
বিছান ভিজে ঘামেতে,
যারে যা চিঠি লেইখা দিলাম
সোনার বন্ধুর নামেতে---!!!
মন তখন কলমের মুখে কাগজের সাথে ভালোবাসার কত কথা বলে। কত কথা ভাষায় প্রকাশ করতে না পেরে না বলা থেকে যায়।
কলমে নাই কালি হাতে নাই জোর,
পত্র লিখতে বসে আমার রাত্রি হল ভোর!
প্রীতির সাথে ইতি দিয়ে শেষ করলাম লেখা,
জানি না যে, তোমার সাথে কবে হবে দেখা!
কখনো বা কথা হয় মনে-মনে, গোপনে, কানে-কানে, ফোনে-ফোনে। প্রেম এমনই জিনিস যে, মনের গোপন কোণে তা ধীরে-ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। প্রেম যোগায় কল্পনা। ভালোমন্দের কল্পনা। আশা ও আশঙ্কার, ভয় ও ভরসার কত শত সুদূর কল্পনা। আর কল্পনা আনে চিন্তাশক্তি ও সাহিত্যিক রচনা-শৈলিতা। প্রেম আনে জীবনের আন্দোলন, আমূল পরিবর্তন ও সংস্কার। সান্নিধ্যের আশা এবং দূরত্বের হতাশ তথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কার সুখ ও কষ্ট মানুষের মনে কবিত্ব সৃষ্টি করে।
নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
মন তখন শুধু গেয়ে ওঠে ভালোবাসার গান, মিলনের গান, বিরহের গান।
‘তুমি আমায় ভালোবাস তাই তো আমি কবি,
তোমার এ রূপ-সে তো তোমার ভালোবাসার ছবি!
প্রেম যেমন দুই প্রকার; পবিত্র ও অপবিত্র। ঠিক কবিত্বও দুই প্রকার; বৈধ ও অবৈধ। আকাশ-কুসুম অবাস্তব কল্পনা করে আবোল-তাবোল বা অশ্লীল কথামালার কবিতার কবি সাধারণতঃ অপবিত্র প্রেমের প্রেমিকই হয়ে থাকে। আর এ শ্রেণীর কবির মন যখনই কবিতা লিখতে নির্জনে বসে, তখনই শয়তান তার সঙ্গী হয়ে কবির কল্পনায় সহযোগিতা করে। (সহীহুল জামে ৫৭০৬ নং)।
এ শ্রেণীর কবি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে থাকে। তুমি কি দেখ না যে, ওরা প্রত্যেক উপত্যকায় (লক্ষ্যহীনভাবে সর্ববিষয়ে) কল্পনাবিহার করে? এবং ওরা যা বলে, তা করে না।” (সূরা শুআরা ২২৪-২২৬ আয়াত)
এ শ্রেণীর কবি কখনো তাওহীদ ও ইসলামের প্রশংসা ও জয়গান গাইলেও শির্ক ও কুফরী তথা বিদআতের প্রশংসা এবং জয়গান গেয়ে থাকে। কখনো বীরত্বের কথা, কখনো নারীপ্রেমের কথা, কখনো সতীত্বের নিন্দা, আবার কখনো বেশ্যার প্রশংসা, এবং এইভাবে জীবনের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে কবিতা রচনা করে থাকে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে কবিতায় যা বলে, মনে তা বিশ্বাস রাখে না। যতটা বলে, বাস্তব ততটা নয় বা মোটেই নয়। যা বলে, তা নিজে করে না।
প্রেমজালে আবদ্ধ কবি বন্ধু আমার! তোমার প্রেম যদি পবিত্র হয়, তাহলে সে কথা ভিন্ন। তোমার কবিতার শব্দ-ছন্দ যদি কল্পনা-প্রসূত অবাস্তব না হয়, অতিরঞ্জিত, অশ্লীল ও নৈতিকতা-বিরোধী না হয়, বরং বাস্তবধর্মী ও সত্যের আহ্বায়ক হয়, বাতিলকে খন্ডন করার জন্য হয়, তাহলে অবশ্যই তা প্রশংসনীয়। মহান আল্লাহ বলেন, “তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা ঈমান এনে সৎকর্ম করে, আল্লাহকে খুব স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে। অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?” (ঐ ২২৭ আয়াত)
প্রেমিক বন্ধু আমার। তুমি হয়তো ভাবতেও পার যে, তোমার প্রেম পবিত্র। কিন্তু জেনে রেখো যে, মানুষের মন বড় মন্দপ্রবণ। যেটা করতে নিষিদ্ধ, সেটা করেই যেন মানুষের আনন্দ বেশী। আর যেটা নিয়ে মানুষ আনন্দে মত্ত ও উদাস হতে পারে, সেটাই দ্বীনে নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি অনুরাগ, আকর্ষণ ও কৌতুহল মানুষের প্রকৃতি। বলা বাহুল্য, এখানেই থাকে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আসল পরীক্ষা। যে বই-এর উপর লেখা থাকে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পড়া নিষেধ’ সে বইটাই অপ্রাপ্তবয়স্করা আগে পড়ার চেষ্টা করে। নচেৎ যেন, শান্তি পায় না, স্বস্তি পায় না। অধিকাংশ মানুষেরই মনের প্রবণতা ঠিক পাগলার মত; যখন পাগলাকে বলা হল, ‘পাগলা সঁকো নাড়ি নে! পাগলা বলল, মনে ছিল না, ভালো, মনে করে দিলি। আর এই বলে সে অর্ধভগ্ন বাঁশের সাঁকো নেড়ে ভেঙ্গেই ফেলল।
এমনই ঘটে থাকে। যার যাতে আনন্দ, তাকে সে কাজ করতে নিষেধ করলে অনেক সময় তার সেই প্রবৃত্তি অধিকতর প্রবল হয়ে ওঠে। পরন্তু যার যে কাজে প্রবৃত্তি, তাকে সেই কাজে নিষেধ করতে গিয়ে দেখা যায় যে, তার সে প্রবৃত্তি জেগে উঠেছে, যা সে ভুলে ছিল।
আশা করি যে, তুমি সে প্রকৃতির নও। কারণ, তোমাকে মনে রাখতে হবে যে, “বেহেস্তের পথ বড় কঁাটাময় এবং দোযখের পথ বড় আনন্দময়।” (বুখারী মুসলিম আহমাদ, তিরমিযী, সহীহুল জামে’ ৩ ১২৬, ৩১৪৭ নং) আর সে আনন্দের কি কোন মূল্য আছে, যার পশ্চাতে অপেক্ষা করে দুঃখ ও কষ্ট? কিন্তু মনের উপর তোমার যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তাহলেই সর্বনাশ! পরন্তু আকাঙ্খার ধন যত দুর্লভ হয়, মনের আকাঙ্খা তত বাড়ে। আর ভোগ যেমনই হোক, তার একটা তীব্র নেশা আছে। একপাত্র নিঃশেষ করে অবিলম্বে আর এক পাত্রের দিকে হাত বাড়াতে ইচ্ছা হয়।
মন্দপ্রবণ মন যত ভোগ করে, তার ভোগের বাসনা ততই বেড়ে চলে। তুমি যদি কারুনের সমান ধন-মাল পাও, ফেরাউনের মত সস্বাস্থ্য ও দেহ পাও এবং সর্বপ্রকার রঙ, রূপ ও লাবণ্যের দশ হাজার উদ্ভিন্ন-যৌবনা সুন্দরী যুবতী শয্যা-সঙ্গিনীরূপে পাও, তবুও তুমি কি মনে কর যে, এতে তোমার মন-জান ভরবে? কক্ষনো না। অবৈধ পথে বগাহীন মনের প্রবৃত্তি ও প্রবণতাই হল এমনি। পক্ষান্তরে হালাল পথের একটি নারীই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। মনের সকল চাহিদা তারই মাঝে মিটে যাবে; যদি তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে। নচেৎ অবৈধ প্রণয় ও কামনার জ্বালা তোমার মনকে কোনদিন শান্তি দিতে পারবে না।
কহিবে না কথা তুমি! আজ মনে হয়,
প্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়।
জন্ম যার কামনার বীজে
কামনারই মাঝে সে যে বেড়ে যায় কল্পতরু নিজে।
দিকে দিকে পাখা তার করে অভিযান,
ও যে শুষিয়া নেবে আকাশের যত বায়ু প্রাণ।
আকাশ ঢেকেছে তার পাখা
কামনার সবুজ বলাকা!
প্রেম সত্য, প্রেম-পাত্র বহু অগণন,
তাই-চাই, বুকে পাই, তবু কেন কেঁদে ওঠে মন।
নিদ্রাহারা বন্ধু আমার! ধোকা খেও না অতিরঞ্জিত উপন্যাস ও ফিল্মী-দুনিয়ার রোমান্টিক বিভিন্ন প্রেম-কাহিনী পড়ে ও শুনে। 'প্রেম অনির্বাণ’ এ কথা সত্য হলেও তোমার প্রেম যে। ঐরূপ বিরল ও রোমান্টিক হবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? তুমি তো পুরুষ। পুরুষের মত মনকে সবল কর এবং নিজেকে ‘হিরো’ করার চেষ্টা করো না।
পক্ষান্তরে যদি কোন সুন্দরী তোমাকে অযাচিতভাবে প্রেম নিবেদন করে, তবুও তুমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে এমন ‘ইদুর-মারা কল’-এ পা দিও না। নচেৎ প্রেমিক কবি হওয়ার বদলে নিজের প্রতিভাই হারিয়ে বসবে।
হ্যা, আর ‘ইয়ে করে বিয়ে অর্থাৎ পরিচয় থেকে প্রণয় এবং প্রণয় থেকে পরিণয় হওয়ার কথা ভাবছ? এমন বিবাহকে পছন্দ করে বিবাহ' নাম দিলেও আসলে তা হল ইউরোপীয় কোটশীপ’ প্রথা। যা কোন মুসলিমের জন্য বৈধ ও শোভনীয় নয়। সূদের নাম পরিবর্তন করে লভ্যাংশ’ বললে যেমন সূদ হালাল হয় না, ঠিক তেমনি বিয়ের আগে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে, চোখ, হাত, জিভ, পা ও যৌনাঙ্গের ব্যভিচার করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিয়ে করাকে ‘লাভ-ম্যারেজ’ বা ‘পছন্দ করে বিয়ে নাম দিলে তা হালাল হয়ে যায় না। ইসলাম পছন্দ করে বিয়েকে বিধিবদ্ধ করেছে এবং বিয়ের আগে কনেকে একবার দেখে নিতে অনুমতি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিয়ের আগে হৃদয়ের আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রেম সৃষ্টির জন্য বরকনের হাতে ডোর ছেড়ে দেয়নি। যেমন উভয়ের মধ্যে কারো তার বিবাহে অসম্মতি থাকলে জোরপূর্বক বিবাহ-বন্ধনকে ইসলাম অনুমোদন ও স্বীকৃতিই দেয় না।
আসল কথা হল, আধুনিক যুগের পাশ্চাত্যের অভিশপ্ত ছায়া অনেক মুসলিম যুবক-যুবতীর মাঝেও বহু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও সিনেমা-জগতের মাধ্যমে এসে পড়েছে। তাই পশ্চিমী কায়দায় তারা নিজেদের সংসার গড়ে তোলার পূর্বে এমন যৌনাচার ও ভালোবাসাকে একটা বৈধ ও সভ্য ফ্যাশন বলে বরণ করে নিয়েছে। অথচ পাশ্চাত্য সমাজ, যেখানে 'লাভ-ম্যারেজ’ ছাড়া। অভিভাবকদের অভিজ্ঞতালব্ধ উপায়ে এবং শরয়ী দূরদর্শিতার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিবাহ মোটেই হয় না বললেই চলে। যৌন-স্বাধীনতার সে লাগামছাড়া দেশে দাম্পত্য-জীবন যে কত তিক্ত ও জ্বালাময়, তা অনেক মানুষেই জানে।
পাশ্চাত্য সভ্যতায় আনুষ্ঠানিক বিবাহ তুলনামূলকভাবে খুবই কম হয়। আর যেটুকু হয় সেটুকু বড় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও দেহ-মন দেওয়া-নেওয়ার পর হয়! বন্ধু-বান্ধবীরূপে বাস করতে করতে ৩৫/৪০ বছর বয়সে পেীছে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কেউ হয়, কেউ হয় না। কেউ টেস্ট করতে করতেই জীবন অতিবাহিত করে ফেলে; পছন্দ আর হয়ে ওঠে না। আমেরিকার এ রকমই এক বরের বয়স ৯৪ এবং কনের বয়স ৯৩ বছর। এই দীর্ঘ প্রায় এক শতাব্দী কাল ধরে বন্ধুত্ব ও এক অপরকে বুঝে নেওয়ার পর তারা এই সেদিন বিবাহিত সংসার-জীবনে প্রবেশ করল। আর তারা এ কথাও প্রকাশ করল যে, তাদের বাসর (?!) রাত ছিল জীবনের সবচেয়ে লম্বা (?) ও মধুরতম রাত! (আয-যিওয়াজ পত্রিকা, এপ্রিল-জুন ১৯৯৮, ২৫পৃঃ)
স্বাধীনতাকামী বন্ধু আমার! এমন নৈতিকতা ও শালীনতা-বর্জিত স্বাধীনতাকে প্রগতি ভেবে বসো না। কারণ, এটাই হল তাদের দুর্গতিময় অধোগতি।
হ্যা, আর কোন অমুসলিম নারীর প্রেমে পড়ে বলো না যে, তুমি তো একজন মানুষকে হেদায়াতের আলো দানের চেষ্টা করছ। বরং হয়তো আসল কথা হল এই যে, তুমি তার প্রেমজালে বন্দী হয়ে পড়েছ। আর তা যদি সত্য হয়, তাহলে মহান প্রভুর নির্দেশ শোন। তিনি বলেন, “মুশরিক নারীগণ ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিবাহ করো না; যদিও তারা তোমাদের নিকট মনোহারিণী হয় তবুও মু'মিন (মুসলিম) দাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা বাকারাহ ২২১ আয়াত) নারী-পুরুষের মাঝে সাম্য প্রতিষ্ঠার যুগে ধর্ষণ অস্বাভাবিক নয়, যেমন অস্বাভাবিক নয় যে কোনও ধরনের রমণীর সাথে ভালোবাসা হয়ে যাওয়া। যা অস্বাভাবিক তা হল, একজন জ্ঞানী ও মুসলিম যুবকের এই প্রমাণ করা যে, পিরীতে মজিল মন, কি বা হাঁড়ি, কি বা ডোম!” বেপর্দা পরিবেশে প্রেম-পিরীত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অস্বাভাবিক হল একজন মুসলিম যুবকের বেপর্দা মহিলাকে ভালোবেসে ফেল। সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে প্রেম হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অস্বাভাবিক হল, মুসলিম দেশেও এমন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চালু রাখা। বাড়ির দাসীর সঙ্গেও অবৈধ প্রণয় গড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। যা অস্বাভাবিক তা হল, মুসলিম পরিবারের এমন ঢিলা তরবিয়ত ও অবজ্ঞাপূর্ণ অভিভাবকত্ব।
কোন নিকটাত্মীয়া যুবতীর সাথেও ভালোবাসা হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হল, একই বাড়িতে এগানা-বেগানার এমন সহাবস্থান।
প্রেম তো হতেই পারে। প্রেম তো এক প্রকার যাদু। কোন প্রকারের মনের মিল বা আকর্ষণ সৃষ্টি হলে এবং প্রবৃত্তির ডোর লাগামহীনভাবে ছেড়ে দিলেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। কোন প্রকার ভালো লেগে গেলেই হল। দ্বীন, সম্পদ, রূপ বা বংশ, কারণ যাই হোক না কেন, মনের ভালো লাগা সবার শীর্ষে। ভালো লাগার কাছে বিবেকও হার মেনে যায়। সকল বিচারবিবেচনা বিকল হয়ে পড়ে। কুৎসিত হলেও প্রেমিকের চোখে সেই হয় বিশ্বসুন্দরী। অপরাধ করলেও তার সকল ভুল ফুল স্বরূপ দৃষ্টিগোচর হয়। প্রেম মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। বেহায়া ও নির্লজ্জ করে ফেলে, করে ফেলে অস্থির-চিত্ত ও অর্ধ-পাগল।
‘চেতনেতে অচেতন, প্রেমে টানে যার মন। নদী যখন বর্ষার পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে কানায়-কানায় প্রবাহিত হয়, তখন সে কি খেয়াল রাখতে পারে যে, পানির স্রোত কিভাবে এসে তার বুক পূর্ণ করে দিচ্ছে এবং তার উভয় কূল প্লাবিত করে বয়ে উদ্ধৃঙ্খল অবস্থায় বয়ে যাচ্ছে? নব-যৌবনের হৃদয় যখন কানায়-কানায় ভালোবাসায় ভরে ওঠে, তখন প্রেমিক নিজের আত্ম-সচেতনতার কথা ভুলেই যায়, পরন্তু প্রেমিকারও কত ত্রুটি সে লক্ষ্য করতে পারে না। ফলে দু'তরফা ক্ষতি হয়ে থাকে এমন প্রেম-রোগীর। প্রেম আনে ঔদাস্য ও অজ্ঞানতা। প্রেম করে প্রতিভা নষ্ট।
‘মানবের মনে প্রেম হইলে প্রবল,
বুদ্ধি-জ্ঞান সমুদয় যায় রসাতল।
বাঘের নিকটে কারো খাটে না শক্তি,
প্রেমের হাতেও নর নিরুপায় অতি।
প্রেম যদি জাগে মনে জ্ঞান নাহি রয়,
বিবেকের স্থান তথা নাহিক নিশ্চয়।
ব্যাটের অধীনে যথা চলে সদা বল,
প্রেমের অধীনে তথা প্রেমিক সকল।
কত মানসিক পীড়া এসে বাসা বাঁধে পিরীত-নেশাগ্রস্ত প্রেমিকের মনে। কখনো বা মনের বাঁধনকে এঁটে রাখতে না পেরে এমন আচরণ করে বসে, যা স্বাভাবিক চোখে হাস্যকর। পাগলের মত আচরণ করেও নিজেকে বীর ভাবে। নিজেকে সুপুরুষ ভেবে যারা প্রেম করে না তাদেরকে কাপুরুষ মনে করে। অনেক সময় এমন প্রেমের মজনুকে দেখে মনে হয় যে, তাকে কেউ যাদু করেছে। অনেকে অপরাধ এড়াবার জন্যও এ কথা নিজে বলে থাকে। কিন্তু আসল কথা এই যে, প্রেমের চেয়ে বড় যাদু আর কিছু নেই। অস্বাভাবিক আচরণের জন্য প্রেমের নায়ক লোকের চোখে নিন্দিত হয়। তার বদনাম ছড়িয়ে পড়ে সমাজে। প্রেম-সাধনায় সিদ্ধিলাভ না হলে অনেকে আক্ষেপে ভেঙ্গে পড়ে। অনেক সময় ভাবে মাছ ধরব, অথচ গায়ে কাদা লাগাব না। কিন্তু পরিশেষে সে প্রেমের দলদলে তলিয়ে যায়, নতুবা অন্য কেউ তার গায়ে কাদা ছিটিয়ে দেয়। অবশেষে প্রেমও সাফল্য পায় না। অথচ মাঝখান থেকে শূন্য হাতে পায় শুধু বদনাম আর অপমান।
যে সব প্রতীক প্রতিমার প্রেমে কেটেছে দীর্ঘ দিন,
যাদের জন্য নিন্দিত আমি লোকের চক্ষে হীন।
তুচ্ছে পাত্রে তারাই আমার ডুবিয়েছে খ্যাতি-যশ,
লঘু সঙ্গীত বিকিয়ে আমার সুনাম শুন্যে লীন।
পক্ষান্তরে একজন মুমিনের উচিত নয়, উদাসীন হওয়া, নিজেকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করা, অবৈধ প্রণয়ে পড়ে অস্বাভাবিক আচরণ করা।
প্রেমে পড়ে প্রেমিক তার দ্বীন ও ঈমানের মত অমূল্য ধনও হারিয়ে বসে অনেক সময়। অবৈধ প্রণয়ের ঐ কুপ্রবৃত্তি মমিনের ঈমানকে দুর্বল করে ফেলে। সত্যই তো, যে হৃদয়ে। অবৈধ নারী-প্রেম সমাসীন থাকে, সে হৃদয়ে পবিত্র আল্লাহর প্রেম কেন বাসা বাঁধবে? তাই একটা বাস্তব কথা এই যে, সাধারণতঃ তারাই বেশী এই অবৈধ নারী-প্রেমে ফেঁসে থাকে, যাদের মনে ততটা অথবা মোটেই আল্লাহ-প্রেম নেই।
‘অনির্বাণ প্রেম’-এর কোন কোন হতভাগা প্রেমিক বেদ্বীন নারীর প্রেমে পড়ে, প্রিয়ার প্রেম ও মনকে জয় করতে গিয়ে নিজের দ্বীন ত্যাগ করে মুর্তাদ্দ হয়ে বসে! যার ফলে দুনিয়াতে। ইসলামী আইনে হত্যাযোগ্য অপরাধ এবং আখেরাতে চিরস্থায়ী দোযখ বাস করার মত পাপে লিপ্ত হয়ে যায়।
প্রেম দ্বীনদার যুবকের হৃদয়কেও ঈমানী চিন্তাধারা ও আল্লাহর যিকর থেকে মগুল করে রাখে। অনেক সময় নামাযগুলিতেও প্রেম ও প্রেমিকার কথা ভাবতে ভাবতে শয়তান তাকে এমন এমন কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তার নামায অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে এবং তার ‘ওঠ-বস করাই সার হয়। প্রেমিক যত তার প্রেমিকার (অবৈধভাবে) কাছে হওয়ার চেষ্টা। করে, ঠিক তত সে আল্লাহ থেকে দুর হতে থাকে। আর এইভাবে আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া ধীরে-ধীরে হৃদয় থেকে বিলীন হয়ে যায়।
এই দিক দিয়ে প্রেম’ শয়তানের এমন এক হাতিয়ার যে, তদ্দারা সে সহজে নেক লোকদেরকে ঘায়েল করে থাকে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম বেশী করে অথবা তা করার প্রশিক্ষণ নিতে থাকে (যেমন আলেম, মসজিদের ইমাম, তালেবে ইলম প্রভৃতি) তাকে সর্বাগ্রে পরাস্ত ও ক্ষান্ত করার জন্য সে এই মারণাস্ত্র প্রয়োগ করে থাকে। আর এই নারী ও অর্থ-প্রেমের মাধ্যমে ইবলীস মুসলিম সমাজকে তার শ্রদ্ধেয় আলেম সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং আলেম-উলামাকে সমাজের চোখে খাটো ও ঘৃণ্য করতে কৃতার্থ ও পারঙ্গম হয়।
সুতরাং আল্লাহর নিকট আমাদের এই প্রার্থনা যে, তিনি যেন মুসলিম যুব-সমাজকে শয়তানের এমন চক্রান্ত ও কুট-কৌশলের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং এমন ইলম দান করেন, যার দ্বারা হৃদয়ে তাকওয়া লাভ হয় ও শয়তান হয় লাঞ্ছিত-পরাভূত। প্রেম হল একটা এমন গোলমেলে ব্যাপার, যার মাধ্যমে মানুষের অনেক কিছুই গোলমাল হয়ে যায়। সুবুদ্ধির মাথা খাওয়া যায়। ভালো ছাত্রের সুবিন্যস্ত পড়াশোনায় তালগোল খেয়ে যায়। কখনো খেয়ো নাকো তালে আর ঘোলে, কখনো ভুলো নাকো টেমনের বোলে’ প্রবাদ ভুলে গিয়ে পরীক্ষায় গোল্লা খেয়ে থাকে। কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের মত প্রতিভা জীবন থেকে ঝরে পড়ে। প্রেমের পরশে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, সুচিন্তার স্থানকে কুচিন্তা এসে জবরদখল করে নেয়। ফলে অধ্যয়ন যায়, উন্নয়ন যায়, রুদ্ধ হয় জ্ঞান শিক্ষার দুয়ার।
অনেকে উন্নতির নাগাল পেয়েও নারীর মায়াজালে ফেঁসে গিয়ে পদ হারায়, চাকুরী হারায়, হারায় অনর্থক বহু ধন-সম্পদ।
ব্যভিচার বা অবৈধ যৌন-মিলন এক মহাপাপ। প্রেম প্রেমিক-প্রেমিকাকে এই পাপে লিপ্ত করায়। যদিও প্রেম ও কামনা দুটি পৃথক জিনিস, তবুও ‘বিয়ে তো করবই' এই আশায় পুঞ্জীভূত কাম চরিতার্থ করে ফেলে। মন দিতে-নিতে গিয়ে দেহ-বিনিময় ঘটে যায় এই সর্বনাশী প্রেমের ফুল-বাগানে। আর সত্য কথা এই যে, বর্তমানে প্রেম বা ভালোবাসা’ বলতে যা বুঝায় এবং অধিকাংশ তাতে যা ঘটে, তা হল ব্যভিচার। প্রেমে সর্বপ্রথম, সর্বশেষ ও আসল যে বাসনা ও আকাঙ্খা থাকে, তা হল যৌনমিলন।
এ ছাড়া যুবক-যুবতীর মাঝে বিবাহের পূর্বে পবিত্র প্রেমের কথা কল্পনাই করা যায় না। এ ধরনের প্রেম সাধারণতঃ কপট হয়ে থাকে। এমন ভালোবাসায় নায়ক-নায়িকার মাঝে কেবল এক প্রকার সুড়সুড়ি’ থাকে। আর তা মিটানোর জন্য উভয়ের মধ্যে থাকে নানা অভিনয় ও ছল-কৌশল। অতঃপর সে সুড়সুড়ি’ শেষ হতেই সব শেষ হয়ে যায়। এই শ্রেণীর প্রেমিক-প্রেমিকা সাধারণতঃ একজনকে পেয়ে সুখী হতে পারে না। আসলে এরা প্রেমিক নয়, লম্পট।
এক পাপ অপর এক পাপকে আকর্ষণ ও আহ্বান করে। দেহ-মিলন যখন ঘটবে তখন প্রকৃতিকে তো আর সব সময় বাধা দেওয়া যায় না। উভয়ের অলক্ষ্যে অবৈধ সন্তান জন্ম নেয়। এ অযাচিত ও অবাঞ্ছিত লাঞ্ছনার সন্তানকে আসতে না দিয়ে ভ্রণ অবস্থায় হত্যা করা হয়। অনেকে সঠিক সময়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে না পেরে প্রাণ হত্যা করে। জ্বণে জীবন আসার পর তা নষ্ট করা প্রান হত্যার শামিল। কিন্তু লাগামছাড়া সমাজে তারও প্রচলন বেড়েই চলেছে। আইন করে প্রাণ-হত্যা ও গর্ভপাত বৈধ করা হচ্ছে। এমন হত্যার উপায় ও উপকরণ বড় সহজলন্ধ করা হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে ব্যভিচার আরো বেড়েই চলছে। আবার মজার কথা এই যে, ঐ নিপাতকৃত প্রাণ থেকে ফ্রান্সের এক কোম্পানী মহিলাদের অতি প্রিয় প্রসাধন ও অঙ্গরাগ ‘লিপষ্টিক’ বা ‘ঠোট-পালিশ’ প্রস্তুত করে থাকে। আর এইভাবে ব্যভিচার ও প্রাণ-হত্যা এক অর্থকরী ব্যবসাতেও পরিণত হয়েছে! ব্যাংককে প্রতি বছরে ২ লাখের উপর গর্ভপাত হয়। তন্মধ্যে ৫০ ভাগ কুমারী, ৩৭ ভাগ ছাত্রী এবং বাদবাকী গৃহিণীরা এই গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকে (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ৯৩পৃঃ দ্রঃ)।
পক্ষান্তরে জন্মের পর অনেকে সেই সদ্যপ্রসূত অযাচিত শিশুকে নিষ্ঠুরভাবে ডাসবিনে অথবা নদী-জঙ্গলে ফেলে আসে!! শুধু জ্বণ হত্যাই নয়, এই অবৈধ প্রণয়-ঘটিত কারণে মানুষ খুনও হয়ে থাকে। প্রেমে বাধা পড়লে পথের কাঁটা দূর করতে বাধাদানকারীকে খুন, প্রেমিকার প্রেমের ভিখারী অন্য কেউ আছে জানতে পেরে ঈর্ষায় সেই শরীক প্রেমিককে খুন, অথবা প্রেমিকা অন্যকেও প্রেম নিবেদন করে জানতে পেরে রাগ ও ঈর্ষায় নিজ হাতে প্রেমিকাকেই খুন করা হয়ে থাকে। অপেক্ষাকৃত ছোট পাপ করতে করতে পরিশেষে এত বড় মহাপাপ করে ফেলে প্রেমের পাগলরা, যে পাপের শাস্তি (আল্লাহ মাফ না করলে) দোযখ ছাড়া কিছু নয় পরকালে। মহান আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, সেখানেই সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।” (সূরা নিসা ৯৩ আয়াত)
অবৈধ প্রেম-ঘটিত কারণে অনেকের সোনার সংসার ধংস হয়ে যায়। অপর এক নারীকে ভালোবাসতে গিয়ে নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি অবিচার ও অত্যাচার করা হয়। অথবা কোন কুলবধুর প্রেমে পড়ে অথবা তার প্রেমকে প্রশ্রয় দিয়ে, তাকে প্রেমপত্র লিখে বা গায়ে-পড়া হয়ে সাক্ষাতে অথবা ফোনে মধুর কথা বলে প্রেমজালে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে তার স্বামীর সংসারে অশান্তির মহাপ্রলয় আনয়ন করা হয়। লম্পট হলেও কোন স্বামীই চায় না যে, তার স্ত্রী অন্যাসক্তা হোক, যেমন কোন স্ত্রীও চায় না যে, তার স্বামী অন্যাসক্ত হোক বা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করুক। সুতরাং উভয় প্রকার ধ্বংসই যে মহাধংস তা বলাই বাহুল্য।
মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলাকে তার স্বামীর পক্ষে নষ্ট করে ফেলে, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়।” (আহমাদ ২/৩৯৭, আবু দাউদ ৭৫৯, হাকেম ২/১৯৬)।
আল্লাহর রসূল (সা.) আরো বলেন, “সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমানতের কসম খায়। আর যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা কোন দাসকে তার প্রভুর বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে ব্যক্তিও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আহমদ ৫/৩৫২, বাযযার, ইবনে হিব্বান, হাকেম ৪/২৮৯, সহীহহুল জামে’ ৫৪৩৬নং)।
তাছাড়া অবৈধ প্রেম সৃষ্টি করার ব্যাপারে যেমন শয়তানের বড় হাত থাকে, তেমনি বৈধ প্রেম ধ্বংস করা এবং স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হল তারই কাজ। শয়তান পানির উপর সিংহাসন পেতে বিভিন্ন মহাপাপ সংঘটিত করার জন্য নিজের চেলাদল পাঠিয়ে থাকে। প্রত্যহ হিসাব নেওয়ার সময় তার নিকট সব থেকে বেশী প্রশংসাই হয় সেই চেলাটি, যে কোন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে পেরেছে। সিংহাসন ছেড়ে উঠে এসে এমন চেলাকে জড়িয়ে ধরে সাবাসী ও বাহাদুরীও দেয় ইবলীস! (আহমাদ, মুসলিম ২৮ ১৩ নং)
শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝেই নয়, বরং এই অশান্তির ঝড় নেমে আসে তাদের আত্মীয়দের মাঝেও। বিশেষ করে তাদের সন্তান থাকলে তাদের জীবনে যে চরম সর্বনাশী পরিণতি নেমে আসে তা অনুমেয়। কোলের ছেলে জলে ফেলে যৌবন সাজিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে নতুন রসিক নাগরের সাথে গোপনে বের হয়ে সংসার ও ব্যভিচার করলে ঐ ছেলের অবস্থা যা হয় তা দেখে পথের শিয়াল-কুকুরও কাঁদে! আশ্রয়হীন হয়ে উপযুক্ত অভিভাবক বিনা মানুষ হতে গিয়ে অনেক সময় দুশ্চরিত্র ও অসৎরূপে গড়ে ওঠে। আর এর ফলে যত ক্ষতি হয়, তার মূল কারণ হল ঐ সংসার-বিনাশী মানবরূপী শয়তান রসিক নাগর। অবৈধ প্রণয় প্রণয়ীকে নিজ মা-বাপের স্নেহ-দুআ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। যে যুবতীকে নৈতিক কারণে মা-বাপ পছন্দ করে না, সে যুবতীর প্রেমে ফেঁসে প্রেম অনির্বাণ রাখতে গিয়ে সংসার-জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস মা-বাপকে ছাড়তে হয়। আর এ কাজে সে মা বাপের অবাধ্য সন্তানরূপে পরিচিত হয়; যে অবাধ্য সন্তান মা-বাপের অসন্তুষ্টি অবস্থায়। বেহেশু প্রবেশের অনুমতি থেকে বঞ্চিত থাকবে।
অবৈধ প্রেম করে বিয়ে করা বউ নিয়ে গঠিত সংসার অধিকাংশ টিকে না। কারণ, বিয়ের পূর্বে ভালোবাসায় অতিরঞ্জন ও অভিনয় থাকে, প্রেমের প্রবল উচ্ছ্বাসে দূরকে ভালো মনে হয়, দুরে-দুরে থাকলে প্রেম গাঢ় হয়, অতিরঞ্জিত প্রেম পাওয়া যায়, ত্রুটি নজরে পড়ে না। দুরে থেকে কেবল প্রেমের সোহাগ নেওয়া যায়, শাসনের বাধা পাওয়া যায় না। তাছাড়া নতুন নতুন সবকিছুই ভালো লাগে, অসুন্দরীকে আচমকা-সুন্দরী লাগে। দুর থেকে সরষে ক্ষেত ঘন লাগে। দুর থেকে উত্তপ্ত মরুভূমিকেও পানির সাগর মনে হয়। আর দুর বলেই-
নদীর এ পাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস,
ও পাড়েতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।---
বিবাহের পূর্বে দুরে দুরে থাকলে প্রণয়িণী কেবল হৃদয়ে থাকে, বিবাহের পর সংসারে এলে, সর্বক্ষণের জন্য একান্ত কাছে এলে অনেক সময় তার বিপরীত দেখা যায়। (আর এ জন্যই নিজের স্ত্রী চাইতে অপরের স্ত্রী বেশী ভালো মনে হয়। যেমন স্ত্রীকেও অন্যের স্বামী অধিক ভালো লেগে থাকে।) অতঃপর হয় এই যে, কাছে এসে একটি আঘাত খেলেই প্রেমের সে শিশমহল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। কপট প্রেমকে ভিত্তি করে মাকড়সা বা তাসের ঘরের মত যে ঘর-সংসার গড়ে ওঠে, তা সামান্য প্রতিকূল বাতাসেই বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পশ্চিমা দেশগুলোতে তালাকের আধিক্য এ কথার স্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করে। যেখানে ফুল তুলে তার গন্ধ ও সৌন্দর্য লুটে নিয়ে ঝলসে গেলে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
নামমাত্র বিবাহ হলেও অল্প কয়েক দিনে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তাছাড়া ঐ শ্রেণীর অনেক বিবাহ কোন চাপে পড়ে করতে হয়, মন থেকে নয়; বরং অনেক সময় সমাজ ঐ বিবাহকে প্রেমিক-প্রেমিকার ঘাড়ে শাস্তি স্বরূপ (?) চাপিয়ে দেয়। অথবা গর্ভ হয়ে গেলে প্রেমিকা অথবা তার কর্তৃপক্ষের চাপে বা কেবল লজ্জা ঢাকার জন্য প্রেমিক বিবাহ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সর্বশেষ ফল দাঁড়ায়, যুবতীর লাবণ্য ধ্বংস ও পরে বিবাহ-বিচ্ছেদ। সুতরাং এত সব ক্ষতি জেনে-শুনেও এমন ফাঁদে পা দিয়ে লাভ কি বন্ধু!
অনির্বাণ প্রেম-পীড়িত দোস্ত আমার? সুস্বাস্থ্য তোমার জন্য আল্লাহর দেওয়া এক বড় নেয়ামত ও আমানত। প্রেমের দুশ্চিন্তায় পড়ে তা হারিয়ে ফেলায় তোমার কোন অধিকার নেই। ভালো মানুষ প্রেমে পড়ে অনেক সময় রোগক্লিষ্ট হয়ে পড়ে। যেখানে দূরত্ব ও বাধা বেশী, সেখানেই প্রেমের বাড় বেশী। কারণ, অবৈধ প্রেম বাড়াতে শয়তান সহায়ক কুটনা হয়। যার ফলে নানা অশুভ চিন্তা, অবৈধ বাসনা, অবাস্তব কল্পনা এবং প্রিয়তমা হারিয়ে যাওয়া বা প্রেম অসফল হওয়ার বিভিন্ন আশঙ্কা হৃদয়-কোণে এসে বাসা বাঁধে। ফলে কখনো খাওয়াতে অরুচি জন্মে, অনিদ্রা দেখা দেয়। কখনো বা মানসিক চাপে শারীরিকভাবে ব্যাধিগ্রস্ত ও দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে।
‘আসক্তির ছয় চিহ্ন জেনো হে তনয়,
দীর্ঘশ্বাস, মুনমুখ, সিক্ত অক্ষিদ্বয়।
জিজ্ঞাসিলে, অন্য তিন লক্ষণ কোথায়,
স্বপ্নহার, অল্পভাষ, বঞ্চিত নিদ্রায়।
পরিবেশের হাওয়া যখন প্রেমের প্রতিকূলে চলে, তখনই প্রেমিকের মনের আকাশে দুঃখের কালো মেঘ ছেয়ে আসে, কষ্ট পায় নানাভাবে। প্রেমিক অথবা প্রেমিকার হিতাকাঙ্খী অথবা শত্রু এমন প্রেমে বাধা দিতে চায়। ব্যথিত হৃদয় না-পাওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে দেয় প্রেমিকার কাছে
--- ভুলি নাই তবু তোমারেই ভালোবেসেছি
কখনো জীবনে কাল বোশেখীর ঝড়
এসেছে গোপনে, ভেঙ্গে গেছে বাধা ঘর।
কত হারানোর ব্যথারে ভুলিতে নীরবে গোপনে কেঁদেছি।
অগ্নি-শিখায় কভু এই মন নিজেরে করেছি ছাই,
কত অশ্রুর ধারায় এ বুক ভাসিয়েছি আমি হায়।---
প্রেম হল ক্ষণিকের মানসিক সুখ। মানুষকে বাঁচতে হলে একটা নেশা নিয়ে বাঁচতে হয়। আর সেই নেশাতে সে মনের মাঝে চরম তৃপ্তি লাভ করে থাকে। অবশ্য অবুঝ মন তখন বৈধ-অবৈধের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে সক্ষম হয় না। কিন্তু উভয়ের মাঝেই যেন বেহেস্তী সুখের আমেজ অনুভব করে থাকে। যত ব্যথা আসে, সকল ব্যথা যেন প্রিয়ার সাক্ষাতে অথবা স্মরণে দূরীভূত হয়ে যায়।
‘সাবাস বলি পিরীত-নেশা হেতু তুমি সকল সুখের,
যতই ভুগি রোগে শোকে, বদ্যি তুমি সকল দুখের।
প্রেমের সবকিছুই অতিরঞ্জিত। অতিরঞ্জন করেই অনেকে বলে থাকে,
‘প্রেম-খাতাতে একবার যে
লিখিয়া দিয়াছে নামটি তার,
নাই প্রয়োজন স্বর্গে তাহার
নরক গিয়াছে দুরের পার!!
প্রেমিক বন্ধু আমার! এমন ভুয়ো বুলিতে ধোকা খেয়ে দুনিয়াতেই কল্পিত বেহেশু খোজার অবৈধ বৃথা চেষ্টা করো না। কারণ, প্রেম ক্ষণিকের স্বর্গ হলেও মনে রেখে যে, প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ, আর তার বেদনা থাকে সারাটি জীবন। প্রেম মানুষকে শান্তি দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয় না। প্রেম হল ধূপের মত; যার আরম্ভ হয় জ্বলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে।
ভালোবাসা করার অর্থ হল, তুষে আগুন দেওয়া; যা একেবারে দপ করে জ্বলেও ওঠে না, আর চট করে নিভাতেও চায় না। বরং ভিতরে ভিতরে গোপনে পুড়ে ছাই হতে থাকে। হৃদয়ে আনন্দের অনুভূতি যতটা হয়, তার চেয়ে বেশী হয় ব্যথার অনুভূতি। প্রেমে আনন্দের তুলনায় ব্যথা থাকে অধিক ও নিদারুণ। আর সে ব্যথার কোন অব্যর্থ ঔষধও নেই। মোট কথা ভালোবাসা যা দেয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী কেড়ে নেয়।
পক্ষান্তরে কপট প্রেমে প্রেমিক যখন ধোকা খায়, তখন মনের গহিন কোণে হা-হুতাশ তাকে অস্থির করে তোলে। মনের মানসপটে স্মৃতি জাগরিত হয়ে উঠলে প্রাণে মোচড় দিয়ে ওঠে। যখন পদ্মফুল চলে যাবে এবং তার কাটার জ্বালা মনকে অতিষ্ঠ করে তুলবে তখন অপমান ও শোকে শ্বাসরোধ হবে। আর মন গেয়ে উঠবে,
--- আজ আমি মরণের বুক থেকে কাঁদি
অকরুণা! প্রাণ নিয়ে একি মিথ্যা অকরুণ খেলা!
এত ভালোবেসে শেষে এত অবহেলা।
কেমনে হানিতে পার নারী!
এ আঘাত পুরুষের,
হানিতে এ নির্মম আঘাত, জানিতাম, মোরা শুধু পুরুষেরা পারি।
আফশোষ ও আক্ষেপে মন-প্রাণ দগ্ধীভূত হবে এবং গাইবে-
‘ভুল করেছি সারা জীবন তোমায় ভালোবেসে,
জানি নাই যে, কাদতে হবে আমায় অবশেষে।
স্বার্থপরতার প্রেমে স্বার্থে আঘাত লাগলে অথবা স্বার্থে সিদ্ধিলাভ হয়ে গেলে প্রেম আর প্রেম থাকে না বন্ধু! অতএব ওদেরই একটি অভিজ্ঞতার কথা মনে রেখো
‘ভালোবাসার এমনি মজা যেমন নাকি ঘি,
যাবৎ Hot তাবৎ Good, Cold হলেই ছি।”
পক্ষান্তরে ধোকাবাজি, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এমন পাপকাজ, যা মানুষকে দোযখে টেনে নিয়ে যায়। (সহীহুল জামে ৬৭২৬ নং) একজনকে তোমাকে ছাড়া বিয়েই করব না’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তার যথাসর্বস্ব লুটে নিয়ে তাকে ধোকা দেওয়া, অথবা তার চেয়ে আরো ভালো কেউ নজরে পড়লে প্ৰথমকে বর্জন করে দ্বিতীয়কে গ্রহণ করা, ইত্যাদি প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা ঐ কপট প্রেমের আগা-গোড়াই অমানবিক কর্ম।
প্রেমের অভিনয়ে ধোকা খেয়ে গেলে আক্ষেপের সাথে নিজেকে ধিক্কারে ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে হয়। তখন আত্মহত্যা করা কঠিন মনে হয় না। প্রিয়তমা ফাকি দিলে, অথবা গাঢ় প্রেমের পর কোন কারণে উভয়ের মাঝে বিবাহে বাধা পড়লে এবং এ জগতে একমাত্র চাওয়া ও পাওয়া মন-প্রাণ দিয়ে চেয়েও না পাওয়া গেলে, জীবন রাখায় যে লাভ আছে, তা মনে করে না অনেকে। মার্কিন মুলুকে প্রতি বছর ছয় হাজারেরও বেশী তরুণ আত্মহত্যা করে শুধু ঐ অবৈধ প্রণয়-ঘটিত কারণে। (অপসংস্কৃতির বিভীষিকা ৯২ পৃঃ দ্রঃ)
সুতরাং মুসলিম যুবককে সতর্কতার সাথে জেনে রাখা উচিত যে, এমন প্রণয় মহাপাপের কাজ। পক্ষান্তরে যদি কোন প্রকারে প্রেম হয়ে গিয়ে প্রেমিকা তাকে ধোকা দিয়েই ফেলে, তাহলে তার জন্য আত্মহত্যা করতে হবে কেন? আত্মহত্যা যে আর এক মহাপাপ। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত। কারণ, তিনি তাকে এমন দ্বিচারিণী নারী থেকে রক্ষা করেছেন। যে নারী অতি সংগোপনে তার প্রেমে অন্যকেও শরীক করেছিল, সে নারীকে তার জীবন থেকে দূর করে দিয়েছেন।
আর এ কথাও মনে করা ঠিক নয় যে, দুনিয়াতে কেবল তার উপযুক্ত প্রেমময়ী মাত্র একটা লায়লাই জন্ম নিয়েছিল এবং এ জগতে আর এমন কোন নারী নেই, যে তাকে ঐ হারিয়ে যাওয়া লায়লার মত ভালোবাসবে। বরং বাস্তব কথা এই যে, অভিনীত ও অতিরঞ্জিত অবৈধ প্রেমের চাইতে বৈবাহিক-সূত্রে সৃষ্ট পবিত্র প্রেম আরো প্রগাঢ়, আরো নির্মল। কারণ, তা হল আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি। তিনি বলেন, “তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পেতে পার। আর তিনি তোমাদের মাঝে পারস্পরিক প্রেম ও স্নেহ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রূম ২১ আয়াত)
সুতরাং আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজের দ্বীন-দুনিয়া ধ্বংস করে দুর্বল মনের পরিচয় দেওয়া কাপুরুষের কাজ। পক্ষান্তরে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সবল মনে নতুন করে পবিত্র জীবন গড়ে তোলাই হল সুপুরুষের কাজ।