এটা একটা স্বভাবগত রীতি যে, বিমাতা ভাইয়েরা সাধারণতঃ পরস্পরের বিদ্বেষী হয়ে থাকে। সম্ভবতঃ এই বিদ্বেষ যাতে মাথাচাড়া না দেয়, সেকারণ ইয়াকূব (আঃ) একই শ্বশুরের পরপর তিন মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এরপরেও শ্বশুর ছিলেন আপন মামু। পরস্পরে রক্ত সম্পর্কীয় এবং ঘনিষ্ঠ নিকটাত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও এবং নবী পরিবারের সার্বক্ষণিক দ্বীনী পরিবেশ ও নৈতিক প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বৈমাত্রেয় হিংসার কবল থেকে ইয়াকূব (আঃ)-এর দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানেরা রক্ষা পায়নি। তাই বলা চলে যে, ইউসুফের প্রতি তার সৎভাইদের হিংসার প্রথম কারণ ছিল বৈমাত্রেয় বিদ্বেষ। দ্বিতীয় কারণ ছিল- সদ্য মাতৃহীন শিশু হওয়ার কারণে তাদের দু’ভাইয়ের প্রতি পিতার স্বভাবগত স্নেহের আধিক্য। তৃতীয় কারণ ছিল, ইউসুফের অতুলনীয় রূপ-লাবণ্য, অনিন্দ্যসুন্দর দেহসৌষ্ঠব, আকর্ষণীয় ব্যবহার-মাধুর্য এবং অনন্য সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। চতুর্থ ইউসুফের স্বপ্নবৃত্তান্তের কথা যেকোন ভাবেই হৌক তাদের কানে পৌঁছে যাওয়া। বলা চলে যে, শেষোক্ত কারণটিই তাদের হিংসার আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় এবং তাকে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দেওয়ার শয়তানী চক্রান্তে তারা প্ররোচিত হয়। কিন্তু শয়তান যতই চক্রান্ত করুক, আল্লাহ বলেন, إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا- ‘শয়তানের চক্রান্ত সর্বদাই দুর্বল হয়ে থাকে’ (নিসা ৪/৭৬)। ইউসুফের মধ্যে ভবিষ্যৎ নবুঅত লুকিয়ে আছে বুঝতে পেরেই ইয়াকূব (আঃ) তার প্রতি অধিক স্নেহশীল ছিলেন। আর সেকারণে সৎ ভাইয়েরাও ছিল অধিক হিংসাপরায়ণ। বস্ত্ততঃ এই হিংসাত্মক আচরণের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ইউসুফের ভবিষ্যৎ উন্নতির সোপান।