নবীদের কাহিনী ১১. হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ১ টি

বালক ইউসুফ একদিন তার পিতা ইয়াকূব (আঃ)-এর কাছে এসে বলল,

إِذْ قَالَ يُوْسُفُ لِأَبِيْهِ يَا أَبتِ إِنِّيْ رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَباً وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِيْ سَاجِدِيْنَ-

‘আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, ১১টি নক্ষত্র এবং সূর্য ও চন্দ্র আমাকে সিজদা করছে’। একথা শুনে পিতা বললেন, قَالَ يَا بُنَيَّ لاَ تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَى إِخْوَتِكَ فَيَكِيْدُواْ لَكَ كَيْداً إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ- ‘বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহ’লে ওরা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু (ইউসুফ ১২/৪-৫)। ইবনু আববাস (রাঃ) ও ক্বাতাদাহ বলেন, এগারোটি নক্ষত্রের অর্থ হচ্ছে ইউসুফ (আঃ)-এর এগারো ভাই এবং সূর্য ও চন্দ্রের অর্থ পিতা ও মাতা বা খালা’।[14] বস্ত্ততঃ এ স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রকাশ পায় যখন মিসরে পিতা-পুত্রের মিলন হয়।

উল্লেখ্য যে, স্বপ্ন ব্যাখ্যা করা জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা। হযরত ইবরাহীম, ইসহাক্ব ও ইয়াকূব সকলে এ বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। সম্ভবতঃ একারণেই ইয়াকূব (আঃ) নিশ্চিত ধারণা করেছিলেন যে, বালক ইউসুফ একদিন নবী হবে। হযরত ইউসুফকেও আল্লাহ এ ক্ষমতা দান করেছিলেন। যেমন আল্লাহ এদিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন,

وَكَذَلِكَ يَجْتَبِيْكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيْلِ الأَحَادِيْثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِ يَعْقُوْبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَى أَبَوَيْكَ مِنْ قَبْلُ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ- (يوسف ৬)-

‘এমনিভাবে তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত করবেন (নবী হিসাবে) এবং তোমাকে শিক্ষা দিবেন বাণী সমূহের (অর্থাৎ স্বপ্নাদিষ্ট বাণী সমূহের) নিগুঢ় তত্ত্ব এবং পূর্ণ করবেন স্বীয় অনুগ্রহ সমূহ (যেমন মিসরের রাজত্ব, সর্বোচ্চ সম্মান ও ধন-সম্পদ লাভ এবং পিতার সাথে মিলন প্রভৃতি) তোমার প্রতি ও ইয়াকূব-পরিবারের প্রতি, যেমন তিনি পূর্ণ করেছিলেন ইতিপূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাক্বের প্রতি। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (ইউসুফ ১২/৬)

উপরোক্ত ৫ ও ৬ আয়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি ফুটে ওঠে। যেমন, (১) ইয়াকূব (আঃ) ইউসুফের দেখা স্বপ্নকে একটি সত্য স্বপ্ন হিসাবে গণ্য করেছিলেন এবং এটাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, ইউসুফ-এর জীবনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। সেজন্য তার জীবনে আসতে পারে কঠিন পরীক্ষা সমূহ। (২) ভাল স্বপ্নের কথা এমন লোকের কাছে বলা উচিত নয়, যারা তার হিতাকাংখী নয়। সেজন্যেই ইযাকূব (আঃ) বালক ইউসুফকে তার স্বপ্ন বৃত্তান্ত তার সৎ ভাইদের কাছে বলতে নিষেধ করেছিলেন। (৩) ইউসুফকে আল্লাহ তিনটি নে‘মত দানের সুসংবাদ দেন। (ক) আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন নবী হিসাবে (খ) তাকে স্বপ্ন বৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা দান করবেন (গ) তার প্রতি স্বীয় নে‘মত সমূহ পূর্ণ করবেন। বলা বাহুল্য, এগুলির প্রতিটিই পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়েছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে, যা আমরা পরবর্তী কাহিনীতে অবলোকন করব।

এক্ষণে ইউসুফকে উপরোক্ত ৬ আয়াতে বর্ণিত অহী আল্লাহ কখন নাযিল করেছিলেন, সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। তবে ১৫ আয়াতের মর্মে বুঝা যায় যে, তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করার আগেই উপরোক্ত অহীর মাধ্যমে তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়। এটি নবুঅতের ‘অহিয়ে কালাম’ ছিল না। বরং এটি ছিল মূসার মায়ের কাছে অহী করার ন্যায় ‘অহিয়ে ইলহাম’। কেননা নবুঅতের ‘অহি’ সাধারণতঃ চল্লিশ বছর বয়সে হয়ে থাকে।

[14]. কুরতুবী, ইউসুফ ৪, ১০০ আয়াত।