কুরআন প্রসঙ্গে সে সমস্ত বিদআত প্রচলিত আছে, যেমন এমন ঢঙ্গে টেনে পড়া যাতে কুরআনের শব্দবিন্যাস বিনষ্ট হয়ে যায়। তেলাঅত শেষে ‘সাদাকাল্লাহুল আযীম’ পাঠ। মুর্দার উপর, কবরের উপর কুরআন পাঠ। সেহরীর আযানের পরিবর্তে কুরআন পড়ে জাগ্রতকরণ। জুমআর দিনে প্রয়োজনে খুতবার আযানের পূর্বে আর এক আযান দেওয়ার পরিবর্তে কুরআন (সূরা জুমআহ) পাঠ করে ডাকা হাঁকা।
শবীনা পাঠ, কুলখানী, ফাতেহাখানী, আয়াতের নক্সা বানিয়ে দেওয়ালে লিখা বা বাঁধিয়ে টাঙ্গানো। মুসহাফ নিয়ে কপালে, চোখে বা বুকে ঠেকানো, স্পর্শ করে গায়ে মাখা, চুম্বন করা। খতমের বাঁধা দুআ।
নবী (সা.)-কে কেন্দ্র করে যে সব বিদআত আকীদায় এসেছে, যেমন এই বিশ্বাস। করা যে, তিনি মানুষ ছিলেন না, তিনি গায়েব জানতেন, তাঁর দেহের ওজন ও ছায়া ছিল না। তাঁর মল-মূত্র পবিত্র ছিল। তিনি আল্লাহর নুর থেকে সৃষ্টি ছিলেন এবং তাঁর নুর থেকে জগৎ সৃষ্টি। তিনি হাযির ও নাযির; তিনি মীলাদ মাহফিলে হাযির হন। তিনি পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিত আছেন। কিছু চাইলে তিনি দিতে পারেন। তাঁর কবর যিয়ারত করলে পাপ ক্ষয় হয় ইত্যাদি।
ওলী-আওলিয়া নিয়ে প্রচলিত বিদআত যেমন, তাঁরা পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিত আছেন মনে করা। তাঁরা আহবানকারী ভক্তের আশা পূর্ণ করতে পারেন, রোগ ও বিপদ মুক্ত করতে পারেন, ধন ও সন্তান দান করতে পারেন, তাঁরা অদৃশ্যের (গায়বী) খবর জানেন ইত্যাদি বিশ্বাস করা; যাতে মানুষ মুশরিক হয়ে যায়। কোন ওলীর ত্যক্ত বস্তুর মাধ্যমে তাবারুক (বরকত) গ্রহণ। জীবিত, প্রকৃত অথবা কম্পিত ওলির এঁটো বা ব্যবহৃত কোন জিনিস ব্যবহার করে বর্কত ও কল্যাণের আশা করা ইত্যাদি।
মসজিদ বিষয়ক বিদআত যেমন; মসজিদ অধিক সৌন্দর্য-খচিত ও রঙচঙে করা। মসজিদে কারো কবর দেওয়া। মসজিদে সাংসারিক ও বৈষয়িক গল্পগুজব করা। কলরব, অট্টহাসি, অবৈধ সমালোচনা করা। মসজিদের দেওয়াল, মিম্বর বা ধূলা স্পর্শ করে গায়ে মেখে বর্কত বা আরোগ্যলাভের আশা করা ইত্যাদি।
আযানের বিদআত যেমন; জুমআর দ্বিতীয় আযান মিম্বরের গোড়ায় নিমস্বরে দেওয়া। আযানের পর উচ্চরবে দরূদ ও দুআ পাঠ করা। অসীলার দুআয়। ‘অদদারাজাতুর রাফীআহ’ বৃদ্ধি করা। আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য আহবান করা। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদ-- শুনে চোখে আঙ্গুল বুলিয়ে তা চুম্বন। করা। আসসালাতু খায়রুম মিনান নাওম’-এর উত্তরে সাদাকতা ওয়া বারারতা’ বলা। কাদক্বা-মাতিস সালাহ’ শুনে ‘আক্বামাহাল্লাহু আদামাহা’ বলা। আযানের শেষে হাত তুলে দুআ পড়া।
নামায সম্পর্কিত বিদআত যেমন, ফজরের নামাযে কুনুত, কুনুতের পরিবর্তে ‘কুল’ পাঠ। তকবীরে তাহরীমার সময় হাত তুলে কান স্পর্শ করা। এই সময় উপর দিকে মাথা তোলা। বাঁধা-গড়া নিয়ত পড়া। নিয়ত (যে কোন ভাষাতে) মুখে উচ্চারণ করা। সমস্বরে উচ্চরবে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলা। দুই সিজদাহর মাঝের বৈঠকে অনুরূপভাবে দুআ পড়া। সালাতুত তাহফীয (কুরআন হিফয সহজে হবে নিয়তে বিশিষ্ট) নামায পড়া। সালাতুত তাসবীহ জামাআত করে পড়া। মা-বাপের নামে বিশিষ্ট নামায পড়া। শবেবরাতের বিশেষ নামায পড়া। নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে ফুক দেওয়া, সালাম ফিরে মাথায় হাত রেখে বিশেষ দুআ পাঠ শেষ রাকআতের শেষ সিজদাহ লম্বা করা।
জুমআহ সংক্রান্ত বিদআত যেমন, জুমার দিন সফর করতে নেই মনে করা। এই দিনে কোন কাজ করতে নেই ভাবা। জুমআর জন্য পাপ (যেমন দাড়ি চাচা, সোনা বা রেশম ব্যবহার) দ্বারা সৌন্দর্য ধারণ করা। মসজিদে মুসাল্লা বিছিয়ে স্থান দখল করা। তিন সিড়ির অধিক মিম্বর। জুমআর দিন মিম্বরকে কার্পেটাদি দ্বারা সুসজ্জিত করা। জুমআহ বা ঈদের নামাজের জন্য বিশেষ করে পাগড়ী বাঁধা। দ্বিতীয় আযান। মসজিদের ভিতর খতীবের সামনে দেওয়া। প্রথম আযানের পরিবর্তে কুরআন পাঠ ও ডাক-হাঁক। জুমআর (নামাযীদের নামায পড়ার) সময় মসজিদের উচ্চরবে কুরআন পাঠ। জুমআর পুর্বে নির্দিষ্ট রাকআত কাবলাল জুমআহ’ সুন্নত পড়া। খুতবায়ে হাজাহ (আলহামদু লিল্লাহহি নাহমাদুহু--) পাঠ বর্জন করা। সূরা ক্বাফ দ্বারা উপদেশ না দেওয়া।
সুর করে খুতবা পাঠ। নবীর নাম শুনে (দরূদ না পড়ে) আঙ্গুল দ্বারা চক্ষু স্পর্শ করে তা চুম্বন করা। দুই খুতবার মাঝে কোন দুআ বা সূরা পাঠ। ইমাম বসা কালে হাত তুলে মুনাজাত। খুতবাহ চলাকালীন তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকআত নামায ত্যাগ। দুই খুতবার কোন একটিকে নসীহত থেকে বাদ দেওয়া। (ইস্তিস্কা ছাড়া) খুতবায় ইমামের হাত তুলে দুআ করা এবং মুক্তাদীদের হাত তুলে ‘আমীন-আমীন’ বলা। “ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরু বিল আদলে--” আয়াত দ্বারা খুতবা শেষ করাকে অভ্যাস বানানো।
খুতবাহ লম্বা এবং নামায ছোট ও সংক্ষিপ্ত করা। একই স্থানে বড় মসজিদ থাকতে ছোট মসজিদে জুমআহ পড়া। কাতার সোজা না হওয়ার পূর্বেই ইমামের নামায শুরু করে দেওয়া। নামাযের পর ‘তাকাব্বাল্লাহ---’ বলে পরস্পর মুসাফাহ করা। মসজিদের গেটে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে মুসল্লীদের ফুক অথবা থুথুর বর্কত নেওয়া ও রোগ মুক্তির আশা রাখা।
তারাবীহতে বিদআত; যেমন, মাঝে ও শেষে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা ও দরূদ পড়া। মাগরেবের মত বিতর পড়া। দুআ কুনুত পড়ার সময় রফএ-ইদাইন (অর্থাৎতাহরীমার মত কান বরাবর হাত তোলা)। তারাবীহর পর মিষ্টান্ন বিতরণ। শবে কদরে বিশেষ করে মিষ্টি বিতরণ। কেবল খাওয়া-দাওয়া ও জলসার মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ।।
সালামে বিদআত যেমন, দুই হাতে মুসাফাহ করা এবং বুকে হাত ফিরানো। সালামের পরিবর্তে ‘হেলো ‘আহলান’ গুডমর্নিং’ ইত্যাদি বলা। সালামের সময় প্রণত হওয়া। ঝুকে পা স্পর্শ করে সালাম করা। কদমবুসী করা। সিজদা করা (কুফর)।
দুআর প্রচলিত বিদআত যেমন; উচ্চস্বরে দুআ করা, ফরয নামাযের পর, বিবাহ বন্ধনের পর, ইফতারের পূর্বে, ঈদের নামাযের পর, জানাযার নামাযের পর বা দাফনের পর, জালসার শেষে, দর্সের শেষে একত্রে হাত তুলে জামাআতী দুআ করা ও ‘আমীন আমীন বলা’ হাত তুলে দুআর পর মুখে হাত বুলানো বা বুক স্পর্শ করা অথবা হাত চুমা।