আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ
«وَالَّذِى نفس ابن عمر بيده لَوْ أَنَّ لأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا ثُمَّ أَنْفَقَهُ في سبيل الله مَا قَبِلَه اللَّهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ»
‘‘সেই সত্তার কসম, যার হাতে ইবনে উমারের জীবন, তাকদীরের প্রতি অবিশ্বাসীদের কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা উহা কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে’’। অতঃপর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বাণী দ্বারা নিজ বক্তব্যের পক্ষে দলীল পেশ করেনঃ
«الإِيْمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»
‘‘ঈমান হচ্ছে, তুমি আল্লাহ তাআলার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর যাবতীয় কিতাবের প্রতি, তাঁর সমস্ত রাসূলের প্রতি এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। সাথে সাথে তাকদীর এবং এর ভাল-মন্দের প্রতিও ঈমান আনয়ন করবে’’। ইমাম মুসলিম এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[1]
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছগুলোতে তাকদীর অস্বীকার কারীদের সম্পর্কে ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে।
قال ابن عمر وَالَّذِى نفس ابن عمر بيده ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সেই সত্তার কসম, যার হাতে ইবনে উমারের জীবনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুর এই হাদীছটি ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) ইয়াহইয়া বিন ইয়ামুর হতে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ ইরাকের বসরা শহরে সর্বপ্রথম মাবাদ আলজুহানী কাযা ও কাদ্র সম্পর্কে কথা বলেছিল। অর্থাৎ তাকদীর অস্বীকার করার ফিতনা প্রকাশ করেছিল। ইয়াহইয়া বলেনঃ আমি এবং হুমায়েদ বিন আব্দুর রাহমান আল-হিময়ারী হজ্জ অথবা উমরার জন্য বের হলাম। আমরা বললামঃ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো একজন সাহাবীর সাক্ষাত পাই, তাহলে তাকদীর সম্পর্কে এরা যা বলছে, সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করবো। আল্লাহ তাআলার তাওফীকে আমরা মসজিদে প্রবেশ করেই আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে পেয়ে গেলাম। আমি এবং আমার সাথী তাঁকে ঘিরে ধরলাম। আমাদের একজন ছিল তাঁর ডানে আরেকজন ছিল বামে। আমার ধারণা ছিল, আমার সাথী আমাকেই কথা বলার সুযোগ করে দিবে। তাই আমি প্রশ্ন করলামঃ হে আবু আব্দুর রাহমান! (ইবনে উমারের কুনিয়ত) আমাদের এলাকায় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা কুরআন পড়ে এবং ইলম অর্জনের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করে। তবে তারা ধারণা করে, তাকদীর বলতে কিছু নেই এবং বলে থাকে সকল কাজ নতুন করেই শুরু হয়, পূর্ব হতে নির্ধারিত নয় এবং বান্দা থেকে কাজ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলা বান্দার কাজ সম্পর্কে কোনো খবর রাখেন না। কাজটি যখন সংঘটিত হয় আল্লাহ তাআলা কেবল তখনই জানতে পারেন।[2]
ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেনঃ যখন তোমরা তাদের সাথে সাক্ষাত করবে, তখন বলবে যে, তাদের থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত এবং তারাও আমার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অর্থাৎ তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সেই সত্তার কসম, যার নামে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার কসম করে থাকেন, তাকদীর অস্বীকার কারীদের কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা উক্ত দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনে’’। অতঃপর ইবনে উমার আমাদেরকে এই হাদীছ শুনালেন। উমার ইবনুল খাত্তাব বলেনঃ
«بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ لاَ يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ وَلاَ يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِى عَنِ الإِسْلاَمِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم « الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً. قَالَ صَدَقْتَ. قَالَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ. قَالَ فَأَخْبِرْنِى عَنِ الإِيمَانِ قَالَ « أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ». قَالَ صَدَقْتَ. قَالَ فَأَخْبِرْنِى عَنِ الإِحْسَانِ. قَالَ « أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ». قَالَ فَأَخْبِرْنِى عَنِ السَّاعَةِ. قَالَ « مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ ». قَالَ فَأَخْبِرْنِى عَنْ أَمَارَتِهَا. قَالَ « أَنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِى الْبُنْيَانِ» قَالَ ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا ثُمَّ قَالَ لِى « يَا عُمَرُ أَتَدْرِى مَنِ السَّائِلُ ». قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ « فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ»
‘‘একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় আমাদের সামনে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন, তাঁর পোষাক ছিল ধব্ধবে সাদা। মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তাঁর মধ্যে দূর দেশ হতে ভ্রমণ করে আসার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছিলনা। আর তিনি আমাদের কারো নিকট পরিচিতও ছিলেন না। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটবর্তী হলেন। তাঁর দুই হাঁটু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগালেন এবং তার দুই হাত নিজ উরুর উপর রেখে বসে পড়লেন।[3] অতঃপর বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আমাকে বলুনঃ ইসলাম কাকে বলে? উত্তরে তিনি বললেনঃ ‘‘ইসলাম হচ্ছে (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। (২) সালাত কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) রামাযানের রোযা রাখা। (৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা’’। উত্তর শুনে তিনি বললেনঃ আপনি সত্য বলেছেন। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমরা তার কথা শুনে অবাক হলাম। তিনি প্রশ্ন করেছেন, আবার উত্তরকে সত্য বলেছেন!
তিনি আবার বললেনঃ আমাকে ঈমান সম্পর্কে সংবাদ দিন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘উহা হল, বিশ্বাস স্থাপন করা (১) আল্লাহর উপর (২) তাঁর ফেরেশতাদের উপর (৩) তাঁর কিতাবসমূহের উপর (৪) তাঁর রাসুলদের উপর (৫) আখেরাত দিবসের উপর এবং (৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর’’। উত্তর পেয়ে তিনি বললেনঃ আপনি সত্য বলছেন।
তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ আমাকে ইহসান সম্পর্কে সংবাদ দিন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ ‘‘ইহসান হল, তুমি এমনভাবে আল্লাহর এবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তাঁকে দেখতে না পাও তবে বিশ্বাস করবে যে তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।
অতঃপর তিনি বললেনঃ আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘প্রশ্নকারীর চাইতে প্রশ্নকৃত ব্যক্তি এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত নন। তিনি বললেনঃ তবে তার নিদর্শন বা আলামত সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিন। তিনি বললেনঃ ‘‘তুমি দেখবে যে, দাসী তার মনিবকে প্রসব করছে। দেখবে নগ্নপদ, পোষাকহীন, অভাবী এবং রাখালরা উঁচু উঁচু দালান নির্মাণে পরস্পর গর্ব প্রদর্শন করছে’’। এরপর আগন্তুক চলে গেলেন।
[2] - এটিই হচ্ছে কাদরীয়া সম্প্রদায়ের আকীদাহ। তারা তাকদীরকে অস্বীকার করে এবং বলে বান্দা থেকে কাজ সম্পাদিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলা বান্দার কর্ম সম্পর্কে জানেন না। তাদের আরো বিভ্রান্তি রয়েছে। তবে কাদরীয়া সম্প্রদায়ের সকল লোকই যে এই আকীদাহ পোষণ করে, তা নয়। এটি কাদরীয়াদের মধ্যে সর্বাধিক বিভ্রান্তদের বিশ্বাস। এই মতের প্রবর্তক মিথ্যুক ও গোমরাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে তাদের বিভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন। আমীন
[3] - তিনি তার দুই হাত কার উরুতে রেখেছিলেন, সে সম্পর্কে আলেমদের থেকে দু’টি কথা পাওয়া যায়। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ ছাত্র যেমন উস্তাদের সামনে নিজ হাত দ্বয় স্বীয় উরুতে রেখে আদবের সাথে বসে, আগন্তুক ঠিক সেভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে স্বীয় হাত দ্বয় তার উরুর উপর রেখেই বসেছিলেন।
আবু দাউদের শরাহ ‘আউনুল মাবুদ’এ শামসুল হক আযীমাবাদী (রঃ) বলেনঃ আগন্তুক তার দুই হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই উরুর উপর রেখেই বসেছিলেন।