“তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে। আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী (Prophet) উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন। আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব।কিন্তু আমি যে বাক্য বলিতে আজ্ঞা করি নাই, আমার নামে যে কোন ভাববাদী দুঃসাহসপূর্বক তাহা বলে, কিমবা অন্য দেবতাদের নামে যে কেহ কথা বলে, সেই ভাববাদীকে মরিতে হইবে। আর তুমি যদি মনে মনে বল, সদাপ্রভু যে বাক্য বলেন নাই, তাহা আমরা কি প্রকারে জানিব? [তবে শুন,] কোন ভাববাদী সদাপ্রভুর নামে কথা কহিলে যদি সেই বাক্য পরে সিদ্ধ না হয়, ও তাহার ফল উপস্থিত না হয়, তবে সেই বাক্য সদাপ্রভু বলেন নাই; ঐ ভাববাদী দুঃসাহসপূর্বক তাহা বলিয়াছে, তুমি তাহা হইতে উদ্বিগ্ন হইও না।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮/১৭-২২)
এ ভবিষ্যদ্বাণীটি সুনিশ্চিতভাবেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিষয়ে বলা হয়েছে। কারণ তিনি ছিলেন বনী ইসরাঈলের ভ্রাতৃগণ বনী ইসমাঈল বা ইসমাঈলের বংশধর। তিনি মূসা (আঃ)-এর মতই নবী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর মুখে তাঁর কালাম অর্থাৎ কুরআন প্রদান করেন। যারা কুরআন মান্য করবে না তাদের জন্য শাস্তিরও ব্যবস্থা করেন। সকল দিক থেকে ভবিষ্যদ্বাণীটি একমাত্র তাঁর জন্যই প্রযোজ্য।
খৃস্টানগণ দাবি করেন যে, কথাটি যীশুর বিষয়ে বলা হয়েছে। বড় অদ্ভুৎ ও উদ্ভট দাবি! যীশুই ঈশ্বর এবং তিনিই “ঈশ্বরের প্রেরিত নবী”। একই ব্যক্তি নিজেই আল্লাহ এবং নিজেই নিজের কাছে ওহী পাঠান!!! সর্বোপরি, কিতাবু মোকাদ্দাস প্রমাণ করে যে, যীশু কখনোই এ ‘প্রতিশ্রুত নবী’ বা ভাববাদী হতে পারেন না, কারণ:
(ক) প্রতিশ্রুত নবী ও প্রতিশ্রুত মাসীহ দুজন ভিন্ন মানুষ হবেন। যোহনের সুসমাচারের ১ম অধ্যায়ে রয়েছে: “১৯আর যোহনের সাক্ষ্য এই, যখন যিহূদিগণ কয়েক জন যাজক ও লেবীয়কে দিয়া যিরূশালেম হইতে তাঁহার কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইল, আপনি কে? ২০ তখন তিনি স্বীকার করিলেন, অস্বীকার করিলেন না; তিনি স্বীকার করিলেন যে, আমি সেই খ্রীষ্ট নই। ২১তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তবে কি? আপনি কি এলিয় (Elias)? তিনি বলিলেন, আমি নই। আপনি কি সেই নবী (that prophet)? তিনি উত্তর করিলেন, না।... ২৫আর তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি যদি সেই খ্রীষ্ট নহেন, এলিয়ও নহেন, সেই ভাববাদীও নহেন, তবে বাপ্তাইজ করিতেছেন কেন?”
এখানে আমরা দেখছি যে, ইস্রায়েলীয়গণ জানতেন যে, প্রতিশ্রুত মাসীহ ও প্রতিশ্রুত নবী দু ব্যক্তি হবেন। যোহন কোন্ ব্যক্তি তা তারা জানতে চান। ইঞ্জিলে অন্যত্র রয়েছে: “সেই সকল কথা শুনিয়া লোকসমূহের মধ্যে কেহ কেহ বলিল, ইনি সত্যই সেই ভাববাদী (this is the Prophet)। আর কেহ কেহ বলিল, ইনি সেই খ্রীষ্ট (This is the Christ)।” যোহন ৭/৪০-৪১। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায়, তাঁরা যীশুর আগমনের সময়েও প্রতিশ্রুত ‘নবীর’ আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন এবং তারা জানতেন যে, প্রতিশ্রুত নবী আসবেন এবং তিনি প্রতিশ্রুত মসীহ নন; বরং ভিন্ন মানুষ।
(খ) প্রতিশ্রুত নবী মূসা (আঃ)-এর সদৃশ হবেন। এখানে বলা হয়েছে “তোমার সদৃশ (like unto thee)”। যীশু কখনোই মূসা (আঃ)-এর মত ছিলেন না। মুহাম্মাদ নিঃসন্দেহে সামগ্রিকভাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা (আঃ)-এর সদৃশ। এখানে সামান্য কয়েকটি দিক উল্লেখ করছি: (১) তাঁরা উভয়ে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, (২) পিতা ও মাতার সন্তান, (৩) বিবাহিত ও সন্তান-সন্ততির পিতা, (৪) উভয়ের ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধিবিধান রয়েছে, (৫) জিহাদ বা যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, (৬) ইবাদতের সময় পবিত্রতা অর্জনের বিধান রয়েছে, (৭) হালাল-হারাম ও পাক-নাপাকের ব্যবস্থা উভয়ের শরীয়তে একইভাবে বিদ্যমান, (৮) বিচার, শাস্তি, ব্যভিচারের শাস্তি ইত্যাদি উভয়ের শরীয়তে বিদ্যমান, (৯) উভয়েই এগুলি প্রয়োগ করতে সক্ষম ছিলেন, (১০) উভয়েই ত্রিত্ববাদ মুক্ত বিশুদ্ধ তাওহীদ বা একত্ববাদের শিক্ষা ও নির্দেশ দিয়েছেন, (১১) তাঁরা উভয়েই তাঁদের উম্মাতকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁদেরকে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল (ঈশ্বরের ভাববাদী ও ঈশ্বরের দাস) বলতে। তাঁদেরকে ঈশ্বরের পুত্র বা ঈশ্বর (নাঊযু বিল্লাহ!) বলতে নির্দেশ দেন নি; (১২) উভয়েই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন, (১৩) তাঁরা কেউ অনুসারীদের জন্য শাপগ্রস্ত হন নি; (১৪) তাঁরা উভয়েই মত নিজ জাতির মধ্যে সম্মানিত নেতা ছিলেন, যাকে সকলেই মান্য করেছেন এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধ পালন করেছেন।
তাঁদের উভয়ের জীবন ও ধর্ম-ব্যবস্থা (শরীয়ত) তুলনা করলে এরূপ আরো অনেক সাদৃশ্য ও মিল আমরা দেখতে পাই। এ সকল কোনো বিষয়েই ঈসা মাসীহের সাথে মূসার (আঃ) কোনো মিল নেই। তিনি কোনোভাবেই মূসার সদৃশ ছিলেন না। বাহ্যিকভাবে তাকে একজন মানুষ এবং ইয়াহূদী বংশের মানুষ হিসেবে মূসার সদৃশ বলা যেতে পারে। তবে এরূপ সদৃশ তো ইস্রায়েল বংশের সকল মানুষই ছিলেন। এরূপ বিষয়কে সদৃশ বলে গণ্য করলে পুরো ভবিষ্যদ্বাণীই বাতিল হয়ে যায়। সর্বোপরি খৃস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে তিনি মানুষের দেহ ধারণ করলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে মানুষ ছিলেন না, বরং ঈশ্বর ছিলেন; কাজেই এ দুটি বিষয়ের মিলও প্রকৃত মিল নয়; কাজেই কোনোভাবেই ঈসা মাসীহ মূসা (আঃ)-এর সদৃশ নবী হতে পারেন না।
(গ) তাঁর মুখে আল্লাহর কালামের আক্ষরিক প্রকাশ হবে। এ ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে: “তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন।” এ কথাটি একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ একমাত্র কুরআনই আক্ষরিক আল্লাহর বাক্য; আল্লাহ যা বলেছেন তাই এর মধ্যে আছে। এর মধ্যে আল্লাহর বাক্য ছাড়া অন্য কিছুই নেই। বিশ্বে কুরআন ছাড়া কোনো আক্ষরিক ওহীর গ্রন্থ নেই। প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে “আল্লাহর বাক্য” নেই বললেই চলে। এমনকি এর মধ্যে মাসীহের বাক্যও সামান্য।
(ঘ) তাঁর অপমৃত্যু হবে না, বরং স্বাভাবিক মৃত্যু হবে। এ ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, আল্লাহ যে কথা বলেন নি, সে কথা যদি কোনো নবী-দাবিদার আল্লাহর নামে বলে তবে তাকে মরতে হবে, অর্থাৎ তিনি নিহত হবেন বা তার অপমৃত্যু হবে। মুহাম্মাদ (e) যদি সত্য নবী না হতেন তবে তিনি অবশ্যই নিহত হতেন। কিন্তু তিনি নিহত হন নি। তাঁকে হত্যা বা গুপ্ত হত্যা করতে কাফিরগণ প্রানান্ত চেষ্টা করেছেন। উপরন্তু তিনি নিজে বহুবার যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করেছেন, একাকী যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, কিন্তু তাঁর শত্রুরা তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হয় নি। পক্ষান্তরে খৃস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এজন্য যদি কেউ দাবি করেন যে, এ ভবিষ্যদ্বাণীটি যীশুর বিষয়ে কথিত, তবে তাতে প্রমাণিত হবে যে, তিনি আল্লাহর নামে মিথ্যা বলেছিলেন। নাঊযু বিল্লাহ!
(ঙ) তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল হবে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো নবী আল্লাহর নামে মনগড়া কিছু বলেন, তবে তার ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। মাত্র দুটি বিষয় দেখুন:
(১) চারিদিকে শত্রু পরিবেষ্ঠিত অবস্থাতেই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে, তিনি নিহত হবেন না। আল্লাহ বলেছেন: “আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন” (৫- মায়িদা, ৬৭ আয়াত)। এ ভবিষ্যদ্বাণী আক্ষরিকভাবে সত্য হয়েছে।
(২) কুরআনের মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, কুরআনের মত একটি গ্রন্থ কেউ কখনো রচনা করতে সক্ষম হবে না। এ ভবিষ্যদ্বাণীও সফল হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ উন্মুক্ত। খৃস্টানগণ দাবি করেন কুরআনের মত একটি বই লেখা সম্ভব। আমাদের দাবি, আপনারা একটি বই লিখে দিন। অর্থ ও তথ্য বিচার পরে হবে। যদি কেউ সে বইটির ভাষা ও অর্থ না জেনেও কুরআনের মত দু/তিন বছরে তা মুখস্থ করতে পারে তবে প্রমাণিত হবে যে, অর্থ ও তথ্য যাই হোক না কেন, শব্দ ও বাক্যে তা কুরআনের মত হয়েছে। খৃস্টানগণ কি এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন?
পক্ষান্তরে ইঞ্জিলের ভাষ্য অনুসারে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তিনি ইউনুস নবীর মত তিনদিন তিনরাত্রি মাটির গর্ভে থাকবেন (মথি ১২/৩৯-৪০), কিন্তু তা থাকেন নি। তিনি তিনদিন তিনরাত নয়; বরং এক দিন দুই রাত ছিলেন। উপরন্তু ইউনুস নবীর মত থাকতে পারেন নি। ইউনুস নবী জীবিত অবস্থায় মাছের পেটে ছিলেন, কিন্তু ইঞ্জিলের যীশু মৃত অবস্থায় ছিলেন। (মথি ২৭/৪৫-৬১; মার্ক ১৫/৩৩-৪৭; লূক ২৩/৪৪-৫৬; যোহন ১৯/২৫-৪২; ২০/১-১৮। আরো দেখুন: মথি ২৮/১-১০; মার্ক ১৬/১-১১; লূক ২৪/১-১২।)
এছাড়া তিনি বলেছিলেন যে, তার কিছু শিষ্যের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত হবে এবং তিনি ফিরে আসবেন। একথাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। (মথি ১৬/২৭-২৮, ১ থিষলনীকীয় ৪/১৫-১৭, ১ করিন্থীয় ১৫/৫১-৫২, প্রকাশিত বাক্য ২২/১০-১১)
“তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় (ফারাক্লীত/ the Comforter/the Counselor) তোমাদের নিকটে আসিবেন না[1]; কিনতু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব। .... পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা (the Spirit of truth), যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিনতু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন।...” (যোহন ১৬/৭-১৩)
এখানে যীশু সুস্পষ্টত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের কথা জানালেন। খৃস্টানগণ দাবি করেন যে, এখানে ‘পাক রূহের’ কথা বলা হয়েছে। অথচ আমরা প্রচলিত ইঞ্জিলে দেখছি যে, যীশুর পৃথিবীতে থাকা অবস্থাতেই পাক রুহ বারবার এসেছেন। কাজেই যীশু না গেলে তিনি আসবেন না কথাটি কখনোই পাক রুহের জন্য প্রযোজ্য নয়। আর খৃস্টানদের বিশ্বাসে পাক রুহ তো নিজেই আল্লাহ; কাজেই ‘তিনি নিজের থেকে কিছুই বলবেন না; যা শুনবেন তা-ই বলবেন’ বলার কোনোই অর্থ নেই। উপরন্তু যীশু বলেছেন যে, তার উপাধি হবে সত্যের আত্মা অর্থাৎ আল-আমীন ও আস-সাদিক। এজন্য এ ভবিষ্যদ্বাণী নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে। বার্নাবাস লিখিত ইঞ্জিলে তিনি বারংবার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উল্লেখ করেছেন। (বার্নাবাসের ইঞ্জিল (The Gospel of Barnabas) ১১২, ১৩৬, ১৬৩ ও ২২০ অধ্যায়।)প্রচলিত কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এরূপ আরো অনেক সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী এখনো বিদ্যমান। ইয়াহূদী-খৃস্টানগণ যদি এগুলি প্রতিষ্ঠা করতেন তবে তাঁরা এবং মানব সভ্যতা রক্ষা পেত।
>কিতাবুল মোকাদ্দসে শির্ক-কুফর-এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। যদি কোনো ব্যক্তি কোনোভাবে মূর্তি, ছবি বা প্রতিকৃতি প্রতিষ্ঠা করে, শির্ক করে বা শির্কের প্ররোচনা দেয় তাহলে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে হবে। কোনো নবী অনেক মু‘জিযা দেখানোর পর কোনোভাবে শির্কের প্ররোচনা দিলে তাকেও প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে হবে। কোনোরূপ করুণা দেখানো যাবে না। যদি কোনো জনপদবাসী কোনোরূপ শির্কে নিপতিত হলে সে গ্রামের বা নগরের সকল মানুষকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে এবং সে গ্রামের সকল জীব-জানোয়ার পশুও হত্যা করতে হবে। গ্রামের সকল সম্পদ ও দ্রব্যাদি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে তাওবারও কোনো সুযোগ নেই। (যাত্রাপুস্তক ২২/২০, ৩২/২৮, দ্বিতীয় বিবরণ ১৩/১-১৬, ১৭/২-৭, ১ রাজাবলী ১৮/৪০)
বাইবেলে ব্যভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। (লেবীয়: ২০/১০-১৭) এমনকি পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাতকেও ঈসা মাসীহ ব্যভিচার বলে গণ্য করেছেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার চোখ তুলে ফেলে দিতে বলেছেন। তিনি বলেন: “যে কেহ কোনো স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল। আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায় তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা সমস্ত শরীর নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং একটি অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল।” (মথি ৫/২৮-২৯)
যদি খৃস্টান বিশ্ব তাওহীদ ও শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করতো, শির্ক-ব্যভিচারের শাস্তি প্রতিষ্ঠা করতো তাহলে মানব সভ্যতা বর্তমানের ভয়ঙ্কর অবক্ষয়ের মধ্যে পড়তো না।
যদি কেউ আপনাকে বলে যে, কুরআন তাওরাত-ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছে, আপনি তাকে বলুন: হ্যা, কুরআন ইয়াহূদী-খৃস্টানদেরকে তাওরাত-ইঞ্জিল এবং কুরআনের বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে। “ঈসা মাসীহ পাপ বহন করবেন” বলে ধোঁকা দিয়ে শির্ক ও ব্যভিচার প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয় নি। আপনাদের দেশগুলিতে যদি না-ও পারেন তবে অন্তত চার্চগুলিতে তাওরাত-ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করুন। খৃস্টান চার্চগুলিতে পাদরিগণ যত ব্যভিচার ও ধর্ষণ করেন তা বিশ্বের আর কোনো ধর্মের ধর্মালয়ে ঘটে না। (ইন্টারনেটে দেখুন: Catholic sex abuse cases)। এ সকল পাদরিকে তাওরাত নির্দেশিত শাস্তি প্রদান করুন। সকল খৃস্টান চার্চে ঈসা মাসীহ, তাঁর মাতা মরিয়ম ও অন্যান্য অগণিত মানুষের প্রতিমা বিদ্যমান। এগুলি ধ্বংস করুন, যারা এগুলি বানিয়েছে বা এগুলিতে ভক্তি মানত-উৎসর্গ করতে উৎসাহ দিয়েছে তাদের সকলকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করুন। এরপর আমাদের কাছে তাওরাত-ইঞ্জিল নিয়ে আসুন।
সম্মানিত পাঠক, ঈসায়ীগণ কেতাবুল মোকাদ্দসের একটি বিধানও মানেন না। শুধু দু-চারটি কথাকে বিকৃত করে সাধু পলের ত্রিত্ববাদী আকীদা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। ঈসাসী প্রচারককে তৌরাত শরীফের লেবীয় পুস্তকের ১৫ অধ্যায়টি পড়তে বলুন। পুরুষ ও নারীর নাপাকির অদ্ভুৎ সব বিধান! আপনি বলুন: আপনি বা কোনো খৃস্টান কি এ বিধানগুলি মানেন? তৌরাতের কোন্ বিধানটি আপনারা প্রতিষ্ঠা করেন?
তৌরাতের সহজ একটি মৌখিক বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে দাওয়াত দিন। তাওরাত বলে: “যে ব্যক্তি কোনো ক্ষোদিত বা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা- সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু- শিল্পকরের হস্ত নির্মিত বস্তু নির্মাণ করিয়া গোপনে স্থাপন করে সে শাপগ্রস্ত (অভিশপ্ত)। তখন সমস্ত লোক উত্তর করিয়া বলিবে: আমেন” সকল ব্যভিচারী শাপগ্রস্ত... “যে কেহ এই ব্যবস্থার কথাসকল পালন করিবার জন্য সেই সকল অটল না রাখে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে: আমেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭/১৫, ২০-২৩, ২৬)
খৃস্টান প্রচারককে বলুন, আসুন এ বিধানটি কায়েম করে দো‘আ করি: যে সকল পাদরি, পোপ ও বিশপ যীশু, মেরি ও অন্যান্য মানুষের ক্ষোদিত, ছাঁচে ঢালা বা শিল্পীর আঁকা মূর্তি, প্রতিকৃতি বা ছবি তৈরি করে চার্চে ও সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাওরাতের বিধান প্রতিষ্ঠায় অটল থাকেন নি বরং ঈসা মাসীহ পাপ বহন করবেন বলে প্রতারণা করে সকল প্রকারের পাপাচার ও ব্যভিচার প্রশ্রয় দিয়েছেন, মানব সমাজকে এবং চার্চগুলোকে ব্যভিচারের আখড়া বানিয়েছেন, তারা সকলেই আল্লাহর অনন্ত লা‘নত ও অভিশাপে অভিশপ্ত হোক! আমীন!! খৃস্টান প্রচারক যদি ‘আমীন’ বলতে দ্বিধা করেন তাহলে বুঝবেন যে, তিনি কিতাবুল মোকাদ্দসে বিশ্বাস করেন না।