উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এক অন্ধ বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখতে পেলেন। সে ছিল যিম্মী বা সন্ধিবদ্ধ কাফির নাগরিক। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন সে কোন বংশের। সে বলল যে সে ইয়াহূদী। তিনি তাকে ভিক্ষা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। সে উত্তর দিল: আমি বৃদ্ধ, কোনো কাজ করতে পারি না। নিজের খরচ ছাড়াও আমাকে জিজিয়া করের জন্য টাকা ভিক্ষা করে তুলতে হয়। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার হাত ধরে তাকে নিয়ে এলেন, যথা সম্ভব দান করলেন। তারপর বায়তুল মালের দায়িত্বশীলকে নির্দেশ দিলেন, এই বৃদ্ধ অন্ধ ইয়াহূদী এবং তার মত অন্যান্য আহলে কিতাবদের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখবে। আল্লাহর কসম! আমরা এই বৃদ্ধের প্রতি ইনসাফ করছি না, অথচ তার যৌবনকালে তার কাছ থেকে কর নিয়েছি আর বৃদ্ধ বয়সে কষ্ট দিচ্ছি।
﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ﴾ [التوبة: ٦٠]
“নিশ্চয়ই দান-খয়রাত ফকির-মিসকিনদের জন্য”। [সূরা আত-তাওবা: ৬০]
এরপর খলিফা বৃদ্ধ যিম্মীদের উপর থেকে জিজিয়া কর মাফ করে দিলেন।
একবার রোমের সম্রাট ওমরের কাছে একজন দূত পাঠালেন। তাঁর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ও কাজকর্ম স্বচক্ষে দেখার জন্য। দূত মদীনায় প্রবেশ করে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পেল না। লোকজনকে সে জিজ্ঞাসা করল যে, ‘‘তোমাদের বাদশাহ কোথায়?’’
লোকেরা বলল ‘‘আমাদের কোনো বাদশাহ নেই। বরং একজন আমীর আছেন যিনি মদীনার বাইরে গেছেন।”
দূত তাঁর খোঁজে মদীনার বাইরে গেল। খুঁজতে খুঁজতে সে তাঁকে পেল এক গাছের তলায়, মরুভূমির বালুরাশির উপর নিজের হাতের ছোট লঠিটি মাথার নিচে রেখে গুমিয়ে আছেন। যে লাঠি দিয়ে তিনি কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখলে তা বন্ধ করতেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ অবস্থায় দেখে তার অন্তরে সম্ভ্রম সৃষ্টি হলো। সে মনে মনে ভাবল: তিনি এমন একজন লোক যাঁর ভয়ে সমস্ত রাজা-বাদশাহরা সন্ত্রস্ত, ভীত। অথচ তিনি নির্ভাবনায় একাকী ঘুমিয়ে আছেন। তিনি ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাই এমন স্বস্তিতে ঘুমাচ্ছেন। আর আমাদের রাজা-বাদশাহরা অত্যাচার-অবিচারে লিপ্ত। যার ফলে তারা সবসময় ভয়ে ভয়ে দিনযাপন করে। বিনিদ্র রাত কাটায়।