আমর ইবনুল ‘আসের পুত্রের বিরুদ্ধে জনৈক মিশরীয় লোককে প্রহার করার অভিযোগ আনা হল। উমর তখন মিশরীয় লোকটিকে বললেন চাবুক দিয়ে তাকে প্রহার করে প্রতিশোধ নিতে। তখন আমর ইবনুল আস ছিলেন গভর্ণর।
একবার মুসলমানরা গণিমতের মাল হিসাবে কিছু ইয়ামানী কাপড় পেয়েছিলেন। সকলকে এক টুকরো করে কাপড় বন্টন করে দেওয়া হল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেই কাপড় দিয়ে জামা তৈরি করলেন। তিনি যেহেতু লম্বা-চওড়া ছিলেন, এক টুকরো কাপড়ে তাঁর জামা হতো না, তাই তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ নিজের কাপড়টিও তাঁকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
মিম্বরে উঠে খুতবা দেওয়ার সময় একজন লোক উঠে দাঁড়িয়ে বলল: আপনি যে জামা পরেছেন, তা এক টুকরো কাপড়ে বানানো সম্ভব নয়। এর উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আপনার খুতবা শুনব না। যখন আব্দুল্লাহ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন যে তিনি তাঁর ভাগের কাপড়টিও পিতাকে দিয়ে দিয়েছেন জামা বানানোর জন্য, তখন লোকটি মেনে নিল।
খলিফা হওয়ার পর ভাষণ দিতে গিয়ে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন যে: যদি তোমরা আমার মধ্যে কোন বক্রতা দেখ, তবে আমাকে সোজা করে দিও। সমবেত মুসলিমদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল: তোমার মধ্যে কোনো বক্রতা দেখলে আমরা তোমাকে তীক্ষ্ণধার তরবারী দিয়ে সোজা করে দেব। শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া যে তিনি ওমরের খিলাফতের মধ্যে এমনতর ব্যক্তিও সৃষ্টি করেছেন, যে তাকে তীক্ষ্ণধার তরবারী দিয়ে সোজা করতে পারে।
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন নিতান্তই দরিদ্র। খয়বরে তিনি এক টুকরো জমি পেয়েছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘‘আমি খয়বরে খানিকটা জমি পেয়েছি। এত মূল্যবান সম্পত্তি আমি কোনো দিন পাই নি। এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি?’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন: যদি তোমার মন চায়, তবে আসল জমি নিজের অধিকারে রেখে তার লভ্যাংশ দান করে দিও।”
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা গরীব-দুঃখী, অভাবী আত্মীয়-স্বজনদের জন্য এবং দুর্বল -অক্ষম লোকদের সাহায্য ও জনকল্যাণমূলক কার্যাবলীর জন্য ওয়াক্ফ করে দেন। এটাই ছিল ইসলামের প্রথম ওয়াক্ফ। এভাবে তিনি নিজের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ আল্লাহর পথে দান করে কুরআনের নিম্নোক্ত উক্তির সার্থকতা প্রমাণ করেন:
﴿لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
‘‘তোমরা যতক্ষণ নিজেদের প্রিয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় না করবে, ততক্ষণ প্রকৃত কল্যাণ অর্জনে সক্ষম হবে না”। [সূরা আলে ইমরান: ৯২]
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুচারু ও বিজ্ঞ নেতৃত্ব তাঁকে জেরুজালেমের বিজয় এনে দিয়েছিল। তিনি ছিলেন এমন এক রাজ্যের খলিফা যা সে সময়কার সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্য পারস্য ও পূর্ব বাইজান্টাইনের অধিকারী ছিল। কিন্তু অন্যদিকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী এবং প্রজাবৎসল মানুষ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কার্যতই আল্লাহ ওমরের জিহ্বায় এবং অন্তরে সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে শয়তানও ওমরকে ভয় করে।
ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: কখনো লোকেরা একটি মত পোষণ করতো আর উমর ভিন্নমত পোষণ করতেন, তারপর দেখা যেত সে সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে এবং তা ওমরের মতের সাথে মিলে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে: মাকামে ইবরাহিমকে সালাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করা, হিজাব গ্রহণ করা, বদরের যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা ইত্যাদি।