পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞানের জাগরণ দুনিয়ার সামনে আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস আর প্রাচুর্যের এক নয়া দিগন্তের উন্মোচন করেছিল। চোখ ধাঁধানো বাড়ি-গাড়ি, যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্ময়কর বিকাশ আর বিলাস-ব্যসনের সকল উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য, পোশাক-আশাকের ঔজ্জ্বল্য, উন্নত মানের খাদ্যদ্রব্যের আড়ম্বর আর জীবনের সকল ভোগ-সামগ্রীর ঘটা মানুষকে তাদের পুরনো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ এক নতুন পৃথিবীতে নিয়ে গেলো, যেখানে ভোগের সাগরে বুঁদ হয়ে থাকা ছাড়া জীবনের আর কোনো মানে ছিল না তাদের কাছে।
সন্দেহ নেই, জগতের ধর্মগুলো যেই মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল নতুন জীবনের এই সবকিছুই ছিল ঠিক তার বিপরীত মেরুতে। কারণ ধর্ম স্বভাবতই মানুষকে অপচয় থেকে নিষেধ করে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির পথ পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বনের দীক্ষা দেয়। মদ, ব্যভিচার ও নগ্নতাসহ সকল হারাম ও অন্যায়ের পথ বর্জনের নির্দেশ দেয়। আর এতেই মানুষ ধর্মকে ভুল বুঝলো। দীন ও ধর্মের হিকমত ও রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষ ধর্মের এই নীতিমালাকে মনে করতে লাগলো তাদের স্বাধীনতার পথের কাঁটা হিসেবে। তাদের মনে বিশ্বাস জন্মালো, ধর্ম তাদের স্বাধীনতার পায়ে শেকল পরিয়ে দিতে চায়। তাদের ভোগ-বিলাসের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে চায়। ফলে এভাবে ধর্মের প্রতি তাদের বিতৃষ্ণা ও বিরাগ আরও বেড়ে গেল। অধিকন্তু, ধর্মের পথে আহ্বানকারীরাও তাদের দুশমনে পরিণত হলেন। যে ব্যক্তিই জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে তাদের জান্নাতের দিকে উদ্বুদ্ধ করতো তাকেই তারা ঘৃণা করতে শুরু করলো। আর এভাবেই দিনে দিনে ধর্ম-বিশ্বাস মানুষের মধ্য থেকে বনবাসে চলে গেলো। মানুষের মনের আসনটি দখল করে নিলো নাস্তিক্যবাদ।