পশ্চিমা সভ্যতা জীবনকে উপভোগের যেই দুয়ার পৃথিবীর সামনে খুলে দিয়েছিল তাতে গোটা মানব জাতি উন্মাদ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। জীবনের ভোগ-বিলাসের হাজারও উপায়-উপকরণ দেখে মানুষের মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম হলো। সেগুলোর ভোগ-সম্ভোগের পথে দৌড়াতে গিয়ে একসময় মানুষ তার চারপাশের সবকিছু বরং একদিন নিজেকেও ভুলে গেলো। জীবনকে সহজ করার জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলো। আর এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ তার পরিশ্রম আর কর্মের পরিধিও আরও বিস্তৃত করলো। একসময় পুরুষের একার শ্রম পরিবারের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হলে একসময় অন্তঃপূরের নারীও পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরে নেমে এলো। জীবনের প্রলুব্ধকর হাতছানিতে সাড়া দিয়ে ভোগের সাগরে বুঁদ হয়ে থাকার জন্য প্রয়োজন হলো আরও অর্থ ও প্রাচুর্য্যের। ফলে মানুষ আরও বাড়িয়ে দিলো তার কাজের গতি। এভাবে মানুষ একসময় মেশিনে পরিণত হলো। জীবনের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যার কাজই দিন-রাত কেবল ঘুরতে থাকা। ফলে একদিন মানুষ তার নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সময়টুকুও হারিয়ে ফেললো। নিজের স্থান ও অবস্থান, নিজের পরিচয় ও গন্তব্য এসব নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগই তার রইলো না। ভোর হতেই সে কাজে নেমে যায়। দিনের শেষ প্রান্তে কাজের শেষে চলে যায় মনের চাহিদা মেটাতে ভোগ-বিলাসের সন্ধানে। এটাই পরিণত হয় তার প্রাত্যহিক রুটিনে। ফলে ধর্ম নিয়ে চিন্তা-ভাবনার কথাও মানুষ একসময় ভুলে যায়। মানুষের জীবনে স্বাভাবিকভাবে তৈরি সহজাত কিছু প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার কথাও তার মনে পড়ে না। তার ভাবনাতেও কোনো দিন আসে না: কে এই পৃথিবীর স্রষ্টা? আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন? আর কেনই বা সৃষ্টি করেছেন? আমাদের গন্তব্য কোথায়? এই পৃথিবীর কোনো শুরু বা শেষ আছে কি? মানুষের মাঝে ধনী-গরীব, জালেম-মজলুম আর হত্যাকারী ও নিহতের এই শ্রেণীভেদ কেন? সত্যি কথা হলো, জীবন-চক্রের অবিরাম ঘূর্ণন তাকে এগুলোর জবাব খোঁজার অবসরটুকুও দেয়নি।
এই ছিল নাস্তিক্যবাদের প্রাদুর্ভাব ও দুনিয়াব্যাপী তার ভয়ংকর সয়লাবের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এবার আমরা দেখবো, নাস্তিক্যবাদের বিকাশ ও বিস্তারের ফলে আমাদের সমকালীন জীবনে কী প্রভাব পড়েছে? এটা আমাদের জীবনের জন্য কোন ধরনের সর্বনাশ ডেকে এনেছে?