মনে রাখতে হবে, বর্তমানে আমাদের যুব সমাজ অসংখ্য সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। এ সব সংকট ও সমস্যার মধ্য হতে অন্যতম সংকট ও সমস্যা হলো মাদক সেবন ও নেশা করা। ইসলামে সব ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ হলেও ধর্মীয় মূল্যবোধ হারিয়ে যুব সমাজ মাদকের মরণ নেশায় মেতে উঠেছে। বাংলা ‘নেশা’ শব্দটি মূলত ফার্সি শব্দ ‘নাশাতুন’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হচ্ছে ‘মত্ততা’। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ যুব সমাজ মাদক-আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসের অবলীলায় নিপতিত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের মাদকের সয়লাব যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়াতে তারা কোনো না কোনো উপায়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মাদক বর্তমানে এত বেশি ব্যাপক আকার ধারণ করছে, যার ভয়ানক প্রভাব ও বিস্তার লক্ষ্য করা যায় আমাদের মানুষ গড়ার আঙ্গিনা-শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও। এটি বর্তমান সময়ে যুব সমাজের জন্য একটি ভয়ানক পরিণতি ও অশনি সংকেত। তাই, বর্তমানে যদি একজন যুবক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে তাকে সঠিক পথে রাখার জন্য কিংবা মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য সময়মত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা হয়, তাহলে যুব সমাজের কাছে জাতির যে প্রত্যাশা তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

যুব সমাজ ধ্বংস ও তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রধান অন্তরায় মাদক। মাদক শুধু একজন যুবকের মেধা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের প্রতিবন্ধক নয় বরং মাদক একজন যুবককে ধ্বংসের অবলীলা ও মারাত্মক পরিণতির দিক ঠেলে দিয়ে তাকে চিরতরে ধ্বংস ও অকেজো করে দেয়। তার মূল্যবান জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়।

ইসলামি মূল্যবোধ বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া সব সমাজেই মাদকের ছুটাছুটি পরিলক্ষিত। মুসলিম পারিবারিক বন্ধন ও ইসলামি মূল্যবোধ কম-এমন পরিবারের সদস্যরা অতি সামান্য কারণে মাদকদ্রব্যে অধিকতর আসক্ত হচ্ছে। যারা নেশা করে তাদের অধিকাংশই জানে, নেশা কোনও রকম উপকারী বা ভালো কাজ নয় এবং তা মানুষের জীবনীশক্তি বিনষ্ট করে। এসব জেনেশুনেও মাদকাসক্ত মানুষ নেশার অন্ধকার জগতের মধ্যে থাকতে চায়। মাদকাসক্ত তরুণ প্রজন্ম ধর্ম-কর্ম সবকিছু বিসর্জন দিয়ে হতাশাকে সঙ্গী করে জীবনের চলার পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে এবং বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে সামাজিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইসলাম মানুষকে নেশা গ্রহণ ও মাদক সেবন হতে সম্পূর্ণ নিষেধ করে। মানুষকে ধ্বংস ও করুণ পরিণতি হতে রক্ষা করার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নাই। তাই আমাদের জানতে হবে ইসলাম মাদক সম্পর্কে কি দিক-নির্দেশনা দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,

«كل شراب أسكر فهو حرام»

“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম”।[1] তিনি আরও বলেন,

«كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ، وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ، وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ، لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ» رواه مسلم.

‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, অতপর নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় এবং সে তাওবা না করে, আখিরাতে সে মদ পান করা হতে বঞ্চিত হবে’।[2]

মানবসভ্যতার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী দেশের অন্যতম অভিশাপ মাদকাসক্তি। মাদকদ্রব্যের নেশার ছোবল এমনই ভয়ানক যে তা ব্যক্তিকে পরিবার, সমাজ, দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন করে না; তা সমগ্র জীবন ধ্বংস করে দেয়। মাদক কেবল সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রেরই ক্ষতি করে না; সভ্যতা ও সংস্কৃতিকেও বিপন্ন করে। পরিমাণে অল্প হোক আর বেশি হোক-পান বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করা হোক, নেশা ও চিত্ত-বিভ্রমক হলেই তা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। মানবতার মুক্তির কাণ্ডারি ইসলামই সর্বনাশা মাদক সম্পর্কে মানব জাতিকে সর্বোচ্চ সতর্ক করছে। মানুষ যাতে মাদক থেকে দূরে থাকে তার জন্য মাদক সেবনে এ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ঘোষিত হয়েছে,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ ﴾ [المائ‍دة: ٩٠]

‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কারসাজি। সুতরাং, তোমরা এসব বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”।[3]

মাদক হলো এমন এক ধরনের অবৈধ ও বর্জনীয় বস্তু, যা গ্রহণ বা সেবন করলে আসক্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা বিকৃতি ঘটতে পারে। মাদকাসক্তিতে মানুষের কোনও না কোনও ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই এবং ধীরে ধীরে তা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। মাদক কেবল একক অপরাধ নয়, মাদকাসক্তির সঙ্গে সন্ত্রাস ও অন্যান্য অপরাধ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মানুষের অন্তরে মাদকের ক্ষতির অনুভূতি জাগ্রত করে রাসুল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»

‘তোমরা মাদক ও নেশা পান করো না; কেননা এটা সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল’।[4]

মাদকের করাল গ্রাসে তরুণ সমাজ আজ সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল কাজে মেধা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞার আশানুরূপ অবদান রাখতে পারছে না। যে তরুণ তার অমিত সম্ভাবনাকে পরিবার, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে পারত, মাদকের নীল দংশন তার সুকুমার বৃত্তি নষ্ট করে, এমনকি ক্রমান্বয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। উপরন্তু তথা কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ আল্লাহ তায়ালার বিধিবদ্ধ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত থেকে দূরে রাখে এবং পাপাচারে লিপ্ত করে। এতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন। এ মর্মে কুরআনে মাজীদে আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّمَا يُرِيدُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَن يُوقِعَ بَيۡنَكُمُ ٱلۡعَدَٰوَةَ وَٱلۡبَغۡضَآءَ فِي ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِ وَيَصُدَّكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَعَنِ ٱلصَّلَوٰةِۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّنتَهُونَ ٩١﴾ [المائ‍دة: ٩١]

‘নিশ্চয় শয়তান মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখতে চায়, তবু কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না[5]?’ যেহেতু মাদকাসক্তি একটি জঘন্য সামাজিক ব্যাধি, জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাড়া-মহল্লা ও এলাকায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘৃণা প্রকাশের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্যের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ও কঠোর বিধান কার্যকর নিশ্চিত করা দরকার। সমাজজীবনে এহেন ঘৃণ্য মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ও প্রসার রোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, এর প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত তাদের দেশ ও জাতির স্বার্থে এহেন অনৈতিক কাজ অবশ্যই বর্জন করা উচিত। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে মসজিদের ইমাম-খতিবের ভাষণে মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সোচ্চার থাকতে হবে এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে মাদকের অবৈধ উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহার ও চোরাচালান রোধসহ সকল স্তরের মুসল্লিদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। শুধু মদ্যপায়ী ও বিক্রেতা নয়, বরং মদ ও মাদকদ্রব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত ১০ জনের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত দিয়েছেন। তারা হচ্ছে,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الخَمْرِ عَشَرَةً: عَاصِرَهَا، وَمُعْتَصِرَهَا، وَشَارِبَهَا، وَحَامِلَهَا، وَالمَحْمُولَةُ إِلَيْهِ، وَسَاقِيَهَا، وَبَائِعَهَا، وَآكِلَ ثَمَنِهَا، وَالمُشْتَرِي لَهَا، وَالمُشْتَرَاةُ لَهُ»

“১. মদ্যপানকারী, ২. মাদক প্রস্ততকারক ৩. মাদক প্রস্তুতের উপদেষ্টা, ৪. মাদক বহনকারী, ৫. যার কাছে মাদক বহন করা হয় ৬. যে মাদক পান করায়, ৭. মাদক বিক্রেতা, ৮. মাদকের মূল্য গ্রহণকারী ৯. মাদক ক্রয়-বিক্রয়কারী, ১০. যার জন্য মাদক ক্রয় করা হয়”[6]।

সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গসহ সকল শ্রেণীর ধর্মপ্রাণ লোক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশ থেকে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ইসলামে কঠোর শাস্তির বিধান আছে। ইহকাল ও পরকালে মাদকাসক্তির ভয়াবহতা জনগণের সামনে তুলে ধরার পরও যারা এ ভয়ঙ্কর নেশা ছাড়ে না তাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম দণ্ডবিধি প্রবর্তন করেছেন, যাতে তারা সংশোধিত হয় এবং অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত হওয়ার শিক্ষাই মাদকের সর্বনাশা অভিশাপ থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণদের রক্ষা করতে পারে।

অতএব, ধর্মভীরু মা-বাবা ও অভিভাবকদের উচিত সর্বনাশা মাদকের কুফল ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সন্তানদের সচেতন করা। তাহলেই মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার সমস্যা অনেক কমে যাবে। মা-বাবা ও অভিভাবকেরা, নিজেদের সন্তানদের সামনে ধর্মীয় রীতিনীতি, ইসলামি মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার সুন্দর আদর্শ তুলে ধরুন। কারণ তারাই একদিন সমাজ-সংসার তথা দেশের কর্ণধার হবে। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত, তাদের সন্তান যাতে কোনও অসৎ সংস্রবে পড়ে মাদকাসক্ত না হয় সেদিক সজাগ দৃষ্টি রাখা। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শৃঙ্খলা, সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, সর্বোপরি মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

মাদক ত্যাগের ব্যাপারে আসক্ত ব্যক্তিদেরও আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া দরকার। মাদক থেকে বিরত থাকার জন্য নিজস্ব উদ্যোগই সবচেয়ে ভালো। নিজ থেকে নেশা ছাড়া সম্ভব না হলে তাদের ইসলামি মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র প্রদত্ত সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। তরুণ প্রজন্ম ও যুব সমাজে মাদকাসক্তির নেশায় যে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়েছে তা কেবল ইসলামি মূল্যবোধই প্রতিরোধ করতে পারে। আসক্তদেরকে মাদক ত্যাগে উৎসাহিত করতে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।হাদিসে মাদকের সেবনের বিভিন্ন পরিণতির কথা উল্লেখ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের অন্তরে মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করেছেন এবং বিভিন্ন প্রকার শাস্তি ও আযাবের কথা উল্লেখ করে মানুষকে সর্তক করেছেন। যেমন-রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদকের বিস্তারকে কিয়ামতের আলামত বলে আখ্যায়িত করেন।

[1] বুখারী, হাদিস: ৫৫৮৫

[2] মুসলিম, হাদিস: ২০০৩

[3] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯০

[4] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৩৭১। হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।

[5] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৯১


[6] তিরমিযী, ১২৯৫।

মাদক ও নেশাজাত দ্রব্যের বিস্তার কিয়ামতের আলামত। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إن من أشراط الساعة: أن يرفع العلم ويثبت الجهل، ويُشرب الخمر، ويظهر الزنا رواه البخاري ومسلم،

“কিয়ামতের আলামতসমূহের কতক আলামত হল, দুনিয়া থেকে ইলম তুলে নেয়া হবে, অজ্ঞতা-নিরক্ষরতা-প্রতিস্থাপিত হবে, মদ্য পান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।[1] অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্যে মদ্যপান ও নেশা গ্রহণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। যেমনটি অপর একটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ويكثر شرب الخمر “এবং মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে”।[2]

কিয়ামতের পূর্বে দেশ ও সমাজে মাদকের সয়লাব এত ব্যাপক হবে, কেউ কেউ মাদক সেবন করাকে অপরাধও মনে করবে না। তারা মনে করবে মাদক সেবন করা কোনো অপরাধ নয় বরং তা হালাল। অনেক সময় দেখা যাবে, মাদক ও নেশা জাতীয় বস্তুর নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রকার কোমল পানীয় ও শরবতের নামে নামকরণ করে তা পান করা হবে। তারা মনে করবে নাম পরিবর্তন করা দ্বারা তা হালাল হয়ে যাবে। ফলে মাদক সেবন যে হারাম ও নিষিদ্ধ তা তাদের অন্তর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাদকের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে, এটা যে নিষিদ্ধ তার প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করা হবে না। ‘উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ليستحلنّ طائفة من أمتي الخمر، باسم يسمّونها إياه»

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি গোষ্ঠী এমন হবে, যারা মদকে ভিন্ন নামে নামকরণ করে সেটাকে হালাল মনে করবে”।[3]

এর চেয়েও অধিক শক্তিশালী হাদিস -যাতে এ ধরনের অপরাধীদের বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে- যেটি ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারিতে আবু মালেক আল আশ‘আরী হতে বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«ليكوننّ من أمتي أقوام، يستحلّون الحِرَ والحرير، والخمر والمعازف، ولينزلن أقوام إلى جنب عَلَم، يروح عليهم بسارحةٍ لهم، يأتيهم -يعني الفقير- لحاجةٍ فيقولون: ارجع إلينا غداً. فيبيّتهم الله، ويضع العَلَم، ويمسخ آخرين قردة وخنازير إلى يوم القيامة»

“আমার উম্মতের কতক সম্প্রদায় এমন হবে, যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় পরিধান করা, মাদক সেবন করা ও গান-বাজনাকে বৈধ মনে করবে। আর উম্মতের একটি সম্প্রদায় একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবতরণ করলে তাদের নিকট তাদের রাখাল তাদের ছাগলগুলো নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন তাদের নিকট একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইলে তারা তাকে বলবে, তুমি আমাদের নিকট আগামীকাল এস। রাতে তাদের উপর আযাব এসে তাদের ধ্বংস করে দেবে। আর আল্লাহ তাদের উপর পাহাড় ধ্বসে দিবেন। আর তাদের কতেককে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত বানর ও শুকরের আকৃতিতে পরিণত করে দিবেন।[4]

>
[1] বর্ণনায় বুখারি, হাদিস: ৮০, মুসলিম, হাদিস: ২৬৭১

[2] বুখারি, হাদিস: ৫২৩১

[3] আহমদ, হাদিস:২২৭০৯

[4] বুখারি, হাদিস: ৫৫৯০
যারা মাদককে হালাল বলে তাদের দুটি উপায়ে সংশোধন করতে হবে:-

এক: কোনো বস্তুকে অন্য নামে নামকরণ দ্বারা বস্তুর আসল রূপ পরিবর্তন হয় না। আর শরীয়তের সব বিধানই হল, স্পষ্ট, মজবুত ও শক্তিশালী। শরিয়তের বিধান দ্বারা কোনো প্রকার খেল-তামাশা করা বৈধ নয়। সুতরাং, যে নামেই নাম করণ করা হোক না কেন, তার মধ্যে যখন কারণ- নেশা-পাওয়া যাবে, তখন তা সেবন বা পান হারাম হবে। এমনকি যদি আমরা মদকে পানিও নাম রাখি, তা হলেও তা হারাম হবে। কারণ, হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যে পানীয় দ্বারা মানুষের মস্তিষ্ক নষ্ট হয়, তা হারাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«كل شراب أسكر فهو حرام»

“যে কোনো ধরনের নেশাজাত পানীয় হারাম”[1]।

অনুরূপভাবে রাসূল সা. বলেন,

«كل مسكر خمر، وكل مسكر حرام»

“নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম[2]।”

আর যারা মদ পান করাকে বৈধ দাবী এবং হালাল মনে করে তাদের বলা হবে, আল্লাহ তা‘আলা যে সব বস্তুকে হারাম করেছে, তাকে হালাল মনে করা দ্বারা একজন মানুষ ইসলামের বন্ধন থেকে বের হয়ে যায়। শেখ সুলাইমান আত-তামিমী রহ. বলেন, যে সব বস্তু নিষিদ্ধ হওয়া বা হালাল হওয় বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে ধরনের হালাল বা হারাম মনে করা কুফর। কারণ, আল্লাহ ও তার রাসূল যে বস্তুকে হালাল করেছেন, তার হালাল হওয়াকে অস্বীকার করা যাবে না এবং যে বস্তুকে হারাম করেছে তাকে হালাল বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। এ ধরনের ধৃষ্টতা কেবল সেই দেখাতে পারে যে ইসলামের দুশমন, ইসলামের বিধি-বিধান অস্বীকারকারী এবং কুরআনও সুন্নাহ এবং উম্মতের ইজমাকে অমান্যকারী।

দুই: পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত করা একজন মানুষের জন্য খুবই জরুরী। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের হেফাযত ছাড়া ইসলামের মাকাসেদ তথা মূল উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর ইসলামের মাকাসেদকে সংরক্ষণ করার জন্য পরিপূর্ণ চেষ্টা করা একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু মদ মানুষের জ্ঞানকে নষ্ট করে দেয় যা একজন মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। মদ মানুষের জ্ঞানকে বিলুপ্ত করে, চিন্তা-ফিকিরকে নষ্ট করে দেয়। একজন মানুষ যাতে তার জ্ঞানহারা না হয়, এ কারণে আল্লাহ মানুষকে মদ পান হতে কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মদ থেকে দূরে থাকার জন্য সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার নিষেধ করেন, যার মধ্যে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বা বিকৃতির সুযোগ নাই। এ কারণেই ইমাম কুরতবী রহ. আল্লাহ তা‘আলার বাণী فاجتنبوه এর তাফসীরে বলেন, আল্লাহর এ কথাটি দ্বারা মদ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকাকে বুঝায়। ফলে মদ থেকে কোনো উপায়ে কোনো প্রকার উপকার গ্রহণ করা যাবে না। মদ পান করা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না, শরবত বানানো যাবে না, ঔষধ বানানো যাবে না ইত্যাদি। ইমাম ইবন মাজাহ আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

«لا تشربوا الخمر؛ فإنها مفتاح كل شر»

“তোমরা মদ সেবন করো না, কারণ, মদ সমস্ত অনিষ্টতার চাবি-কাঠি”।[3]

মদের ক্ষতি শুধু দু একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর ক্ষতি এত ব্যাপক- যার কারণে আল্লাহ তা‘আলা মদ সেবন করাকে শুধু হারাম বা নিষিদ্ধ করেননি বরং মদ বিক্রি করা, তৈরি করা, আমদানি-রফতানি বিপণনসহ যাবতীয় সব কিছুকেই নিষিদ্ধ করেন। যারা মদের বাণিজ্য করে, তাদের ব্যাপারেও কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা মদ পান করে তারা আখেরাতে এ জাতীয় পানীয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من شرب الخمر في الدنيا فمات وهو يدمنها لم يتب، لم يشربها في الآخرة»

“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করে এবং নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাওবা না করে মারা যায়, সে আখিরাতে ঐ জাতীয় কোনো পানীয় পান করতে পারবে না।[4] আর জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি হাদিস বর্ণিত, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وإن على الله لعهدا لمن شرب المسكر أن يسقيه من طينة الخبال: عرق أهل النار»

“যারা দুনিয়াতে মাদক সেবন করে, তাদেরকে আখিরাতে জাহান্নামীদের দেহের পচা-গলা, পুঁজ ও ঘাম পান করানো বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”[5] অনুরূপভাবে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি মারফু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا يدخل الجنة مدمن خمر»

“নেশাকরায় অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না”।[6]

আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে আরও একটি হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من شرب الخمر لم تقبل له صلاةٌ أربعين صباحاً، فإن تاب: تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب: تاب الله عليه، فإن عاد لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب: تاب الله عليه، فإن عاد الرابعة لم يقبل الله له صلاة أربعين صباحاً، فإن تاب لم يتب الله عليه، وسقاه من نهر الخبال».

“যে ব্যক্তি মদ পান করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করা হবে না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। তারপর যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবেন না। যদি সে তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। তারপর যদি সে চতুর্থবার পুনরায় মদ পান করে, আল্লাহ আবারো চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল করবে না। তারপর যদি তাওবা করে তার তাওবা কবুল করা হবে না। আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের পচা-গলা ও পুঁজের নহর থেকে পান করাবেন”।[7] যারা প্রবৃত্তির পূজারি তাদের নিকট এ ধরনের উপদেশ অনেক সময় অমূলক। যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের আখিরাতের ওয়াজ ও নছিহত দ্বারা মদ পান করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এ ধরনের লোকদের নিকট মদ পান বা নেশাজাত দ্রব্য পান করা দুনিয়াবি ক্ষতিগুলো তুলে ধরতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, মদ পান করা বা নেশা গ্রহণ করা কেবল শরীয়তের পরিপন্থীই নয় বরং নেশাজাত বস্তু সেবন করা দ্বারা একজন মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেওয়া হয়। মদ পানের কারণে ঘরে বাইরে অশান্তি তৈরি হয়, বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়, মারা-মারি হানা-হানি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও রয়েছে একজন মানুষের দৈহিক ক্ষতি। মাদক সেবন দ্বারা বড় বড় রোগ-ক্যানসার, যক্ষ্মা ইত্যাদি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি দেখা দেয়। এত কিছুর পরও কি বলা যাবে, মাদক সেবন করা বৈধ এবং তা নিষিদ্ধ এবং হারাম নয়?

>
[1] বুখারী, হাদিস, ৫৫৮৫।

[2] মুসলিম, হাদিস: ৫০০৫।

[3] ইবন মাজাহ, হাদীস নং, ৩৩৭১; হাকিম, হাদিস: ৭২৩১; হাদিসটি সহীহ বুখারি মুসলিম এর শর্ত অনুযায়ী।

[4] বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০৩, নাসায়ী, হাদিস: ৫৬৭৩।

[5] বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২০০২।

[6] ইব্নু মাযা, হাদিস: ৩৩৭৬ ইবনু হাব্বান, হাদিস: ৬১৩৭।

[7] বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ১৮৬২।
বিজাতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসন যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ:

বিজাতীয় সংস্কৃতির অগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তমদ্দুন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে বিজাতিদের সংস্কৃতির দ্বারস্থ হয়েছি এবং আমরা আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে অমুসলিম কাফের ও বিজাতিদের সংস্কৃতির অন্ধানুকরণে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি। বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত চর্চা হচ্ছে। এমনকি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে পাঠ্যসূচী করা হয়েছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কি তা ভুলেই গেছে। তাদের নিকট পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া কোনো কিছুই মনে হয় যেন গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মুসলিম কেন যেন মনে করে, পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া নিজেকে আধুনিক বা অভিজাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না। ফলে মুসলিমরা তাদের নিজেদের হাজার বছরের আত্মপরিচয়কে ভুলে গিয়ে চোখ ধাঁধানো মরীচিকার পেছনে ছুটছে। তাদের প্রাত্যহিক ব্যাবহারিক জীবনের পশ্চিমাদের অনুকরণ করা একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইসলামী সভ্যতাই সারা দুনিয়ার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ইসলামই মানুষকে মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি শিখিয়েছে। ইসলামের মহান আদর্শ ও মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে বিজাতিরা সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর আমরা মুসলিমরা তাদের অন্ধ অনুকরণ করে বেড়াচ্ছি এবং সারা দুনিয়ার মধ্যে সব ধরনের অপমান সহ্য করে যাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের সতর্ক করে বলেন,

﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣ ﴾ [هود: ١١٣]

“তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না”।[1]

তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من تشبه بقوم فهو منهم»

“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে”।[2]

ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, সব কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব কেবল বানরেরই হয়ে থাক। যে জাতি কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ না করে চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পায়, সে বানরের স্বভাবের অধকিারী বললে ভুল হবে না। কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোনো মুসলিম পারে না বিজাতির কোনো অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা।

বিজাতিদের সভ্যতা সংস্কৃতিতে মানবতার জন্য অনিবার্য ধ্বংস ও নিশ্চিত অশান্তি। তার প্রমাণ আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই- আজ তাদের দেশে মানবতা কত অসহায়, নারীরা কতনা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। তাদের দেশের মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় কি তা জানে না। বৃদ্ধ মাতা পিতাদের খোজ খবর নেওয়ার মত কেউ নেই। আবার মা বাবার নিকট তাদের সন্তানেরও কোনো হিসেব নেই। ভাই বোনের কোনো পরিচয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বন্ধন নেই। মানসিক অশান্তি তাদের নিত্য দিনের সাথী। তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ তা দেখলেই বুঝা যাবে। আত্মহত্যা পারিবারিক কলহ তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করা থেকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,

«لتتعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة وشبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه .قالوا اليهود والنصارى؟ قال: فمن !

“অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে।” সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, “তবে আবার কার?”[3]

সাহাবী হুযাইফা ইবন ইয়ামান বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে[4]!’

তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।”[5]

তাছাড়া রাসূল বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে, কিন্তু সেহেরী খায় না। তাই ইসলাম তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সেহেরী খাওয়া ত্যাগ করতে নিষেধ করল।[6]

রোযা রাখার পর ওরা ইফতার করে, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ইসলাম তাদের অনুকরণ বর্জন করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্য ডোবার সাথে সাথে সত্বর ইফতার করতে মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ করল।[7]

সূর্য পূজকরা সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় তার পূজা করে থাকে। তাই ঐ সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যেও নামায পড়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল[8]।

যাতে মুশরিকদের সাথে তওহীদ বাদী মুসলিমদের কোনো প্রকার সাদৃশ্য ভাব না ফুটে ওঠে।

বৈরাগ্যবাদ বিজাতীয় আচার। ইসলামে তা নিষিদ্ধ হল।[9] পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোঁয়া লাগা মানুষ হীনমন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে। ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হলো প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুকরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে। মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাঁধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হলো ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।

>
[1] সূরা হূদ, আয়াত; ১১৩

[2] আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং

[3] বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৫০৬৭ নং

[4] ইবনে ওয়াদ্দাহ, আল-বিদাউ অন্নাহইয়ু ‘আনহা, নং ১৯৩; পৃ. ২/১৩৭।

[5] তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস; ২৬৯৫।

[6] মুসলিম, হাদিস: ১০৯৬।

[7] আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৯৮, হাকেম, হাদিস: ১/৪৩১

[8] মুসলিম, হাদিস: ৮৩২

[9] আবূ দাঊদ, হাদিস: ৪৯০৪

আকাশ সংস্কৃতির অগ্রাসন যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। আকাশ সংস্কৃতির কারণে, আজ মানুষ ঘরে বসেই সারা দুনিয়ার সব কিছুই অবলোকন করছে। ঘরে বসে নগ্ন, অর্ধ-নগ্ন, বেহায়াপনা, অশ্লীল গান-বাজনা, নাটক সিনেমা দেখে তারা তাদের নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। যে সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারত, তা না করে তারা তাদের নিজেদের ধ্বংস নিশ্চিত করছে। আকাশ সংস্কৃতির বিষাক্ত ছোবল আমাদের তরুণ সমাজকে প্রতিদিন নৈতিক অক্ষয়ের দিক নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের তথাকথিত সংস্কৃতি মনা নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিকদের কারণে আমাদের তরুণ সমাজ দিনের পর দিন নৈতিক অবক্ষয় ও ধ্বংসের অবলীলায় নিপতিত হচ্ছে। তাদের চরিত্র ধ্বংস করার পেছনে মূলত এসব নাট্যকার, চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিকদের ভূমিকা বা অবদান অনেক বেশী। তারা তরুণ প্রজন্মকে চুরি, ডাকাতি, মাতা-পিতার অবাধ্যতা, ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলা-মেশা ইত্যাদি শেখাচ্ছে। ভালো কিছু তারা জাতিকে দিতে পারেনি।

আকাশ সংস্কৃতির কারণে আজকাল আমরা দেশীয় সংস্কৃতি ভুলে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছি, যার প্রভাব পড়ছে আজকাল তরুণদের মনে।

বিজাতীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপানের ঘটনা অহরহ থাকে বিধায় আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এইসব বাজে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। মসজিদে গিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করার থেকে DJ Party তে গিয়ে উদ্দাম নৃত্য, মাতলামি এবং বেহায়াপনায় তারা বেশী মনোযোগী হয়ে পড়ছে। নাট্যকার অথবা চলচ্চিত্রকাররাও সমাজের অসঙ্গতিপূর্ণ বিষয়গুলো পর্দার মাধ্যমে তুলে ধরে মানুষের মাঝে জনসচেতনতা তৈরির করার চেয়ে কিভাবে তা মানুষের মাঝে অভ্যাসে পরিণত করা যায় সেই চেষ্টায় বেশী করে থাকে। ফলে নাটক সিনেমাগুলোর প্রধান বিষয়ই থাকে নারী পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, অবাস্তব প্রেম ভালোবাসা, অশালীন গালিগালাজ, অবৈধ যৌনাচার। মনে হয় যেন এই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো ভালো বিষয় নেই। প্রেমের কারণে বাবা মাকে কিভাবে অপমান করতে সন্তান দ্বিধা-বোধ করেনা, তাই দেখানো হয়। ফলে তরুণ প্রজন্ম দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে আর সিনেমার দৃশ্য অনুসরণ করতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। বাবা মাকে খুশী করার চেয়ে আজকাল তরুণ তরুণীরা তাদের প্রিয়তম/প্রিয়তমার মন জোগাতে বেশী ব্যস্ত। ভালবাসার মানুষটির মন জোগানোর জন্য বাবার পকেট চুরি করা হচ্ছে নয়তো মায়ের টাকার পার্সে হানা দেওয়া হচ্ছে।

নগ্ন গান-বাজনা ও অশ্লীল নাটক-সিনেমা:

নগ্ন ও অশ্লীল গান-বাজনা যুব সমাজের চরিত্রকে কলুষিত করে তুলছে। যুব সমাজের চারিত্রকে হনন করার জন্যেই বর্তমানে গান-বাজনা, অশ্লীল, উলঙ্গ, অর্ধাউলঙ্গ ছবি ও নগ্ন নাটক-সিনেমার মহামারিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। হলিউড, বলিউড কিংবা ডালিউড ইত্যাদির প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে যুব সমাজ এক মহা বিপদের মুখোমুখি। তারা এ সব গান বাজনা শোনে এবং অশ্লীল দৃশ্য দেখে দেখে বাস্তব জীবনে নিজেদের তাদের মত করে সাজাতে ব্যস্ত। কিন্তু এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ তা তারা কোনোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে না। যৌবনের সময়টা হল, একজন মানুষের ভবিষ্যৎ রচনা, ক্যারিয়ার গঠন ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার মুখ্য সময়। আর গান-বাজনা হল, মানুষকে তার ভবিয্যত লক্ষ্যে পৌছতে প্রতিবন্ধক এবং তাকে ফিরিয়ে রাখার মুখ্য উপকরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦﴾ [لقمان: ٦]

“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি”।[1]

বেশীর ভাগ তাফসীরকারক ‘‍‌‍‌‌‍লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: এটা হচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরী র. বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “গান অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি করে, যেমনভাবে পানি ঘাস সৃষ্টি করে। যিকর অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে”।

আব্দুল্লাহ ইবন মসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, ‘উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইকরামা হতে।

গান হলো অসার, অবান্তর, অশ্লীল ও যৌন-উত্তেজনামূলক অথবা শির্কী ও বিদআতি কথামালাকে কবিতা-ছন্দে সুললিত ও সুরেলি কণ্ঠে গাওয়া শব্দ-ধ্বনির নাম। যা ইসলামে হারাম। হারাম তা গাওয়া এবং হারাম তা শোনাও। গানে হƒদয় উদাস হয়, রোগাক্রান্ত ও কঠোর হয়। গান হলো ‘ব্যভিচারের মন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। তাই তো “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন”।[2]

মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। সবচেয়ে শুদ্ধ হাদিসের কিতাব বুখারী শরীফে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে”।[3]

তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন[4]!”

তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে[5]।”

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন[6]।” অন্য এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ফিরিশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় ঘণ্টার শব্দ থাকে[7]।” আর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “ঘণ্টা বা ঘুঙুর হলো শয়তানের বাঁশি[8]।”

>
[1] সূরা লুকমান, আয়াত: ৬

[2] আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪

[3] বুখারী, হাদিস: ৫৫৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, সহীহুল জামে হাদিস; ৫৪৬৬

[4] ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানী, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে হাদিস: ৫৪৫৪

[5] সহীহুল জামে’ ৩৬৬৫, ৫৪৬৭ নং

[6] আহমাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১৭০৮

[7] আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৭৩৪২

[8] মুসলিম, হাদিস: ২১১৪, আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৫৫৬

জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। পার্থিব উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা দ্বারা অর্জিত জ্ঞান মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে না। আর যে জ্ঞান মানুষের মাঝে ও তার প্রভুর মাঝে সুসম্পর্ক তৈরি করে সে জ্ঞানই হল মানবতার কল্যাণ, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতের শান্তির গ্যারান্টি। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য বর্তমানে যুব সমাজ যে জ্ঞান অর্জন বা শিক্ষা গ্রহণ করছে, তাও পার্থিব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই করছে। মানবতার কল্যাণ সাধন করার মত কোনো শিক্ষা তাদের পাঠ্য তালিকাতেই নেই। পশ্চিমা তথা বিজাতিদের অনুকরণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সেভাবেই সাজানো হয়েছে। ফলে মানুষের সাথে তাদের রবের সাথে সম্পর্ক না হয়ে আল্লাহর সাথে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, যা মানবতার জন্য বড় ধরনের শূন্যতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যে শরয়ী জ্ঞান বা দ্বীনী জ্ঞান দ্বারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই লক্ষ্য হওয়ার কথা, সে জ্ঞানকেও পার্থিব উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে অথবা দুনিয়াতে সু-খ্যাতি লাভ করার উদ্দেশ্যে অর্জন করা হচ্ছে। ফলে লোকটি দুনিয়াও আখিরাত উভয় জাহানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«من تعلم علما مما يبتغى به وجه الله عز وجل لا يتعلمه إلا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة»

যে ব্যক্তি এমন ইলম যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয় তা পার্থিব কোনো সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে শিখে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না[1]।

>
[1] আহমদ, হাদিস: ৮৪৫৭ আবুদাউদ, হাদিস:৩৬৬৪, ইবনু মাযা, হাদিস: ২৫২
নগ্ন, উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ পোশাক পরিচ্ছদ:

মুসলিম যুবকরা এমন সব পোশাক পরিচ্ছদ অবলম্বন করছে, তাদের দেখলে মনে হয় না তারা কোনো মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করছে। তাদের পরিধেয় পোশাকগুলো কোনো প্রকার রুচিশীলতার পরিচয় বহন করে না। তাদের মন-মগজ ও মস্তিষ্ক যে কত নিচে নামছে তা তাদের পোশাক দেখলেই বুঝা যায়। নাটক সিনেমার নায়ক, নায়িকারা কি ধরনের পোশাক পরল সে নিজেও সে ধরনের পোশাক পরিধানে ব্যস্ত। অথচ এ ধরনের পোশাক দ্বারা সতর ডাকা হলো কি হলো না তার প্রতি বিন্দু পরিমাণও ভ্রুক্ষেপ করতে রাজি নয়। এই ছবিগুলোর নামে যে পোশাকটি বের হবে তা কোনো এক বন্ধু যদি আগে কিনে থাকে তাহলে সে অন্য বন্ধুদের প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাই যে, তেরে-নাম, রা-ওয়ান, জিলিক, টাপুর-টুপুর, ওয়াকা-ওয়াকা, বিন্ধু, দেবদাস এ ধরনের বিভিন্ন ছবি, অভিনেতা- অভিনেত্রীর নামে যে পোশাকগুলো বের হয়েছে তা আমাদের যুব সমাজের পছন্দ কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে তারা তাদের অনুকরণে বিভিন্ন নামের পোশাক কিনছে এবং তাকে তারা তাদের ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। আমাদের যুবক যুবতীরা এমন সব পোশাক পরিধান করছে, যা দেখে মনে হয় না তারা কোনো সভ্য পরিবারে বসবাস করছে। ইসলামী শরীয়তে পোশাকের যে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা যদি সমাজে বাস্তবায়িত হত এবং আমাদের যুব সমাজ তার অনুকরণ করত তাহলে সামাজিক অবক্ষয় অনেকটা কমে যেত। কিন্তু যুব সমাজ যৌন উত্তেজক ও অর্ধ উলঙ্গ পোশাক পরিধান করার ফলে আজ সমাজে আমরা প্রতি নিয়তই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি। সামাজিক ক্রাইম-এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌন হয়রানী ইত্যাদি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ যদি আমাদের যুবক ভাই ও বোনেরা ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলত এবং পোশাক পরিচ্ছদে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলত, তাহলে তারা তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ রচনা করতে পারত। কিন্তু না, তারা তাদের নিজেদের ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে বিজাতিদের পোশাক পরিচ্ছদ গ্রহণেই ব্যাকুল। আর আমাদের প্রাণ প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাক পরিচ্ছদে বিজাতিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আমরা যাতে আমাদের যাবতীয় কর্মে বিজাতিদের অনুকরণ না করি সে ব্যাপারে তিনি অধিক সতর্ক করেছেন।

একদা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমরকে দু’টি জাফরান রঙের কাপড় পরে থাকতে দেখে বললেন, “এ ধরনের কাপড় হলো কাফেরদের। অতএব তুমি তা পরো না[1]।”

এ থেকে বুঝা যায় যে, যে ধরনের লেবাস-পোশাক বিজাতির বিশেষ প্রতীক তা কোনো মুসলিম নর-নারী ব্যবহার করতে পারে না।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা মোচ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। আর একাজ করে তোমরা মুশরিকদের অন্যথাচরণ কর[2]।”

“মোচ ছেঁটে ও দাড়ি রেখে অগ্নিপূজকদের বৈপরীত্য কর[3]।”

“এবং ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না[4]।”

চুল-দাড়ি পেকে সাদা হয়ে গেলে সাদাই রেখে দেওয়া বিজাতীয় আচরণ। তাই ইসলামের আদেশ হল, তা কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ দ্বারা রঙিয়ে ফেল এবং বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করো না[5]। মাথায় পরচুলা ব্যবহার ইয়াহুদী মেয়েদের আচরণ। অতএব তা কোনো মুসলিম নারী ব্যবহার করতে পারে না।[6]

>
[1] মুসলিম, আহমাদ ২/১৬২

[2] বুখারী, হাদিস: ৫৮৯৩, মুসলিম, হাদিস: ২৫৯

[3] মুসলিম, হাদিস: ২৬০

[4] আহমাদ, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭

[5] বুখারী, হাদিস: ৩৪৬২, মুসলিম, হাদিস: ২১০৩, আহমাদ, ত্বাবারানী, সহীহুল জামে’, হাদিস: ১০৬৭, ৪৮৮৭

[6] মুসলিম, হাদিস: ২৭৪২
অসৎ সঙ্গ যুব সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর

 মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ বাচতে পারে না। আর একজন মানুষকে সমাজে চলতে হলে, তাকেই অবশ্যই সমাজের মানুষের সাথে উঠা-বসা ও মেলা-মেশা করতে হয়। তবে এখানে আমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমি যাদের সাথে চলা-ফেরা ও বন্ধুত্ব করব, তারা কেমন? তাদের স্বভাব-চরিত্র কেমন? কারণ, সৎ সঙ্গীর সাথে বন্ধুত্ব করা ও নেককার লোকের সাথে উঠা-বসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যখন ভালো লোকের সাথে চলা-ফেরা করবে, তার প্রভাব একজন মানুষের মধ্যে অবশ্যই থাকবে। একজন যুবকের জীবনে তার সৎ সঙ্গই কেবলমাত্র তাকে তার সুন্দর একটি ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগী হতে পারে। সৎ সঙ্গ একজন মানুষকে ভালো হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে যদি একজন যুবকের সাথী-সঙ্গীরা অসৎ, খারাপ ও দুশ্চরিত্র হয়, তখন তার ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে না। যখন একজন মানুষ অসৎ ও মন্দ আখলাকের লোকের সাথে থাকবে তার প্রভাব ও তার দুশ্চরিত্রের প্রভাব তার মধ্যে পরিলক্ষিত হবে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل» رواه الترمذي وحسَّنه

“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধু বানাবে”।[1] একজন বন্ধুই মানুষের ভালো হওয়া ও খারাপ হওয়ার মূল চালিকা শক্তি। এটি শুধু মুখের কথা বা দাবি নয় বরং বাস্তবতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [الفرقان: ٢٧، ٢٩]

আর সেদিন যালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম,! হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশ-বাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।[2]

আবুদ দরদা রা. আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إنما مثل الجليس الصالح والجليس السوء كحامل المسك ونافخ الكير، فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحاً طيبة، ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك، وإما أن تجد ريحاً خبيثة».

“নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত: একজন আতর বহনকারী ও একজন কামারের মত। আতর বহনকারী সে হয় তোমাকে আতর দেবে, অথবা তুমি তার থেকে খরিদ করবে অথবা কম পক্ষে তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামার সে হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করবে”[3]।

যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে, তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে, তারা তাদের সংশ্রব থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো‘আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐ সব ভালো লোকদের আমলের পর্যায়ে পৌছবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وله قد غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسهم»

“আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম, আর তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না”।[4]

অনুরূপভাবে অনুকরণীয় হিসেবে তাদের গ্রহণ করে তাদের ইলম, আমল ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দ্বারাও উপকৃত হবে। যেমনটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়,

«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل»

“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে”।[5] যখন কোনো ব্যক্তির বন্ধু সৎ হয়, তার ভালো হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তার মধ্যে যে সব দোষত্রুটি আছে, তা যখন তার বন্ধুদের সামনে ধরা পড়ে তখন তারা তাকে সংশোধন করে এবং তার দোষত্রুটি ধরিয়ে দেয়। তখন সে নিজেই সংশোধন হতে এবং দোষত্রুটির চিকিৎসা গ্রহণে চেষ্টা করে। হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«المؤمن مرآة المؤمن»

“একজন মুমিন অপর মুমিনের আয়নাস্বরূপ।”[6] আয়নায় যেমন একজন মানুষ তার চেহারা দেখে অনুরূপভাবে সে তার অপর ভাইয়ের মধ্যে নিজেকে দেখতে পায়।

নেকলোকদের সাথে উঠা-বসা করা, আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«وجبت محبتي للمتحابين فيَّ والمتجالسين فيَّ»

“আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, তাদের জন্য যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে।”[7] পক্ষান্তরে যারা সৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে না এবং অসৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

[1] বর্ণনায় তিরমিযি, হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।

[2] সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৭-২৯

[3] মুসলিম, হাদিস: ২৬২৮।

[4] বর্ণনায় মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৯।

[5] বর্ণনায় তিরমিযি হাদিস: ২৩৭৮ এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।

[6] বর্ণনায় আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৮, আল্লাম ইরাকী ও আল্লামা ইবনে হাজার হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।

[7] বর্ণনায় মালেক এবং ইবনু আব্দিল বার ও মুনযিরি হাদিসটির সনদকে সহীহ বলেন। মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩৩, নং ২২০৮৩।

বর্তমান সময়ে যিনা-ব্যভিচার একটি মারাত্মক সমস্যা। বর্তমানে এ ব্যাধি এত মারাত্মক আকার ধারণ করছে যে প্রায় প্রতিটি ফ্লাট বাড়ী একটি যৌন কেন্দ্র। অভিজাত ফ্যামিলির ছেলে মেয়েরা এ সব অপকর্মকে কোনো অন্যায় মনে করছে না। তারা মনে করছে এটি তাদের তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ও স্বাধীনতা। তারা উন্নত বিশ্বকে তাদের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা বলে উন্নত বিশ্বের মেয়েরা রাস্তা-ঘাট, হোটেল, পার্ক সব জায়গায় যেভাবে যৌন ক্ষুধা মিটিয়ে ঘরে ফিরে, তারাও এমন সমাজ ব্যবস্থার পক্ষপাতি। এ সব যেনা-ব্যভিচারের কারণে আজ সমাজে অশান্তি, মানবতার হাহাকার।

সত্য বলেছেন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সত্য তাঁর নবুওয়তের অহীলব্ধ ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছেন,

«يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ، وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ: لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلَّا فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلَّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدَّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلَّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلَّا سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ، فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ، وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ، إِلَّا جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ».

“হে মুহাজিরদল! পাঁচটি কর্ম এমন রয়েছে যাতে তোমরা লিপ্ত হয়ে পড়লে উপযুক্ত শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আমি আল্লাহর নিকট পানাহ চাই, যাতে তোমরা তা প্রত্যক্ষ না কর। যখনই কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা (ব্যভিচার) প্রকাশ্যভাবে ব্যাপক হবে তখনই সেই জাতির মধ্যে প্লেগ এবং এমন মহামারী ব্যাপক হবে যা তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে ছিল না। যখনই কোনো জাতি ওজন ও মাপে কম দিতে আরম্ভ করবে তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, জীবন-নির্বাহের কষ্ট ও শাসককুলের অত্যাচার পেয়ে বসবে। আর যখনই কোনো জাতি সম্পদের যাকাত প্রদানে বিরত থাকবে তখনই তাদের মধ্যে আকাশ থেকে অনাবৃষ্টি দেখা দিবে। যদি না জীব-জন্তু থাকত, তাদের মোটেই বৃষ্টি দেওয়া হতো না। আর যখনই আল্লাহ ও রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখনই তাদের অধিকৃত বস্তুর কিছু হাতছাড়া হয়ে যাবে। আর যখনই কোনো জাতির নেতারা আল্লাহর কিতাব কুরআন দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা ত্যাগ করবে এবং তা থেকে হুকুম পছন্দ করে গ্রহণ করবে না তখনই তাদের মধ্যে পরস্পর ভীতির সঞ্চার করবেন।”[1]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখনই কোনো জাতি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তখনই তাদের মাঝে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যখনই কোনো জাতির মাঝে অশ্লীলতা আত্মপ্রকাশ করে তখনই সে জাতির জন্য আল্লাহ মৃত্যুকে আধিপত্য প্রদান করেন। (তাদের মধ্যে মৃতের হার বেড়ে যায়।) আর যখনই কোনো জাতি যাকাত-দানে বিরত হয় তখনই তাদের জন্য (আকাশের) বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।”[2]

অবৈধ যৌনাচারের ফলে প্রাদুর্ভূত বিভিন্ন পুরনো রোগ তো আছেই। গনোরিয়া, সিফিলিস, শুক্র-ক্ষরণ প্রভৃতি যৌনরোগ ব্যভিচারীদের মাঝেই আধিপত্য বিস্তার করে। গনোরিয়া বা প্রমেহ রোগে জননাঙ্গে ঘা ও জ্বালা সৃষ্টি হয় এবং সেখান হতে পুঁজ নিঃসরণ হয়। মূত্রনালি জ্বালা করে, সুড়সুড় করে। মূত্রত্যাগে কষ্ট হয়। পানির মত প্রস্রাবের পর হলুদ পুঁজযুক্ত পদার্থ বের হয়। সে সঙ্গে মাথা ধরা ও ঘোরা, জ্বর এবং নিম্ন-গ্রন্থি-স্ফীতি তো আছেই।

সিফিলিস বা উপদংশ রোগ শরীরে প্রবেশ করার পর সপ্তাহ মধ্যে লাল দাগ ও ফুস্কুড়ি প্রকাশ পায়। এরপর হতে শরীর অনবরত চুলকায় ও তার চারিধারে প্রবাহযুক্ত পানি-ভরা ফোস্কা দেখা দেয় এবং ঐ সব ফুস্কুড়ি হতে পরে গলে ঘা হয় ও পুঁজ বের হয়। রোগ পুরনো হলে নখ খসে যায়, চুল ওঠে এবং সর্বাঙ্গে বিভিন্ন রোগ ও রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়।

আর শুক্র-ক্ষরণ রোগে তরল বীর্য যখন-তখন ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বুক ধড়ফড় করে, মাথা ধরে ও ঘোরে ইত্যাদি।

সুতরাং এমন সব রোগের কথা শুনে শঙ্কিত হওয়া উচিত ব্যভিচারীকে। ক্ষণস্থায়ী সে স্বাদে লাভ কি, যার পরে আছে দীর্ঘস্থায়ী বা চিরস্থায়ী বিষাদ।

ব্যভিচার ব্যভিচারীর জন্য সাংসারিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনা ডেকে আনে। আত্মীয়স্বজনের সামনে হতে হয় অপমানিত। কারণ, ব্যভিচারী যতই সতর্কতা ও গোপনীয়তা অবলম্বন করুক না কেন, একদিন না একদিন তার সে পাপ-রহস্য মানুষের সমাজে প্রকাশ পেয়েই যায়। ফলে তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে একটা এমন দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে, যার দরুন সে প্রায় সকলের কাছে নিন্দার্হ ও ঘৃণার্হ হয়। সহজে কেউ তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অনেক সময় তার কারণে তার পুরো বংশ ও পরিবারেরই বদনাম হয়। শেষে পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, ভালো লোকেরা তাদের সহিত কোনো সম্পর্ক কায়েম করতে চায় না। অবশ্য ‘কানা বেগুনের ডগলা খদ্দের’ তো আছেই।

পক্ষান্তরে ব্যভিচারীর জীবনে লাঞ্ছনা যখন আসে, তখন তার হৃদয়ের জ্যোতি বিলীন হয়ে যায় এবং মন ভরে ওঠে অন্ধকারে। অপমানের পর এমনও হয়ে থাকে যে, শেষে সে একজন নির্লজ্জ ধৃষ্টতে পরিণত হয়ে যায়। সমাজে চলার পথে তার আর কোনো প্রকার ‘হায়া-শরম’ বলতে কিছু থাকে না। আর যার লজ্জা থাকে না, তার কিছু থাকে না। লজ্জাহীনের পূর্ণ ঈমানও থাকে না। যার ফলে মানুষের মনুষ্যত্ব ধ্বংস হয়ে যায় এবং পশুর পশুত্ব এসে স্থান নেয় তার মনে ও আচরণে।

ব্যভিচারীর মনে সব সময় এক প্রকার ভয় থাকে। অন্তরে বাসা বাঁধে সার্বক্ষণিক লাঞ্ছনা। যেমন আল্লাহর আনুগত্যে থাকে সম্মান ও মনের প্রফুল্ল­তা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ كَسَبُواْ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةِۢ بِمِثۡلِهَا وَتَرۡهَقُهُمۡ ذِلَّةٞۖ ٢٧ ﴾ [يونس : ٢٧]

“যারা মন্দ কাজ করে, তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে---।”[3] ব্যভিচারী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। জারজ জন্ম নিলে তো আরও। এ ছাড়া ব্যভিচারের ফলে তার সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদা যায়, স্ত্রী-কন্যার ব্যাপারে ঈর্ষা থাকে না। বরং ব্যভিচারী মিথ্যাবাদীও হয়, খেয়ানত-কারী ও ধোকাবাজ হয়। সাধারণত: বন্ধুর বন্ধুত্বের মানও খেয়াল রাখে না[4]।

ব্যভিচারী দ্বীনী ইলম থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ, ইলম হলো আল্লাহর নূর। আর আল্লাহর নূর কোনো পাপিষ্ঠকে দেওয়া হয় না, তথা পাপের কালিমা সে জ্যোতিকে নি®প্রভ করে ফেলে।

ব্যভিচার এমন এক ‘ফ্রি সার্ভিস’ চিত্তবিনোদনের সুন্দর উপায় যে, ব্যভিচারীকে বিবাহ করে ঘর-সংসার করতে বাধা দেয়। তাকে বিবাহে আগ্রহহীন ও নিঃস্পৃহ করে তোলে। বিনা খরচ ও পরম স্বাধীনতায় যদি কাম-চরিতার্থ করা সহজ হয় এবং স্বামীর কোনো প্রকার দায়িত্ব ঘাড়ে না নিয়েই যদি মনের মত ‘বউ’ পাওয়া যায়, তবে কে আর বিয়ে করবে? ব্রিটেনের প্রায় ৯০ শতাংশ যুবক-যুবতী এই দায়-দায়িত্বহীন সম্পর্ককেই পছন্দ করে এবং বিবাহে জড়িয়ে পড়াকে বড্ড ঝামেলার কাজ মনে করে![5]

ব্যভিচার স্বামী-স্ত্রীর সংসারে ফাটল ধরায়। কারণ, অন্যাসক্ত স্বামীর মন পড়ে থাকে অন্য যুবতীর প্রতি। অনুরূপ অন্যাসক্তা স্ত্রীর মন পড়ে থাকে কোনো অন্য রসিক নাগরের যৌবন-আসনে। আর এই উভয়ের মাঝে সন্দেহ বাসা বাঁধে। একে অপরের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। সন্দেহ হয় স্বামীর নিজের সন্তানের ব্যাপারেও। প্রতিবাদ ও কৈফিয়ত হলে কলহ বাধে। অতঃপর চলে মারধর। আর তারপরই তালাক অথবা খুন!

ব্যভিচার পিতার পিতৃ-বোধ এবং মাতার মাতৃ-বোধ বিনষ্ট করে ফেলে। পিতৃ ও মাতৃবৎশল্য সন্তানদের উপর থেকে উঠে যায়। যেমন অনেকের জানতে বা অজান্তে সমাজে পয়দা হয় হাজারো জারজ সন্তান।

ব্যভিচার সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ডেকে আনে। ধর্ষণের ভয়ে কিশোরী-যুবতীর নিরাপত্তা থাকে না। এমন কি নিরাপত্তা থাকে না কোনো সুদর্শন কিশোরও! বাড়ির ভিতরে থেকেও মনের আতঙ্কে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পায় না তারা। অনেকে ঐ শ্রেণীর হিংস্র নেকড়ের পাল্লায় পড়ে জীবন পর্যন্তও হারিয়ে বসে।মানসিক বিপর্যয় ঘটিয়েই ব্যভিচার বহু সমাজ-বিরোধী অপরাধী সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে পিতা-মাতার স্নেহ ও মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত জারজ সন্তানরা মানসিক কঠোরতা ও সামাজিক ঘৃণার মাঝে মানুষ হতে থাকে এবং পরিশেষে অপরাধ জগৎকেই মনের মত জগত বলে নিজের জন্য বেছে নয়।

>
[1] ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯, সহীহ তারগীব, হাদিস: ৭৫৯

[2] হাকেম, হাদিস: ২/১২৬, বাইহাকী, হাদিস: ৩/ ৩৪৬, বায্যার, হাদিস: ৩২৯৯ , সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১০৭

[3] সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৭

[4] ইবনুল কাইয়্যেম, রওদাতুল মুহিব্বীন।

[5] আল-ইফ্ফাহ পৃ. ১৯।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »