নগ্ন ও অশ্লীল গান-বাজনা যুব সমাজের চরিত্রকে কলুষিত করে তুলছে। যুব সমাজের চারিত্রকে হনন করার জন্যেই বর্তমানে গান-বাজনা, অশ্লীল, উলঙ্গ, অর্ধাউলঙ্গ ছবি ও নগ্ন নাটক-সিনেমার মহামারিকে সুপরিকল্পিতভাবে জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। হলিউড, বলিউড কিংবা ডালিউড ইত্যাদির প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণে যুব সমাজ এক মহা বিপদের মুখোমুখি। তারা এ সব গান বাজনা শোনে এবং অশ্লীল দৃশ্য দেখে দেখে বাস্তব জীবনে নিজেদের তাদের মত করে সাজাতে ব্যস্ত। কিন্তু এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ তা তারা কোনোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে না। যৌবনের সময়টা হল, একজন মানুষের ভবিষ্যৎ রচনা, ক্যারিয়ার গঠন ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার মুখ্য সময়। আর গান-বাজনা হল, মানুষকে তার ভবিয্যত লক্ষ্যে পৌছতে প্রতিবন্ধক এবং তাকে ফিরিয়ে রাখার মুখ্য উপকরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَشۡتَرِي لَهۡوَ ٱلۡحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ بِغَيۡرِ عِلۡمٖ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًاۚ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٞ مُّهِينٞ ٦﴾ [لقمان: ٦]
“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা ঐ সব লোক যাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি”।[1]
বেশীর ভাগ তাফসীরকারক ‘লাহওয়াল হাদিস’ বলতে গানকে বুঝিয়েছেন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: এটা হচ্ছে গান। ইমাম হাসান বসরী র. বলেন: এটা গান ও বাদ্যের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “গান অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টি করে, যেমনভাবে পানি ঘাস সৃষ্টি করে। যিকর অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে, যেমন পানি ফসল উৎপন্ন করে”।
আব্দুল্লাহ ইবন মসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিন তিনবার কসম খেয়ে বলেছেন, ‘উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে বুঝানো হয়েছে। অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইকরামা হতে।
গান হলো অসার, অবান্তর, অশ্লীল ও যৌন-উত্তেজনামূলক অথবা শির্কী ও বিদআতি কথামালাকে কবিতা-ছন্দে সুললিত ও সুরেলি কণ্ঠে গাওয়া শব্দ-ধ্বনির নাম। যা ইসলামে হারাম। হারাম তা গাওয়া এবং হারাম তা শোনাও। গানে হƒদয় উদাস হয়, রোগাক্রান্ত ও কঠোর হয়। গান হলো ‘ব্যভিচারের মন্ত্র’, অবৈধ ভালোবাসার আজব আকর্ষণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। তাই তো “মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নগ্নতা ও পর্দা-হীনতা এবং গানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন”।[2]
মিউজিক বা বাজনা শোনাও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, বাজনা-ঝংকারও মানুষের মন মাতিয়ে তোলে, বিভোরে উদাস করে ফেলে এবং উন্মত্ততায় আন্দোলিত করে। ফলে তা সামাজিক অবক্ষয়, নীতি নৈতিকতার চন্দপতন ঘটায়। সবচেয়ে শুদ্ধ হাদিসের কিতাব বুখারী শরীফে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় হবে; যারা ব্যভিচার, (পুরুষের জন্য) রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার (হারাম হওয়া সত্ত্বেও) হালাল মনে করবে”।[3]
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন[4]!”
তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে[5]।”
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন[6]।” অন্য এক হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ফিরিশতা সেই কাফেলার সঙ্গী হন না; যে কাফেলায় ঘণ্টার শব্দ থাকে[7]।” আর এক বর্ণনায় তিনি বলেন, “ঘণ্টা বা ঘুঙুর হলো শয়তানের বাঁশি[8]।”
>[2] আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৬৯১৪
[3] বুখারী, হাদিস: ৫৫৯০, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, দারেমী, সহীহুল জামে হাদিস; ৫৪৬৬
[4] ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, ত্বাবারানী, বাইহাকীর শুআবুল ঈমান, সহীহুল জামে হাদিস: ৫৪৫৪
[5] সহীহুল জামে’ ৩৬৬৫, ৫৪৬৭ নং
[6] আহমাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদিস: ১৭০৮
[7] আহমাদ, সহীহুল জামে, হাদিস: ৭৩৪২
[8] মুসলিম, হাদিস: ২১১৪, আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৫৫৬